alt

news » international

ভারতকে মোকাবিলায় কেন নতুন রকেট কমান্ড গড়ল পাকিস্তান

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫

‘পাকিস্তান দিবস’-এর সামরিক শোভাযাত্রায় একটি শাহীন-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন সেনাসদস্য -এএফপি

পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নতুন এক সামরিক কাঠামো ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, সেনাবাহিনীতে গড়ে তোলা হয়েছে আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি)। এটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘সব দিক থেকে শত্রুকে আঘাত হানতে সক্ষম’। ১৩ আগস্ট ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে শরিফ বলেন, এ উদ্যোগ পাকিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

পাকিস্তানে ‘শত্রু’ বলতে মূলত বোঝানো হয় দেশটির প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে। দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। ওই ঘোষণার মাত্র এক সপ্তাহ পর ভারত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওডিশা থেকে ‘অগ্নি-৫’ মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এর পাল্লা ৫ হাজার কিলোমিটার (৩ হাজার ১০০ মাইল)।

যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের এআরএফসি গঠনের সঙ্গে ভারতের ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে এআরএফসি গঠনের সিদ্ধান্ত এসেছে চলতি বছরের মে মাসে হওয়া পাকিস্তান-ভারতের টানা চার দিনের সংঘাতের পর। ওই সংঘাতে দুই দেশ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ লড়াই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাকৌশলের কিছু দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। প্রায় তিন দশক ধরে দেশটি মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর ভরসা করে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বাস্তবে কখন সেই অস্ত্রের ব্যবহার করবে, তা নিয়ে ছিল অস্পষ্ট অবস্থানে।

তবে এআরএফসি গঠনের সিদ্ধান্ত এসেছে চলতি বছরের মে মাসে হওয়া পাকিস্তান-ভারতের টানা চার দিনের সংঘাতের পর। সংঘাতে দুই দেশ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ লড়াই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাকৌশলের কিছু দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু পাকিস্তানই নয়, বর্তমানকালের আধুনিক যুদ্ধ বা লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের গুরুত্ব বাড়ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কিংবা ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত এর বড় প্রমাণ।

এআরএফসি আসলে কী: প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ নতুন রকেট কমান্ড নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এআরএফসি হচ্ছে সেনাবাহিনীর নতুন এক শাখা। এর মাধ্যমে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীভূত করা হবে। অর্থাৎ প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন, ব্যবহার, সংরক্ষণ—সব দায়িত্ব ছড়ানো–ছিটানো কমান্ডের পরিবর্তে একসঙ্গে একটি নতুন কমান্ডের হাতে আসবে।

পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোয় পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশনের (এসপিডি) হাতে। আর কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ‘ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)’। এসপিডির সাবেক সেনাকর্মকর্তা নাঈম সালিকের মতে, এআরএফসি পারমাণবিক সক্ষমতার অস্ত্রব্যবস্থার পরিবর্তে মূলত প্রচলিত গাইডেড রকেটব্যবস্থা নিয়েই কাজ করবে।

ভারতের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অবশ্যই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। তবে রকেট কমান্ড আসলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ। তুঘরাল ইয়ামিন, বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ব্রিগেডিয়ার ‘প্রচলিত কামানের পাল্লা যেখানে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার (১৯ থেকে ২২ মাইল), এআরএফসি সেখানে এমন গাইডেড রকেটের ওপর জোর দিচ্ছে, যেগুলো পুরোপুরি প্রচলিত ব্যবস্থা ও পারমাণবিক সক্ষমতাহীন’, বলেন নাঈম সালিক। বর্তমানে তিনি ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ভিশন ইনস্টিটিউটের (এসভিআই) নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

নাঈম জানান, পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এখনো এসপিডি ও এনসিএর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। আর এআরএফসির তত্ত্বাবধান করবে সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (জিএইচকিউ)। অন্যদিকে, সাবেক ব্রিগেডিয়ার এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও পারমাণবিক নীতি–বিশেষজ্ঞ তুঘরাল ইয়ামিন বলেন, এআরএফসি গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি ও কার্যকারিতা বাড়ানো—হোক সেটা প্রতিরোধ কৌশলের অংশ হিসেবে কিংবা সীমিত সংঘাতকালে ব্যবহারের লক্ষ্যে।

