alt

আন্তর্জাতিক

ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আলাদাভাবে নয়, একসঙ্গেই হবে লোকসভা, বিধানসভা ও আঞ্চলিক সরকার নির্বাচন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ শীর্ষক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা।

পার্লামেন্টের শীতকালীন অধীবেশনেই এই প্রস্তাবনা পেশ করা হতে পারে এবং চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে লোকসভার চার ভাগের তিনভাগের সমর্থন লাগবে।

ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি একযোগে নির্বাচন আয়োজনের ওপর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বুধবার সেটির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তোলা হলে সেটি অনুমোদন পায়।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা দুটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে। এই প্রস্তাব বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা অভ্যন্তরীণ চাপ অনুভব শুরু করতে পারে (এক দেশ, এক নির্বাচন সম্পর্কে)। কারণ পরামর্শ কমিটি কাজ শুরু করার পর জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এই প্রস্তাবের পক্ষে ইতিবাচক সমর্থন দিয়েছেন, বিশেষ করে তরুণরা।’

কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি ও শিবসেনাসহ (উদ্ধব) বেশ কয়েকটি বিরোধী দল একসঙ্গে সব নির্বাচন আয়োজনের বিরোধিতা করে অভিযোগ করেছে যে, এটি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলকে উপকৃত করবে। তবে জেডি (ইউ) এবং চিরাগ পাসোয়ানের পার্টির মত এনডিএর মিত্ররা এই ধারণাটিকে সমর্থন করেছে।

বৈষ্ণব বলেন, ‘সমস্ত নির্বাচনের জন্য একটি সাধারণ ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। কোবিন্দ প্যানেলের সুপারিশমালা এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বাস্তবায়ন টিম গঠন করা হবে।

নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের সময় একসঙ্গে সব নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষার জন্য প্যানেল গঠন করা হয়েছিল, যা বিজেপির লোকসভা নির্বাচনের ইশতেহারে দেওয়া মূল প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে একটি। প্যানেলটি চলতি বছরের মার্চে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনটি অমিত শাহকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছেও পেশ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ।

এটিকে একটি যুগান্তকারী নির্বাচনী সংস্কার প্রস্তাব বলে অভিহিত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘এটি স্বচ্ছ ও আর্থিকভাবে দক্ষতা কেন্দ্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং সম্পদের আরও উত্পাদনশীল বরাদ্দের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রবল ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ‘আমরা এর সঙ্গে নেই। ‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ গণতন্ত্রে কাজ করতে পারে না। আমরা যদি আমাদের গণতন্ত্রে টিকে থাকতে চাই, তবে প্রয়োজন মত নির্বাচন হওয়া দরকার।’

এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একযোগে নির্বাচনের ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন।

আম আদমি পার্টি এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টাকে বিজেপির আরেকটি ‘জুমলা’ হিসেবে বর্ণনা করে একে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, এ বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। হিন্দি ভাষাভাষীরা ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ অর্থে জুমলা শব্দের ব্যবহার করে থাকে।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পার্টির ভাষ্য - তারা মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানার নির্বাচন একসঙ্গে পরিচালনা করতে পারেনি। তাদের মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে দিল্লির নির্বাচন করতে বলা হয়েছিল। তাদের উচিত, আগে নিজেদের প্রমাণ করা।

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনও বিজেপির এই পদক্ষেপকে ‘জুমলা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘গণতন্ত্রবিরোধী বিজেপির আরেকটি সস্তা স্টান্ট হল ‘এক দেশ, এক ভোট’। কেন হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের নির্বাচন ঘোষণা করা হয়নি? মহারাষ্ট্র সরকার এই জুনের বাজেটে ‘লাড়কি বহিন’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপ অগাস্টে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে এবং দ্বিতীয় ধাপ অক্টোবরে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছবে। আপনারা এক সঙ্গে তিনটি রাজ্যের ভোট করাতে পারেন না আর এক দেশ, এক ভোটের কথা বলছেন।’

বিরোধীরা কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দাবি করেছেন, কোবিন্দ কমিটির কাছে ৪৭টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল মতামত জানিয়েছিল, যার মধ্যে ৩২টি দল ‘এক দেশ, এক ভোট’ সমর্থন করেছে; বিরোধিতা করেছে ১৫টি রাজনৈতিক দল।

কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, শিবসেনা (উদ্ধব), সিপিএমসহ বিরোধী দলগুলো শুরু থেকেই ‘এক দেশ, এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর।

তাদের ভাষ্য- এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থি।

আম আদমি পার্টির সন্দীপ পাঠক বলেন, ‘যদি কোনো বিধানসভার মেয়াদের মাঝামাঝি কোনো রাজ্যে সরকার পতন হয়, তাহলে বিজেপি কি তার ‘গুন্ডাগার্ডি’ দিয়ে রাজ্য চালাবে?’

