ট্রাম্প ও বাইডেনের কাছে সরকারি গোপন নথি
ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসার ওয়াশরুমে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি- সিএনএন
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সরকারি গোপন নথি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে বাগবিত-া চলছে। সমালোচনাও কম নয়। কিন্তু তার পরও ট্রাম্প ও বাইডেনের বিচার এক হবে না।
তদন্তে দুজন স্পেশাল কাউনসেলরও (বিশেষ পরামর্শক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে শাস্তি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি তারা ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলে জনগণ তা ভালোভাবে নেবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ গোপনীয় দলিলে সাধারণত এমন সব তথ্য থাকে, যা প্রকাশিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুতেই বাইডেনের বাসায় এবং সাবেক ব্যক্তিগত অফিসে পাওয়া যায় গোপন নথি। এবার ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়ির বলরুম ও ওয়াশরুমসহ বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি রাখা, তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গত বছর আগস্টেও ট্রাম্পের বাসায় সরকারি গোপন নথি পাওয়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। মার্কিন বিচার বিভাগ হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পের সরকারি গোপন নথিপত্র সরিয়ে নেয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে।
তদন্তের জন্য জ্যাক স্মিথ নামে একজন বিশেষ পরামর্শকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর নথিগুলো ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা দেখছেন, এই নথিগুলো কীভাবে সেখানে সংরক্ষণ করা হয় এবং কে কে এগুলো দেখতে পেয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ফ্লোরিডা সৈকতের পাশে ট্রাম্পের বিশাল বাসভবনে তল্লাশি অভিযানে ১১ হাজার নথি জব্দ করে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এর মধ্যে ১০০টি দলিল গোপন বলে চিহ্নিত করা ছিল। এর মধ্যে কয়েকটিকে ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ বলে লেবেল লাগানো ছিল।
বাইডেনের সাবেক ব্যক্তিগত অফিস এবং বাড়ি থেকে অতিগোপনীয়সহ সর্বমোট ২০টি নথি উদ্ধার করা হয়েছিল। ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে পেন বাইডেন সেন্টার ফর ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড গ্লোবাল এনগেজমেন্টের অফিসে মোটামুটি ১০টি নথি উদ্ধার করা হয়েছে। এই নথিগুলোর মধ্যে কিছু নথি অতি গোপনীয় চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধরনের নথি ফাঁস হলে গুরুতর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
এছাড়া দুই দফায় দশটিরও কম নথি বাইডেনের ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই নথিগুলো অতি গোপনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ করার পর ট্রাম্পকে ন্যাশনাল আর্কাইভস বারবার নোটিশ দিয়েছিল যে তারা হোয়াইট হাউজের অনেক নথি পাচ্ছে না। সেগুলো তার কাছে থাকলে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার পর আগস্ট পর্যন্ত সেই সব নথি ফেরত দেননি। এরপর এফবিআই পরোয়ানা নিয়ে ট্রাম্পের মার-এ-লাগোর বাসায় অভিযান চালায়। ট্রাম্প এর কড়া সমালোচনা করেন।
ঘটনা তদন্তে বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল। ট্রাম্প কেবল বিচার বিভাগের নন, বিশেষ পরামর্শকেরও কঠোর সমালোচনা করেন। এমনকি তার পরিবার নিয়ে কথা বলতেও ছাড়েননি।
অন্যদিকে বাইডেন নথি উদ্ধারের ঘটনায় ‘বিস্মিত’ হয়েছেন। তবে কোনো ভুল করার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জনগণ জানে আমি গোপনীয় নথিকে কতটা গুরুত্বসহকারে দেখি।’ বাইডেন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তদন্তে তিনি মার্কিন বিচার বিভাগকে পূর্ণরূপে সহায়তা করবেন। আর নথি পাওয়ার পর সেগুলো ন্যাশনাল আর্কাইভসকে দেয়া হয়েছে।
বাইডেনের বিশেষ কৌঁসুলি রিচার্ড সবার বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা দেখাবে যে এই নথিগুলো অসাবধানতাবশত ভুল করে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট ও তার আইনজীবীরা এই ভুল আবিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন।’
জাতীয় নিরাপত্তা আইনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও অলাভজনক আইনি ফার্ম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউনসেলরসের নির্বাহী পরিচালক কেল ম্যাকক্লানাহান বলেছেন, ট্রাম্পের মতো হয়তো বাইডেনও একই অপরাধ করেছেন। কিন্তু প্রসিকিউশন একটা বিষয় দেখে। তা হলো তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নেয়া ও রাখা, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা এবং তদন্তে যথাযথ সহায়তা করেছেন কি না।
তার মতে, ট্রাম্পের কাছে বারবার সরকারি নথি চাওয়ার পরও ফেরত দেননি। বরং বারবারই সমালোচনা করেছেন এবং বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। অথচ বাইডেনের বাসায় নথি আছে, সেটা আপনি জানেন না। তিনি নিজেই সেগুলোর কথা জানিয়েছেন এবং ফেরত দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলাটি শুধু নথিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে নেওয়া হয়েছিল কি না তা নয়। সেগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে রাখা হয়েছিল কি না, সেটাও তদন্তের বিষয়। এছাড়া বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকায় একটা সুরক্ষা পাবেন। কারণ, কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি।