‘রকেট ফোর্স কমান্ডকে অবশ্যই আঞ্চলিক হুমকির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। এটা কোনো আকস্মিক প্রতিক্রিয়া নয় যে শুধু একটি পরীক্ষা বা সীমিত সংঘর্ষের জবাবে গড়ে তোলা হয়েছে’, বলেন ইয়ামিন। বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নয়টি কোর রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে তিনটি বিশেষায়িত কমান্ড-আকাশ প্রতিরক্ষা, সাইবার ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড (যা পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহনের দায়িত্বে)। এআরএফসির নেতৃত্ব দেবেন সেনাবাহিনীর একজন তিন তারকা জেনারেল, যা এর গুরুত্বকেই তুলে ধরছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তিন তারকা জেনারেলদের হাতে সাধারণত কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোর ও দপ্তরের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

এআরএফসির প্রয়োজন কেন হলো: বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ নতুন সামরিক কাঠামো ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বা মে মাসের সংঘাতের সরাসরি প্রতিক্রিয়া নয়; বরং বহুদিনের চিন্তাভাবনার ফল। তুঘরাল ইয়ামিন মনে করেন, ভারতের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অবশ্যই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। তবে রকেট কমান্ড আসলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি বলেন, পাকিস্তান আগেই স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে ঝুঁকেছিল। তাঁর মতে, পারমাণবিক মিশন সামলাবে স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড, আর প্রচলিত হামলার দায়িত্ব হবে রকেট ফোর্সের।

ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) শিক্ষক মনসুর আহমেদ বলেন, সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশই যুদ্ধের প্রচলিত কৌশলগত বিকল্প তৈরি করেছে। তাই ভারতের বাড়তে থাকা পাল্টা আক্রমণক্ষমতার মুখে পাকিস্তানের এআরএফসি আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি পূরণ করছে। মে মাসের সংঘাতে ভারতের ব্রহ্মোস ব্যবহার করার পরও পাকিস্তান বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত করতে পারেনি। কারণ, বাবর শুধু পারমাণবিক মিশনের জন্য সংরক্ষিত এবং তা নিয়ন্ত্রণ করে এই মিশনের দায়িত্বে থাকা এসপিডি ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড।

ছবি

গাজায় ৯০ শতাংশ স্কুল ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

ছবি

মোদিকে ফিজির প্রধানমন্ত্রী বললেন ‘আপনার প্রতি কেউ খুশি নয়’

ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ায় স্কুলে ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

পর্যটকদের স্যুটকেস নিয়ে বিড়ম্বনায় জাপান, আতঙ্কে স্থানীয়রা

ছবি

ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর, অর্ধেক রপ্তানি কমার শঙ্কা

ছবি

বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরপুরুষের যৌনতা ‘ব্যভিচার’, মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ধর্ষণ নয়: ভারতের হাই কোর্ট

ছবি

পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিশ্বকে কাছে টানছে রাশিয়া

ছবি

ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় আরও ৫ সাংবাদিক নিহত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পোড়ালে ১ বছরের জেল, ভিসা বাতিল

ছবি

এক সপ্তাহে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত

ছবি

চীনের ৬ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দুয়ার খুলছেন ট্রাম্প

ছবি

এবার চীন-ভারত পানিযুদ্ধের শঙ্কা

ছবি

শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে যাচ্ছেন পুতিন-মোদীসহ ২০ নেতা

ছবি

গাজার হাসপাতালে ৫ সাংবাদিক হত্যা: বিশ্ব নেতাদের ক্ষোভ, সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নিন্দা

ছবি

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে বরখাস্তের আদেশ ট্রাম্পের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পোড়ালে ১ বছরের জেল, বিদেশিদের ভিসা বাতিল: ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

ছবি

পশ্চিম তীরে তিন হাজার জলপাইগাছ উপড়ে ফেলল ইসরায়েলি সেনারা

ছবি

দুই সহস্রাধিক বিস্ফোরণের প্রভাব আজও বিদ্যমান

ওয়াশিংটনে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা হাতে অস্ত্র পাচ্ছেন

