alt

news » international

এবার চীন-ভারত পানিযুদ্ধের শঙ্কা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫

ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং জেলার সিয়াং নদীর একটি দৃশ্য -এএফপি

চীনের তিব্বতে নির্মাণাধীন মেগা বাঁধ ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে। শুষ্ক মৌসুমে ইয়ারলুং জাংবো নদীর পানিপ্রবাহ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের নিজস্ব জলাধার ও বাঁধ প্রকল্প ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে চারটি সূত্র এবং সরকারি বিশ্লেষণ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ভারতের লক্ষ্য এখন নদীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং চীনের পানিসম্পদ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য কৌশল প্রতিহত করা। আপার সিয়াং মাল্টিপারপাস স্টোরেজ বাঁধের নির্মাণ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে, যা সম্পন্ন হলে দেশের বৃহত্তম বাঁধ হবে এবং শুষ্ক মৌসুমে গুয়াহাটিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে পানির সরবরাহ বজায় রাখবে।

জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে ভারত সরকার তিব্বতের আংসি হিমবাহ থেকে নদীর জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করে। এই হিমবাহ থেকে উৎপন্ন নদীর পানি চীন, ভারত ও বাংলাদেশের ভাটিতে ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবিকা ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। তবে সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশে স্থানীয়দের তীব্র প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, কোনো বাঁধ নির্মাণ হলে তাদের গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে এবং জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।

ভারতের নিরাপত্তা ও পানি বিষয়ক সিনিয়র কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই এই বছরের জন্য একাধিক বৈঠক করেছেন। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ের আয়োজিত বৈঠকেও বিষয়টি উঠে এসেছে। এই উদ্যোগ মূলত চীনের আংশিক পানিবাহিত ক্ষমতার প্রভাব কমাতে এবং ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের জনগণকে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে।

দেশটির বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ সংস্থা গত মে মাসে আপার সিয়াং মাল্টিপারপাস স্টোরেজ বাঁধের জন্য সশস্ত্র পুলিশ সুরক্ষা সরঞ্জাম স্থানান্তর করেছে। সম্পন্ন হলে এটি দেশের বৃহত্তম বাঁধ হবে। সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তারা এই বছর প্রকল্পের নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে বৈঠক করেছেন। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ও এ বিষয়ে বৈঠক আয়োজন করেছিল।

সরকারি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনা বাঁধ বছরে ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরাতে সক্ষম হবে। ভারতের নিজস্ব প্রকল্প না থাকলে গুয়াহাটিসহ পানিঘনিষ্ঠ শিল্প ও কৃষি অঞ্চলগুলোতে সরবরাহ ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। আপার সিয়াং বাঁধের ১৪ বিসিএম ধারণক্ষমতা এই হ্রাস কমাবে এবং শুষ্ক মৌসুমে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ বজায় রাখবে।

বাঁধের ন্যূনতম ড্রডাউন স্তরে থাকলে অতিরিক্ত পানি শোষণ সম্ভব হবে। ভারত অপ্রত্যাশিত জলোচ্ছ্বাসের জন্য বাঁধের ৩০ শতাংশ খালি রাখার পরিকল্পনা করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, প্রকল্পগুলো পরিবেশ এবং নিরাপত্তার দিক থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা বলেন, ‘চীন আন্তঃসীমান্ত নদীর ব্যবহার নিয়ে দায়িত্বশীল এবং ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী যোগাযোগ বজায় রেখেছে।’ এ বিষয়ে ভারতের পানি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এনএইচপিসিও কোনো মন্তব্য করেননি। ভারতের এ বাঁধ নির্মাণের ঝুঁকিও আছে। অরুণাচল প্রদেশের আদিবাসীরা এ প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন। তাদের ভয়, এ বাঁধ নির্মাণ হলে তাদের প্রায় ২৭টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যাবে। কয়েক হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারাবে। চাষের জমি, ফলের বাগান এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গড়ে ওঠা জীবনযাত্রা ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্থানীয়দের বাধা সত্ত্বেও ভারত সরকার সশস্ত্র পুলিশের পাহারায় প্রকল্পের সমীক্ষা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নয়াদিল্লি এখন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করছে।

গত ২০ জুলাই সিয়াং ইন্ডিজিনাস ফার্মার্স ফোরাম গেকুতে প্রতিবাদ সভা ডাকে। সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় সমাবেশ ছিল এটি। সেখানে আপার সিয়াং এবং তার বাইরেরও কয়েক হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। নেতারা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করা এবং এ অঞ্চলে মোতায়েন করা কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের দাবি জানান। তারা সিয়াংকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পবিত্র’ নদী হিসেবে ঘোষণা করেন। আদিবাসীরা জানান, এই নদী তাদের ‘মা’। এর প্রবাহ কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লিকেন লিবাং বলেন, ‘সিয়াং উপত্যকার মানুষ এই নদীর দানের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।’

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, হিমালয়ের এ অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ। এখানে বড় দুটি বাঁধ নির্মাণ করা হলে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। একটি বড় ভূমিকম্পে বাঁধ ভেঙে গেলে ভারত, চীন এমনকি বাংলাদেশে প্রলয়ঙ্করী বন্যা হতে পারে। ১৯৫০ সালে এই অঞ্চলে ৮.৭ মাত্রার আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। তখন প্রায় চার হাজার ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।

২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাহাড়ি সিয়াং উপত্যকায় সমীক্ষা চালিয়ে দেড় হাজারের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, পোকামাকড়, পাখি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে।

এর মধ্যে কিছু প্রজাতি বিজ্ঞানীদের কাছে নতুন। এই বাঁধ এসব প্রাণের জন্য হুমকি ডেকে আনতে পারে।

ছবি

পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিশ্বকে কাছে টানছে রাশিয়া

ছবি

ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় আরও ৫ সাংবাদিক নিহত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পোড়ালে ১ বছরের জেল, ভিসা বাতিল

ছবি

এক সপ্তাহে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত

ছবি

চীনের ৬ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দুয়ার খুলছেন ট্রাম্প

ছবি

শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে যাচ্ছেন পুতিন-মোদীসহ ২০ নেতা

ছবি

গাজার হাসপাতালে ৫ সাংবাদিক হত্যা: বিশ্ব নেতাদের ক্ষোভ, সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নিন্দা

ছবি

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে বরখাস্তের আদেশ ট্রাম্পের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পোড়ালে ১ বছরের জেল, বিদেশিদের ভিসা বাতিল: ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

ছবি

পশ্চিম তীরে তিন হাজার জলপাইগাছ উপড়ে ফেলল ইসরায়েলি সেনারা

ছবি

দুই সহস্রাধিক বিস্ফোরণের প্রভাব আজও বিদ্যমান

ওয়াশিংটনে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা হাতে অস্ত্র পাচ্ছেন

ছবি

অস্ট্রেলিয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে লাখো মানুষের সমাবেশ

ছবি

ভারত-চীন কাছাকাছি এলে যুক্তরাষ্ট্র কি এশিয়ায় ধাক্কা খাবে

ছবি

ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কারা দেবে, জানিয়ে দিল রাশিয়া

ছবি

ইয়েমেনের রাজধানীতে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৬

ছবি

পুরো রাখাইন দখলে মরিয়া বিদ্রোহীরা

ছবি

বাণিজ্য নিয়ে চীন-ভারতের নতুন সম্পর্ক কি টিকবে

ছবি

অর্থ থাকলেই মিলবে ওমানের গোল্ডেন ভিসা!

ছবি

এক মাসেই রাশিয়ার ১০ জ্বালানি স্থাপনায় ইউক্রেনের হামলা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ডাক পরিষেবা স্থগিত করল ভারত

ছবি

গাজায় ক্ষুধার কষ্ট বাড়ছে, তীব্র অপুষ্টিতে সোয়া ৩ লাখ শিশু

ছবি

পাকিস্তানে শতদ্রু নদীর প্লাবনে বন্যার সর্বোচ্চ সতর্কতা, সরানো হলো ১৯ হাজার মানুষ

ছবি

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে কারা কেমন সহায়তা করেছে ইউক্রেনকে

“আমাকেও হয়তো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারে” : নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের

ছবি

নেতানিয়াহু: যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও গাজা দখল করবে ইসরায়েল

ছবি

উষ্ণতা ও ভয়াবহ দাবানলে বিপর্যস্ত ইউরোপ

ছবি

কাদা তুলে কুমেরু মহাসাগরের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা

ছবি

ডেমোক্র্যাটদের ৭৮ শতাংশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে, ৫৩ শতাংশ রিপাবলিকান চান না

ছবি

গাজায় দুর্ভিক্ষ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের ক্ষোভ, জাতিসংঘ বলছে‘মানবতার ব্যর্থতা’

ছবি

ভারতের ৪০ শতাংশ মুখ্যমন্ত্রী ফৌজদারি মামলার আসামি

ছবি

ইরানি ড্রোনে যেভাবে যুদ্ধের রূপ বদলে দিচ্ছে রাশিয়া

ছবি

ট্রাম্প প্রশাসনের কোপে চাকরি হারালেন পেন্টাগনের গোয়েন্দা প্রধান

ছবি

হাসিনাকে ফেরত না পাঠিয়ে গরিব বাংলাভাষীদের বিতাড়নের সমালোচনা ভারতীয় এমপির

ছবি

গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে, জানালো জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা

ছবি

ইউক্রেইনকে রাশিয়ার কাছে ভূমি ছাড়ের চাপকে ফাঁদ বললেন ইইউ কূটনীতিক

tab

news » international

এবার চীন-ভারত পানিযুদ্ধের শঙ্কা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং জেলার সিয়াং নদীর একটি দৃশ্য -এএফপি

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫

চীনের তিব্বতে নির্মাণাধীন মেগা বাঁধ ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে। শুষ্ক মৌসুমে ইয়ারলুং জাংবো নদীর পানিপ্রবাহ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের নিজস্ব জলাধার ও বাঁধ প্রকল্প ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে চারটি সূত্র এবং সরকারি বিশ্লেষণ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ভারতের লক্ষ্য এখন নদীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং চীনের পানিসম্পদ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য কৌশল প্রতিহত করা। আপার সিয়াং মাল্টিপারপাস স্টোরেজ বাঁধের নির্মাণ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে, যা সম্পন্ন হলে দেশের বৃহত্তম বাঁধ হবে এবং শুষ্ক মৌসুমে গুয়াহাটিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে পানির সরবরাহ বজায় রাখবে।

জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে ভারত সরকার তিব্বতের আংসি হিমবাহ থেকে নদীর জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করে। এই হিমবাহ থেকে উৎপন্ন নদীর পানি চীন, ভারত ও বাংলাদেশের ভাটিতে ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবিকা ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। তবে সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশে স্থানীয়দের তীব্র প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, কোনো বাঁধ নির্মাণ হলে তাদের গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে এবং জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।

ভারতের নিরাপত্তা ও পানি বিষয়ক সিনিয়র কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই এই বছরের জন্য একাধিক বৈঠক করেছেন। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ের আয়োজিত বৈঠকেও বিষয়টি উঠে এসেছে। এই উদ্যোগ মূলত চীনের আংশিক পানিবাহিত ক্ষমতার প্রভাব কমাতে এবং ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের জনগণকে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে।

দেশটির বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ সংস্থা গত মে মাসে আপার সিয়াং মাল্টিপারপাস স্টোরেজ বাঁধের জন্য সশস্ত্র পুলিশ সুরক্ষা সরঞ্জাম স্থানান্তর করেছে। সম্পন্ন হলে এটি দেশের বৃহত্তম বাঁধ হবে। সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তারা এই বছর প্রকল্পের নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে বৈঠক করেছেন। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ও এ বিষয়ে বৈঠক আয়োজন করেছিল।

সরকারি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনা বাঁধ বছরে ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরাতে সক্ষম হবে। ভারতের নিজস্ব প্রকল্প না থাকলে গুয়াহাটিসহ পানিঘনিষ্ঠ শিল্প ও কৃষি অঞ্চলগুলোতে সরবরাহ ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। আপার সিয়াং বাঁধের ১৪ বিসিএম ধারণক্ষমতা এই হ্রাস কমাবে এবং শুষ্ক মৌসুমে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ বজায় রাখবে।

বাঁধের ন্যূনতম ড্রডাউন স্তরে থাকলে অতিরিক্ত পানি শোষণ সম্ভব হবে। ভারত অপ্রত্যাশিত জলোচ্ছ্বাসের জন্য বাঁধের ৩০ শতাংশ খালি রাখার পরিকল্পনা করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, প্রকল্পগুলো পরিবেশ এবং নিরাপত্তার দিক থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা বলেন, ‘চীন আন্তঃসীমান্ত নদীর ব্যবহার নিয়ে দায়িত্বশীল এবং ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী যোগাযোগ বজায় রেখেছে।’ এ বিষয়ে ভারতের পানি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এনএইচপিসিও কোনো মন্তব্য করেননি। ভারতের এ বাঁধ নির্মাণের ঝুঁকিও আছে। অরুণাচল প্রদেশের আদিবাসীরা এ প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন। তাদের ভয়, এ বাঁধ নির্মাণ হলে তাদের প্রায় ২৭টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যাবে। কয়েক হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারাবে। চাষের জমি, ফলের বাগান এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গড়ে ওঠা জীবনযাত্রা ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্থানীয়দের বাধা সত্ত্বেও ভারত সরকার সশস্ত্র পুলিশের পাহারায় প্রকল্পের সমীক্ষা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নয়াদিল্লি এখন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করছে।

গত ২০ জুলাই সিয়াং ইন্ডিজিনাস ফার্মার্স ফোরাম গেকুতে প্রতিবাদ সভা ডাকে। সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় সমাবেশ ছিল এটি। সেখানে আপার সিয়াং এবং তার বাইরেরও কয়েক হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। নেতারা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করা এবং এ অঞ্চলে মোতায়েন করা কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের দাবি জানান। তারা সিয়াংকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পবিত্র’ নদী হিসেবে ঘোষণা করেন। আদিবাসীরা জানান, এই নদী তাদের ‘মা’। এর প্রবাহ কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লিকেন লিবাং বলেন, ‘সিয়াং উপত্যকার মানুষ এই নদীর দানের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।’

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, হিমালয়ের এ অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ। এখানে বড় দুটি বাঁধ নির্মাণ করা হলে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। একটি বড় ভূমিকম্পে বাঁধ ভেঙে গেলে ভারত, চীন এমনকি বাংলাদেশে প্রলয়ঙ্করী বন্যা হতে পারে। ১৯৫০ সালে এই অঞ্চলে ৮.৭ মাত্রার আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। তখন প্রায় চার হাজার ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।

২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাহাড়ি সিয়াং উপত্যকায় সমীক্ষা চালিয়ে দেড় হাজারের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, পোকামাকড়, পাখি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে।

এর মধ্যে কিছু প্রজাতি বিজ্ঞানীদের কাছে নতুন। এই বাঁধ এসব প্রাণের জন্য হুমকি ডেকে আনতে পারে।

back to top