দ্য হিন্দু লিখেছে, পার্লামেন্টে যেহেতু বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই; ফলে সেখানে বিল উঠলে ধাক্কা খেতে পারে তারা। ভারতের সংবিধানে কোনো সংশোধন আনতে পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন হয়; যা এই মুহূর্তে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিকদের মিলিয়েও নিশ্চিত করতে পারবে না মোদীর দল। ফলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদেরও সমর্থন দরকার হবে বিজেপির।

ছবি

ইসরায়েলকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ: বিনিয়োগ প্রত্যাহার করল নরওয়ের বৃহৎ পেনশন কোম্পানি কেএলপি

ছবি

‘শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, দেখা যায় খালি চোখেও’

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার দাবিতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইরান শান্তি চাইলে উঠে যেতে পারে নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

হুমকি ও শান্তির বার্তা, গাজা নিয়ে দ্বৈত নীতি

পাকিস্তানের জন্য ৩৪০ কোটি ডলারের ঋণ নবায়ন করলো চীন

ছবি

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৭২

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ২ কর্মী নিহত

ছবি

সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, উত্তাল বেলগ্রেড

‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ : ফের ট্রাম্পের সমালোচনায় ইলন মাস্ক

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ ইরানের

ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে

নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচার বন্ধ করতে চান ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্যোগের পরও গাজায় থেমে নেই হত্যাযজ্ঞ

ছবি

পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যায় দুই দিনে ৩২ জনের মৃত্যু

ছবি

পুরিতে রথযাত্রায় ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নিহত ৩, আহত ১০

ছবি

নর্থ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক বহরে আত্মঘাতী হামলা, শিশু আহত ছয়

কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

ছবি

ইউক্রেনের শহর দখল করতে ১ লাখের বেশি সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া

ছবি

বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ইরানের সমর্থন নিয়ে অনিশ্চয়তা, অস্তিত্ব-সংকটে হামাস

ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ ইরানি সাংবাদিক

ছবি

শোক-সমবেদনায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্মরণ করলেন ইরানিরা

আল-আকসা চত্বরে নাচ-গানের অনুমতি দিল ইসরায়েল

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী ভারতের সংসদ সদস্যরা

ছবি

নতুন এমআই-সিক্স প্রধানের দাদা ছিলেন হিটলারের ‘গুপ্তচর’

ছবি

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তিতে সই, জানালেন ট্রাম্প

ছবি

খামেনিকে একহাত নিলেন ট্রাম্প, পারমাণবিক কর্মসূচি চালালে ইরানে ফের হামলার হুমকি

ছবি

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

ইসরায়েল চেয়েছিল খামেনিকে হত্যা করতে, কিন্তু সুযোগ মেলেনি: প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি আটক

ছবি

‘সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে ঐকমত্যের অভাবে যৌথ বিবৃতিতে ভারতের অস্বীকৃতি

যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ইরানি সেনাসহ গ্রেপ্তার ১৩০

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে কীভাবে সংঘাত ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’: ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট

tab

আন্তর্জাতিক

ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আলাদাভাবে নয়, একসঙ্গেই হবে লোকসভা, বিধানসভা ও আঞ্চলিক সরকার নির্বাচন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ শীর্ষক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা।

পার্লামেন্টের শীতকালীন অধীবেশনেই এই প্রস্তাবনা পেশ করা হতে পারে এবং চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে লোকসভার চার ভাগের তিনভাগের সমর্থন লাগবে।

ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি একযোগে নির্বাচন আয়োজনের ওপর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বুধবার সেটির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তোলা হলে সেটি অনুমোদন পায়।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা দুটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে। এই প্রস্তাব বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা অভ্যন্তরীণ চাপ অনুভব শুরু করতে পারে (এক দেশ, এক নির্বাচন সম্পর্কে)। কারণ পরামর্শ কমিটি কাজ শুরু করার পর জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এই প্রস্তাবের পক্ষে ইতিবাচক সমর্থন দিয়েছেন, বিশেষ করে তরুণরা।’

কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি ও শিবসেনাসহ (উদ্ধব) বেশ কয়েকটি বিরোধী দল একসঙ্গে সব নির্বাচন আয়োজনের বিরোধিতা করে অভিযোগ করেছে যে, এটি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলকে উপকৃত করবে। তবে জেডি (ইউ) এবং চিরাগ পাসোয়ানের পার্টির মত এনডিএর মিত্ররা এই ধারণাটিকে সমর্থন করেছে।

বৈষ্ণব বলেন, ‘সমস্ত নির্বাচনের জন্য একটি সাধারণ ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। কোবিন্দ প্যানেলের সুপারিশমালা এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বাস্তবায়ন টিম গঠন করা হবে।

নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের সময় একসঙ্গে সব নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষার জন্য প্যানেল গঠন করা হয়েছিল, যা বিজেপির লোকসভা নির্বাচনের ইশতেহারে দেওয়া মূল প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে একটি। প্যানেলটি চলতি বছরের মার্চে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনটি অমিত শাহকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছেও পেশ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ।

এটিকে একটি যুগান্তকারী নির্বাচনী সংস্কার প্রস্তাব বলে অভিহিত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘এটি স্বচ্ছ ও আর্থিকভাবে দক্ষতা কেন্দ্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং সম্পদের আরও উত্পাদনশীল বরাদ্দের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রবল ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ‘আমরা এর সঙ্গে নেই। ‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ গণতন্ত্রে কাজ করতে পারে না। আমরা যদি আমাদের গণতন্ত্রে টিকে থাকতে চাই, তবে প্রয়োজন মত নির্বাচন হওয়া দরকার।’

এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একযোগে নির্বাচনের ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন।

আম আদমি পার্টি এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টাকে বিজেপির আরেকটি ‘জুমলা’ হিসেবে বর্ণনা করে একে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, এ বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। হিন্দি ভাষাভাষীরা ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ অর্থে জুমলা শব্দের ব্যবহার করে থাকে।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পার্টির ভাষ্য - তারা মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানার নির্বাচন একসঙ্গে পরিচালনা করতে পারেনি। তাদের মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে দিল্লির নির্বাচন করতে বলা হয়েছিল। তাদের উচিত, আগে নিজেদের প্রমাণ করা।

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনও বিজেপির এই পদক্ষেপকে ‘জুমলা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘গণতন্ত্রবিরোধী বিজেপির আরেকটি সস্তা স্টান্ট হল ‘এক দেশ, এক ভোট’। কেন হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের নির্বাচন ঘোষণা করা হয়নি? মহারাষ্ট্র সরকার এই জুনের বাজেটে ‘লাড়কি বহিন’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপ অগাস্টে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে এবং দ্বিতীয় ধাপ অক্টোবরে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছবে। আপনারা এক সঙ্গে তিনটি রাজ্যের ভোট করাতে পারেন না আর এক দেশ, এক ভোটের কথা বলছেন।’

বিরোধীরা কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দাবি করেছেন, কোবিন্দ কমিটির কাছে ৪৭টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল মতামত জানিয়েছিল, যার মধ্যে ৩২টি দল ‘এক দেশ, এক ভোট’ সমর্থন করেছে; বিরোধিতা করেছে ১৫টি রাজনৈতিক দল।

কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, শিবসেনা (উদ্ধব), সিপিএমসহ বিরোধী দলগুলো শুরু থেকেই ‘এক দেশ, এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর।

তাদের ভাষ্য- এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থি।

আম আদমি পার্টির সন্দীপ পাঠক বলেন, ‘যদি কোনো বিধানসভার মেয়াদের মাঝামাঝি কোনো রাজ্যে সরকার পতন হয়, তাহলে বিজেপি কি তার ‘গুন্ডাগার্ডি’ দিয়ে রাজ্য চালাবে?’

দ্য হিন্দু লিখেছে, পার্লামেন্টে যেহেতু বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই; ফলে সেখানে বিল উঠলে ধাক্কা খেতে পারে তারা। ভারতের সংবিধানে কোনো সংশোধন আনতে পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন হয়; যা এই মুহূর্তে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিকদের মিলিয়েও নিশ্চিত করতে পারবে না মোদীর দল। ফলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদেরও সমর্থন দরকার হবে বিজেপির।

back to top