alt

news » international

ইরানের শীর্ষ নেতাদের যেভাবে ‘টার্গেট’ করেছিল ইসরায়েল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : রোববার, ৩১ আগস্ট ২০২৫

গত জুনে ইরানের শীর্ষ কয়েক নেতা ও কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল -এএফপি

তারিখটি ছিল ১৬ জুন, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের চতুর্থ দিন। একটি পাহাড়ের পাদদেশে মাটির ১০০ ফুট গভীরে তৈরি করা বাঙ্কারে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ নেতারা। বৈঠকটি এতটাই গোপনীয় ছিল যে, যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের কারও কাছে মোবাইল ফোন ছিল না। সবাই আলাদা আলাদা গাড়িতে করে ওই বাঙ্কারে গিয়েছিলেন। কিন্তু সব ধরনের সতর্কতা সত্ত্বেও, বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বাঙ্কারের ওপর ছয়টি বোমা ফেলে। লক্ষ্যবস্তু ছিল বাঙ্কারে প্রবেশ ও বের হওয়ার দুটি দরজা। সেদিন বাঙ্কারের ভেতরে থাকা কেউ হতাহত হননি। কিন্তু বৈঠক শেষে দেখা যায়, দরজার আশপাশে কয়েকজন প্রহরীর লাশ পড়ে আছে।

ওই হামলা ইরানের গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে ফেলে। অল্প সময়ের মধ্যেই ইরানি কর্মকর্তারা ভয়াবহ ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতির খবর পান। মূলত, ইসরায়েলি বাহিনী ইরানি নেতাদের বাঙ্কার বৈঠকের তথ্য পেয়েছিল দেহরক্ষীদের মোবাইল ফোন হ্যাক করে। এই দেহরক্ষীরা নেতাদের সঙ্গে বাঙ্কারে গিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিল।

দেহরক্ষীদের ফোন ট্র্যাক করার বিষয়টি আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এটি ছিল ইসরায়েলের বড় ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা। তাদের লক্ষ্য ছিল, সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে ইরানের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দারা সফলও হয়েছিল। ১২ দিনের ওই সংঘাতের সময় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গতিবিধি শনাক্ত করে হত্যা করা হয়েছিল কেবল তাদের দেহরক্ষীদের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে।

নিরাপত্তা দুর্বলতা শনাক্ত হওয়ার পর ইরান ও ইসরায়েলের কয়েকজন কর্মকর্তারা জানান, শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার উদ্বেগকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। তারা নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে পোস্ট দিত। এর ফলে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দারা পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সেনা কর্মকর্তাদের গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। জুনে সংঘাত শুরুর প্রথম সপ্তাহেই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালিয়ে এসব কর্মকর্তাদের হত্যা করে।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাসান কারিমি বলেন, কোথাও যাওয়ার সময় জ্যেষ্ঠ ও সেনা কর্মকর্তারা তাদের মোবাইল ফোন সঙ্গে নিতেন না। কিন্তু তাদের দেহরক্ষী ও গাড়ির চালকেরা ফোন ব্যবহার করতেন। যারা সতর্কতামূলক কোনো বার্তাকে বলা চলে গুরুত্বই দেয়নি। সংঘাত চলাকালে বাঙ্কারে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ও ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানতে পেরেছে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে। তাদের মধ্যে দুজন ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সদস্য। এ ছাড়া, ইসরায়েলের নয়জন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছে গণমাধ্যমটি।

চলতি মাসে ইরান এক পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল। তিনজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা এবং বিপ্লবী গার্ডের এক সদস্য জানিয়েছেন, ইরান অনেকটা নীরবে সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা ও বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও গৃহবন্দী করেছে। তারা গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও আছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার বিষয়টি ইসরায়েল স্বীকার করেনি, আবার অস্বীকারও করেনি।

ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২২ সালের শেষের দিকে ইরানের জ্যেষ্ঠ পারমাণবিক কর্মকর্তাদের ট্র্যাক করা শুরু হয়। গত বছরের অক্টোবরের মধ্যে তাদের হত্যা করার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু এটি করলে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হতে পারতো। এ কারণে ওই অভিযান স্থগিত রাখা হয়। তবে গোয়েন্দা তৎপরতা থেমে থাকেনি। গোয়েন্দারা গত বছরের শেষ দিক থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের নথি পর্যালোচনা করে। প্রথমে লক্ষ্য ছিল ৪০০ জনকে হত্যা করা। পরে সেটি ১০০ জনে নামিয়ে আনা হয়। এসব নথি মোসাদ ইরানের পারমাণবিক আর্কাইভ থেকে চুরি করেছিল।

