alt

জাতীয়

ভোটে জনগণের অংশগ্রহণই বড় বিষয় : প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৪

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে ‘জনগণের বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে তার দলকে নির্বাচিত করেছে। এ বিজয় তার নয়, এ বিজয় জনগণের বিজয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় গতকাল রোববার। ভোট পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সোমবার (৮ জানুয়ারি) গণভবনে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক বার্তায় অনুষ্ঠানটিকে ‘সৌজন্য বিনিময়’ হিসেবে উল্লেখ করে দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আঙ্গিনায় সবুজ ঘাসের উপর তিনটি সারিতে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হেঁটে হেঁটে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি সূচনা বক্তব্য রাখেন।

তার বক্তব্য শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, বিরোধী দল, গণতন্ত্র ও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেন ভোট দেখতে আসা বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা। তাদের একজন আবার গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গও তোলেন। বেশিরভাগ প্রশ্নকর্তাই প্রশ্নের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান তার দল নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে দেশের সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। সোমবারের অনুষ্ঠানটি ছিল ‘সৌজন্য বিনিময়’। এই অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের পর্যায়ক্রমে প্রশ্ন করার সুযোগ দেন এবং সবার প্রশ্নের জবাব দেন।

গণতন্ত্র নেই, এ কথা ঠিক নয়
বিরোধী দলকে (বিএনপি) সংলাপে না ডাকা, তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যেখানে ৬০ শতাংশ ভোটার অনুপস্থিত, এই সরকারের আমলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সীমিত করা হয়েছে বলে মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনার কথা উল্লেখ করে বিবিসিতে কর্মরত এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো- ‘আপনি (শেখ হাসিনা) কি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে, যেখানে কোনো বিরোধী দল নেই?’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে কথা ঠিক নয়। বরং জনগণ যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সেটিই বড় বিষয় বলে দাবি করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সব দলেরই তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না চায় তার মানে এটা নয় যে দেশে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে দেখতে হবে যে মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে কিনা।’

প্রধানমন্ত্রী বিবিসির সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করেন- ‘বিএনপি কত মানুষ মেরেছে? তারা (বিএনপি) ২০১৪-১৫ সালে যা করেছে, তাতে তাদের কীভাবে গণতান্ত্রিক দল বলা যায়? তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) কী করছে, আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। ট্রেনে আগুন দিয়েছে... এটা কি গণতন্ত্র? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু আপনি যখন সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে চাইবেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে... এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, এটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ দেশে কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। মানুষ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পছন্দ করে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ধৈর্য দেখিয়েছি। আমরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি।’

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ প্রধান আরও বলেন, ‘তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায়নি। তারা মানুষের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ মানুষ সচেতন। এছাড়া যদি গণতন্ত্রের আর কোনো সংজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে সেটা আলাদা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এটা মানুষের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়, তখন তাদের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।’

ব্যর্থ হলে কে দায়ী?
ভারতের টেলিগ্রাফের এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘নির্বাচন শেষ হয়েছে। আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন আপনার বিরোধী দলের প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন?’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি কি চান আমি একটি বিরোধী দল গঠন করি? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?’

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘আমি বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। আমাদের দলকে আমরা সংগঠিত করেছি। বিরোধী দলকে তাদের নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। আপনি আমাকে বিরোধী দল গঠন করতে বলতে পারেন না। অবশ্য আপনি চাইলে আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা আসল বিরোধীদল হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্বাচন নিয়ে যারা সমালোচনা করতে চায় তারা করতে পারে। সেটা তাদের স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, ‘ভুল-ঠিক নিয়ে আমার নিজস্ব বিশ্বাস আছে। আমি সেটাতেই বিশ্বাস করি। হ্যাঁ আমি ঠিক কাজটি করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে।’

ড. ইউনূস প্রসঙ্গ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমা করা হবে কিনা, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মি. ইউনূসের বিষয়টি শ্রম আদালতের বিষয়। তিনি শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন। তার শ্রমিকদের ঠকিয়েছেন। শ্রমিকরা মামলা করেছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবাইকে চা-নাস্তার আমন্ত্রণ জানান। আপ্যায়ন তালিকায় ছিল-দেশীয় নানা রকমের পিঠা, মাঠা, চটপটি, ফুসকা, স্ন্যাকস, চা ও কফি।

এ বিজয় জনগণের
এর আগে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছে। এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিজয়টা হচ্ছে জনগণের বিজয়। এ বিজয়টা আমার বিজয় না।’

জনগণের সরকার গঠন করবার অধিকার ও ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।’

৭ জানুয়ারি ভোট দেখতে আসায় বিদেশিদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা। নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারটা আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত ও শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

ব্যতিক্রমী নির্বাচন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের নির্বাচন ব্যতিক্রমী হয়েছে। কারণ সাধারণত দল থেকে প্রার্থী নির্বাচন করা হলেও এবার তার পাশাপাশি প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি কারণ তারা আসলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না এবং তারা ভয় পায়।’

বিগত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেরর ফলাফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা। মানুষের যে ভোটের অধিকারটা অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থাকে সংস্কার করেছি। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা-সেটাই লক্ষ্য ছিল।’

বিএনপির ভোট বর্জন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দলটি সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে তৈরি। তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেই জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হলো জনগণের।’

সরকার গঠন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত হওয়ায় (নবম সংসদ থেকে) টানা চতুর্থবার এবং সব মিলে পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। এর আগে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। গেজেটের পর শপথ হবে, এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে। সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, তা অনুসরণ করতে চাচ্ছি।’

ছবি

বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত

ছবি

শিক্ষা প্রকৌশলের গাড়ি নিয়ে বিলাসিতা, ৩৮ গাড়ির ২০টিই বেহাত

সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী : রুমিন ফারহানা

সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ

ছবি

মূল্যস্ফীতি হঠাৎ বাড়েনি, কমতে সময় লাগবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

পিএসসির চেয়ারম্যান হলেন মোবাশ্বের মোনেম

ছবি

চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অর্ধেক কমল

ছবি

র‌্যাবের সাবেক ডিজি হারুনসহ ৩ অতিরিক্ত আইজিপিকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

১৪ বছরে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ৫১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি: টিআইবি

ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি এড়াতে কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা

ছবি

রেনু হত্যা: ১ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

আগামী সপ্তাহে বিদায় নিতে পারে বর্ষা

ছবি

শপথ নিলেন নতুন ২৩ বিচারপতি

ছবি

২৩ বিচারপতির শপথ আজ

ছবি

দুর্গাপূজা: বাংলাবান্ধা-বুড়িমারি-বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ছবি

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণের আহ্বান

ছবি

গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯৮১ জন, মৃত্যু ৫ জনের

ছবি

নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে শেখ আব্দুর রশীদের নিয়োগ

ছবি

কোথাও যাননি শেখ হাসিনা, দিল্লিতেই আছেন : বিবিসি বাংলা

ছবি

পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন পদত্যাগ করেছেন

ছবি

ম্যাজিস্ট্রেট উর্মির বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলার আবেদন

ছবি

শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

কেন মেটে না ভবদহের সমস্যা ? ব্যাখ্যা চায় মানবাধিকার কমিশন

ছবি

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় কোনো থ্রেট নেই : ডিএমপি কমিশনার

ছবি

এবার পূজায় কোন শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ফের কর্মবিরতিতে নার্স ও মিডওয়াইফরা

ছবি

শেরপুরে বন্যার পানি কমছে, তবে এখনও পানিবন্দী বহু মানুষ, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১১

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করলেন আসিফ নজরুল

ছবি

দুর্গাপূজার ছুটি একদিন বাড়ছে

ছবি

রাজনৈতিক অস্থিরতায় দলবদ্ধ সহিংসতা ও গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ: জেএমবিএফ

ছবি

দুদক রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের কাছে জিম্মি: ইফতেখারুজ্জামান

সেই আলোচিত উর্মি শাবির ছাত্রী

পুলিশের ১ ডিআইজি ও ৯ অতিরিক্ত ডিআইজি-সহ ৩০ জন কর্মকর্তার বদলি

ছবি

জ্বালানি ও সেতু বিভাগে নতুন সচিব নিয়োগ

ছবি

ফেইসবুক পোস্টের জেরে ওএসডি হওয়া সেই কমিশনার এবার বরখাস্ত

ছবি

মাতৃপূজার নান্দনিকতা: সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলা

tab

জাতীয়

ভোটে জনগণের অংশগ্রহণই বড় বিষয় : প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৪

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে ‘জনগণের বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে তার দলকে নির্বাচিত করেছে। এ বিজয় তার নয়, এ বিজয় জনগণের বিজয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় গতকাল রোববার। ভোট পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সোমবার (৮ জানুয়ারি) গণভবনে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক বার্তায় অনুষ্ঠানটিকে ‘সৌজন্য বিনিময়’ হিসেবে উল্লেখ করে দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আঙ্গিনায় সবুজ ঘাসের উপর তিনটি সারিতে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হেঁটে হেঁটে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি সূচনা বক্তব্য রাখেন।

তার বক্তব্য শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, বিরোধী দল, গণতন্ত্র ও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেন ভোট দেখতে আসা বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা। তাদের একজন আবার গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গও তোলেন। বেশিরভাগ প্রশ্নকর্তাই প্রশ্নের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান তার দল নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে দেশের সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। সোমবারের অনুষ্ঠানটি ছিল ‘সৌজন্য বিনিময়’। এই অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের পর্যায়ক্রমে প্রশ্ন করার সুযোগ দেন এবং সবার প্রশ্নের জবাব দেন।

গণতন্ত্র নেই, এ কথা ঠিক নয়
বিরোধী দলকে (বিএনপি) সংলাপে না ডাকা, তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যেখানে ৬০ শতাংশ ভোটার অনুপস্থিত, এই সরকারের আমলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সীমিত করা হয়েছে বলে মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনার কথা উল্লেখ করে বিবিসিতে কর্মরত এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো- ‘আপনি (শেখ হাসিনা) কি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে, যেখানে কোনো বিরোধী দল নেই?’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে কথা ঠিক নয়। বরং জনগণ যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সেটিই বড় বিষয় বলে দাবি করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সব দলেরই তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না চায় তার মানে এটা নয় যে দেশে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে দেখতে হবে যে মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে কিনা।’

প্রধানমন্ত্রী বিবিসির সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করেন- ‘বিএনপি কত মানুষ মেরেছে? তারা (বিএনপি) ২০১৪-১৫ সালে যা করেছে, তাতে তাদের কীভাবে গণতান্ত্রিক দল বলা যায়? তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) কী করছে, আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। ট্রেনে আগুন দিয়েছে... এটা কি গণতন্ত্র? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু আপনি যখন সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে চাইবেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে... এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, এটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ দেশে কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। মানুষ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পছন্দ করে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ধৈর্য দেখিয়েছি। আমরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি।’

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ প্রধান আরও বলেন, ‘তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায়নি। তারা মানুষের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ মানুষ সচেতন। এছাড়া যদি গণতন্ত্রের আর কোনো সংজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে সেটা আলাদা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এটা মানুষের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়, তখন তাদের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।’

ব্যর্থ হলে কে দায়ী?
ভারতের টেলিগ্রাফের এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘নির্বাচন শেষ হয়েছে। আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন আপনার বিরোধী দলের প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন?’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি কি চান আমি একটি বিরোধী দল গঠন করি? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?’

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘আমি বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। আমাদের দলকে আমরা সংগঠিত করেছি। বিরোধী দলকে তাদের নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। আপনি আমাকে বিরোধী দল গঠন করতে বলতে পারেন না। অবশ্য আপনি চাইলে আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা আসল বিরোধীদল হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্বাচন নিয়ে যারা সমালোচনা করতে চায় তারা করতে পারে। সেটা তাদের স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, ‘ভুল-ঠিক নিয়ে আমার নিজস্ব বিশ্বাস আছে। আমি সেটাতেই বিশ্বাস করি। হ্যাঁ আমি ঠিক কাজটি করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে।’

ড. ইউনূস প্রসঙ্গ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমা করা হবে কিনা, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মি. ইউনূসের বিষয়টি শ্রম আদালতের বিষয়। তিনি শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন। তার শ্রমিকদের ঠকিয়েছেন। শ্রমিকরা মামলা করেছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবাইকে চা-নাস্তার আমন্ত্রণ জানান। আপ্যায়ন তালিকায় ছিল-দেশীয় নানা রকমের পিঠা, মাঠা, চটপটি, ফুসকা, স্ন্যাকস, চা ও কফি।

এ বিজয় জনগণের
এর আগে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছে। এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিজয়টা হচ্ছে জনগণের বিজয়। এ বিজয়টা আমার বিজয় না।’

জনগণের সরকার গঠন করবার অধিকার ও ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।’

৭ জানুয়ারি ভোট দেখতে আসায় বিদেশিদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা। নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারটা আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত ও শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

ব্যতিক্রমী নির্বাচন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের নির্বাচন ব্যতিক্রমী হয়েছে। কারণ সাধারণত দল থেকে প্রার্থী নির্বাচন করা হলেও এবার তার পাশাপাশি প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি কারণ তারা আসলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না এবং তারা ভয় পায়।’

বিগত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেরর ফলাফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা। মানুষের যে ভোটের অধিকারটা অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থাকে সংস্কার করেছি। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা-সেটাই লক্ষ্য ছিল।’

বিএনপির ভোট বর্জন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দলটি সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে তৈরি। তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেই জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হলো জনগণের।’

সরকার গঠন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত হওয়ায় (নবম সংসদ থেকে) টানা চতুর্থবার এবং সব মিলে পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। এর আগে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। গেজেটের পর শপথ হবে, এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে। সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, তা অনুসরণ করতে চাচ্ছি।’

back to top