চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় স্টেডিয়ামের বাইরে। ছবি: এএফপি
আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা হয়ে রইলো বেঙ্গালুরুর রাজপথে ঘটে যাওয়া ১১ জনের করুণ মৃত্যু। বুধবার (৪ জুন) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) আইপিএল শিরোপা জয়ের পর আয়োজিত বিজয় উদযাপন ঘিরে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান অন্তত ১১ জন, আহত হন আরও অন্তত ৩৩ জন।
ঘটনার ভয়াবহতা যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে—এই মৃত্যুর দায়ভার কার কাঁধে বর্তায়? সরকার, পুলিশ না কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (কেএসসিএ)?
১৮ বছর পর আইপিএল শিরোপা জিতে উচ্ছ্বসিত ছিল বেঙ্গালুরু। আরসিবি’র পক্ষ থেকে ভিক্টরি প্যারেড বা বিজয় মিছিলের ঘোষণা আসে বুধবার সকাল ৭টা ১ মিনিটে। ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্য বিধানসভা ‘বিধান সৌধ’ থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বের হবে বিজয় মিছিল। এরপর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় রোড শোয়ের বিষয়টি।
স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য বিনামূল্যে পাস বিতরণ করে আরসিবি। এখানেই সৃষ্টি হয় প্রথম সমস্যা। অনুমান করা হয়েছিল, সর্বোচ্চ এক লাখ মানুষ জমায়েত হতে পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার দাবি অনুযায়ী, উপস্থিত জনসাধারণের সংখ্যা ছিল দুই লাখেরও বেশি—অন্য সূত্র মতে তা তিন লাখ ছুঁয়েছিল।
দর্শক সামলাতে হিমশিম খায় নিরাপত্তাকর্মীরা। ছবি: এএফপি
কর্ণাটকের সাবেক ডিজিপি এসটি রমেশ বিবিসিকে বলেন, রাত ২টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে যদি এই বিশাল আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তবে পুলিশের কাছে পর্যাপ্ত সময় ছিল না। পুলিশকে মোতায়েন, নিরাপত্তা পরিকল্পনা, রুট নির্ধারণ, ভিড় নিয়ন্ত্রণ—সবই একটি সময়সাপেক্ষ কাজ।
পুলিশ দাবি করেছে, অনুষ্ঠান হবে—তাদের ধারণা ছিল—শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। স্টেডিয়ামের ৩২ হাজার আসন মুহূর্তেই পূর্ণ হয়ে যায়, বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ গেটের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। তখনই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা, ঠেলাঠেলি, পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হওয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, "এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। এটা (অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া) পুলিশের সিদ্ধান্ত ছিল না।সআদর্শভাবে, অনুষ্ঠান কয়েক দিন পরে হওয়া উচিত ছিল। ততদিনে ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা কমে যেত। তখন আপনা থেকেই ভিড় হতো এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদের (ভিড়ের) আচরণ প্রাণঘাতী হওয়া থেকে বাঁচানো যেত।"
অনুমানের চাইতে কয়েকগুণ বেশি ভিড় হয়েছিল ঘটনাস্থলে। ছবি: এএফপি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর অবশ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কেএসসিএ ও আরসিবি। তিনি বলেন, "সরকার শুধু ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কংগ্রেস নেতা বলেন, "সরকার যদি শুধু ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণই করত তাহলে উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে দলকে স্বাগত জানাতে এইচএএল বিমানবন্দরে যেতে হয়েছিল কেন?"
সেদিন লাখ লাখ সমর্থক চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হন। ছবি: এএফপি
পুলিশও দায় এড়াতে চায়। কিন্তু ট্রাফিক নির্দেশনা, নিরাপত্তা প্রস্তুতি ও পূর্ব অনুমতির বিষয়টি যথাযথ ছিল না বলেই স্পষ্ট।
আরসিবি বিনামূল্যে পাস দিয়ে ব্যাপক জনসমাগমের সুযোগ তৈরি করেছিল। তবে পাস থাকলেও ভেতরে ঢোকার সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশের লাঠিচার্জ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
এই ঘটনার পর বেঙ্গালুরু পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরসিবির সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নিহতদের পরিবারকে আরসিবি ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫
চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় স্টেডিয়ামের বাইরে। ছবি: এএফপি
আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা হয়ে রইলো বেঙ্গালুরুর রাজপথে ঘটে যাওয়া ১১ জনের করুণ মৃত্যু। বুধবার (৪ জুন) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) আইপিএল শিরোপা জয়ের পর আয়োজিত বিজয় উদযাপন ঘিরে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান অন্তত ১১ জন, আহত হন আরও অন্তত ৩৩ জন।
ঘটনার ভয়াবহতা যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে—এই মৃত্যুর দায়ভার কার কাঁধে বর্তায়? সরকার, পুলিশ না কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (কেএসসিএ)?
১৮ বছর পর আইপিএল শিরোপা জিতে উচ্ছ্বসিত ছিল বেঙ্গালুরু। আরসিবি’র পক্ষ থেকে ভিক্টরি প্যারেড বা বিজয় মিছিলের ঘোষণা আসে বুধবার সকাল ৭টা ১ মিনিটে। ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্য বিধানসভা ‘বিধান সৌধ’ থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বের হবে বিজয় মিছিল। এরপর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় রোড শোয়ের বিষয়টি।
স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য বিনামূল্যে পাস বিতরণ করে আরসিবি। এখানেই সৃষ্টি হয় প্রথম সমস্যা। অনুমান করা হয়েছিল, সর্বোচ্চ এক লাখ মানুষ জমায়েত হতে পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার দাবি অনুযায়ী, উপস্থিত জনসাধারণের সংখ্যা ছিল দুই লাখেরও বেশি—অন্য সূত্র মতে তা তিন লাখ ছুঁয়েছিল।
দর্শক সামলাতে হিমশিম খায় নিরাপত্তাকর্মীরা। ছবি: এএফপি
কর্ণাটকের সাবেক ডিজিপি এসটি রমেশ বিবিসিকে বলেন, রাত ২টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে যদি এই বিশাল আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তবে পুলিশের কাছে পর্যাপ্ত সময় ছিল না। পুলিশকে মোতায়েন, নিরাপত্তা পরিকল্পনা, রুট নির্ধারণ, ভিড় নিয়ন্ত্রণ—সবই একটি সময়সাপেক্ষ কাজ।
পুলিশ দাবি করেছে, অনুষ্ঠান হবে—তাদের ধারণা ছিল—শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। স্টেডিয়ামের ৩২ হাজার আসন মুহূর্তেই পূর্ণ হয়ে যায়, বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ গেটের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। তখনই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা, ঠেলাঠেলি, পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হওয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, "এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। এটা (অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া) পুলিশের সিদ্ধান্ত ছিল না।সআদর্শভাবে, অনুষ্ঠান কয়েক দিন পরে হওয়া উচিত ছিল। ততদিনে ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা কমে যেত। তখন আপনা থেকেই ভিড় হতো এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদের (ভিড়ের) আচরণ প্রাণঘাতী হওয়া থেকে বাঁচানো যেত।"
অনুমানের চাইতে কয়েকগুণ বেশি ভিড় হয়েছিল ঘটনাস্থলে। ছবি: এএফপি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর অবশ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কেএসসিএ ও আরসিবি। তিনি বলেন, "সরকার শুধু ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কংগ্রেস নেতা বলেন, "সরকার যদি শুধু ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণই করত তাহলে উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে দলকে স্বাগত জানাতে এইচএএল বিমানবন্দরে যেতে হয়েছিল কেন?"
সেদিন লাখ লাখ সমর্থক চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হন। ছবি: এএফপি
পুলিশও দায় এড়াতে চায়। কিন্তু ট্রাফিক নির্দেশনা, নিরাপত্তা প্রস্তুতি ও পূর্ব অনুমতির বিষয়টি যথাযথ ছিল না বলেই স্পষ্ট।
আরসিবি বিনামূল্যে পাস দিয়ে ব্যাপক জনসমাগমের সুযোগ তৈরি করেছিল। তবে পাস থাকলেও ভেতরে ঢোকার সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশের লাঠিচার্জ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
এই ঘটনার পর বেঙ্গালুরু পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরসিবির সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নিহতদের পরিবারকে আরসিবি ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।