তেল আবিবের এক কর্মকর্তা বলেন, ইরানি কর্মকর্তাদের হত্যার জন্য ইসরায়েলের অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন রেড ওয়েডিং’। এই নামটি নেওয়া হয়েছিল জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’ এর একটি এপিসোড থেকে। এর আওতায় প্রথম লক্ষ্য ছিলেন ইরানের বিপ্লবী গার্ডের বিমান বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ। ইরানের এক সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিপ্লবী গার্ডের নবনিযুক্ত প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ ভাহিদি বলেছেন, শত্রু পক্ষের গোয়েন্দারা প্রযুক্তি, উপগ্রহ ও ইলেকট্রনিক ডেটার মাধ্যমে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে। এসব প্রযক্তির মাধ্যমে তারা সহজেই লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করে।

এমনকি কারও কণ্ঠস্বর ও ছবিও সংগ্রহ করে।

ইরানে বর্তমানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নির্দেশে নিরাপত্তা আরও জোরদারের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেহরক্ষীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেশটিতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ খুবই জনপ্রিয়। এই অ্যাপ ব্যবহারেও সতর্ক করা হয়েছে।

ছবি

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ২০ জনের বেশি নিহত

ছবি

ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলায় তাদের প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছেন, নিশ্চিত করলো হুথিরা

ছবি

নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্প ‘গণহত্যা পুরস্কারের যোগ্য’

ছবি

উন্নত সংস্করণের কাওসার স্যাটেলাইট উন্মোচন করল ইরান

ছবি

বন্ধু হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, মোদিকে শি জিনপিং

ছবি

মেক্সিকোতে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ, দেশজুড়ে বিক্ষোভ

ছবি

কাদের নিশানা করে মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে তারা

ছবি

ট্রাম্পের ভারত সফর বাতিল: নিউ ইয়র্ক টাইমস

ছবি

সাত বছর পর চীনে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিহত

ছবি

বাংলা বলার কারণে কাউকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা যায় কি?

ছবি

কমালা হ্যারিসের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাতিল করলেন ট্রাম্প

ছবি

ভারত-কানাডা : কাটছে সম্পর্কের দূরত্ব, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দুই দেশের

ছবি

চীন সফরের প্রাক্কালে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা পুতিনের

ছবি

‘বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের জারি করা বেশির ভাগ শুল্ক অবৈধ’

ছবি

রোহিঙ্গাদের আটকের পর সাগরে ফেলে দিচ্ছে ভারত

ছবি

কাঁদার শক্তিও নেই ক্ষুধার্ত শিশুদের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল, ফিলিস্তিনি নেতারা জাতিসংঘে যোগ দিতে পারছেন না

ছবি

‘ভারতের কর্তৃপক্ষ আমাদের বন্দির মতো নৌকায় তুলল, তারপর সমুদ্রে ফেলে দিল’ – রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অভিযোগ

ছবি

মার্কিন আদালতের রায়ে ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্ক নীতি অবৈধ ঘোষণা

ছবি

পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার পদচ্যুতি: থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা

ছবি

ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হুথি প্রধানমন্ত্রী

ছবি

কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের পাঞ্জাব

ছবি

ক্ষমতাচ্যুত হলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

ছবি

পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে কংগ্রেস কার্যালয়ে বিজেপির হামলা, সংঘর্ষ

ছবি

গাজা নগরীর ১৫০০ ভবন ধ্বংস, হামলায় ব্যবহার হচ্ছে ড্রোন-রোবট

ছবি

রাখাইনে আরাকান আর্মির অগ্রগতি কেন ভারত-চীনের মাথাব্যথা হয়ে উঠছে

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের অটল অবস্থান, কঠোর সমালোচনায় ভারত

ছবি

চীনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য ও ১২ মিত্র দেশের সতর্কতা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ২৪০ দিন, চীনা নাগরিকদের জন্য ৯০ দিনেযর প্রস্তাব

ছবি

ভারতের পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করলেন ট্রাম্প

ছবি

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না: ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে চীন যাচ্ছেন কিম-পুতিনসহ ২৬ বিশ্বনেতা

ছবি

ভারতের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

ছবি

মেক্সিকোর সিনেটে হাতাহাতি-মারামারি

ছবি

ইউক্রেনে রাতভর হামলা রুশ বাহিনীর, নিহত ১৪

tab

news » international

ইরানের শীর্ষ নেতাদের যেভাবে ‘টার্গেট’ করেছিল ইসরায়েল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

গত জুনে ইরানের শীর্ষ কয়েক নেতা ও কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল -এএফপি

রোববার, ৩১ আগস্ট ২০২৫

তারিখটি ছিল ১৬ জুন, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের চতুর্থ দিন। একটি পাহাড়ের পাদদেশে মাটির ১০০ ফুট গভীরে তৈরি করা বাঙ্কারে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ নেতারা। বৈঠকটি এতটাই গোপনীয় ছিল যে, যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের কারও কাছে মোবাইল ফোন ছিল না। সবাই আলাদা আলাদা গাড়িতে করে ওই বাঙ্কারে গিয়েছিলেন। কিন্তু সব ধরনের সতর্কতা সত্ত্বেও, বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বাঙ্কারের ওপর ছয়টি বোমা ফেলে। লক্ষ্যবস্তু ছিল বাঙ্কারে প্রবেশ ও বের হওয়ার দুটি দরজা। সেদিন বাঙ্কারের ভেতরে থাকা কেউ হতাহত হননি। কিন্তু বৈঠক শেষে দেখা যায়, দরজার আশপাশে কয়েকজন প্রহরীর লাশ পড়ে আছে।

