স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্পের আওতায় বন্দি দমকলকর্মীদের মোতায়েন
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে দমকল বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন প্রায় এক হাজার কারাবন্দি নারী ও পুরুষ। এই বন্দিদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ‘ফায়ার ক্যাম্প’ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দাবানল নিয়ন্ত্রণের স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্পে অংশ নিয়ে তারা পেশাদার দমকলকর্মীদের সঙ্গে রাতদিন কাজ করছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই নজিরবিহীন দাবানলে এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুড়ে গেছে ৩৭ হাজার একর এলাকা এবং ধ্বংস হয়েছে ১০ হাজারের বেশি অবকাঠামো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার থেকে কারাবন্দিদের উপস্থিতি আরও বাড়ানো হয়, যখন দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (সিডিসিআর) পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্পের আওতায় এই বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্র পরিচালিত ৩৫টি ফায়ার ক্যাম্প রয়েছে, যার মধ্যে দুটি শুধুমাত্র নারীদের জন্য। এসব ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষিত প্রায় ১,৮৭০ বন্দি ‘বন্দি-দমকলকর্মী’ হিসেবে কাজ করেন।
কমলা রঙের জাম্পসুট পরে পেশাদার দমকলকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছেন তারা। দাবানল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার কাজও করছেন বন্দি-দমকলকর্মীরা।
সিডিসিআরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “কারাবন্দি দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে ও পুনরুদ্ধারের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।”
এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। যদিও প্রকল্পটি প্রশংসিত, তবু এটি নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অনেকেই এটিকে বন্দিদের শোষণের একটি উপায় হিসেবে দেখেন। বন্দি-দমকলকর্মীদের দৈনিক মজুরি ৫.৮০ থেকে ১০.২৪ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। জরুরি অবস্থায় তারা প্রতিদিন অতিরিক্ত এক ডলার পান।
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার অপেশাদার দমকলকর্মীরা বছরে এক লাখ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এই বৈষম্যের কারণে প্রকল্পটি নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার রিক্রুটমেন্ট প্রোগ্রামের (এফএফআরপি) সহ-প্রতিষ্ঠাতা রয়েল রামি নিজেও একসময় বন্দি-দমকলকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, “বন্দিদের সস্তা শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি তারা আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারান, তাদের ন্যূনতম স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না।”
তবে রামি স্বীকার করেন, দমকলকর্মী হিসেবে কাজ করলে বন্দিরা অন্য কাজের তুলনায় কিছুটা বেশি মজুরি পান। তাছাড়া দমকল শিবিরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বন্দিরা ‘টাইম ক্রেডিট’ অর্জন করেন, যা তাদের সাজা কমাতে সহায়তা করে।
রামি আরও বলেন, মুক্তি পাওয়ার পর অনেক বন্দি পেশাদার দমকলকর্মী হতে চাইলেও তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয় না। কারণ, দমকলকর্মীর পেশায় সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।
রামি তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ধরনের কারাবন্দিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তার মতে, প্রশিক্ষিত বন্দিদের পুনর্বাসনের সুযোগ দিলে তারা সমাজে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল নিয়ন্ত্রণে বন্দি-দমকলকর্মীদের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও প্রকল্পটি নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক ও বৈষম্য প্রশ্ন তুলেছে। সুষ্ঠু নীতিমালা এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে এটি বন্দিদের পুনর্বাসন ও সেবার একটি কার্যকর মডেল হতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্পের আওতায় বন্দি দমকলকর্মীদের মোতায়েন
শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে দমকল বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন প্রায় এক হাজার কারাবন্দি নারী ও পুরুষ। এই বন্দিদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ‘ফায়ার ক্যাম্প’ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দাবানল নিয়ন্ত্রণের স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্পে অংশ নিয়ে তারা পেশাদার দমকলকর্মীদের সঙ্গে রাতদিন কাজ করছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই নজিরবিহীন দাবানলে এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুড়ে গেছে ৩৭ হাজার একর এলাকা এবং ধ্বংস হয়েছে ১০ হাজারের বেশি অবকাঠামো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার থেকে কারাবন্দিদের উপস্থিতি আরও বাড়ানো হয়, যখন দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (সিডিসিআর) পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্পের আওতায় এই বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্র পরিচালিত ৩৫টি ফায়ার ক্যাম্প রয়েছে, যার মধ্যে দুটি শুধুমাত্র নারীদের জন্য। এসব ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষিত প্রায় ১,৮৭০ বন্দি ‘বন্দি-দমকলকর্মী’ হিসেবে কাজ করেন।
কমলা রঙের জাম্পসুট পরে পেশাদার দমকলকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছেন তারা। দাবানল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার কাজও করছেন বন্দি-দমকলকর্মীরা।
সিডিসিআরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “কারাবন্দি দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে ও পুনরুদ্ধারের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।”
এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। যদিও প্রকল্পটি প্রশংসিত, তবু এটি নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অনেকেই এটিকে বন্দিদের শোষণের একটি উপায় হিসেবে দেখেন। বন্দি-দমকলকর্মীদের দৈনিক মজুরি ৫.৮০ থেকে ১০.২৪ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। জরুরি অবস্থায় তারা প্রতিদিন অতিরিক্ত এক ডলার পান।
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার অপেশাদার দমকলকর্মীরা বছরে এক লাখ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এই বৈষম্যের কারণে প্রকল্পটি নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার রিক্রুটমেন্ট প্রোগ্রামের (এফএফআরপি) সহ-প্রতিষ্ঠাতা রয়েল রামি নিজেও একসময় বন্দি-দমকলকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, “বন্দিদের সস্তা শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি তারা আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারান, তাদের ন্যূনতম স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না।”
তবে রামি স্বীকার করেন, দমকলকর্মী হিসেবে কাজ করলে বন্দিরা অন্য কাজের তুলনায় কিছুটা বেশি মজুরি পান। তাছাড়া দমকল শিবিরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বন্দিরা ‘টাইম ক্রেডিট’ অর্জন করেন, যা তাদের সাজা কমাতে সহায়তা করে।
রামি আরও বলেন, মুক্তি পাওয়ার পর অনেক বন্দি পেশাদার দমকলকর্মী হতে চাইলেও তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয় না। কারণ, দমকলকর্মীর পেশায় সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।
রামি তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ধরনের কারাবন্দিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তার মতে, প্রশিক্ষিত বন্দিদের পুনর্বাসনের সুযোগ দিলে তারা সমাজে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল নিয়ন্ত্রণে বন্দি-দমকলকর্মীদের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও প্রকল্পটি নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক ও বৈষম্য প্রশ্ন তুলেছে। সুষ্ঠু নীতিমালা এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে এটি বন্দিদের পুনর্বাসন ও সেবার একটি কার্যকর মডেল হতে পারে।