alt

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প না হ্যারিস, কার জয়ে কার কী লাভ

নাসরীন গীতি : বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

শেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণ। গত কয়েক মাস ধরে এ দিকেই মনোযোগ পুরো বিশ্বের। ভোটের ময়দান থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানো এবং তার পরিবর্তে কমলা হ্যারিসের মনোনয়ন থেকে শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী ডনাল্ড ট্রাম্পের উপর প্রচারসভায় হামলায়- একাধিক নাটকীয় মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে এবারের মার্কিন নির্বাচন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই আসন্ন পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কতখানি পড়তে চলেছে, এ নিয়েও জল্পনা-কল্পনা আর নানা গবেষণার শেষ নেই। এখন সবার আগ্রহ ফলাফলের দিকে- হাতি না গাধা, কে জিতবে।

প্রশ্ন হলো, কমলা হ্যারিস না ডনাল্ড ট্রাম্প - যে-ই হোক ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাতে বাংলাদেশের বা পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর কি লাভ কিংবা কতখানি ক্ষতি?

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইটকে ঘিরে সেই আলোচনা জোরালো হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অতীতে মার্কিন রাজনীতিকদের, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক দেখা গেছে। তাই বর্তমান প্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন সামনে আসছেই। যেমন- ট্রাম্প-হ্যারিস, কার জয়ে বাংলাদেশের জন্য কী হবে? ভারতই বা এখানে কতটা ফ্যাক্টর হতে পারে? ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন রাজনীতিকদের সম্পর্ক কি কোনো ভূমিকা রাখবে এই সম্পর্কে?

বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোতে জোর দেয় ডেমোক্র্যাট প্রশাসন। কমলা হ্যারিস বা ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে ব্যবসা-বাণিজ্য, সহযোগিতার জায়গাগুলো বাংলাদেশের জন্য সহজ থাকার সুযোগটা বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং লেখক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, কমলা হ্যারিস জয়ী হলে বর্তমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতা ও সামঞ্জস্য বজায় থাকবে, কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

তার ধারণা, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দু’দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয় না ডনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান সম্পর্কের কাঠামোকে সমর্থন করবেন, যেখানে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে উন্নয়ন, সংস্কার ও অন্যান্য সহায়তা বা সমর্থন করছে। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রদানের উপর জোর দেয়ার মতো সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বজুড়েই আমেরিকার মানবিক সহযোগিতার জায়গা কমে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তার জায়গা হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে দেখছেন তিনি, কারণ জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসে, তার একটা বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া।

আমেরিকার ইতিহাসে ডনাল্ড ট্রাম্পকে ঠিক প্রথাগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যায়নি। তিনি যেভাবে বৈদেশিক নীতির জায়গাগুলো বিবেচনা করেন, সেটি ঘিরে অনিশ্চয়তাও থাকে। যদিও সাধারণত আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বৈদেশিক নীতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয় না। এর পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বা কাঠামোগুলোর একটা শক্তিশালী ভূমিকা থাকে বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু ট্রাম্পকে আমরা দেখেছি কিছু প্রচারণায় ইনস্টিটিউশনকে বদলে দেয়ার কথা বলছেন। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে।’ যদিও বিষয়টি আদৌ কতদূর সম্ভব হবে বা পররাষ্ট্র নীতির জায়গায় প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলেই মনে করেন তিনি।

এতো গেলো বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। এবার প্রশ্ন হলো- ডনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিস- যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যিনিই হন না কেন, ভারতের সঙ্গে মার্কিনীদের সমীকরণ কতটা বদলাতে পারে?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এর উত্তরে সাবেক কূটনীতিক এবং লেখক রাজীব ডোগরা বলেন, ‘কমলা এবং ট্রাম্প দু’জনেই ভারত সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। ভারত-ও এই দুই প্রার্থীকে ভালোভাবে চেনে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ভারতে এসেছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তার শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও মার্কিন সফরে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। তার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ভালো।’

এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কে ক্ষমতায় এলে ভারতের পক্ষে লাভজনক হবে বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট এলে দুই দেশের সম্পর্কে তেমন বড়সড় প্রভাব না পড়লেও ক্ষেত্র বিশেষে এর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এলে সে দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে তার অবস্থান, জ্বালানি বিষয়ক নীতি, জলবায়ু সম্পর্কিত নীতি এবং চীনের প্রতি তার মনোভাবের মতো একাধিক বিষয় ভারতকে প্রভাবিত করতে পারে।

এদিকে, নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। তবে তিনি জিতলেও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জেতেন, সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এখনকার তুলনায় কমে যেতে পারে।

কমলা বা ট্রাম্প, যে-ই যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, ইউক্রেন সীমান্তে, এমনকি দেশটিতে বসবাসরত প্রত্যেকের ওপর গভীর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

যদি তারা (কমলা বা ট্রাম্প) ইউক্রেনকে কিছু ভূখ- রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে ও ফ্রন্টলাইন থেকে সরে যেতে বলেন, সেক্ষেত্রে জাপোরিঝঝিয়ার মতো অঞ্চলগুলো হঠাৎ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ভাগ হয়ে পড়তে পারে। যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে ১৯৫০-এর দশকে এ লড়াই থামলেও, এখন পর্যন্ত কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটেনি।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত মেটাতে ‘কিছু একটা বের করবেন’। যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের কিছু ভূখ- ছেড়ে দেয়া লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

২০১৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় রাশিয়ার উগ্র-জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ভøাদিমির ঝিরিনোভস্কি এতোটাই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন যে, প্রকাশ্যে তিনি ১৩২টি শ্যাম্পেনের বোতল খুলে উদযাপন করেছিলেন।

পরবর্তীতে এই উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ে। রাশিয়ার নেজাভিসিমায়া গেজেটা পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী ও প্রধান সম্পাদক কনস্ট্যান্টিন রেমচুকভ বলেছিলেন, সেসময় প্রাপ্তি এতটুকুই, ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প রাশিয়ায় মানবাধিকারের বিষয়ে কখনও’ই প্রচারণা চালাননি। অনেকেই ভেবেছিলেন যে, ক্ষমতায় গেলে ট্রাম্প রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন। অথচ ট্রাম্পের শাসনামলেই রাশিয়ার উপর সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞাটি দেয়া হয়েছিল। ফলে গত মেয়াদের শেষদিকে তার কার্যক্রম নিয়ে অনেক মানুষ হতাশ হয়েছিল।

হয়তো সেকারণেই আট বছর পর এবারের মার্কিন নির্বাচনের আগে কোনো রুশ রাজনীতিবিদ বা কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের সম্ভাবনা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

এতে বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে যে, ট্রাম্প প্রশ্নে তারা এখন ঠিক আগের অবস্থানে নেই। বরং এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে দেখা গেছে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রশংসা ও সমর্থন করতে।

ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা নিয়ে রিপাবলিকানপ্রার্থী ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণায় বাইডেন প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করছেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনি বিতর্কের সময়েও তিনি ইউক্রেনকে যুদ্ধে জেতানোর বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে ট্রাম্প উল্টো দাবি করেছেন যে, তিনি ক্ষমতায় থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না।

কিন্তু ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিসকে এর ঠিক বিপরীত অবস্থানে দেখা যাচ্ছে। তিনি সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলছেন।

ছবি

গাজায় নিহত প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু : জাতিসংঘ

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার এফ-১৫ যুদ্ধবিমান

ছবি

হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে সুসিকে বেছে নিলেন ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের প্রশংসায় পুতিন, সংলাপের জন্য প্রস্তুত

ছবি

গাজা ও লেবাননজুড়ে ইসরায়েলের বিমান হামলা, নিহত শতাধিক

ছবি

ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনে করে

ছবি

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে কমলা হ্যারিসের পরাজয় নিয়ে ক্ষোভ ও আত্মসমালোচনা

ছবি

ইরানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোশাক খোলার পর নারী আটক, মুক্তি দাবি মানবাধিকারকর্মীদের

ছবি

লেবাননে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৩০

ছবি

হতাশ হবেন না, ভোটে পরাজয় মেনে নিচ্ছি, লড়াই ছাড়ছি না : কমালা

ছবি

প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সারা ম্যাকব্রাইড

চমৎকার জয়, অ্যামেরিকাকে আবারও মহান বানানোর সুযোগ: ট্রাম্প

ছবি

না, যুক্তরাষ্ট্র এখনও নারী নেতৃত্বে রাজি না

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন মোদি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প

