তুরস্কে বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার
প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বিরোধী দলীয় নেতার
ইস্তাম্বুলের সাবেক মেয়র ও বিরোধী নেতা একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ -এএফপি
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ করেন তুরস্কের হাজার হাজার মানুষ। এ নিয়ে বিক্ষোভ নবম দিনে গড়াল। এ কয় দিনে বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ দেড় হাজার মানুষকে আটক করেছে এরদোয়ান সরকার। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের বলপ্রয়োগ ও ব্যাপক ধরপাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো।
এছাড়া বিক্ষোভের সংবাদ কভারেজ করায় এএফপির সাংবাদিকসহ সাতজন সাংবাদিককে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) গত মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে সিটি হলের সামনে বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া আগামী শনিবার শহরে বড় বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভের সূচনা হয় গত সপ্তাহে বুধবার।
ওই দিন ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হলে তার সমর্থকেরা রাজপথে নেমে এসে আন্দোলন শুরু করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দমনে পুলিশের শক্তিপ্রয়োগ ও ব্যাপক ধড়পাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে। মেয়র একরেম ইমামোগলু দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কা-জ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। এরদোয়ান বলেন, যাঁরা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে মিছিলে শামিল হন। তারা সরকার পতনের দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের হাতে থাকা ব্যানার ও পতাকায় এরদোয়ান সরকারের পতনসংক্রান্ত দাবির কথা লেখা ছিল। শিক্ষার্থীদের মিছিল যাতে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে না ওঠে, সে জন্য ইস্তাম্বুলে বিপুল পরিমাণ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে যেকোনো বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। মূলত উসকানি প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষার স্বার্থে বিক্ষোভ প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কিছু সড়ক। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছে পরিচয় আড়াল রাখতে মুখে মাস্ক পরে বহু শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নেন।
এদিকে,তুরস্কের প্রধান বিরোধী দলের নেতা ওজগুর ওজেল বলেন, আগাম নির্বাচনের ডাক কিংবা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে কারাগার থেকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত দেশটির প্রতিটি শহরে তাদের বিক্ষোভ চলবে। বিবিসিকে তিনি এ কথা বলেছেন।
ওজগুর ওজেল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) চেয়ারম্যান। একরেম ইমামোগলুও একই দলের নেতা। ওজেল বলেছেন, দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শনিবার ইস্তাম্বুলে বড় ধরনের বিক্ষোভ হবে। তার মতে, এর মধ্য দিয়ে ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ইমামোগলুকে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট করার জন্য দলের প্রচারণার সূচনা হবে।
ওজেল ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা যে শহরেই যাব, সেখানেই তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’ ইস্তাম্বুলে দলের সদর দপ্তরে বসে বিবিসির সঙ্গে কথাগুলো বলেন ওজেল। তিনি আরও বলেন, ‘একরেম ইমামোগলুর প্রতি বিশ্বাস ও গণতন্ত্র এ বিক্ষোভকে আরও বড় এবং শক্তিশালী করে তুলবে।’ এক সপ্তাহ আগে ইমামোগলু গ্রেপ্তার হন। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সড়কে বড় জমায়েত করছে বিরোধী দল। গত এক দশকে তুরস্কে এত বড় বিক্ষোভ হতে দেখা যায়নি। তুরস্কে গণহারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিক্ষোভ নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাত তুর্কি সাংবাদিকও আছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন ধরে রেখেছেন। তিনি এ বিক্ষোভকে ‘পথ সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করছে এবং জনগণের সম্পদ নষ্ট করছে। এরদোয়ান মনে করেন, বিরোধী দলের এ ‘শো’ ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাবে। ইমামোগলুকে ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে সিলিভরি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সেখানে ইমামোগলুর সঙ্গে দেখা করে ফেরার পর বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন ওজেল। তিনি বলেন, ইমামোগলুকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে এবং এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। ওজেল বলেছেন, ইস্তাম্বুলের মেয়রকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে।
