‘কংগ্রেসে কৈফিয়ত দিতে হবে ট্রাম্পকে’
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা চালানোর খবর প্রচার হতেই বিশ্বব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্বাভাবিকভাবে, ইসরায়েলের দিক থেকে ইতিবাচক বার্তা দেয়া হয়েছে, জাতিসংঘ আউড়ে যাচ্ছে তথাকথিত মুখস্থ বুলি আর কয়েকটি দেশ মার্কিন হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এসব মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়েই রয়টার্সের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রকে কেন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়ানো হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে তার কৈফিয়ত চেয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া তিনি কীভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার স্পষ্ট জবাব জানতে চেয়েছেন ওই ডেমোক্র্যাট নেতা।
এক বিবৃতিতে শুমার বলেন, ‘আজ রাতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে মার্কিন জনগণ ও কংগ্রেসকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে হবে ট্রাম্পকে। এই পদক্ষেপগুলো মার্কিন নিরাপত্তার ওপর কেমন এবং কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা-ও তাকে জানাতে হবে।’
এ সময় তিনি ট্রাম্পের ‘অদূরদর্শিতার’ কড়া সমালোচনা করেন। শুমার বলেন, ‘কোনো ধরনের কৌশল ছাড়া, কেবল হুমকি দিয়ে এভাবে যুদ্ধে যোগ দেয়ার অর্থ কী?’ একতরফাভাবে কেবল প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তেই দেশকে যুদ্ধে জড়ানো কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। শুমার বলেন, ‘অবশ্যই যুদ্ধে ক্ষমতা আইন কার্যকর করতেই হবে। আমি সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুনকে অনুরোধ করছি, যেন তিনি এটি অবিলম্বে সিনেটের আলোচ্যসূচিতে তোলেন। আমি এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেব এবং সব দলের সিনেটরদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারাও এর পক্ষে ভোট দিন। ’
তার ভাষ্যমতে, ইরানের বিরুদ্ধে লড়তে হলে এবং সেই লড়াইয়ে জিততে হলে সাহস, স্থিরতা ও স্পষ্ট কৌশল প্রয়োজন। ট্রাম্প যেভাবে অস্থির হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাতে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। তিনি বলেন, ইরানের সন্ত্রাস, পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা ও আঞ্চলিক আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে হলে সাহস, স্থিরতা এবং স্পষ্ট কৌশল দরকার। আজকের পদক্ষেপের ফলে আরও বিস্তৃত, দীর্ঘমেয়াদি ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইরানে হামলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ধারণকৃত এক বার্তায় তিনি বলেছেন, অভিনন্দন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প! ন্যায়ের শক্তি নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র তৈরিতে বাধা দিয়েছিলেন, ইতিহাসে সেটা লেখা থাকবে।
ইরানের হাতে আত্মরক্ষার সব রকম পন্থা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর আত্মরক্ষার সব রকম বিকল্প ব্যবহারের অধিকার তাদের রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ উল্লেখ করে আরাকি প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে লিখেছেন, এই পদক্ষেপের চিরস্থায়ী ফল ভোগ করতে হবে।
জাতিসংঘ : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বলপ্রয়োগ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যেই খাদের কিনারে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এই হামলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল। পাশাপাশি, এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি। এভাবে চলতে থাকলে সংঘাত যে কোনও সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
এই অবস্থায় সদস্যদের প্রতি আমার আহ্বান, জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং উত্তেজনা নিরসনে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই সংকটাপন্ন মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা এড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সংকটের সমাধান সামরিক উপায়ে হবে না। সামনে যাওয়ার একমাত্র পথ হলো কূটনীতি, এর মাধ্যমেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা রয়েছে।
ভেনিজুয়েলা : মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান জিল বলেছেন, ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর মার্কিন হামলার নিন্দা জানাচ্ছে ভেনিজুয়েলা।
মেক্সিকো : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে কূটনৈতিক আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে মেক্সিকো। আঞ্চলিক সব পক্ষের শান্তিমূলক সহাবস্থান নিশ্চিত করা মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
কিউবা : যুক্তরাষ্ট্রের নেক নজরের বাইরে থাকা দেশটি বলেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমাবাজির আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী পদক্ষেপ মারাত্মকভাবে জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং পুরো মানবসভ্যতাকে অপূরণীয় পরিণতির দিকে ঠেলে নিচ্ছে।
‘কংগ্রেসে কৈফিয়ত দিতে হবে ট্রাম্পকে’
রোববার, ২২ জুন ২০২৫
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা চালানোর খবর প্রচার হতেই বিশ্বব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্বাভাবিকভাবে, ইসরায়েলের দিক থেকে ইতিবাচক বার্তা দেয়া হয়েছে, জাতিসংঘ আউড়ে যাচ্ছে তথাকথিত মুখস্থ বুলি আর কয়েকটি দেশ মার্কিন হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এসব মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়েই রয়টার্সের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রকে কেন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়ানো হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে তার কৈফিয়ত চেয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া তিনি কীভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার স্পষ্ট জবাব জানতে চেয়েছেন ওই ডেমোক্র্যাট নেতা।
এক বিবৃতিতে শুমার বলেন, ‘আজ রাতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে মার্কিন জনগণ ও কংগ্রেসকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে হবে ট্রাম্পকে। এই পদক্ষেপগুলো মার্কিন নিরাপত্তার ওপর কেমন এবং কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা-ও তাকে জানাতে হবে।’
এ সময় তিনি ট্রাম্পের ‘অদূরদর্শিতার’ কড়া সমালোচনা করেন। শুমার বলেন, ‘কোনো ধরনের কৌশল ছাড়া, কেবল হুমকি দিয়ে এভাবে যুদ্ধে যোগ দেয়ার অর্থ কী?’ একতরফাভাবে কেবল প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তেই দেশকে যুদ্ধে জড়ানো কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। শুমার বলেন, ‘অবশ্যই যুদ্ধে ক্ষমতা আইন কার্যকর করতেই হবে। আমি সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুনকে অনুরোধ করছি, যেন তিনি এটি অবিলম্বে সিনেটের আলোচ্যসূচিতে তোলেন। আমি এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেব এবং সব দলের সিনেটরদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারাও এর পক্ষে ভোট দিন। ’
তার ভাষ্যমতে, ইরানের বিরুদ্ধে লড়তে হলে এবং সেই লড়াইয়ে জিততে হলে সাহস, স্থিরতা ও স্পষ্ট কৌশল প্রয়োজন। ট্রাম্প যেভাবে অস্থির হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাতে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। তিনি বলেন, ইরানের সন্ত্রাস, পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা ও আঞ্চলিক আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে হলে সাহস, স্থিরতা এবং স্পষ্ট কৌশল দরকার। আজকের পদক্ষেপের ফলে আরও বিস্তৃত, দীর্ঘমেয়াদি ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইরানে হামলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ধারণকৃত এক বার্তায় তিনি বলেছেন, অভিনন্দন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প! ন্যায়ের শক্তি নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র তৈরিতে বাধা দিয়েছিলেন, ইতিহাসে সেটা লেখা থাকবে।
ইরানের হাতে আত্মরক্ষার সব রকম পন্থা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর আত্মরক্ষার সব রকম বিকল্প ব্যবহারের অধিকার তাদের রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ উল্লেখ করে আরাকি প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে লিখেছেন, এই পদক্ষেপের চিরস্থায়ী ফল ভোগ করতে হবে।
জাতিসংঘ : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বলপ্রয়োগ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যেই খাদের কিনারে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এই হামলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল। পাশাপাশি, এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি। এভাবে চলতে থাকলে সংঘাত যে কোনও সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
এই অবস্থায় সদস্যদের প্রতি আমার আহ্বান, জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং উত্তেজনা নিরসনে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই সংকটাপন্ন মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা এড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সংকটের সমাধান সামরিক উপায়ে হবে না। সামনে যাওয়ার একমাত্র পথ হলো কূটনীতি, এর মাধ্যমেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা রয়েছে।
ভেনিজুয়েলা : মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান জিল বলেছেন, ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর মার্কিন হামলার নিন্দা জানাচ্ছে ভেনিজুয়েলা।
মেক্সিকো : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে কূটনৈতিক আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে মেক্সিকো। আঞ্চলিক সব পক্ষের শান্তিমূলক সহাবস্থান নিশ্চিত করা মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
কিউবা : যুক্তরাষ্ট্রের নেক নজরের বাইরে থাকা দেশটি বলেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমাবাজির আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী পদক্ষেপ মারাত্মকভাবে জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং পুরো মানবসভ্যতাকে অপূরণীয় পরিণতির দিকে ঠেলে নিচ্ছে।