সমষ্টির গবেষণা প্রতিবেদন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার অথবা রহিত করা দরকার বলে মনে করেন ৯৪% শতাংশ সাংবাদিক। এছাড়া ৭৯ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন এ আইন স্বাধীন সাংবাদিকতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেসরকারি গণমাধ্যম উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমষ্টির গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সমষ্টি এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন উপলক্ষে ‘সাংবাদিকতা ও নীতি-কাঠামো : প্রবণতা ও সুপারিশ’বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও বর্তমান তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানে হাসানুল হক ইনুও স্বীকার করলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা ও অবিলম্বে সংস্কার দরকার। তিনি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল ও প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট হালনাগাদ করে কার্যকর করারও আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এ আইনটি যখন প্রণয়ন করা হয় তখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন হাসানুল হক ইনু।
সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুললের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সমষ্টির পরিচালক (গবেষণা) রেজাউল হক। স্বাগত বক্তৃতা দেন সমষ্টির পরিচালক ও সাংবাদিক মীর মাসরুর জামান এবং মীর সাহিদুল আলম। সমষ্টির গবেষণায় সাংবাদিকতার উন্নয়নগত দিক, প্রভাবক উপাদান এবং নীতি-কাঠামোর প্রবণতাগুলো তুলে ধরা হয়। দলীয় আলোচনা, মতামত জরিপ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। সেখানে দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৬১ জন সাংবাদিকের ৭৯ শতাংশ মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। উত্তরদাতা সাংবাদিকদের ৯৪% সাংবাদিক আইনটি সংস্কার অথবা রহিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের ৬৫% মনে করেন আইনটিকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তথ্য ও মতামত প্রকাশ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য নেতিবাচক উপাদানগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনমাফিক সংস্কার করা প্রয়োজন। অন্যদিকে ২৯% সাংবাদিক আইনটি সম্পূর্ণ বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা সংসদ সদস্য, সাংবাদিক সংগঠন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করেন।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে ২৫০টি মামলার তথ্যে দেখা যায়, মাত্র ১৮% মামলায় সাইবার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি ৮২% মামলায় অনলাইন মাধ্যম বা সংবাদপত্রে তথ্য বা মতামত প্রকাশের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তথ্য ও মতামত প্রকাশ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে ২৫ ধারায় (৪৮%)। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ২৮ ও ২৯ ধারা (যথাক্রমে ১৭.৩১% ও ১২.১৮%)। এছাড়া বহুল ব্যবহৃত অন্য দুটি ধারাগুলো হচ্ছে ২৯ ও ৩১। রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা ৪৬% মামলা করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ২৩% মামলায় বাদী হয়েছেন। অন্যান্য বাদী ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী যেমন, সাংবাদিক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিল্পী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, বেসরকারি চাকরিজীবী, ধর্মীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও বিচারক। মামলাগুলোতে ২০ জন নারীসহ অন্তত ৫৫৪ জনকে আসামি করা হয়। ১৫৩টি মামলায় প্রধান আসামিসহ একাধিক আসামিকে মামলার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বিবাদীদের মধ্যে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি ৩৬%, সাংবাদিক ২৯%, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ১৪%। বাকিরা ছিলেন বেসরকারি চাকুরে, ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পী, আইনজীবী, সরকারি কর্মচারী। অর্থাৎ মোট মামলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মামলায় সাংবাদিকরা অভিযুক্ত হয়েছেন।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান সাংবাদিক ও লেখক মুশতাক আহমেদ। আমি জজকে বলেছিলাম আপনি তাকে কেন জামিন দেননি। উনিতো সাংবাদিকতাই করেন, উনিতো পালিয়ে যাবেন না। এই আইনে সর্বশেষ পরীমনিকেও জজকোর্ট জামিন না দিলেও পরে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে অজামিনযোগ্য ধারাগুলো আছে সেটা কিন্তু আদালতের জামিন দেয়ার এখতিয়ারও আছে। শুধু জজকোর্ট না অনেক ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টও জামিন দিয়েছে সে তথ্য আমার কাছে রয়েছে।
জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের জন্য নয়, যেকোন সাধারণ নাগরিকের জন্য আইন। এই আইনে দেশের সাধারণ মানুষও গ্রেপ্তার হয়েছে। আইনমন্ত্রী নিজেও বলেছেন কোন সাংবাদিকের ওপর এই আইনে মামলা হলে আগে তদন্ত করে দেখবো পরে গ্রেপ্তার করব। এখন যদি আমি বলি তাহলে দেশের সাধারণ নাগরিকরা কি রাস্তা থেকে ভেসে এসেছেন। তারা দেশের সম্মানিত ভোটার। তাহলে সবার ক্ষেত্রে এই আইন এক কেন হবে না? কেন বৈষম্যমূলক হবে?
সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব তিনি গুরুত্বের সঙ্গে জাতীয় সংসদে তুলে ধরবেন।
সমষ্টির গবেষণা প্রতিবেদন
বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার অথবা রহিত করা দরকার বলে মনে করেন ৯৪% শতাংশ সাংবাদিক। এছাড়া ৭৯ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন এ আইন স্বাধীন সাংবাদিকতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেসরকারি গণমাধ্যম উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমষ্টির গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সমষ্টি এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন উপলক্ষে ‘সাংবাদিকতা ও নীতি-কাঠামো : প্রবণতা ও সুপারিশ’বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও বর্তমান তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানে হাসানুল হক ইনুও স্বীকার করলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা ও অবিলম্বে সংস্কার দরকার। তিনি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল ও প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট হালনাগাদ করে কার্যকর করারও আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এ আইনটি যখন প্রণয়ন করা হয় তখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন হাসানুল হক ইনু।
সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুললের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সমষ্টির পরিচালক (গবেষণা) রেজাউল হক। স্বাগত বক্তৃতা দেন সমষ্টির পরিচালক ও সাংবাদিক মীর মাসরুর জামান এবং মীর সাহিদুল আলম। সমষ্টির গবেষণায় সাংবাদিকতার উন্নয়নগত দিক, প্রভাবক উপাদান এবং নীতি-কাঠামোর প্রবণতাগুলো তুলে ধরা হয়। দলীয় আলোচনা, মতামত জরিপ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। সেখানে দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৬১ জন সাংবাদিকের ৭৯ শতাংশ মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। উত্তরদাতা সাংবাদিকদের ৯৪% সাংবাদিক আইনটি সংস্কার অথবা রহিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের ৬৫% মনে করেন আইনটিকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তথ্য ও মতামত প্রকাশ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য নেতিবাচক উপাদানগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনমাফিক সংস্কার করা প্রয়োজন। অন্যদিকে ২৯% সাংবাদিক আইনটি সম্পূর্ণ বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা সংসদ সদস্য, সাংবাদিক সংগঠন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করেন।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে ২৫০টি মামলার তথ্যে দেখা যায়, মাত্র ১৮% মামলায় সাইবার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি ৮২% মামলায় অনলাইন মাধ্যম বা সংবাদপত্রে তথ্য বা মতামত প্রকাশের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তথ্য ও মতামত প্রকাশ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে ২৫ ধারায় (৪৮%)। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ২৮ ও ২৯ ধারা (যথাক্রমে ১৭.৩১% ও ১২.১৮%)। এছাড়া বহুল ব্যবহৃত অন্য দুটি ধারাগুলো হচ্ছে ২৯ ও ৩১। রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা ৪৬% মামলা করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ২৩% মামলায় বাদী হয়েছেন। অন্যান্য বাদী ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী যেমন, সাংবাদিক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিল্পী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, বেসরকারি চাকরিজীবী, ধর্মীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও বিচারক। মামলাগুলোতে ২০ জন নারীসহ অন্তত ৫৫৪ জনকে আসামি করা হয়। ১৫৩টি মামলায় প্রধান আসামিসহ একাধিক আসামিকে মামলার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বিবাদীদের মধ্যে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি ৩৬%, সাংবাদিক ২৯%, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ১৪%। বাকিরা ছিলেন বেসরকারি চাকুরে, ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পী, আইনজীবী, সরকারি কর্মচারী। অর্থাৎ মোট মামলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মামলায় সাংবাদিকরা অভিযুক্ত হয়েছেন।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান সাংবাদিক ও লেখক মুশতাক আহমেদ। আমি জজকে বলেছিলাম আপনি তাকে কেন জামিন দেননি। উনিতো সাংবাদিকতাই করেন, উনিতো পালিয়ে যাবেন না। এই আইনে সর্বশেষ পরীমনিকেও জজকোর্ট জামিন না দিলেও পরে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে অজামিনযোগ্য ধারাগুলো আছে সেটা কিন্তু আদালতের জামিন দেয়ার এখতিয়ারও আছে। শুধু জজকোর্ট না অনেক ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টও জামিন দিয়েছে সে তথ্য আমার কাছে রয়েছে।
জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের জন্য নয়, যেকোন সাধারণ নাগরিকের জন্য আইন। এই আইনে দেশের সাধারণ মানুষও গ্রেপ্তার হয়েছে। আইনমন্ত্রী নিজেও বলেছেন কোন সাংবাদিকের ওপর এই আইনে মামলা হলে আগে তদন্ত করে দেখবো পরে গ্রেপ্তার করব। এখন যদি আমি বলি তাহলে দেশের সাধারণ নাগরিকরা কি রাস্তা থেকে ভেসে এসেছেন। তারা দেশের সম্মানিত ভোটার। তাহলে সবার ক্ষেত্রে এই আইন এক কেন হবে না? কেন বৈষম্যমূলক হবে?
সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব তিনি গুরুত্বের সঙ্গে জাতীয় সংসদে তুলে ধরবেন।