alt

আন্তর্জাতিক

ঔপনিবেশিক আমলের মতোই শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন পশ্চিমের ধনীরা : অক্সফাম

গার্ডিয়ান : মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

পশ্চিমের কয়েকজন শীর্ষ ধনকুবের

বিশ্বজুড়ে তরতরিয়ে বাড়ছে ধনকুবেরদের সম্পদ। শুধু ২০২৪ সালেই তাদের সম্পদের মোট পরিমাণ বেড়েছে দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫৭০ কোটি ডলার করে।

শুধু বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে তিন গুণ দ্রুত হারে।

সংখ্যাও বেড়েছে শতকোটিপতিদের।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে অক্সফামের। মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের মালিক এসব ধনীরা কোথা থেকে এত সম্পদ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বলছে, এসব ধনী, বিশেষ করে ইউরোপের ধনীদের একটি বড় অংশ এই সম্পদ পেয়েছেন পরিবার থেকে। উত্তরাধিকার সূত্রে। আর তাদের সেই সম্পদের একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে।

সেসময় আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণের দেশগুলো থেকে শোষণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ চলে আসে পশ্চিমা দেশগুলোর ধনীদের হতে।

আজও একইভাবে চলছে সম্পদের সেই শোষণ, বিশ্লেষণ অক্সফামের।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বে শত কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৬৫ জন। গত বছর বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৯ জন। অর্থাৎ গত বছর প্রতি সপ্তাহে প্রায় চারজন করে যুক্ত হয়েছেন শত কোটিপতিদের দলে।

আর গত এক বছরে শত কোটিপতিদের মোট সম্পদ ১৩ লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৫ লাখ কোটি ডলার হয়েছে।

ফ্রান্সের ‘মিডিয়া মোগল’ ভিনসেন্ট বোলোরের উদাহরণ দিয়ে অক্সফাম দেখিয়েছে, তার সম্পদের বড় একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে আফ্রিকায় তার নানার কোম্পানির আয় থেকে।

আজও শোষণের মাধ্যমেই পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ এখনও পৃথিবীর পশ্চিম ও উত্তরের দেশে, তাদের কিছু নাগরিকদের হাতে চলে যাচ্ছে।

অক্সফাম একে আধুনিক সময়ের ‘উপনিবেশবাদ’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আধুনিক উপনিবেশবাদে এ শোষণ চলে নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে।

অক্সফাম হিসেব করেছে, এই আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো উত্তরের দেশগুলোর ১ শতাংশ ধনী দক্ষিণের দেশগুলো থেকে প্রতি ঘণ্টায় তিন কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের মোট সম্পদের ৬৯ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ এই উত্তরের দেশগুলোর হাতে। বিশ্বে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের ৬৮ শতাংশই সেখানকার। বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৭ শতাংশই তাদের হাতে।

অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশের বসবাস এই দেশগুলোতে।

অক্সফাম তাদের ‘টেকার্স নট মেকার্স’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে ঔপনিবেশিক আমলে ধনী দেশগুলো কীভাবে তাদের উপনিবেশ থেকে সম্পদ শোষণ করেছে, তার উদাহরণও দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। ওই সম্পদের মধ্যে ৩৩ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার অর্থ গেছে যুক্তরাজ্যের ওই ১০ শতাংশ ধনীর হাতে। এই অর্থ যদি ৫০ পাউন্ডে ভাঙানো হয়, তবে সেই নোট দিয়ে পুরো লন্ডন প্রায় চারবার ঢেকে ফেলা যাবে।

অক্সফাম হিসাব করে দেখেছে, শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পুরো বিশ্বে ধনকুবেরদের ৩৬ শতাংশ সম্পদ এসেছে উত্তরাধিকারসূত্রে।

ফোর্বসের এক গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়সের নিচে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের সবাই উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বিনিয়োগ খাতের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজকের এক হাজারের বেশি শত কোটিপতির ৫ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ আগামী দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে তাদের উত্তরাধিকারের হাতে চলে যাবে।

যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।

পৃথিবী শত কোটিপতি দেখলেও এখনও লাখ কোটিপতি পায়নি। তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন একজন মানুষের সম্পদ বেড়ে লাখ কোটিপতির ঘর ছুঁয়ে ফেলবে। অক্সফামের প্রতিবেদনে সে পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছে।

অক্সফামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক দশকে বিশ্ব অন্তত পাঁচজন লাখো কোটি ডলারের মালিককে দেখতে পাবে। ২০২৩ সালে সংস্থাটি আগামী এক দশকে একজন লাখ কোটিপতি দেখতে পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।

কীভাবে ধনকুবেরদের এই সম্পদের পাহাড় গড়া আটকে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়, সেই পরামর্শও দিয়েছে অক্সফাম।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিজ নিজ দেশ এবং বৈশ্বিকভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমাতে হবে। এ জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেন সমাজের ওপরতলার ১০ শতাংশ মানুষের আয় সমাজের নিচের তলার ৪০ শতাংশ মানুষের আয়কে ছাড়িয়ে যেতে না পারে। আয়ের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হলে তিন গুণ বেশি গতিতে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

এ ছাড়া ধনীদের কাছ থেকে আরও কর আদায় করে তাদের অতিরিক্ত ধনী হওয়া আটকানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে কর দিতে হয় না, এমন স্থান এবং ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। অক্সফামের বিশ্লেষকেরা দেখেছেন, শত কোটিপতিদের অর্ধেক এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে সরাসরি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদের জন্য কর দিতে হয় না।

দক্ষিণের দেশগুলো থেকে উত্তরের দেশগুলোতে সম্পদের প্রবাহও থামাতে হবে বলে মনে করে অক্সফাম।

ছবি

ইসরায়েলকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ: বিনিয়োগ প্রত্যাহার করল নরওয়ের বৃহৎ পেনশন কোম্পানি কেএলপি

ছবি

‘শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, দেখা যায় খালি চোখেও’

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার দাবিতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইরান শান্তি চাইলে উঠে যেতে পারে নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

হুমকি ও শান্তির বার্তা, গাজা নিয়ে দ্বৈত নীতি

পাকিস্তানের জন্য ৩৪০ কোটি ডলারের ঋণ নবায়ন করলো চীন

ছবি

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৭২

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ২ কর্মী নিহত

ছবি

সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, উত্তাল বেলগ্রেড

‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ : ফের ট্রাম্পের সমালোচনায় ইলন মাস্ক

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ ইরানের

ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে

নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচার বন্ধ করতে চান ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্যোগের পরও গাজায় থেমে নেই হত্যাযজ্ঞ

ছবি

পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যায় দুই দিনে ৩২ জনের মৃত্যু

ছবি

পুরিতে রথযাত্রায় ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নিহত ৩, আহত ১০

ছবি

নর্থ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক বহরে আত্মঘাতী হামলা, শিশু আহত ছয়

কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

ছবি

ইউক্রেনের শহর দখল করতে ১ লাখের বেশি সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া

ছবি

বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ইরানের সমর্থন নিয়ে অনিশ্চয়তা, অস্তিত্ব-সংকটে হামাস

ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ ইরানি সাংবাদিক

ছবি

শোক-সমবেদনায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্মরণ করলেন ইরানিরা

আল-আকসা চত্বরে নাচ-গানের অনুমতি দিল ইসরায়েল

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী ভারতের সংসদ সদস্যরা

ছবি

নতুন এমআই-সিক্স প্রধানের দাদা ছিলেন হিটলারের ‘গুপ্তচর’

ছবি

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তিতে সই, জানালেন ট্রাম্প

ছবি

খামেনিকে একহাত নিলেন ট্রাম্প, পারমাণবিক কর্মসূচি চালালে ইরানে ফের হামলার হুমকি

ছবি

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

ইসরায়েল চেয়েছিল খামেনিকে হত্যা করতে, কিন্তু সুযোগ মেলেনি: প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি আটক

ছবি

‘সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে ঐকমত্যের অভাবে যৌথ বিবৃতিতে ভারতের অস্বীকৃতি

যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ইরানি সেনাসহ গ্রেপ্তার ১৩০

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে কীভাবে সংঘাত ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’: ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট

tab

আন্তর্জাতিক

ঔপনিবেশিক আমলের মতোই শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন পশ্চিমের ধনীরা : অক্সফাম

গার্ডিয়ান

পশ্চিমের কয়েকজন শীর্ষ ধনকুবের

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

বিশ্বজুড়ে তরতরিয়ে বাড়ছে ধনকুবেরদের সম্পদ। শুধু ২০২৪ সালেই তাদের সম্পদের মোট পরিমাণ বেড়েছে দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫৭০ কোটি ডলার করে।

শুধু বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে তিন গুণ দ্রুত হারে।

সংখ্যাও বেড়েছে শতকোটিপতিদের।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে অক্সফামের। মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের মালিক এসব ধনীরা কোথা থেকে এত সম্পদ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বলছে, এসব ধনী, বিশেষ করে ইউরোপের ধনীদের একটি বড় অংশ এই সম্পদ পেয়েছেন পরিবার থেকে। উত্তরাধিকার সূত্রে। আর তাদের সেই সম্পদের একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে।

সেসময় আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণের দেশগুলো থেকে শোষণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ চলে আসে পশ্চিমা দেশগুলোর ধনীদের হতে।

আজও একইভাবে চলছে সম্পদের সেই শোষণ, বিশ্লেষণ অক্সফামের।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বে শত কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৬৫ জন। গত বছর বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৯ জন। অর্থাৎ গত বছর প্রতি সপ্তাহে প্রায় চারজন করে যুক্ত হয়েছেন শত কোটিপতিদের দলে।

আর গত এক বছরে শত কোটিপতিদের মোট সম্পদ ১৩ লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৫ লাখ কোটি ডলার হয়েছে।

ফ্রান্সের ‘মিডিয়া মোগল’ ভিনসেন্ট বোলোরের উদাহরণ দিয়ে অক্সফাম দেখিয়েছে, তার সম্পদের বড় একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে আফ্রিকায় তার নানার কোম্পানির আয় থেকে।

আজও শোষণের মাধ্যমেই পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ এখনও পৃথিবীর পশ্চিম ও উত্তরের দেশে, তাদের কিছু নাগরিকদের হাতে চলে যাচ্ছে।

অক্সফাম একে আধুনিক সময়ের ‘উপনিবেশবাদ’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আধুনিক উপনিবেশবাদে এ শোষণ চলে নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে।

অক্সফাম হিসেব করেছে, এই আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো উত্তরের দেশগুলোর ১ শতাংশ ধনী দক্ষিণের দেশগুলো থেকে প্রতি ঘণ্টায় তিন কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের মোট সম্পদের ৬৯ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ এই উত্তরের দেশগুলোর হাতে। বিশ্বে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের ৬৮ শতাংশই সেখানকার। বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৭ শতাংশই তাদের হাতে।

অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশের বসবাস এই দেশগুলোতে।

অক্সফাম তাদের ‘টেকার্স নট মেকার্স’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে ঔপনিবেশিক আমলে ধনী দেশগুলো কীভাবে তাদের উপনিবেশ থেকে সম্পদ শোষণ করেছে, তার উদাহরণও দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। ওই সম্পদের মধ্যে ৩৩ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার অর্থ গেছে যুক্তরাজ্যের ওই ১০ শতাংশ ধনীর হাতে। এই অর্থ যদি ৫০ পাউন্ডে ভাঙানো হয়, তবে সেই নোট দিয়ে পুরো লন্ডন প্রায় চারবার ঢেকে ফেলা যাবে।

অক্সফাম হিসাব করে দেখেছে, শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পুরো বিশ্বে ধনকুবেরদের ৩৬ শতাংশ সম্পদ এসেছে উত্তরাধিকারসূত্রে।

ফোর্বসের এক গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়সের নিচে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের সবাই উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বিনিয়োগ খাতের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজকের এক হাজারের বেশি শত কোটিপতির ৫ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ আগামী দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে তাদের উত্তরাধিকারের হাতে চলে যাবে।

যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।

পৃথিবী শত কোটিপতি দেখলেও এখনও লাখ কোটিপতি পায়নি। তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন একজন মানুষের সম্পদ বেড়ে লাখ কোটিপতির ঘর ছুঁয়ে ফেলবে। অক্সফামের প্রতিবেদনে সে পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছে।

অক্সফামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক দশকে বিশ্ব অন্তত পাঁচজন লাখো কোটি ডলারের মালিককে দেখতে পাবে। ২০২৩ সালে সংস্থাটি আগামী এক দশকে একজন লাখ কোটিপতি দেখতে পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।

কীভাবে ধনকুবেরদের এই সম্পদের পাহাড় গড়া আটকে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়, সেই পরামর্শও দিয়েছে অক্সফাম।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিজ নিজ দেশ এবং বৈশ্বিকভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমাতে হবে। এ জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেন সমাজের ওপরতলার ১০ শতাংশ মানুষের আয় সমাজের নিচের তলার ৪০ শতাংশ মানুষের আয়কে ছাড়িয়ে যেতে না পারে। আয়ের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হলে তিন গুণ বেশি গতিতে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

এ ছাড়া ধনীদের কাছ থেকে আরও কর আদায় করে তাদের অতিরিক্ত ধনী হওয়া আটকানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে কর দিতে হয় না, এমন স্থান এবং ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। অক্সফামের বিশ্লেষকেরা দেখেছেন, শত কোটিপতিদের অর্ধেক এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে সরাসরি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদের জন্য কর দিতে হয় না।

দক্ষিণের দেশগুলো থেকে উত্তরের দেশগুলোতে সম্পদের প্রবাহও থামাতে হবে বলে মনে করে অক্সফাম।

back to top