ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট। স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় ভোট হবে ২৯৯টি আসনে। নিবন্ধিত ২৮টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, বর্জন করেছে ১৬টি দল।
ভোটের লড়াইয়ে আছেন ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী
এরমধ্যে শরিক ১৪ দলসহ আওয়ামী লীগের নৌকা ২৭১, জাতীয় পার্টির ২৬৫ সহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ প্রার্থী আছেন ভোটের মাঠে। এর বাইরে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্রের মধ্যে আছেন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক আর আলোচিত প্রার্থীও। বিএনপির দলছুট কয়েকজনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সাবেক বিএনপি নেতাদের নবসৃষ্ট দুটি দলও নির্বাচনে আছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ভোট বর্জন করায় এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের বেশিরভাগ আবার আওয়ামী লীগের নেতা। স্থানীয় সূত্র বলছে, বেশকিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হারতে পারেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা ছোট দলের বড় নেতারা।
ইতোমধ্যে, ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে।
ভোটে চোখ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকও পাঠিয়েছে তারা। ভোটার উপস্থিতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ওপর ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা, সহিংসতা প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৮ লাখ সদস্য। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে সেনাবাহিনী।
তবে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কতোটা সহিংসতামুক্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। ভোটার উপস্থিতি কেমন থাকবে তা নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বড় দলের বর্জনের নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়ার নজির রয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। ইসির তথ্য অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪১ শতাংশ।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল। ইসি জানায়, ওই নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ২০.৭৬ শতাংশ।
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অনেক দলই অংশ নেয়নি। ইসির তথ্য অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৪.৯৩ শতাংশ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
পুলিশ ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ১০ হাজার কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩০০ ভোটকেন্দ্রকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে সে তালিকা ইসিতে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসির সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।
এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। শুধু দুর্গম অঞ্চলের ২ হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়েছে ভোটের আগের দিন।
ইসি বলছে, স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক এবং দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তিনি সব ধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নির্বাচনে অনিয়ম হলে প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও ভাষণে জানান সিইসি।
এদিকে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ‘একদফা’ দাবি পূরণ না হওয়ায় ভোট বর্জন করে আন্দোলনে থাকা বিএনপি শনিবার সকাল ৬টা থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে। এই হরতালের মধ্যেই রোববার ভোটগ্রহণ চলবে।
‘একদফা’ দাবিতে অনেকদিন ধরেই হরতাল অবরোধ ডেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। হরতাল অবরোধে বাসে, ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।
ইসি বলছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনে এবং ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য মাঠপর্যায়ে পুলিশ, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, আর্মি, নেভি, কোস্টগার্ডসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণের কাজে ৮ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক মাঠে থাকছে। তারা যেকোনো অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবেন।
এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হলেও দেশজুড়ে নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে ঢাকায় ট্রেনে আগুন দেয়া ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ দিনে ১৫৬টি জায়গায় নির্বাচনী সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আর এতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সারাদেশে পরিবহন ও বিদ্যালয়ে ১৫টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
ঢাকায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল এবং শনিবার মধ্যরাত থেকে আরও কিছু যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।
কোন দলের কত প্রার্থী
ইসির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৬৬ জন, এরপরই রয়েছে জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা-লীগের ৩০ জন, গণফোরাম নয়জন, গণফ্রন্টের ২১ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের দশজন। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৫ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) পাঁচজন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চারজন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) চারজন, গণতন্ত্রী পার্টির দশজন।
শনিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৪
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট। স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় ভোট হবে ২৯৯টি আসনে। নিবন্ধিত ২৮টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, বর্জন করেছে ১৬টি দল।
ভোটের লড়াইয়ে আছেন ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী
এরমধ্যে শরিক ১৪ দলসহ আওয়ামী লীগের নৌকা ২৭১, জাতীয় পার্টির ২৬৫ সহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ প্রার্থী আছেন ভোটের মাঠে। এর বাইরে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্রের মধ্যে আছেন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক আর আলোচিত প্রার্থীও। বিএনপির দলছুট কয়েকজনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সাবেক বিএনপি নেতাদের নবসৃষ্ট দুটি দলও নির্বাচনে আছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ভোট বর্জন করায় এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের বেশিরভাগ আবার আওয়ামী লীগের নেতা। স্থানীয় সূত্র বলছে, বেশকিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হারতে পারেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা ছোট দলের বড় নেতারা।
ইতোমধ্যে, ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে।
ভোটে চোখ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকও পাঠিয়েছে তারা। ভোটার উপস্থিতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ওপর ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা, সহিংসতা প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৮ লাখ সদস্য। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে সেনাবাহিনী।
তবে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কতোটা সহিংসতামুক্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। ভোটার উপস্থিতি কেমন থাকবে তা নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বড় দলের বর্জনের নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়ার নজির রয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। ইসির তথ্য অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪১ শতাংশ।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল। ইসি জানায়, ওই নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ২০.৭৬ শতাংশ।
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অনেক দলই অংশ নেয়নি। ইসির তথ্য অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৪.৯৩ শতাংশ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
পুলিশ ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ১০ হাজার কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩০০ ভোটকেন্দ্রকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে সে তালিকা ইসিতে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসির সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।
এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। শুধু দুর্গম অঞ্চলের ২ হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়েছে ভোটের আগের দিন।
ইসি বলছে, স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক এবং দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তিনি সব ধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নির্বাচনে অনিয়ম হলে প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও ভাষণে জানান সিইসি।
এদিকে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ‘একদফা’ দাবি পূরণ না হওয়ায় ভোট বর্জন করে আন্দোলনে থাকা বিএনপি শনিবার সকাল ৬টা থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে। এই হরতালের মধ্যেই রোববার ভোটগ্রহণ চলবে।
‘একদফা’ দাবিতে অনেকদিন ধরেই হরতাল অবরোধ ডেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। হরতাল অবরোধে বাসে, ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।
ইসি বলছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনে এবং ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য মাঠপর্যায়ে পুলিশ, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, আর্মি, নেভি, কোস্টগার্ডসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণের কাজে ৮ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক মাঠে থাকছে। তারা যেকোনো অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবেন।
এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হলেও দেশজুড়ে নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে ঢাকায় ট্রেনে আগুন দেয়া ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ দিনে ১৫৬টি জায়গায় নির্বাচনী সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আর এতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সারাদেশে পরিবহন ও বিদ্যালয়ে ১৫টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
ঢাকায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল এবং শনিবার মধ্যরাত থেকে আরও কিছু যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।
কোন দলের কত প্রার্থী
ইসির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৬৬ জন, এরপরই রয়েছে জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা-লীগের ৩০ জন, গণফোরাম নয়জন, গণফ্রন্টের ২১ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের দশজন। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৫ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) পাঁচজন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চারজন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) চারজন, গণতন্ত্রী পার্টির দশজন।