তুরস্কে বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার
প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বিরোধী দলীয় নেতার
ইস্তাম্বুলের সাবেক মেয়র ও বিরোধী নেতা একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ -এএফপি
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ করেন তুরস্কের হাজার হাজার মানুষ। এ নিয়ে বিক্ষোভ নবম দিনে গড়াল। এ কয় দিনে বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ দেড় হাজার মানুষকে আটক করেছে এরদোয়ান সরকার। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের বলপ্রয়োগ ও ব্যাপক ধরপাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো।
এছাড়া বিক্ষোভের সংবাদ কভারেজ করায় এএফপির সাংবাদিকসহ সাতজন সাংবাদিককে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) গত মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে সিটি হলের সামনে বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া আগামী শনিবার শহরে বড় বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভের সূচনা হয় গত সপ্তাহে বুধবার।
ওই দিন ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হলে তার সমর্থকেরা রাজপথে নেমে এসে আন্দোলন শুরু করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দমনে পুলিশের শক্তিপ্রয়োগ ও ব্যাপক ধড়পাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে। মেয়র একরেম ইমামোগলু দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কা-জ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। এরদোয়ান বলেন, যাঁরা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে মিছিলে শামিল হন। তারা সরকার পতনের দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের হাতে থাকা ব্যানার ও পতাকায় এরদোয়ান সরকারের পতনসংক্রান্ত দাবির কথা লেখা ছিল। শিক্ষার্থীদের মিছিল যাতে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে না ওঠে, সে জন্য ইস্তাম্বুলে বিপুল পরিমাণ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে যেকোনো বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। মূলত উসকানি প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষার স্বার্থে বিক্ষোভ প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কিছু সড়ক। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছে পরিচয় আড়াল রাখতে মুখে মাস্ক পরে বহু শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নেন।
এদিকে,তুরস্কের প্রধান বিরোধী দলের নেতা ওজগুর ওজেল বলেন, আগাম নির্বাচনের ডাক কিংবা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে কারাগার থেকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত দেশটির প্রতিটি শহরে তাদের বিক্ষোভ চলবে। বিবিসিকে তিনি এ কথা বলেছেন।
ওজগুর ওজেল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) চেয়ারম্যান। একরেম ইমামোগলুও একই দলের নেতা। ওজেল বলেছেন, দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শনিবার ইস্তাম্বুলে বড় ধরনের বিক্ষোভ হবে। তার মতে, এর মধ্য দিয়ে ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ইমামোগলুকে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট করার জন্য দলের প্রচারণার সূচনা হবে।
ওজেল ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা যে শহরেই যাব, সেখানেই তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’ ইস্তাম্বুলে দলের সদর দপ্তরে বসে বিবিসির সঙ্গে কথাগুলো বলেন ওজেল। তিনি আরও বলেন, ‘একরেম ইমামোগলুর প্রতি বিশ্বাস ও গণতন্ত্র এ বিক্ষোভকে আরও বড় এবং শক্তিশালী করে তুলবে।’ এক সপ্তাহ আগে ইমামোগলু গ্রেপ্তার হন। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সড়কে বড় জমায়েত করছে বিরোধী দল। গত এক দশকে তুরস্কে এত বড় বিক্ষোভ হতে দেখা যায়নি। তুরস্কে গণহারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিক্ষোভ নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাত তুর্কি সাংবাদিকও আছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন ধরে রেখেছেন। তিনি এ বিক্ষোভকে ‘পথ সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করছে এবং জনগণের সম্পদ নষ্ট করছে। এরদোয়ান মনে করেন, বিরোধী দলের এ ‘শো’ ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাবে। ইমামোগলুকে ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে সিলিভরি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সেখানে ইমামোগলুর সঙ্গে দেখা করে ফেরার পর বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন ওজেল। তিনি বলেন, ইমামোগলুকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে এবং এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। ওজেল বলেছেন, ইস্তাম্বুলের মেয়রকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে।