ইসরায়েলি হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে উত্তর গাজা ছেড়ে চলে যাচ্চে ফিলিস্তিনিরা -এএফপি
গাজার জটিল পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। একদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরীহ গাজাবাসীকে এলাকা খালি করার কড়া হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল এবং কিছু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান। এই বিপরীতমুখী অবস্থান গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে যখন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসছে, ঠিক তখনই নতুন করে আক্রমণাত্মক প্রস্তুতি ও এলাকা ছেড়ে দেওয়ার নিদেশনা এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এমন অবস্থায় একইদিনে গাজা নিয়ে বিপরীতমুখী ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার জন্য উত্তরাঞ্চলীয় গাজাবাসীকে নিরাপদ অবস্থানে সরে যেতে রবিবার (২৯ জুন) আদেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে, জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করে গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
গাজায় যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার বৈঠক ডেকেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বয়ান অনুযায়ী, ওই বৈঠকে নেতানিয়াহুকে দুটো কথা জানাতো সেনাবাহিনী- ইসরায়েল তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং অভিযানের আওতা বৃদ্ধি করলে বাকি জিম্মিদের প্রাণ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
তবে এর আগেই ইসরায়েলি বাহিনী সামাজিক মাধ্যমে এবং বার্তা পাঠিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় সরে যেতে বলেছে, যেটিকে তারা মানবিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। যদিও ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার কোথাও আর নিরাপদ নয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এই এলাকায় সন্ত্রাসী সংগঠন ধ্বংসে চূড়ান্ত ও তীব্র অভিযান চলবে এবং তা আরও পশ্চিমে শহরকেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এদিকে, রবিবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, গাজায় চুক্তি সম্পন্ন করুন এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন।
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার নতুন করে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় উদ্যোগ নিয়েছে। ২০ মাসের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামানো এবং হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি ও বিদেশি জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য একটি সমঝোতায় যাওয়ার বিষয়ে সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনা করছে তারা। এদিকে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি হামলার পর গাজা সংকট মেটানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বেড়েছে। অন্যদিকে, ত্রাণ বিতরণ ঘিরে অসন্তোষও বেড়েছে। গত এক মাসে ত্রাণ কেন্দ্রে হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাসের এক কর্মকর্তা জানান, তারা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত। এই কথা মধ্যস্থতাকারীদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে, যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে এবং ইসরায়েলকে গাজা থেকে পুরোপুরি সরে যেতে হবে। জীবিত ২০ জন জিম্মিকে কেবল যুদ্ধ সমাপ্তির চুক্তির আওতায় মুক্তি দেবে বলে জানিয়েছে হামাস। তবে তাদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা হলেই কেবল যুদ্ধ শেষ হবে। স্বাভাবিকভাবেই, এ শর্ত নাকচ করে দিয়েছে হামাস।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে দফায় দফায় উদ্যোগ নেওয়ার পরও এখনো গাজায় চলছে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে। আর ইসরায়েলি গণহত্যায় গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫৬ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮টি মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩৬৫ জন। এর ফলে গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৯ জনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় এখনো বহু মরদেহ পড়ে আছে, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর বাইরে, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪১ জন।
এ নিয়ে ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ৫৮৩ জন নিহত এবং ৪ হাজার ১৮৬ জন আহত হয়েছেন।
মার্চের ১৮ তারিখ থেকে ইসরায়েল ফের গাজায় হামলা শুরু করে। যার ফলে ভেঙে যায় জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি। এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ৬ হাজার ১৭৫ জন এবং আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৩৭৮ জন। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। শিশু ও নবজাতকেরা অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। গাজা শহরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা অস্ট্রেলীয় নার্স ক্রিস্টি ব্ল্যাক আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, তিনি যে হাসপাতালে কাজ করছেন সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী নেই। এমনকি যেসব অন্তঃসত্ত্বা নারীর নাসোগ্যাস্ট্রিক ফিডিং প্রয়োজন, তাদের জন্যও সঠিক খাবার নেই। ফলে অনেক মায়ের দুধ আসছে না, আবার শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মুলাও মিলছে না।
ইসরায়েলি হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে উত্তর গাজা ছেড়ে চলে যাচ্চে ফিলিস্তিনিরা -এএফপি
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
গাজার জটিল পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। একদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরীহ গাজাবাসীকে এলাকা খালি করার কড়া হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল এবং কিছু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান। এই বিপরীতমুখী অবস্থান গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে যখন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসছে, ঠিক তখনই নতুন করে আক্রমণাত্মক প্রস্তুতি ও এলাকা ছেড়ে দেওয়ার নিদেশনা এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এমন অবস্থায় একইদিনে গাজা নিয়ে বিপরীতমুখী ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার জন্য উত্তরাঞ্চলীয় গাজাবাসীকে নিরাপদ অবস্থানে সরে যেতে রবিবার (২৯ জুন) আদেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে, জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করে গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
গাজায় যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার বৈঠক ডেকেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বয়ান অনুযায়ী, ওই বৈঠকে নেতানিয়াহুকে দুটো কথা জানাতো সেনাবাহিনী- ইসরায়েল তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং অভিযানের আওতা বৃদ্ধি করলে বাকি জিম্মিদের প্রাণ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
তবে এর আগেই ইসরায়েলি বাহিনী সামাজিক মাধ্যমে এবং বার্তা পাঠিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় সরে যেতে বলেছে, যেটিকে তারা মানবিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। যদিও ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার কোথাও আর নিরাপদ নয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এই এলাকায় সন্ত্রাসী সংগঠন ধ্বংসে চূড়ান্ত ও তীব্র অভিযান চলবে এবং তা আরও পশ্চিমে শহরকেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এদিকে, রবিবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, গাজায় চুক্তি সম্পন্ন করুন এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন।
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার নতুন করে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় উদ্যোগ নিয়েছে। ২০ মাসের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামানো এবং হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি ও বিদেশি জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য একটি সমঝোতায় যাওয়ার বিষয়ে সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনা করছে তারা। এদিকে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি হামলার পর গাজা সংকট মেটানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বেড়েছে। অন্যদিকে, ত্রাণ বিতরণ ঘিরে অসন্তোষও বেড়েছে। গত এক মাসে ত্রাণ কেন্দ্রে হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাসের এক কর্মকর্তা জানান, তারা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত। এই কথা মধ্যস্থতাকারীদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে, যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে এবং ইসরায়েলকে গাজা থেকে পুরোপুরি সরে যেতে হবে। জীবিত ২০ জন জিম্মিকে কেবল যুদ্ধ সমাপ্তির চুক্তির আওতায় মুক্তি দেবে বলে জানিয়েছে হামাস। তবে তাদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা হলেই কেবল যুদ্ধ শেষ হবে। স্বাভাবিকভাবেই, এ শর্ত নাকচ করে দিয়েছে হামাস।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে দফায় দফায় উদ্যোগ নেওয়ার পরও এখনো গাজায় চলছে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে। আর ইসরায়েলি গণহত্যায় গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫৬ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮টি মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩৬৫ জন। এর ফলে গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৯ জনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় এখনো বহু মরদেহ পড়ে আছে, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর বাইরে, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪১ জন।
এ নিয়ে ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ৫৮৩ জন নিহত এবং ৪ হাজার ১৮৬ জন আহত হয়েছেন।
মার্চের ১৮ তারিখ থেকে ইসরায়েল ফের গাজায় হামলা শুরু করে। যার ফলে ভেঙে যায় জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি। এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ৬ হাজার ১৭৫ জন এবং আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৩৭৮ জন। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। শিশু ও নবজাতকেরা অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। গাজা শহরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা অস্ট্রেলীয় নার্স ক্রিস্টি ব্ল্যাক আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, তিনি যে হাসপাতালে কাজ করছেন সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী নেই। এমনকি যেসব অন্তঃসত্ত্বা নারীর নাসোগ্যাস্ট্রিক ফিডিং প্রয়োজন, তাদের জন্যও সঠিক খাবার নেই। ফলে অনেক মায়ের দুধ আসছে না, আবার শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মুলাও মিলছে না।