ট্রাম্প ও বাইডেনের কাছে সরকারি গোপন নথি
ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসার ওয়াশরুমে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি- সিএনএন
শনিবার, ১০ জুন ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সরকারি গোপন নথি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে বাগবিত-া চলছে। সমালোচনাও কম নয়। কিন্তু তার পরও ট্রাম্প ও বাইডেনের বিচার এক হবে না।
তদন্তে দুজন স্পেশাল কাউনসেলরও (বিশেষ পরামর্শক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে শাস্তি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি তারা ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলে জনগণ তা ভালোভাবে নেবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ গোপনীয় দলিলে সাধারণত এমন সব তথ্য থাকে, যা প্রকাশিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুতেই বাইডেনের বাসায় এবং সাবেক ব্যক্তিগত অফিসে পাওয়া যায় গোপন নথি। এবার ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়ির বলরুম ও ওয়াশরুমসহ বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি রাখা, তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গত বছর আগস্টেও ট্রাম্পের বাসায় সরকারি গোপন নথি পাওয়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। মার্কিন বিচার বিভাগ হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পের সরকারি গোপন নথিপত্র সরিয়ে নেয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে।
তদন্তের জন্য জ্যাক স্মিথ নামে একজন বিশেষ পরামর্শকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর নথিগুলো ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা দেখছেন, এই নথিগুলো কীভাবে সেখানে সংরক্ষণ করা হয় এবং কে কে এগুলো দেখতে পেয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ফ্লোরিডা সৈকতের পাশে ট্রাম্পের বিশাল বাসভবনে তল্লাশি অভিযানে ১১ হাজার নথি জব্দ করে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এর মধ্যে ১০০টি দলিল গোপন বলে চিহ্নিত করা ছিল। এর মধ্যে কয়েকটিকে ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ বলে লেবেল লাগানো ছিল।
বাইডেনের সাবেক ব্যক্তিগত অফিস এবং বাড়ি থেকে অতিগোপনীয়সহ সর্বমোট ২০টি নথি উদ্ধার করা হয়েছিল। ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে পেন বাইডেন সেন্টার ফর ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড গ্লোবাল এনগেজমেন্টের অফিসে মোটামুটি ১০টি নথি উদ্ধার করা হয়েছে। এই নথিগুলোর মধ্যে কিছু নথি অতি গোপনীয় চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধরনের নথি ফাঁস হলে গুরুতর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
এছাড়া দুই দফায় দশটিরও কম নথি বাইডেনের ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই নথিগুলো অতি গোপনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ করার পর ট্রাম্পকে ন্যাশনাল আর্কাইভস বারবার নোটিশ দিয়েছিল যে তারা হোয়াইট হাউজের অনেক নথি পাচ্ছে না। সেগুলো তার কাছে থাকলে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার পর আগস্ট পর্যন্ত সেই সব নথি ফেরত দেননি। এরপর এফবিআই পরোয়ানা নিয়ে ট্রাম্পের মার-এ-লাগোর বাসায় অভিযান চালায়। ট্রাম্প এর কড়া সমালোচনা করেন।
ঘটনা তদন্তে বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল। ট্রাম্প কেবল বিচার বিভাগের নন, বিশেষ পরামর্শকেরও কঠোর সমালোচনা করেন। এমনকি তার পরিবার নিয়ে কথা বলতেও ছাড়েননি।
অন্যদিকে বাইডেন নথি উদ্ধারের ঘটনায় ‘বিস্মিত’ হয়েছেন। তবে কোনো ভুল করার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জনগণ জানে আমি গোপনীয় নথিকে কতটা গুরুত্বসহকারে দেখি।’ বাইডেন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তদন্তে তিনি মার্কিন বিচার বিভাগকে পূর্ণরূপে সহায়তা করবেন। আর নথি পাওয়ার পর সেগুলো ন্যাশনাল আর্কাইভসকে দেয়া হয়েছে।
বাইডেনের বিশেষ কৌঁসুলি রিচার্ড সবার বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা দেখাবে যে এই নথিগুলো অসাবধানতাবশত ভুল করে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট ও তার আইনজীবীরা এই ভুল আবিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন।’
জাতীয় নিরাপত্তা আইনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও অলাভজনক আইনি ফার্ম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউনসেলরসের নির্বাহী পরিচালক কেল ম্যাকক্লানাহান বলেছেন, ট্রাম্পের মতো হয়তো বাইডেনও একই অপরাধ করেছেন। কিন্তু প্রসিকিউশন একটা বিষয় দেখে। তা হলো তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নেয়া ও রাখা, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা এবং তদন্তে যথাযথ সহায়তা করেছেন কি না।
তার মতে, ট্রাম্পের কাছে বারবার সরকারি নথি চাওয়ার পরও ফেরত দেননি। বরং বারবারই সমালোচনা করেছেন এবং বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। অথচ বাইডেনের বাসায় নথি আছে, সেটা আপনি জানেন না। তিনি নিজেই সেগুলোর কথা জানিয়েছেন এবং ফেরত দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলাটি শুধু নথিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে নেওয়া হয়েছিল কি না তা নয়। সেগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে রাখা হয়েছিল কি না, সেটাও তদন্তের বিষয়। এছাড়া বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকায় একটা সুরক্ষা পাবেন। কারণ, কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি।