alt

আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভে উত্তাল ইরান, চ্যালেঞ্জের মুখে ক্ষমতাসীনরা

শত শত বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার, মৃত্যু এ পর্যন্ত ৩৫

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হিজাববিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরান

ইরানে পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান বিক্ষোভে শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩৫-এ পৌঁছেছে। দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ প্রতিবাদ দেশটিকে বহু বছরের মধ্যে এবার মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

ওই তরুণীর বিরুদ্ধে হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিল পুলিশ। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছ, তার মৃত্যু হয়েছে স্বাস্থ্যগত কারণে। যদিও ওই তরুণীর পরিবার ও অনেক ইরানি নাগরিকের বিশ্বাস হেফাজতে মারাত্মক প্রহারের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ইরানে জনপরিসরে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দাবিধি রয়েছে। এ বিধিগুলো কার্যকর হচ্ছে কি না তা তদারক করে দেশটির ‘নীতি পুলিশ’। এ বিধির আওতায় নীতি পুলিশের একটি দল ১৩ সেপ্টেম্বর মাশা আমিনি নামের এক তরুণীকে তেহরান থেকে আটক করে। আটকের পর আমিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ইরানের ৮০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল ইরানে। রয়টার্সের তথ্যমতে, এরপর এতবড় বিক্ষোভ আর হয়নি দেশটিতে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন তারা যদি এখনই এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ান তাহলে একদিন তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। এ ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন ইরানের মানুষ এমনিতেই ক্ষুব্ধ। দেশটির এলিট রাজনীতিকদের দুর্নীতি, ৫০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া, পারমাণবিক আলোচনায় অচলাবস্থা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব তরুণসহ একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে হতাশ করে তুলেছে।

ইরানের সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে দেশটির অন্তত আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে এবং ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়ছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে এটাই বিক্ষোভের নতুন কোন ঘটনা নয়। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষকের মতে আগের যেকোন ঘটনার তুলনায় এবারেরটায় ভিন্নতা আছে।

এবারের বিক্ষোভের প্রধান স্লোগান হলো : ‘নারী, জীবন, মুক্তি’ যা মূলত ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও সমতার আহ্বান।

এর আগে ২০০৯ সালে কথিত গ্রিন মুভমেন্টের সময় নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে হওয়া আন্দোলনে মধ্যবিত্তরাই অংশ নিয়েছিল। তখন বড় আন্দোলন হলেও সেটি বড় শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

আবার ২০১৭ ও ২০১৯ সালের আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল দরিদ্রদের মধ্যে। কিন্তু এবারের আন্দোলনে মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী-উভয় শ্রেণীর মানুষের অংশ নেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গাশত-ই এরশাদ (আক্ষরিক অনুবাদ-নির্দেশ টহলদার) নামের এই বিশেষ পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মানুষ যাতে ইসলামী আদর্শ ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় সেটা নিশ্চিত করার এবং কেউ ‘অনৈতিক’ পোশাক পরেছে মনে হলে তাকে আটক করার।

ইরানে প্রচলিত শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীদের হিজাব পরা বা চাদর দিয়ে মাথা ঢাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়া নারীদের শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখতে পা পর্যন্ত লম্বা ও ঢিলা পোশাক পরার বিধান দেশটিতে রয়েছে।

সুতরাং এখন সরকারের হাতে দুটো বিকল্প আছে : একটি হলো হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করা। আবার এটি করলে সেটি অনেক বিক্ষোভকারীকে সরকার পরিবর্তনের দাবি আদায়ের দিকে উৎসাহিত করে তুলতে পারে।

অথবা কোন কিছুই পরিবর্তন না করা এবং সহিংস দমন বা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা। এগুলো সাময়িকভাবে পরিস্থিতিকে শান্ত করতে পারে কিন্তু সেটি আসলে কেবল ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকেই উসকে দেবে।

মিস্টার দারভিশপুর বলছিলেন ‘আমরা আসলে একটি মেগা আন্দোলনের জন্ম দেখছি,’। এ আন্দোলনটি নারীদের নেতৃত্বে হচ্ছে কিন্তু তারা অন্যদেরও আন্দোলনে শামিল করতে সমর্থ হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। মাশা আমিনের মৃত্যু সরকারের সমর্থকদের একটি অংশকেও ঝাঁকুনি দিয়েছে।

এদের অনেকের মধ্যে কিছু ধর্মীয় পন্ডিত আছেন। তারা নারীদের বিরুদ্ধে নৈতিক পুলিশ ব্যবহারের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য এখন দমন-পীড়ন করছে তাদের অনেকেও চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছে। চলমান বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হলে তারাও হয়তো অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন। আবার দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বয়স এখন ৮৩ বছর। তার অসুস্থতার বিষয়টিও অনেক ইরানি নাগরিকের চিন্তায় আছে।

এ বিক্ষোভের বেশকিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠেছে। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, বিক্ষোভ দমনে পিরানশাহার, মাহাবাদ, উরমিয়া শহরে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে। এসব ঘটনার ভিডিও নরওয়ের অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটসের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, শাহার-ই রে শহরে সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে গুলি চালাচ্ছেন।

তার অবর্তমানে কে এই দায়িত্ব পাবেন এবং তিনি সরকারের কট্টর সমর্থকদের সমর্থন পাবেন কি না তা পরিষ্কার নয়। তাই এটাই হয়তো শেষ অধ্যায় নয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ছবি

ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ২য় দফার ভোটগ্রহণ চলছে, রাহুলের পরীক্ষা আজ

ছবি

ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া অস্ত্র হস্তান্তরের সাথে চীনের জাহাজ নোঙর করে রাখা

ছবি

পশ্চিমবঙ্গের ২০ জায়গায় তাপমাত্রা ছাড়াল ৪০ ডিগ্রি

ছবি

স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, দায়িত্বপালন বন্ধ করলেন সানচেজ

ছবি

মায়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি

ছবি

ইউক্রেনকে আরও ৬২ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা ব্রিটেনের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে কে প্রশ্ন বাইডেনের

ছবি

ফের হামলা হলে ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে : ইরান

ছবি

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল জ্যামাইকা

ছবি

বন্যার পর এবার আরব আমিরাতে ঘন কুয়াশার প্রকোপ

ছবি

গাজায় গণকবরে শত শত লাশ, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকারপ্রধান

ছবি

জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া

ছবি

মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেইন, ইসরায়েল সহায়তা বিল পাস

ছবি

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের ভেতর গভীরতম হামলা চালাল হিজবুল্লাহ

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের মূল আঘাত যাচ্ছে এশিয়ার ওপর দিয়ে: জাতিসংঘ

রুয়ান্ডা বিল পাস: কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলে ডুবে নিহত ৫

ছবি

পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি

ছবি

মালয়েশিয়ায় সামরিক মহড়ার সময় ২ হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ, নিহত ১০

ছবি

দফায় দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো তাইওয়ান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতীয় ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

পাকিস্তান সফরে ইরানি প্রেসিডেন্ট

ছবি

ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল তাইওয়ান

ছবি

ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ

ছবি

সরিয়ে নেওয়া হলো হাজার হাজার মানুষকে

ছবি

ফের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া

ছবি

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মইজ্জুর দলের বড় জয়

ছবি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবেন নেতানিয়াহু

ছবি

রাফাহতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১০, বেশিরভাগই শিশু

ছবি

সোমালি দস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়ায় ইইউর উদ্বেগ, হুঁশিয়ারি

ছবি

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে যাত্রীবাহী ফেরিডুবি, নিহত অন্তত ৫৮

ছবি

সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত

ছবি

মায়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা

ছবি

ইরাকে ইরানপন্থি মিলিশিয়া বাহিনীর ঘাঁটিতে বোমা হামলা

ছবি

মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল

tab

আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভে উত্তাল ইরান, চ্যালেঞ্জের মুখে ক্ষমতাসীনরা

শত শত বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার, মৃত্যু এ পর্যন্ত ৩৫

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হিজাববিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরান

শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

ইরানে পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান বিক্ষোভে শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩৫-এ পৌঁছেছে। দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ প্রতিবাদ দেশটিকে বহু বছরের মধ্যে এবার মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

ওই তরুণীর বিরুদ্ধে হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিল পুলিশ। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছ, তার মৃত্যু হয়েছে স্বাস্থ্যগত কারণে। যদিও ওই তরুণীর পরিবার ও অনেক ইরানি নাগরিকের বিশ্বাস হেফাজতে মারাত্মক প্রহারের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ইরানে জনপরিসরে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দাবিধি রয়েছে। এ বিধিগুলো কার্যকর হচ্ছে কি না তা তদারক করে দেশটির ‘নীতি পুলিশ’। এ বিধির আওতায় নীতি পুলিশের একটি দল ১৩ সেপ্টেম্বর মাশা আমিনি নামের এক তরুণীকে তেহরান থেকে আটক করে। আটকের পর আমিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ইরানের ৮০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল ইরানে। রয়টার্সের তথ্যমতে, এরপর এতবড় বিক্ষোভ আর হয়নি দেশটিতে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন তারা যদি এখনই এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ান তাহলে একদিন তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। এ ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন ইরানের মানুষ এমনিতেই ক্ষুব্ধ। দেশটির এলিট রাজনীতিকদের দুর্নীতি, ৫০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া, পারমাণবিক আলোচনায় অচলাবস্থা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব তরুণসহ একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে হতাশ করে তুলেছে।

ইরানের সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে দেশটির অন্তত আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে এবং ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়ছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে এটাই বিক্ষোভের নতুন কোন ঘটনা নয়। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষকের মতে আগের যেকোন ঘটনার তুলনায় এবারেরটায় ভিন্নতা আছে।

এবারের বিক্ষোভের প্রধান স্লোগান হলো : ‘নারী, জীবন, মুক্তি’ যা মূলত ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও সমতার আহ্বান।

এর আগে ২০০৯ সালে কথিত গ্রিন মুভমেন্টের সময় নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে হওয়া আন্দোলনে মধ্যবিত্তরাই অংশ নিয়েছিল। তখন বড় আন্দোলন হলেও সেটি বড় শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

আবার ২০১৭ ও ২০১৯ সালের আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল দরিদ্রদের মধ্যে। কিন্তু এবারের আন্দোলনে মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী-উভয় শ্রেণীর মানুষের অংশ নেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গাশত-ই এরশাদ (আক্ষরিক অনুবাদ-নির্দেশ টহলদার) নামের এই বিশেষ পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মানুষ যাতে ইসলামী আদর্শ ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় সেটা নিশ্চিত করার এবং কেউ ‘অনৈতিক’ পোশাক পরেছে মনে হলে তাকে আটক করার।

ইরানে প্রচলিত শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীদের হিজাব পরা বা চাদর দিয়ে মাথা ঢাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়া নারীদের শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখতে পা পর্যন্ত লম্বা ও ঢিলা পোশাক পরার বিধান দেশটিতে রয়েছে।

সুতরাং এখন সরকারের হাতে দুটো বিকল্প আছে : একটি হলো হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করা। আবার এটি করলে সেটি অনেক বিক্ষোভকারীকে সরকার পরিবর্তনের দাবি আদায়ের দিকে উৎসাহিত করে তুলতে পারে।

অথবা কোন কিছুই পরিবর্তন না করা এবং সহিংস দমন বা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা। এগুলো সাময়িকভাবে পরিস্থিতিকে শান্ত করতে পারে কিন্তু সেটি আসলে কেবল ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকেই উসকে দেবে।

মিস্টার দারভিশপুর বলছিলেন ‘আমরা আসলে একটি মেগা আন্দোলনের জন্ম দেখছি,’। এ আন্দোলনটি নারীদের নেতৃত্বে হচ্ছে কিন্তু তারা অন্যদেরও আন্দোলনে শামিল করতে সমর্থ হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। মাশা আমিনের মৃত্যু সরকারের সমর্থকদের একটি অংশকেও ঝাঁকুনি দিয়েছে।

এদের অনেকের মধ্যে কিছু ধর্মীয় পন্ডিত আছেন। তারা নারীদের বিরুদ্ধে নৈতিক পুলিশ ব্যবহারের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য এখন দমন-পীড়ন করছে তাদের অনেকেও চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছে। চলমান বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হলে তারাও হয়তো অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন। আবার দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বয়স এখন ৮৩ বছর। তার অসুস্থতার বিষয়টিও অনেক ইরানি নাগরিকের চিন্তায় আছে।

এ বিক্ষোভের বেশকিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠেছে। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, বিক্ষোভ দমনে পিরানশাহার, মাহাবাদ, উরমিয়া শহরে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে। এসব ঘটনার ভিডিও নরওয়ের অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটসের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, শাহার-ই রে শহরে সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে গুলি চালাচ্ছেন।

তার অবর্তমানে কে এই দায়িত্ব পাবেন এবং তিনি সরকারের কট্টর সমর্থকদের সমর্থন পাবেন কি না তা পরিষ্কার নয়। তাই এটাই হয়তো শেষ অধ্যায় নয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

back to top