বিপুল জয়ের ম্যান্ডেট নিয়ে তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন শেষে সরকার গঠনের পর্ব শুরু হলেও এখনও পশ্চিমবঙ্গে চলছে ভোটের বিভিন্ন বিশ্লেষণ। তাতে তৃণমূলের বিপুল জয়ের রহস্য যেমন খোঁজা হচ্ছে, তেমনি বিজেপির উত্থান এবং বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের ভরাডুবি নিয়েও চলছে কাটাছেঁড়া।
পশ্চিমবঙ্গের গত ৫০ বছরে এত বিপুল ভোট কোন একক দল পায়নি। এর আগে ১৯৭২ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলো। তবে জোট হিসেবে বামফ্রন্ট ৫০ শতাংশের বেশী ভোট পেয়েছে।
এবারের বিধানসভার নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তির পরিসংখ্যানে তৃণমূল পেয়েছে মোট ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪২০ ভোট। মোট ভোটের তারা পেয়েছে প্রায় ৪৮ (৪৭.৯) শতাংশ। তৃণমূল ২১৩টি আসন পেয়ে জিতেছে। অর্থাৎ মোট আসনের ৭৩ শতাংশ পেয়েছে তারা।
অন্যদিকে বিজেপি জিতেছে ৭৭টি আসনে। অর্থাৎ আসনওয়ারি ২৬ শতাংশের কিছু বেশী আসন তারা পেয়েছে। কিন্তু শতাংশের হিসাবে মোট ভোটের ৩৮ ভাগ পেয়েছে তারা। বিজেপি পেয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৭১৯ ভোট।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বিজেপির থেকে তৃণমূল ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭১০টি ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এবার ভোট হয়েছে ২৯২টি আসনে। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই দুটি আসনের ভোট স্থগিত রাখা হয়।
এদিকে বামফ্রন্ট পেয়েছে ৫.৬৭ শতাংশ ভোট। এদের প্রধাণ শরিক সিপিএম পেয়েছে ৪.৭৩ শতাংশ ভোট, তাদের ভোটের পরিমাণ ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৬। কংগ্রেস পেয়েছে ২.৯৩ শতাংশ ভোট, তাদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ১৩১। কিন্তু সিপিএম বা কংগ্রেস কেউই কোনও আসন পায়নি। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম বিধানসভায় এই দুটি দলের কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকছে না।
বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) এবার জোট বেঁধে ভোট করেছিল। আইএসএফ একটি আসন পেয়েছে।
এই ফলাফলে অনেকের মনেই প্রশ্ন বিজেপি কার ভোটে ভাগ বসাল? পশ্চিমবঙ্গের এতদিনের রাজনীতির মানচিত্রটা কি বদলে যাবে? আর বামফ্রন্ট, কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কী? এ সবই অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
বিজেপি ২০১৯ এর লোকসভা বা জাতীয় সংসদের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ভাল করলেও এবারের বিধানসভায় এই দলের উত্থানকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। যারা এতকাল পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে ধর্তব্যের মধ্যেই ছিল না, সেই বিজেপিই এখন প্রধাণ বিরোধীদল।
তবে বিজেপি – যারা ২০০ আসন পাবে বলে হাঁকডাক করেছিল – তাদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের এই ফলাফল মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
এখনও প্রকাশ্যে না বললেও তারা যে ভোট পুনর্গণনার দাবির দিকে এগুতে পারে আভাসে তার খানিকটা ইঙ্গিত মেলে বিজেপি নেতৃত্ব-র কথাবার্তায়। তাদের যুক্তি নন্দীগ্রামসহ ৫টি আসনে ভোট গণনায় বিজেপি প্রার্থীরা পিছিয়ে ছিল, কিন্তু ভোট পুনর্গণনার পর তারা বিজয়ী হয়।
এদিকে ভোটের ফল প্রকাশের দিন থেকে রাজ্যজুড়ে হিংসার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূল কর্মীরা।
তবে তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করেছে যে এর বেশীরভাগই পরাজিত বিজেপির কাণ্ড। তবে সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর দলীয় কর্মীদের ‘নিহত’ হওয়ার ঘটনায় টুইট করে হুমকি দেন বিজেপির সংসদ সদস্য পরভেশ সাহিব সিংহ। বলেন, ‘নির্বাচনে জিতেই তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের কর্মীদের খুন করছে। বিজেপি কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে, ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। খেয়াল রাখবেন, তৃণমূলের সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী, বিধায়কদের কিন্তু দিল্লি আসতে হবে। আমি আপনাদের সতর্ক করছি।’