ছবি

অস্ট্রেলিয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে লাখো মানুষের সমাবেশ

ছবি

ভারত-চীন কাছাকাছি এলে যুক্তরাষ্ট্র কি এশিয়ায় ধাক্কা খাবে

ছবি

ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কারা দেবে, জানিয়ে দিল রাশিয়া

ছবি

ইয়েমেনের রাজধানীতে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৬

ছবি

পুরো রাখাইন দখলে মরিয়া বিদ্রোহীরা

ছবি

বাণিজ্য নিয়ে চীন-ভারতের নতুন সম্পর্ক কি টিকবে

ছবি

অর্থ থাকলেই মিলবে ওমানের গোল্ডেন ভিসা!

ছবি

এক মাসেই রাশিয়ার ১০ জ্বালানি স্থাপনায় ইউক্রেনের হামলা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ডাক পরিষেবা স্থগিত করল ভারত

ছবি

গাজায় ক্ষুধার কষ্ট বাড়ছে, তীব্র অপুষ্টিতে সোয়া ৩ লাখ শিশু

ছবি

পাকিস্তানে শতদ্রু নদীর প্লাবনে বন্যার সর্বোচ্চ সতর্কতা, সরানো হলো ১৯ হাজার মানুষ

ছবি

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে কারা কেমন সহায়তা করেছে ইউক্রেনকে

“আমাকেও হয়তো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারে” : নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের

ছবি

নেতানিয়াহু: যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও গাজা দখল করবে ইসরায়েল

ছবি

উষ্ণতা ও ভয়াবহ দাবানলে বিপর্যস্ত ইউরোপ

ছবি

কাদা তুলে কুমেরু মহাসাগরের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা

ছবি

ডেমোক্র্যাটদের ৭৮ শতাংশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে, ৫৩ শতাংশ রিপাবলিকান চান না

tab

news » international

ভারতকে মোকাবিলায় কেন নতুন রকেট কমান্ড গড়ল পাকিস্তান

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

‘পাকিস্তান দিবস’-এর সামরিক শোভাযাত্রায় একটি শাহীন-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন সেনাসদস্য -এএফপি

বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫

পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নতুন এক সামরিক কাঠামো ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, সেনাবাহিনীতে গড়ে তোলা হয়েছে আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি)। এটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘সব দিক থেকে শত্রুকে আঘাত হানতে সক্ষম’। ১৩ আগস্ট ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে শরিফ বলেন, এ উদ্যোগ পাকিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

পাকিস্তানে ‘শত্রু’ বলতে মূলত বোঝানো হয় দেশটির প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে। দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। ওই ঘোষণার মাত্র এক সপ্তাহ পর ভারত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওডিশা থেকে ‘অগ্নি-৫’ মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এর পাল্লা ৫ হাজার কিলোমিটার (৩ হাজার ১০০ মাইল)।

যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের এআরএফসি গঠনের সঙ্গে ভারতের ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে এআরএফসি গঠনের সিদ্ধান্ত এসেছে চলতি বছরের মে মাসে হওয়া পাকিস্তান-ভারতের টানা চার দিনের সংঘাতের পর। ওই সংঘাতে দুই দেশ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ লড়াই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাকৌশলের কিছু দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। প্রায় তিন দশক ধরে দেশটি মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর ভরসা করে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বাস্তবে কখন সেই অস্ত্রের ব্যবহার করবে, তা নিয়ে ছিল অস্পষ্ট অবস্থানে।

তবে এআরএফসি গঠনের সিদ্ধান্ত এসেছে চলতি বছরের মে মাসে হওয়া পাকিস্তান-ভারতের টানা চার দিনের সংঘাতের পর। সংঘাতে দুই দেশ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ লড়াই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাকৌশলের কিছু দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু পাকিস্তানই নয়, বর্তমানকালের আধুনিক যুদ্ধ বা লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের গুরুত্ব বাড়ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কিংবা ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত এর বড় প্রমাণ।

এআরএফসি আসলে কী: প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ নতুন রকেট কমান্ড নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এআরএফসি হচ্ছে সেনাবাহিনীর নতুন এক শাখা। এর মাধ্যমে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীভূত করা হবে। অর্থাৎ প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন, ব্যবহার, সংরক্ষণ—সব দায়িত্ব ছড়ানো–ছিটানো কমান্ডের পরিবর্তে একসঙ্গে একটি নতুন কমান্ডের হাতে আসবে।

পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোয় পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশনের (এসপিডি) হাতে। আর কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ‘ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)’। এসপিডির সাবেক সেনাকর্মকর্তা নাঈম সালিকের মতে, এআরএফসি পারমাণবিক সক্ষমতার অস্ত্রব্যবস্থার পরিবর্তে মূলত প্রচলিত গাইডেড রকেটব্যবস্থা নিয়েই কাজ করবে।

ভারতের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অবশ্যই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। তবে রকেট কমান্ড আসলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ। তুঘরাল ইয়ামিন, বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ব্রিগেডিয়ার ‘প্রচলিত কামানের পাল্লা যেখানে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার (১৯ থেকে ২২ মাইল), এআরএফসি সেখানে এমন গাইডেড রকেটের ওপর জোর দিচ্ছে, যেগুলো পুরোপুরি প্রচলিত ব্যবস্থা ও পারমাণবিক সক্ষমতাহীন’, বলেন নাঈম সালিক। বর্তমানে তিনি ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ভিশন ইনস্টিটিউটের (এসভিআই) নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

নাঈম জানান, পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এখনো এসপিডি ও এনসিএর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। আর এআরএফসির তত্ত্বাবধান করবে সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (জিএইচকিউ)। অন্যদিকে, সাবেক ব্রিগেডিয়ার এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও পারমাণবিক নীতি–বিশেষজ্ঞ তুঘরাল ইয়ামিন বলেন, এআরএফসি গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি ও কার্যকারিতা বাড়ানো—হোক সেটা প্রতিরোধ কৌশলের অংশ হিসেবে কিংবা সীমিত সংঘাতকালে ব্যবহারের লক্ষ্যে।

‘রকেট ফোর্স কমান্ডকে অবশ্যই আঞ্চলিক হুমকির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। এটা কোনো আকস্মিক প্রতিক্রিয়া নয় যে শুধু একটি পরীক্ষা বা সীমিত সংঘর্ষের জবাবে গড়ে তোলা হয়েছে’, বলেন ইয়ামিন। বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নয়টি কোর রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে তিনটি বিশেষায়িত কমান্ড-আকাশ প্রতিরক্ষা, সাইবার ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড (যা পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহনের দায়িত্বে)। এআরএফসির নেতৃত্ব দেবেন সেনাবাহিনীর একজন তিন তারকা জেনারেল, যা এর গুরুত্বকেই তুলে ধরছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তিন তারকা জেনারেলদের হাতে সাধারণত কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোর ও দপ্তরের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

এআরএফসির প্রয়োজন কেন হলো: বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ নতুন সামরিক কাঠামো ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বা মে মাসের সংঘাতের সরাসরি প্রতিক্রিয়া নয়; বরং বহুদিনের চিন্তাভাবনার ফল। তুঘরাল ইয়ামিন মনে করেন, ভারতের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অবশ্যই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। তবে রকেট কমান্ড আসলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি বলেন, পাকিস্তান আগেই স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে ঝুঁকেছিল। তাঁর মতে, পারমাণবিক মিশন সামলাবে স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড, আর প্রচলিত হামলার দায়িত্ব হবে রকেট ফোর্সের।

ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) শিক্ষক মনসুর আহমেদ বলেন, সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশই যুদ্ধের প্রচলিত কৌশলগত বিকল্প তৈরি করেছে। তাই ভারতের বাড়তে থাকা পাল্টা আক্রমণক্ষমতার মুখে পাকিস্তানের এআরএফসি আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি পূরণ করছে। মে মাসের সংঘাতে ভারতের ব্রহ্মোস ব্যবহার করার পরও পাকিস্তান বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত করতে পারেনি। কারণ, বাবর শুধু পারমাণবিক মিশনের জন্য সংরক্ষিত এবং তা নিয়ন্ত্রণ করে এই মিশনের দায়িত্বে থাকা এসপিডি ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড।

back to top