প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সারা বিশ্বের সব দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
একই মঞ্চে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতা ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একে অপরের সাথে সাক্ষাত হয় বলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই সভাকে ‘কূটনৈতিক স্পিড ডেটিং’ ইভেন্ট হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন অনেক কূটনীতিক।
এবারের সাধারণ পরিষদের সভায় প্রধান আলোচনা বিষয় থাকবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটি। এর পাশাপাশি প্রাধান্য পাবে ইউক্রেন যুদ্ধও। কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কেন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা? জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গুরুত্বই বা কী?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে যখন জাতিসংঘ গঠন করা হয়, তখন এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যত প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে যখন জাতিসংঘ গঠন করা হয়, তখন এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যত প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা।
সহজভাবে বললে, জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য পারস্পারিক সহায়তার মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের অধীনে সারা বিশ্বে কয়েক হাজার উন্নয়ন প্রকল্প, ত্রাণ কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা পরিচালিত হয়।
পরিবেশ ও জলবায়ু থেকে শুরু করে, শিক্ষা, শিশু অধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিও সম্পন্ন হয়ে থাকে জাতিসংঘের তত্বাবধানে। জাতিসংঘের প্রধান শাখা ছয়টি। যার মধ্যে তিনটি শাখাকে মনে করা হয় সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।
এগুলো হল সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ ও সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয়।নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৫টি দেশ, যাদের মধ্যে স্থায়ী সদস্য দেশ ৫টি। বাকি দশটি দেশ দুই বছরের জন্য সদস্য পদ পায়।
আর সেক্রেটারিয়েটকে বিবেচনা করা হয় জাতিসংঘের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। বিভিন্ন দেশের হাজারো কর্মী কাজ করেন নিউ ইয়র্ক, জেনিভা, নাইরোবি আর ভিয়েনায় অবস্থিত জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলোতে।
এই শাখাগুলোর মধ্যে সাধারণ পরিষদের সভার মধ্য দিয়েই জাতিসংঘের অধিকাংশ কাজ শুরু হয়ে থাকে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই সংস্থাটির একমাত্র শাখা যেখানে ১৯৩টি সদস্য দেশের সবাই প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। প্রতিটি সদস্য দেশই এই সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ পায়।
এই সাধারণ পরিষদের সভায় প্রত্যেক দেশের নেতা অথবা দেশটির কোনো একজন প্রতিনিধি সাধারণত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এবং যেসব বিষয়ে ভোটাভুটি হয়ে থাকে সেখানে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। আর সাধারণ পরিষদে প্রত্যেক সদস্যের ভোট সমান গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের মহাসচিব কে হবেন, তাও নির্ধারণ করে থাকে। পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য কারা হবে এবং জাতিসংঘের বাজেট কেমন হবে, সেটিও নির্ধারণ করা হয় সাধারণ পরিষদে।
এবারের সভায় টেকসই উন্নয়ন নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ও ১৯শে সেপ্টেম্বর। ঐ সভায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ কীভাবে অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করবে।
এই লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুধা ও দারিদ্র নিরসন, সারা বিশ্বে মানুষের আয় বৃদ্ধি ও শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করা এবং মানুষের জন্য সুপেয় পানি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। এরপর ১৯ থেকে ২৬শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে সাধারণ সভার আলোচনা।
এই আলোচনা পর্বে সাধারণত বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের প্রতিনিধি নিজ নিজ রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেন এবং সে বিষয়ে আলোচনা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে ২০শে সেপ্টেম্বর ‘ক্লাইমেট অ্যামবিশন সামিটে।’ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এই সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য।
এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মহামারি মোকাবেলা ও পরমাণু অস্ত্র বাতিল করার বিষয়েও আলোচনা হয়ে থাকে। প্রতি বছর সাধারণ পরিষদের সভা শুরুর আগে একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো’র কূটনীতিক ডেনিস ফ্রান্সিস।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নেতারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় অংশ নিতে আসলেও মূলত সভার বাইরে নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে হওয়া বৈঠকগুলোই সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে ওঠে।
জাতিসংঘের ছয়টি আনুষ্ঠানিক ভাষার – আরবি, চাইনিজ, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান, স্প্যানিশ - যে কোনো একটি ব্যবহার করে প্রত্যেক দেশের নেতা বা নেতার প্রতিনিধি বক্তব্য দিতে পারে। প্রত্যেক সদস্যকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বক্তব্য শেষ করতে বলা হলেও প্রতিনিয়তই এই নিয়ম ভাঙা হয়ে থাকে।
শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সারা বিশ্বের সব দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
একই মঞ্চে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতা ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একে অপরের সাথে সাক্ষাত হয় বলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই সভাকে ‘কূটনৈতিক স্পিড ডেটিং’ ইভেন্ট হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন অনেক কূটনীতিক।
এবারের সাধারণ পরিষদের সভায় প্রধান আলোচনা বিষয় থাকবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটি। এর পাশাপাশি প্রাধান্য পাবে ইউক্রেন যুদ্ধও। কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কেন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা? জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গুরুত্বই বা কী?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে যখন জাতিসংঘ গঠন করা হয়, তখন এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যত প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে যখন জাতিসংঘ গঠন করা হয়, তখন এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যত প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা।
সহজভাবে বললে, জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য পারস্পারিক সহায়তার মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের অধীনে সারা বিশ্বে কয়েক হাজার উন্নয়ন প্রকল্প, ত্রাণ কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা পরিচালিত হয়।
পরিবেশ ও জলবায়ু থেকে শুরু করে, শিক্ষা, শিশু অধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিও সম্পন্ন হয়ে থাকে জাতিসংঘের তত্বাবধানে। জাতিসংঘের প্রধান শাখা ছয়টি। যার মধ্যে তিনটি শাখাকে মনে করা হয় সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।
এগুলো হল সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ ও সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয়।নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৫টি দেশ, যাদের মধ্যে স্থায়ী সদস্য দেশ ৫টি। বাকি দশটি দেশ দুই বছরের জন্য সদস্য পদ পায়।
আর সেক্রেটারিয়েটকে বিবেচনা করা হয় জাতিসংঘের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। বিভিন্ন দেশের হাজারো কর্মী কাজ করেন নিউ ইয়র্ক, জেনিভা, নাইরোবি আর ভিয়েনায় অবস্থিত জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলোতে।
এই শাখাগুলোর মধ্যে সাধারণ পরিষদের সভার মধ্য দিয়েই জাতিসংঘের অধিকাংশ কাজ শুরু হয়ে থাকে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই সংস্থাটির একমাত্র শাখা যেখানে ১৯৩টি সদস্য দেশের সবাই প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। প্রতিটি সদস্য দেশই এই সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ পায়।
এই সাধারণ পরিষদের সভায় প্রত্যেক দেশের নেতা অথবা দেশটির কোনো একজন প্রতিনিধি সাধারণত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এবং যেসব বিষয়ে ভোটাভুটি হয়ে থাকে সেখানে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। আর সাধারণ পরিষদে প্রত্যেক সদস্যের ভোট সমান গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের মহাসচিব কে হবেন, তাও নির্ধারণ করে থাকে। পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য কারা হবে এবং জাতিসংঘের বাজেট কেমন হবে, সেটিও নির্ধারণ করা হয় সাধারণ পরিষদে।
এবারের সভায় টেকসই উন্নয়ন নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ও ১৯শে সেপ্টেম্বর। ঐ সভায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ কীভাবে অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করবে।
এই লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুধা ও দারিদ্র নিরসন, সারা বিশ্বে মানুষের আয় বৃদ্ধি ও শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করা এবং মানুষের জন্য সুপেয় পানি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। এরপর ১৯ থেকে ২৬শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে সাধারণ সভার আলোচনা।
এই আলোচনা পর্বে সাধারণত বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের প্রতিনিধি নিজ নিজ রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেন এবং সে বিষয়ে আলোচনা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে ২০শে সেপ্টেম্বর ‘ক্লাইমেট অ্যামবিশন সামিটে।’ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এই সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য।
এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মহামারি মোকাবেলা ও পরমাণু অস্ত্র বাতিল করার বিষয়েও আলোচনা হয়ে থাকে। প্রতি বছর সাধারণ পরিষদের সভা শুরুর আগে একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো’র কূটনীতিক ডেনিস ফ্রান্সিস।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নেতারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় অংশ নিতে আসলেও মূলত সভার বাইরে নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে হওয়া বৈঠকগুলোই সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে ওঠে।
জাতিসংঘের ছয়টি আনুষ্ঠানিক ভাষার – আরবি, চাইনিজ, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান, স্প্যানিশ - যে কোনো একটি ব্যবহার করে প্রত্যেক দেশের নেতা বা নেতার প্রতিনিধি বক্তব্য দিতে পারে। প্রত্যেক সদস্যকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বক্তব্য শেষ করতে বলা হলেও প্রতিনিয়তই এই নিয়ম ভাঙা হয়ে থাকে।