বুধবার, ০৫ মে ২০২১
বিপুল জয়ের ম্যান্ডেট নিয়ে তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন শেষে সরকার গঠনের পর্ব শুরু হলেও এখনও পশ্চিমবঙ্গে চলছে ভোটের বিভিন্ন বিশ্লেষণ। তাতে তৃণমূলের বিপুল জয়ের রহস্য যেমন খোঁজা হচ্ছে, তেমনি বিজেপির উত্থান এবং বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের ভরাডুবি নিয়েও চলছে কাটাছেঁড়া।
পশ্চিমবঙ্গের গত ৫০ বছরে এত বিপুল ভোট কোন একক দল পায়নি। এর আগে ১৯৭২ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলো। তবে জোট হিসেবে বামফ্রন্ট ৫০ শতাংশের বেশী ভোট পেয়েছে।
এবারের বিধানসভার নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তির পরিসংখ্যানে তৃণমূল পেয়েছে মোট ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪২০ ভোট। মোট ভোটের তারা পেয়েছে প্রায় ৪৮ (৪৭.৯) শতাংশ। তৃণমূল ২১৩টি আসন পেয়ে জিতেছে। অর্থাৎ মোট আসনের ৭৩ শতাংশ পেয়েছে তারা।
অন্যদিকে বিজেপি জিতেছে ৭৭টি আসনে। অর্থাৎ আসনওয়ারি ২৬ শতাংশের কিছু বেশী আসন তারা পেয়েছে। কিন্তু শতাংশের হিসাবে মোট ভোটের ৩৮ ভাগ পেয়েছে তারা। বিজেপি পেয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৭১৯ ভোট।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বিজেপির থেকে তৃণমূল ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭১০টি ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এবার ভোট হয়েছে ২৯২টি আসনে। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই দুটি আসনের ভোট স্থগিত রাখা হয়।
এদিকে বামফ্রন্ট পেয়েছে ৫.৬৭ শতাংশ ভোট। এদের প্রধাণ শরিক সিপিএম পেয়েছে ৪.৭৩ শতাংশ ভোট, তাদের ভোটের পরিমাণ ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৬। কংগ্রেস পেয়েছে ২.৯৩ শতাংশ ভোট, তাদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ১৩১। কিন্তু সিপিএম বা কংগ্রেস কেউই কোনও আসন পায়নি। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম বিধানসভায় এই দুটি দলের কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকছে না।
বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) এবার জোট বেঁধে ভোট করেছিল। আইএসএফ একটি আসন পেয়েছে।
এই ফলাফলে অনেকের মনেই প্রশ্ন বিজেপি কার ভোটে ভাগ বসাল? পশ্চিমবঙ্গের এতদিনের রাজনীতির মানচিত্রটা কি বদলে যাবে? আর বামফ্রন্ট, কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কী? এ সবই অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
বিজেপি ২০১৯ এর লোকসভা বা জাতীয় সংসদের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ভাল করলেও এবারের বিধানসভায় এই দলের উত্থানকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। যারা এতকাল পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে ধর্তব্যের মধ্যেই ছিল না, সেই বিজেপিই এখন প্রধাণ বিরোধীদল।
তবে বিজেপি – যারা ২০০ আসন পাবে বলে হাঁকডাক করেছিল – তাদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের এই ফলাফল মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
এখনও প্রকাশ্যে না বললেও তারা যে ভোট পুনর্গণনার দাবির দিকে এগুতে পারে আভাসে তার খানিকটা ইঙ্গিত মেলে বিজেপি নেতৃত্ব-র কথাবার্তায়। তাদের যুক্তি নন্দীগ্রামসহ ৫টি আসনে ভোট গণনায় বিজেপি প্রার্থীরা পিছিয়ে ছিল, কিন্তু ভোট পুনর্গণনার পর তারা বিজয়ী হয়।
এদিকে ভোটের ফল প্রকাশের দিন থেকে রাজ্যজুড়ে হিংসার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূল কর্মীরা।
তবে তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করেছে যে এর বেশীরভাগই পরাজিত বিজেপির কাণ্ড। তবে সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর দলীয় কর্মীদের ‘নিহত’ হওয়ার ঘটনায় টুইট করে হুমকি দেন বিজেপির সংসদ সদস্য পরভেশ সাহিব সিংহ। বলেন, ‘নির্বাচনে জিতেই তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের কর্মীদের খুন করছে। বিজেপি কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে, ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। খেয়াল রাখবেন, তৃণমূলের সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী, বিধায়কদের কিন্তু দিল্লি আসতে হবে। আমি আপনাদের সতর্ক করছি।’