ওই হামলা ইরানের গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে ফেলে। অল্প সময়ের মধ্যেই ইরানি কর্মকর্তারা ভয়াবহ ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতির খবর পান। মূলত, ইসরায়েলি বাহিনী ইরানি নেতাদের বাঙ্কার বৈঠকের তথ্য পেয়েছিল দেহরক্ষীদের মোবাইল ফোন হ্যাক করে। এই দেহরক্ষীরা নেতাদের সঙ্গে বাঙ্কারে গিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিল।

দেহরক্ষীদের ফোন ট্র্যাক করার বিষয়টি আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এটি ছিল ইসরায়েলের বড় ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা। তাদের লক্ষ্য ছিল, সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে ইরানের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দারা সফলও হয়েছিল। ১২ দিনের ওই সংঘাতের সময় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গতিবিধি শনাক্ত করে হত্যা করা হয়েছিল কেবল তাদের দেহরক্ষীদের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে।

নিরাপত্তা দুর্বলতা শনাক্ত হওয়ার পর ইরান ও ইসরায়েলের কয়েকজন কর্মকর্তারা জানান, শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার উদ্বেগকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। তারা নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে পোস্ট দিত। এর ফলে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দারা পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সেনা কর্মকর্তাদের গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। জুনে সংঘাত শুরুর প্রথম সপ্তাহেই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালিয়ে এসব কর্মকর্তাদের হত্যা করে।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাসান কারিমি বলেন, কোথাও যাওয়ার সময় জ্যেষ্ঠ ও সেনা কর্মকর্তারা তাদের মোবাইল ফোন সঙ্গে নিতেন না। কিন্তু তাদের দেহরক্ষী ও গাড়ির চালকেরা ফোন ব্যবহার করতেন। যারা সতর্কতামূলক কোনো বার্তাকে বলা চলে গুরুত্বই দেয়নি। সংঘাত চলাকালে বাঙ্কারে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ও ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানতে পেরেছে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে। তাদের মধ্যে দুজন ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সদস্য। এ ছাড়া, ইসরায়েলের নয়জন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছে গণমাধ্যমটি।

চলতি মাসে ইরান এক পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল। তিনজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা এবং বিপ্লবী গার্ডের এক সদস্য জানিয়েছেন, ইরান অনেকটা নীরবে সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা ও বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও গৃহবন্দী করেছে। তারা গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও আছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার বিষয়টি ইসরায়েল স্বীকার করেনি, আবার অস্বীকারও করেনি।

ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২২ সালের শেষের দিকে ইরানের জ্যেষ্ঠ পারমাণবিক কর্মকর্তাদের ট্র্যাক করা শুরু হয়। গত বছরের অক্টোবরের মধ্যে তাদের হত্যা করার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু এটি করলে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হতে পারতো। এ কারণে ওই অভিযান স্থগিত রাখা হয়। তবে গোয়েন্দা তৎপরতা থেমে থাকেনি। গোয়েন্দারা গত বছরের শেষ দিক থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের নথি পর্যালোচনা করে। প্রথমে লক্ষ্য ছিল ৪০০ জনকে হত্যা করা। পরে সেটি ১০০ জনে নামিয়ে আনা হয়। এসব নথি মোসাদ ইরানের পারমাণবিক আর্কাইভ থেকে চুরি করেছিল।

তেল আবিবের এক কর্মকর্তা বলেন, ইরানি কর্মকর্তাদের হত্যার জন্য ইসরায়েলের অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন রেড ওয়েডিং’। এই নামটি নেওয়া হয়েছিল জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’ এর একটি এপিসোড থেকে। এর আওতায় প্রথম লক্ষ্য ছিলেন ইরানের বিপ্লবী গার্ডের বিমান বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ। ইরানের এক সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিপ্লবী গার্ডের নবনিযুক্ত প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ ভাহিদি বলেছেন, শত্রু পক্ষের গোয়েন্দারা প্রযুক্তি, উপগ্রহ ও ইলেকট্রনিক ডেটার মাধ্যমে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে। এসব প্রযক্তির মাধ্যমে তারা সহজেই লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করে।

এমনকি কারও কণ্ঠস্বর ও ছবিও সংগ্রহ করে।

ইরানে বর্তমানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নির্দেশে নিরাপত্তা আরও জোরদারের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেহরক্ষীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেশটিতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ খুবই জনপ্রিয়। এই অ্যাপ ব্যবহারেও সতর্ক করা হয়েছে।

back to top