ভারতের অশান্ত মণিপুরে এখনো শান্তি ফেরেনি। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে কঠোর বিধি নিষেধ শিথিল করা হলেও আবারও জারি করা হয়েছে কারফিউ।
ইম্ফলের পূর্বাঞ্চলে ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয় যেন সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারেন। কিন্তু তড়িঘড়ি তুলে নেওয়া হল সেই কারফিউ শিথিলতা।
জি নিউজ টুয়েন্টিফোরের খবরে বলা হয়, যে পাঁচজন গ্রামরক্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাদের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার হঠাৎ মণিপুরের বিভিন্ন উপত্যকার স্থানীয় নারীরা থানায় হামলা চালান। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পশ্চিম ইম্ফলের সিঙ্গজামেই পুলিশ স্টেশনে কয়েক হাজার প্রতিবাদী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্লোগান দিতে দিতে থানার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে উত্তেজিত জনতার দল। পরে মণিপুর পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স থানার ৫০০ মিটার আগেই তাদের থামিয়ে দেয়। এর পর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে কারফিউ জারি হয়।
পুলিশ বলছে , আটক পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সেনার পোশাক পরে হামলা চালানো, পুলিশের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র লুট, অগ্নিসংযোগ-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন নিষিদ্ধ বিদ্রোহী সংগঠন পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র সদস্য। মৈরামথেং আনন্দ সিংহ নামে আর একজনের বিরুদ্ধে কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি নামে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে।
মৈরামথেংকে আগেও জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। গোষ্ঠীহিংসায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার ওই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
মণিপুর পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সেনার উর্দি পরে হিংসায় অংশ নেওয়া এবং ইনসাস রাইফেল ও কার্তুজ লুটের প্রমাণ মিলেছে আটককৃতদের বিরুদ্ধে। লুট হওয়া অস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধারও হয়েছে।’’
যদিও মেইতেইদের কয়েকটি সংগঠনের অভিযোগ, ঐ পাঁচ জন নির্দোষ। তাঁদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেইতেইদের মহিলা গোষ্ঠী মেইরা পেইবি এবং পাঁচটি স্থানীয় সংগঠন মঙ্গলবার থেকেরাজ্য জুড়ে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছিল।
অল লাংথাবল কেন্দ্র ইউনাইটেড ক্লাব কো-অর্ডিনেটিং কমিটির সভাপতি ইয়ুমনাম হিটলার বলেন, “যে পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী। কুকি-জোদের হামলার হাত থেকে গ্রামবাসীদের বাঁচাতে তাঁরা রক্ষকের কাজ করেন। আমরা ওঁদের মুক্তি চাইছি।”
প্রসঙ্গত, মণিপুরের ২ নারীকে গণধর্ষণ ও তাদের নগ্ন করে হাঁটানোর ভিডিও সামনে আসতেই ভারত জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ৪ মে মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ভিডিও ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি ওঠে।
বিরোধীদের ক্রমাগত দাবির মুখে শেষপর্যন্ত মণিপুর ইস্যুতে মুখ খোলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ঘটনায় ৫ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নির্যাতিত দুই নারীর মধ্যে একজন কার্গিল যোদ্ধার স্ত্রী বলেও জানা গেছে।
প্রায় ৪ মাস ধরে মেইতেই ও কুকিদের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত মণিপুর। মেইতেইরা মণিপুরের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই। মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস তাদের। অপরদিকে কুকি ও জো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা থাকেন পাহাড়ি অঞ্চলে। মেইতেইদের সংরক্ষণের অধিকারের দাবির বিরোধীতা করেছেন কুকিরা।
কারণ, মেইতেইরা সংরক্ষণের আওতায় এলে তারা বনাঞ্চলে প্রবেশে অগ্রাধিকার পেয়ে যাবেন। এ নিয়ে গত ৩ মে প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই অশান্তির আগুনে পুড়ছে মণিপুর।
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ভারতের অশান্ত মণিপুরে এখনো শান্তি ফেরেনি। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে কঠোর বিধি নিষেধ শিথিল করা হলেও আবারও জারি করা হয়েছে কারফিউ।
ইম্ফলের পূর্বাঞ্চলে ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয় যেন সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারেন। কিন্তু তড়িঘড়ি তুলে নেওয়া হল সেই কারফিউ শিথিলতা।
জি নিউজ টুয়েন্টিফোরের খবরে বলা হয়, যে পাঁচজন গ্রামরক্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাদের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার হঠাৎ মণিপুরের বিভিন্ন উপত্যকার স্থানীয় নারীরা থানায় হামলা চালান। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পশ্চিম ইম্ফলের সিঙ্গজামেই পুলিশ স্টেশনে কয়েক হাজার প্রতিবাদী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্লোগান দিতে দিতে থানার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে উত্তেজিত জনতার দল। পরে মণিপুর পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স থানার ৫০০ মিটার আগেই তাদের থামিয়ে দেয়। এর পর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে কারফিউ জারি হয়।
পুলিশ বলছে , আটক পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সেনার পোশাক পরে হামলা চালানো, পুলিশের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র লুট, অগ্নিসংযোগ-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন নিষিদ্ধ বিদ্রোহী সংগঠন পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র সদস্য। মৈরামথেং আনন্দ সিংহ নামে আর একজনের বিরুদ্ধে কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি নামে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে।
মৈরামথেংকে আগেও জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। গোষ্ঠীহিংসায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার ওই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
মণিপুর পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সেনার উর্দি পরে হিংসায় অংশ নেওয়া এবং ইনসাস রাইফেল ও কার্তুজ লুটের প্রমাণ মিলেছে আটককৃতদের বিরুদ্ধে। লুট হওয়া অস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধারও হয়েছে।’’
যদিও মেইতেইদের কয়েকটি সংগঠনের অভিযোগ, ঐ পাঁচ জন নির্দোষ। তাঁদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেইতেইদের মহিলা গোষ্ঠী মেইরা পেইবি এবং পাঁচটি স্থানীয় সংগঠন মঙ্গলবার থেকেরাজ্য জুড়ে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছিল।
অল লাংথাবল কেন্দ্র ইউনাইটেড ক্লাব কো-অর্ডিনেটিং কমিটির সভাপতি ইয়ুমনাম হিটলার বলেন, “যে পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী। কুকি-জোদের হামলার হাত থেকে গ্রামবাসীদের বাঁচাতে তাঁরা রক্ষকের কাজ করেন। আমরা ওঁদের মুক্তি চাইছি।”
প্রসঙ্গত, মণিপুরের ২ নারীকে গণধর্ষণ ও তাদের নগ্ন করে হাঁটানোর ভিডিও সামনে আসতেই ভারত জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ৪ মে মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ভিডিও ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি ওঠে।
বিরোধীদের ক্রমাগত দাবির মুখে শেষপর্যন্ত মণিপুর ইস্যুতে মুখ খোলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ঘটনায় ৫ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নির্যাতিত দুই নারীর মধ্যে একজন কার্গিল যোদ্ধার স্ত্রী বলেও জানা গেছে।
প্রায় ৪ মাস ধরে মেইতেই ও কুকিদের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত মণিপুর। মেইতেইরা মণিপুরের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই। মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস তাদের। অপরদিকে কুকি ও জো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা থাকেন পাহাড়ি অঞ্চলে। মেইতেইদের সংরক্ষণের অধিকারের দাবির বিরোধীতা করেছেন কুকিরা।
কারণ, মেইতেইরা সংরক্ষণের আওতায় এলে তারা বনাঞ্চলে প্রবেশে অগ্রাধিকার পেয়ে যাবেন। এ নিয়ে গত ৩ মে প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই অশান্তির আগুনে পুড়ছে মণিপুর।