ছবি

নির্বাচনের রাতে দুঃসংবাদের ভিড়ে কথা বলবেন না কমলা

ছবি

জনতার দুর্দান্ত বিজয়, এটি আমেরিকাকে মহান বানানোর সুযোগ: ট্রাম্প

ছবি

সব অঙ্গরাজ্যে ভোট শেষ, এখন আনুষ্ঠানিক ফলাফলের অপেক্ষা

ছবি

বিজয় ঘোষণা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছবি

ভোট শেষ, ফলাফল জানতে কত দেরি

ছবি

শেষ ভাষণে তরুণ ভোটারদের কাছে ভোট চাইলেন কমালা হ্যারিস

ছবি

বাংলাদেশিদের নিয়ে ফের তোপ দাগলেন নরেন্দ্র মোদি

ছবি

ঐতিহাসিক এক ভোটের দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গাধা না হাতি, মার্কিনিরা বেছে নিবেন কাকে

ছবি

বিশ্ব ব্যবস্থা নির্ধারণের ভোটযুদ্ধ আজ

ছবি

ইরানে ছাদবিহীন উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, বিপ্লবী জেনারেলসহ নিহত ২

ছবি

‘কেউই আমাদের কথা ভাবেন না’—মার্কিন নির্বাচন নিয়ে পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের অনুভূতি

ছবি

গাজা যুদ্ধের অবসানে সব কিছুই করব : কমালা হ্যারিস

ছবি

উত্তরাখণ্ডে বাস গিরিসঙ্কটে পড়ে ৩৬ জন নিহত, আহত ও নিখোঁজ অনেক

ছবি

শিশুদের মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা নাইজেরিয়ায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৩১

ছবি

ভুয়া ভিডিও: অভিযোগ রাশিয়ার দিকে, সতর্কবার্তা এফবিআইয়ের

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু

ছবি

তেল আবিবে ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে রকেট হামলা হিজবুল্লাহর

ছবি

বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, চতুর্থ অবস্থানে ঢাকা

ছবি

জাপানে ১২৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো অক্টোবরের তাপমাত্রা

tab

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প না হ্যারিস, কার জয়ে কার কী লাভ

নাসরীন গীতি

বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

শেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণ। গত কয়েক মাস ধরে এ দিকেই মনোযোগ পুরো বিশ্বের। ভোটের ময়দান থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানো এবং তার পরিবর্তে কমলা হ্যারিসের মনোনয়ন থেকে শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী ডনাল্ড ট্রাম্পের উপর প্রচারসভায় হামলায়- একাধিক নাটকীয় মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে এবারের মার্কিন নির্বাচন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই আসন্ন পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কতখানি পড়তে চলেছে, এ নিয়েও জল্পনা-কল্পনা আর নানা গবেষণার শেষ নেই। এখন সবার আগ্রহ ফলাফলের দিকে- হাতি না গাধা, কে জিতবে।

প্রশ্ন হলো, কমলা হ্যারিস না ডনাল্ড ট্রাম্প - যে-ই হোক ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাতে বাংলাদেশের বা পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর কি লাভ কিংবা কতখানি ক্ষতি?

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইটকে ঘিরে সেই আলোচনা জোরালো হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অতীতে মার্কিন রাজনীতিকদের, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক দেখা গেছে। তাই বর্তমান প্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন সামনে আসছেই। যেমন- ট্রাম্প-হ্যারিস, কার জয়ে বাংলাদেশের জন্য কী হবে? ভারতই বা এখানে কতটা ফ্যাক্টর হতে পারে? ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন রাজনীতিকদের সম্পর্ক কি কোনো ভূমিকা রাখবে এই সম্পর্কে?

বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোতে জোর দেয় ডেমোক্র্যাট প্রশাসন। কমলা হ্যারিস বা ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে ব্যবসা-বাণিজ্য, সহযোগিতার জায়গাগুলো বাংলাদেশের জন্য সহজ থাকার সুযোগটা বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং লেখক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, কমলা হ্যারিস জয়ী হলে বর্তমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতা ও সামঞ্জস্য বজায় থাকবে, কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

তার ধারণা, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দু’দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয় না ডনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান সম্পর্কের কাঠামোকে সমর্থন করবেন, যেখানে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে উন্নয়ন, সংস্কার ও অন্যান্য সহায়তা বা সমর্থন করছে। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রদানের উপর জোর দেয়ার মতো সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বজুড়েই আমেরিকার মানবিক সহযোগিতার জায়গা কমে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তার জায়গা হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে দেখছেন তিনি, কারণ জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসে, তার একটা বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া।

আমেরিকার ইতিহাসে ডনাল্ড ট্রাম্পকে ঠিক প্রথাগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যায়নি। তিনি যেভাবে বৈদেশিক নীতির জায়গাগুলো বিবেচনা করেন, সেটি ঘিরে অনিশ্চয়তাও থাকে। যদিও সাধারণত আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বৈদেশিক নীতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয় না। এর পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বা কাঠামোগুলোর একটা শক্তিশালী ভূমিকা থাকে বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু ট্রাম্পকে আমরা দেখেছি কিছু প্রচারণায় ইনস্টিটিউশনকে বদলে দেয়ার কথা বলছেন। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে।’ যদিও বিষয়টি আদৌ কতদূর সম্ভব হবে বা পররাষ্ট্র নীতির জায়গায় প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলেই মনে করেন তিনি।

এতো গেলো বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। এবার প্রশ্ন হলো- ডনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিস- যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যিনিই হন না কেন, ভারতের সঙ্গে মার্কিনীদের সমীকরণ কতটা বদলাতে পারে?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এর উত্তরে সাবেক কূটনীতিক এবং লেখক রাজীব ডোগরা বলেন, ‘কমলা এবং ট্রাম্প দু’জনেই ভারত সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। ভারত-ও এই দুই প্রার্থীকে ভালোভাবে চেনে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ভারতে এসেছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তার শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও মার্কিন সফরে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। তার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ভালো।’

এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কে ক্ষমতায় এলে ভারতের পক্ষে লাভজনক হবে বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট এলে দুই দেশের সম্পর্কে তেমন বড়সড় প্রভাব না পড়লেও ক্ষেত্র বিশেষে এর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এলে সে দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে তার অবস্থান, জ্বালানি বিষয়ক নীতি, জলবায়ু সম্পর্কিত নীতি এবং চীনের প্রতি তার মনোভাবের মতো একাধিক বিষয় ভারতকে প্রভাবিত করতে পারে।

এদিকে, নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। তবে তিনি জিতলেও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জেতেন, সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এখনকার তুলনায় কমে যেতে পারে।

কমলা বা ট্রাম্প, যে-ই যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, ইউক্রেন সীমান্তে, এমনকি দেশটিতে বসবাসরত প্রত্যেকের ওপর গভীর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

যদি তারা (কমলা বা ট্রাম্প) ইউক্রেনকে কিছু ভূখ- রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে ও ফ্রন্টলাইন থেকে সরে যেতে বলেন, সেক্ষেত্রে জাপোরিঝঝিয়ার মতো অঞ্চলগুলো হঠাৎ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ভাগ হয়ে পড়তে পারে। যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে ১৯৫০-এর দশকে এ লড়াই থামলেও, এখন পর্যন্ত কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটেনি।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত মেটাতে ‘কিছু একটা বের করবেন’। যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের কিছু ভূখ- ছেড়ে দেয়া লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

২০১৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় রাশিয়ার উগ্র-জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ভøাদিমির ঝিরিনোভস্কি এতোটাই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন যে, প্রকাশ্যে তিনি ১৩২টি শ্যাম্পেনের বোতল খুলে উদযাপন করেছিলেন।

পরবর্তীতে এই উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ে। রাশিয়ার নেজাভিসিমায়া গেজেটা পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী ও প্রধান সম্পাদক কনস্ট্যান্টিন রেমচুকভ বলেছিলেন, সেসময় প্রাপ্তি এতটুকুই, ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প রাশিয়ায় মানবাধিকারের বিষয়ে কখনও’ই প্রচারণা চালাননি। অনেকেই ভেবেছিলেন যে, ক্ষমতায় গেলে ট্রাম্প রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন। অথচ ট্রাম্পের শাসনামলেই রাশিয়ার উপর সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞাটি দেয়া হয়েছিল। ফলে গত মেয়াদের শেষদিকে তার কার্যক্রম নিয়ে অনেক মানুষ হতাশ হয়েছিল।

হয়তো সেকারণেই আট বছর পর এবারের মার্কিন নির্বাচনের আগে কোনো রুশ রাজনীতিবিদ বা কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের সম্ভাবনা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

এতে বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে যে, ট্রাম্প প্রশ্নে তারা এখন ঠিক আগের অবস্থানে নেই। বরং এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে দেখা গেছে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রশংসা ও সমর্থন করতে।

ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা নিয়ে রিপাবলিকানপ্রার্থী ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণায় বাইডেন প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করছেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনি বিতর্কের সময়েও তিনি ইউক্রেনকে যুদ্ধে জেতানোর বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে ট্রাম্প উল্টো দাবি করেছেন যে, তিনি ক্ষমতায় থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না।

কিন্তু ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিসকে এর ঠিক বিপরীত অবস্থানে দেখা যাচ্ছে। তিনি সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলছেন।

back to top