alt

আন্তর্জাতিক

বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্প নাকি জিনপিং কে আগে হার মানবেন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

চীনের সঙ্গে পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে আছে ট্রাম্প প্রশাসন -এএফপি

বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মুখোমুখি অবস্থানে। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে এর প্রভাব। এ অবস্থায় ট্রাম্প নাকি জিনপিং কে আগে হার মানবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছেন বিশ্বের অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে ১৪৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

গত মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের আমদানির ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়ে ট্রাম্প তার বাণিজ্য কৌশল আরও জোরদার করেছেন। এসব খনিজ সম্পদের বেশির ভাগই আসে চীন থেকে। এর আগে ব্লুমবার্গ নিউজের খবরে বলা হয়, বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজের সরবরাহ না নিতে ও মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ কেনা স্থগিত করতে নিজেদের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে চীন। হংকংয়ের ডাক বিভাগ বলেছে, তারাও আর যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি পাঠানোর সেবা দেবে না।

কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও কৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাদজিবুল্লা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পণ্য বিক্রি করাটা চীনের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দুই দেশের অর্থনীতিতেই বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।’ ভিনা নাদজিবুল্লা মনে করেন, ট্রাম্প ও জিনপিংয়ের মুখোমুখি অবস্থানে কে আগে হার মানবেন, তা নির্ভর করছে কে বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবেন এবং কে বেশি প্রস্তুত, তার ওপর। ট্রাম্প অনেক দিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে চীন। তবে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সে সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছ ধারণা আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্যতম প্রধান আলোচক হ্যারি ব্রডম্যান মনে করেন, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ করতে চান, নাকি দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে চান, তা স্পষ্ট নয়। ব্রডম্যান আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানায় কাজ চালাতে চীনা পণ্য প্রয়োজন হয়, সেগুলো ট্রাম্প কীভাবে সামাল দেবেন? এটা যেনতেন বিষয় নয়।’ ‘বাজারের উৎপাদন স্তরে স্তরে বিভক্ত। আপনার কাছে সারা বিশ্ব থেকে জিনিসপত্র আসছে। বিশ্ব অর্থনীতি খুব সুন্দর করে উল্লম্বভাবে সাজানো। তাই বিজয়ী ও পরাজিত কে, তা স্পষ্ট নয়,’ বলেন ব্রডম্যান।

ব্রডম্যানের মতে, বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের ভাবনা অবাস্তব। তিনি আবাসন ব্যবসার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত হলেও আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে নন। কীভাবে নিজে জিতবেন ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাবেন, সেটা নিয়েই ভাবতে থাকেন তিনি। ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আলোচনার টেবিলে আসা না-আসার বিষয়টি চীনের ওপর নির্ভর করছে বলে তিনি মনে করেন। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বল চীনের কোর্টে।’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘চীনের আমাদের সঙ্গে চুক্তি করা প্রয়োজন। আমাদের তাদের সঙ্গে চুক্তি করার প্রয়োজন নেই।’ লেভিটের দাবি, এ বক্তব্য সরাসরি ট্রাম্পের কাছ থেকে এসেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন অর্থনীতি চীনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধে প্রবেশ করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই বাণিজ্যযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বেইজিং। ট্রাম্প অনেক দিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে চীন। তবে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সে সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছ ধারণা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা।

আটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল চায়না হাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেক্সটার টিফ রবার্টস বলেন, ‘চীন দ্রুত আলোচনার টেবিলে আসবে ও হুমকিগুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে ভুল হিসাবনিকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।’

গত সপ্তাহে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়, আট বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা চলাকালে ব্যাপক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা চীন এখন শুল্কের খড়্গ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রবার্টস বলেন, ‘বাণিজ্য ও নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই এটি (ট্রাম্পের উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ) চীনের জন্য অনেকটা অস্তিত্বের লড়াই।’ সি জিনপিংয়ের একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন। সি বারবারই বলেছেন, পূর্ব দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে এবং পশ্চিমে কমেছে।

বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজেকে দূরে রেখে বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে চীন, যেমন সয়াবিনের মতো মার্কিন কৃষিপণ্যগুলোর ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে তারা। এখন এসব কৃষিপণ্যের বেশির ভাগ ব্রাজিল থেকে আসে।

২০২৪ সালে চীনের মোট রপ্তানি করা পণ্যের ১৪ দশমিক ৭ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে দেশটিতে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ রপ্তানি হয়েছিল।

গত সোমবার থেকে সি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাঁচ দিনের সফর শুরু করেছেন। মুক্ত বাণিজ্যের রক্ষক হিসেবে চীনের স্বঘোষিত ভাবমূর্তি শক্তিশালী করা এবং এই অঞ্চলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এ সফর করছেন তিনি।

চীনের জন্য কিছু রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়ও আছে। রবার্টস মনে করেন, সি জিনপিং একজন শক্তিমান নেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করলে এ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। দেশের অভ্যন্তরে ও অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার মতো ঝুঁকি জিনপিং নেবেন না। রবার্টস বলেন, ‘হতে পারে তারা দুই পক্ষকেই বিজয়ী ঘোষণা করার মতো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন। আর তা না হলে বড় বিপদ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কূটনীতিবিষয়ক অধ্যাপক রবার্ট রোগৌস্কি বলেছেন, তিনি আশা করেন, ট্রাম্পই প্রথমে থামবেন। আল-জাজিরাকে রবার্ট রোগৌস্কি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের চাপের মুখে ছাড় দেয়ার ঘটনা অনেক ঘটছে। আরও বেশি ছাড়ের ঘটনা যে ঘটবে না, তা বিশ্বাস করা প্রায় কঠিন।’ রোগৌস্কি মনে করেন, শুল্ক আরোপের প্রশ্নে ট্রাম্প ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন। বিশেষ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ধনিক শ্রেণির চাপের মুখে তাকে থামতে হচ্ছে। আর্থিক বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে ট্রাম্পের প্রতি মানুষের সমর্থনের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ছবি

যেভাবে পাক-ভারত নিয়ন্ত্রণরেখা বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সীমান্ত

ছবি

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসে লাখো মানুষের বিক্ষোভ

১০ বছর পর ইরান-সৌদি আরব হজ ফ্লাইট চালু

ছবি

অর্ধেক জিম্মির বিনিময়ে ২ মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েলের

গাজায় ‘অবাধ ও ব্যাপক’ সহায়তা নিশ্চিতের আহ্বান ফ্রান্সের

জো বাইডেন ক্যানসারে আক্রান্ত

ছবি

গাজায় অবরোধ শিথিল করছে ইসরায়েল, ঢুকতে পারবে সীমিত পরিমাণ খাবার

ছবি

প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত জো বাইডেন

ছবি

কিয়েভে ২৭৩ ড্রোন হামলা, সংকটের জড় সমূলে উৎপাটনের ঘোষণা পুতিনের

সন্ত্রাসীদের পরিণতি হবে ভারতের মতো: পাকিস্তান

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হতেই গাজা-ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলা জোরদার

ছবি

যেভাবে বদলে দিতে পারে প্রতিবেশী সুইং স্টেটগুলোর

তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়া বৃদ্ধি

কাশ্মিরে নিরাপত্তায় এবার সাবেক সেনা সদস্যদের নামাচ্ছে ভারত

ছবি

আশ্রয়শিবিরে বোমা হামলায় নারী-শিশুসহ নিহত ২৪, হামাস বলছে ‘নৃশংস অপরাধ’

ছবি

‘গাজাবাসীদের লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা সত্য নয়’ — যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজে মেক্সিকোর প্রশিক্ষণ জাহাজের ধাক্কা, প্রাণহানি, তদন্তে নৌবাহিনী

ছবি

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতের জনপ্রিয় নারী ব্লগার গ্রেপ্তার

গাজার ১০ লাখ বাসিন্দাকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন জুনে

ছবি

পেট্রো ডলারের বন্যায় শেষ হলো ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর

বৃহত্তম বন্দীবিনিময় সমঝোতায় পৌঁছাল রাশিয়া-ইউক্রেন

নয়াদিল্লিকে সংলাপের প্রস্তাব দিলেন শেহবাজ

ছবি

পাকিস্তানে পানিপ্রবাহ: ভারতের কী পরিকল্পনা

ছবি

উত্তর গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, ঢুকছে ট্যাংক

ছবি

ইউক্রেনের দুটি গ্রাম দখলের দাবি রাশিয়ার, প্রত্যাখ্যান কিয়েভের

গাজা পরিস্থিতি নিয়ে নেতানিয়াহুকে কড়া বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে কার কত লাভ-ক্ষতি হলো

সম্পর্ক স্থাপনে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের গোপন আলোচনা

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াল ভারত-পাকিস্তান

ছবি

ইসরায়েলি বর্বরতা, একদিনে ১৪৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, নিহত ৫৩ হাজার ছাড়ালো

ছবি

রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত শতাধিক

ছবি

ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চলে সেনা অভিযানে ১৮ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নিহত

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

জেলেনস্কির আহ্বানে শান্তি আলোচনায় যাচ্ছেন না পুতিন

ছবি

শোপিয়ানে ‘সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয়’ অভিযানে তিন সন্ত্রাসী নিহত

tab

আন্তর্জাতিক

বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্প নাকি জিনপিং কে আগে হার মানবেন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

চীনের সঙ্গে পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে আছে ট্রাম্প প্রশাসন -এএফপি

শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মুখোমুখি অবস্থানে। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে এর প্রভাব। এ অবস্থায় ট্রাম্প নাকি জিনপিং কে আগে হার মানবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছেন বিশ্বের অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে ১৪৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

গত মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের আমদানির ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়ে ট্রাম্প তার বাণিজ্য কৌশল আরও জোরদার করেছেন। এসব খনিজ সম্পদের বেশির ভাগই আসে চীন থেকে। এর আগে ব্লুমবার্গ নিউজের খবরে বলা হয়, বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজের সরবরাহ না নিতে ও মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ কেনা স্থগিত করতে নিজেদের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে চীন। হংকংয়ের ডাক বিভাগ বলেছে, তারাও আর যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি পাঠানোর সেবা দেবে না।

কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও কৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাদজিবুল্লা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পণ্য বিক্রি করাটা চীনের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দুই দেশের অর্থনীতিতেই বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।’ ভিনা নাদজিবুল্লা মনে করেন, ট্রাম্প ও জিনপিংয়ের মুখোমুখি অবস্থানে কে আগে হার মানবেন, তা নির্ভর করছে কে বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবেন এবং কে বেশি প্রস্তুত, তার ওপর। ট্রাম্প অনেক দিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে চীন। তবে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সে সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছ ধারণা আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্যতম প্রধান আলোচক হ্যারি ব্রডম্যান মনে করেন, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ করতে চান, নাকি দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে চান, তা স্পষ্ট নয়। ব্রডম্যান আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানায় কাজ চালাতে চীনা পণ্য প্রয়োজন হয়, সেগুলো ট্রাম্প কীভাবে সামাল দেবেন? এটা যেনতেন বিষয় নয়।’ ‘বাজারের উৎপাদন স্তরে স্তরে বিভক্ত। আপনার কাছে সারা বিশ্ব থেকে জিনিসপত্র আসছে। বিশ্ব অর্থনীতি খুব সুন্দর করে উল্লম্বভাবে সাজানো। তাই বিজয়ী ও পরাজিত কে, তা স্পষ্ট নয়,’ বলেন ব্রডম্যান।

ব্রডম্যানের মতে, বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের ভাবনা অবাস্তব। তিনি আবাসন ব্যবসার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত হলেও আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে নন। কীভাবে নিজে জিতবেন ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাবেন, সেটা নিয়েই ভাবতে থাকেন তিনি। ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আলোচনার টেবিলে আসা না-আসার বিষয়টি চীনের ওপর নির্ভর করছে বলে তিনি মনে করেন। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বল চীনের কোর্টে।’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘চীনের আমাদের সঙ্গে চুক্তি করা প্রয়োজন। আমাদের তাদের সঙ্গে চুক্তি করার প্রয়োজন নেই।’ লেভিটের দাবি, এ বক্তব্য সরাসরি ট্রাম্পের কাছ থেকে এসেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন অর্থনীতি চীনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধে প্রবেশ করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই বাণিজ্যযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বেইজিং। ট্রাম্প অনেক দিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে চীন। তবে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সে সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছ ধারণা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা।

আটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল চায়না হাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেক্সটার টিফ রবার্টস বলেন, ‘চীন দ্রুত আলোচনার টেবিলে আসবে ও হুমকিগুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে ভুল হিসাবনিকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।’

গত সপ্তাহে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়, আট বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা চলাকালে ব্যাপক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা চীন এখন শুল্কের খড়্গ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রবার্টস বলেন, ‘বাণিজ্য ও নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই এটি (ট্রাম্পের উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ) চীনের জন্য অনেকটা অস্তিত্বের লড়াই।’ সি জিনপিংয়ের একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন। সি বারবারই বলেছেন, পূর্ব দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে এবং পশ্চিমে কমেছে।

বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজেকে দূরে রেখে বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে চীন, যেমন সয়াবিনের মতো মার্কিন কৃষিপণ্যগুলোর ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে তারা। এখন এসব কৃষিপণ্যের বেশির ভাগ ব্রাজিল থেকে আসে।

২০২৪ সালে চীনের মোট রপ্তানি করা পণ্যের ১৪ দশমিক ৭ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে দেশটিতে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ রপ্তানি হয়েছিল।

গত সোমবার থেকে সি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাঁচ দিনের সফর শুরু করেছেন। মুক্ত বাণিজ্যের রক্ষক হিসেবে চীনের স্বঘোষিত ভাবমূর্তি শক্তিশালী করা এবং এই অঞ্চলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এ সফর করছেন তিনি।

চীনের জন্য কিছু রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়ও আছে। রবার্টস মনে করেন, সি জিনপিং একজন শক্তিমান নেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করলে এ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। দেশের অভ্যন্তরে ও অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার মতো ঝুঁকি জিনপিং নেবেন না। রবার্টস বলেন, ‘হতে পারে তারা দুই পক্ষকেই বিজয়ী ঘোষণা করার মতো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন। আর তা না হলে বড় বিপদ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কূটনীতিবিষয়ক অধ্যাপক রবার্ট রোগৌস্কি বলেছেন, তিনি আশা করেন, ট্রাম্পই প্রথমে থামবেন। আল-জাজিরাকে রবার্ট রোগৌস্কি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের চাপের মুখে ছাড় দেয়ার ঘটনা অনেক ঘটছে। আরও বেশি ছাড়ের ঘটনা যে ঘটবে না, তা বিশ্বাস করা প্রায় কঠিন।’ রোগৌস্কি মনে করেন, শুল্ক আরোপের প্রশ্নে ট্রাম্প ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন। বিশেষ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ধনিক শ্রেণির চাপের মুখে তাকে থামতে হচ্ছে। আর্থিক বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে ট্রাম্পের প্রতি মানুষের সমর্থনের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

back to top