প্রতিদিনের মতো সকালে কাজে যাওয়ার আগে ধ্রুপদী সঙ্গীতের অনুষ্ঠান দেখতে টিভি ছেড়েছিলেন চিলির বাসিন্দা হাভিয়ের গায়ের্দো। তবে জুন মাসের এক সোমবারে স্ক্রিনে পরিচিত অনুষ্ঠানের বদলে সামনে এলো সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি চ্যানেল, যেখানে দেখানো হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অনুষ্ঠানের মাথামুণ্ডু বুঝতে ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেন তিনি। স্ক্রিনের কোণায় ‘আরটি’ লোগো সম্পর্কে ইন্টারনেটে খুঁজে কেবল জানতে পারলেন, সেটা একটা রুশ মালিকানাধীন চ্যানেল। পেশায় ট্রাকচালক হাভিয়ের পরে জানতে পারেন, চিলির বেসরকারি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল টেলেক্যানাল তাদের সম্প্রচার সিগন্যাল সরাসরি রুশ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আরটির হাতে তুলে দিয়েছে। চিলির সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্ভাব্য আইনভঙ্গের অভিযোগে টেলেক্যানালের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এখন চ্যানেলের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিবিসির অনুরোধে টেলেক্যানালের তরফ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত তিন বছরে রুশ নিয়ন্ত্রিত সংবাদ চ্যানেল আরটি এবং সংবাদ সংস্থা ও বেতারমাধ্যম স্পুটনিক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। তারা এখন আফ্রিকা, বলকান অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রচার করছে। ২০২৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি আলজেরিয়ায় একটি কার্যালয় খুলেছে, সার্বিয়ান ভাষায় টিভি সেবা চালু করেছে এবং আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত ও চীনা সাংবাদিকদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। এটি ভারতে একটি নতুন অফিস খোলার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে স্পুটনিক ফেব্রুয়ারিতে ইথিওপিয়ায় একটি নিউজরুম চালু করেছে। সবকিছু ঘটছে এমন সময়ে যখন কিছু অঞ্চলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম দুর্বল হয়ে পড়ছে আবার পশ্চিমা দেশগুলোতে রুশ সংবাদমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাজেট কমানো এবং পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের পরিবর্তনের কারণে কিছু পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিধি ছোট করছে।
মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সেবা ভয়েস অব আমেরিকা তাদের অধিকাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে। দুই বছর আগে বিবিসি তাদের আরবি ভাষায় বেতার পরিষেবা বন্ধ করে ডিজিটাল ভিত্তিক সেবা চালু করে, যা অডিও, ভিডিও ও লিখিত সংবাদ সরবরাহ করে।
এখন কেবল গাজা ও সুদানের জন্য জরুরি বেতার সেবা চালু আছে।
ওদিকে, ওই একই বছরে বিবিসি আরবি সরে যাওয়ায় সেই ফ্রিকোয়েন্সি দখল করে রাশিয়ার স্পুটনিক লেবাননে ২৪ ঘণ্টার সম্প্রচার শুরু করে। এদিকে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার রুশ আগ্রাসন শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোসহ প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আরটির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ ছিল।
২০২৪ সালে আরটির সম্পাদক প্রধান মার্গারিটা সিমোনিয়ানসহ সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল যখন ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের একটি বিস্তৃত প্রচারণা চালানোর অভিযোগ ওঠে। স্বভাবতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে আরটি।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যাথরিন স্টোনার বলেছেন, কংক্রিটের কোথাও ফাটল পেলে সেখান দিয়ে পানি যেমন ঢুকে যায়, রাশিয়া হচ্ছে সেরকম। প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য কী? আর সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা পরিবর্তিত বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে কী প্রভাব ফেলছে?
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক স্টিফেন হাচিংস বলেছেন, প্রাচ্যের দেশগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শ প্রচারের উর্বর ক্ষেত্র। কারণ ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা ও ঔপনিবেশিকবিরোধী মনোভাব এখনও বিদ্যমান।ভিন্ন অঞ্চলের পৃথক মতাদর্শের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে রুশ প্রচারণা নির্দিষ্ট অঞ্চলের দর্শকদের উপযোগী করে চৌকসভাবে সাজানো হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে দর্শকরা সহজেই বিভ্রান্তিকর তথ্যের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
প্রতিদিনের মতো সকালে কাজে যাওয়ার আগে ধ্রুপদী সঙ্গীতের অনুষ্ঠান দেখতে টিভি ছেড়েছিলেন চিলির বাসিন্দা হাভিয়ের গায়ের্দো। তবে জুন মাসের এক সোমবারে স্ক্রিনে পরিচিত অনুষ্ঠানের বদলে সামনে এলো সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি চ্যানেল, যেখানে দেখানো হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অনুষ্ঠানের মাথামুণ্ডু বুঝতে ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেন তিনি। স্ক্রিনের কোণায় ‘আরটি’ লোগো সম্পর্কে ইন্টারনেটে খুঁজে কেবল জানতে পারলেন, সেটা একটা রুশ মালিকানাধীন চ্যানেল। পেশায় ট্রাকচালক হাভিয়ের পরে জানতে পারেন, চিলির বেসরকারি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল টেলেক্যানাল তাদের সম্প্রচার সিগন্যাল সরাসরি রুশ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আরটির হাতে তুলে দিয়েছে। চিলির সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্ভাব্য আইনভঙ্গের অভিযোগে টেলেক্যানালের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এখন চ্যানেলের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিবিসির অনুরোধে টেলেক্যানালের তরফ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত তিন বছরে রুশ নিয়ন্ত্রিত সংবাদ চ্যানেল আরটি এবং সংবাদ সংস্থা ও বেতারমাধ্যম স্পুটনিক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। তারা এখন আফ্রিকা, বলকান অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রচার করছে। ২০২৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি আলজেরিয়ায় একটি কার্যালয় খুলেছে, সার্বিয়ান ভাষায় টিভি সেবা চালু করেছে এবং আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত ও চীনা সাংবাদিকদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। এটি ভারতে একটি নতুন অফিস খোলার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে স্পুটনিক ফেব্রুয়ারিতে ইথিওপিয়ায় একটি নিউজরুম চালু করেছে। সবকিছু ঘটছে এমন সময়ে যখন কিছু অঞ্চলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম দুর্বল হয়ে পড়ছে আবার পশ্চিমা দেশগুলোতে রুশ সংবাদমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাজেট কমানো এবং পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের পরিবর্তনের কারণে কিছু পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিধি ছোট করছে।
মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সেবা ভয়েস অব আমেরিকা তাদের অধিকাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে। দুই বছর আগে বিবিসি তাদের আরবি ভাষায় বেতার পরিষেবা বন্ধ করে ডিজিটাল ভিত্তিক সেবা চালু করে, যা অডিও, ভিডিও ও লিখিত সংবাদ সরবরাহ করে।
এখন কেবল গাজা ও সুদানের জন্য জরুরি বেতার সেবা চালু আছে।
ওদিকে, ওই একই বছরে বিবিসি আরবি সরে যাওয়ায় সেই ফ্রিকোয়েন্সি দখল করে রাশিয়ার স্পুটনিক লেবাননে ২৪ ঘণ্টার সম্প্রচার শুরু করে। এদিকে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার রুশ আগ্রাসন শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোসহ প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আরটির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ ছিল।
২০২৪ সালে আরটির সম্পাদক প্রধান মার্গারিটা সিমোনিয়ানসহ সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল যখন ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের একটি বিস্তৃত প্রচারণা চালানোর অভিযোগ ওঠে। স্বভাবতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে আরটি।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যাথরিন স্টোনার বলেছেন, কংক্রিটের কোথাও ফাটল পেলে সেখান দিয়ে পানি যেমন ঢুকে যায়, রাশিয়া হচ্ছে সেরকম। প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য কী? আর সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা পরিবর্তিত বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে কী প্রভাব ফেলছে?
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক স্টিফেন হাচিংস বলেছেন, প্রাচ্যের দেশগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শ প্রচারের উর্বর ক্ষেত্র। কারণ ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা ও ঔপনিবেশিকবিরোধী মনোভাব এখনও বিদ্যমান।ভিন্ন অঞ্চলের পৃথক মতাদর্শের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে রুশ প্রচারণা নির্দিষ্ট অঞ্চলের দর্শকদের উপযোগী করে চৌকসভাবে সাজানো হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে দর্শকরা সহজেই বিভ্রান্তিকর তথ্যের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে।