বাংলাদেশের কাছে উড়োজাহাজ বেচতে বোয়িং ও এয়ারবাসের জোর চেষ্টার মধ্যে ঢাকায় ফরাসি রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই এর আশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্যারিস সফরে বিমানের জন্য উড়োজাহাজ কেনায় ইউরোপীয় নির্মাতা কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
বুধবার (২২ মে) ঢাকায় নিজ বাসায় এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, এয়ারবাস মূলত দুটি ভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। একটি হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশের সঙ্গে উড়োজাহাজের এবং অন্যটি হচ্ছে স্যাটেলাইট সিস্টেমস, যা বাংলাদেশ পৃথিবী পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে নিতে চায়।
“সুতরাং দুটি আলোচনা খুব ভালো চলছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, খুব শিগগির এসব বিষয়ে (চুক্তি) সই এবং চূড়ান্ত করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী প্যারিস সফরেই এই দুই চুক্তি বা চূড়ান্ত করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে ফরাসি দূত মেরি মাসদুপুই বলেন, “আমরা সে রকমই আশা করছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্যারিস সফরের তারিখ নির্ধারণ না হলেও সেটি নিয়ে কাজ চলার কথা বলেন তিনি।
বহরে নতুন সুপরিসর উড়োজাহাজ যোগ করার চেষ্টা কয়েক বছর ধরেই করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা দুই কোম্পানি তাদের আগ্রহ দেখিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ইউরোপভিত্তিক উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাসের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, বাংলাদেশ ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ ‘কেনার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে।
ইউরোপের এ নির্মাতা কোম্পানির আটটি যাত্রী ও দুটি পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেনার ব্যাপারে আলোচনায় অগ্রগতিও হয়েছে। গত এপ্রিলে বিমানের পর্ষদ সভায় তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই, দরকষাকষিসহ ক্রয় প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দেন-দরবারে পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বোয়িংও। তারা বলছে, বোয়িং কিনলে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীতকরণে সহায়তা করবে।
রাষ্ট্রদূতের ব্রিফিংয়ের আগের দিনও মঙ্গলবার ঢাকায় বোয়িংয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি দল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বোয়িং কিনলে লাভালাভের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তাদের দাবি, অন্য কোনো নির্মাতার চেয়ে তাদের উড়োজাহাজের দাম কম এবং পুরো প্রস্তাব আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী, যাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিমান লাভবান হবে।
চারটি যাত্রীবাহী এবং দুটি কার্গো উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানি, যা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিমান বাংলাদেশ।
বোয়িং চাচ্ছে, বাংলাদেশ যেভাবে কমিটি গঠন করে এয়ারবাসের প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে, সেভাবে যেন তাদের উড়োজাহাজের বিষয়েও মূল্যায়ন করা হয়। বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সেই মূল্যায়নের আশ্বাস পাওয়ার দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন বিমান নির্মাতা কোম্পানিকে ক্রয়াদেশ দেওয়া হচ্ছে, তা খোলাসা করা হয়নি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য বোয়িং না কি এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা হবে, এমন প্রশ্নে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, দেশের জন্য যেটা ভালো হবে, সেটিই বিবেচনা করা হবে।
গত ৭ মে তারিখে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান ম্যারি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, “ইউরোপে তারা এয়ারবাস বানায়, আমাদের বিমানের বহরে বোয়িং আছে। তারা আমাদের কাছে এয়ারবাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি, বেশ ভালো প্রস্তাব আমরা পেয়েছি।
“এরইমধ্যে বোয়িংও আমাদের ভালো প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এ বিষয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে একটি মূল্যায়ন কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যেগুলো ভালো হবে; সেগুলো আমরা বিবেচনা করব।”
বোয়িংকে ‘লাভজনক’ হিসেবে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মনোভাব এবং ‘দেশের মঙ্গল’ ভেবে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্তের বিষয় মন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই বলেন, “আপনাকে শুধু বলব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ মনোভাব সম্পর্কে আপনি মনকে আপডেট করুন।
“আর বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য বেশ স্বাভাবিক। যখন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, তখন এ ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্য তিনি দিতেই পারেন। তবে, আমরা খুবই আশাবাদী।”
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনা বিষয়ক এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গোপনীয়তার কারণে’ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত তিনি বলতে চান না।
“তবে, আপনাকে বলতে পারি, শিল্পপতিদের পাশাপাশি সামরিক প্রধানরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে আসছেন। নৌ, সেনা, বিমান বাহিনী সবক্ষেত্রে আলোচনা এবং অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়মিত আলোচনা থাকলেও গোপনীয়তার কারণে আমি বিস্তারিততে যেতে পারব না।”
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই প্রান্তেই ক্রমবর্ধমান আগ্রহ থাকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই বলেন, জ্বালানি, খাদ্য, জাহাজ তৈরি ও প্রকৌশল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফরাসি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
“ফ্রান্সে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ও খতিয়ে দেখছি। যেমন- ওষুধ, তৈরি পোশাক রিটেইলসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে।”
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সফরে জলবায়ু সহযোগিতার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের উদ্যোগ ‘অভিযোজন চুক্তিতেও’ বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত।
জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘অগ্রগামী’ ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা এটাতে উৎসাহ পেতে চাই এবং একইসঙ্গে আপনাদেরকে আর্থিক, কারিগরিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে চাই।
১০০ কোটি ইউরো প্যাকেজের অভিযোজন চুক্তি। প্রধানত, রেয়াতযোগ্য এই ঋণের বিষয় বাস্তবায়ন করবে আমাদের উন্নয়ন ব্যাংক-এএফডি।”
সম্প্রতি জলবায়ু বিষয়ক বাজেট সহায়তা ঋণের চুক্তি সই হওয়ার কথাও এ সময় তুলে ধরেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত।
নাগরিক সমাজসহ অন্যদের সঙ্গে অভিবাসন সংলাপ অনুষ্ঠানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কেননা, বাংলাদেশি জনগণ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়ে যখন ফ্রান্সে আশ্রয় নেয়, তখন অনেক ইস্যু ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সে কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সব বিষয় পর্যালোচনা করেছি।”
এলডিসি থেকে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যাত্রায় মানুষের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালু রাখার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আপনাদের দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্রময় এবং শ্রমিকদের পরিস্থিতি উন্নত করলে তা যথাযথ উত্তরণে সহায়কা হবে।”
ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ‘দ্বন্দ্ব নয়, বরং সহযোগিতামূলক’ দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা মনে করি, এই অঞ্চলে খুব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টররা রয়েছে; যেমন চীন, ভারত ও অন্যরা খুব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টর।
“এবং আমাদের মত হচ্ছে, এই অঞ্চলের সবার মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে এই নয় যে, কিছু অ্যাক্টরের আচরণ সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। যাই হোক, আলোচনা ও সংলাপ চালু রাখা হচ্ছে একমাত্র পথ।”
ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার বিচারে গুরুত্ব, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।
“আমাদের মধ্যে মধ্যে খুব ভালো সংযোগ থাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একে অপরের ইস্যু বুঝি এবং একে অপরকে সহযোগিতার চেষ্টা করি।”
বুধবার, ২২ মে ২০২৪
বাংলাদেশের কাছে উড়োজাহাজ বেচতে বোয়িং ও এয়ারবাসের জোর চেষ্টার মধ্যে ঢাকায় ফরাসি রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই এর আশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্যারিস সফরে বিমানের জন্য উড়োজাহাজ কেনায় ইউরোপীয় নির্মাতা কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
বুধবার (২২ মে) ঢাকায় নিজ বাসায় এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, এয়ারবাস মূলত দুটি ভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। একটি হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশের সঙ্গে উড়োজাহাজের এবং অন্যটি হচ্ছে স্যাটেলাইট সিস্টেমস, যা বাংলাদেশ পৃথিবী পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে নিতে চায়।
“সুতরাং দুটি আলোচনা খুব ভালো চলছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, খুব শিগগির এসব বিষয়ে (চুক্তি) সই এবং চূড়ান্ত করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী প্যারিস সফরেই এই দুই চুক্তি বা চূড়ান্ত করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে ফরাসি দূত মেরি মাসদুপুই বলেন, “আমরা সে রকমই আশা করছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্যারিস সফরের তারিখ নির্ধারণ না হলেও সেটি নিয়ে কাজ চলার কথা বলেন তিনি।
বহরে নতুন সুপরিসর উড়োজাহাজ যোগ করার চেষ্টা কয়েক বছর ধরেই করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা দুই কোম্পানি তাদের আগ্রহ দেখিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ইউরোপভিত্তিক উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাসের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, বাংলাদেশ ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ ‘কেনার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে।
ইউরোপের এ নির্মাতা কোম্পানির আটটি যাত্রী ও দুটি পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেনার ব্যাপারে আলোচনায় অগ্রগতিও হয়েছে। গত এপ্রিলে বিমানের পর্ষদ সভায় তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই, দরকষাকষিসহ ক্রয় প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দেন-দরবারে পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বোয়িংও। তারা বলছে, বোয়িং কিনলে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীতকরণে সহায়তা করবে।
রাষ্ট্রদূতের ব্রিফিংয়ের আগের দিনও মঙ্গলবার ঢাকায় বোয়িংয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি দল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বোয়িং কিনলে লাভালাভের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তাদের দাবি, অন্য কোনো নির্মাতার চেয়ে তাদের উড়োজাহাজের দাম কম এবং পুরো প্রস্তাব আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী, যাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিমান লাভবান হবে।
চারটি যাত্রীবাহী এবং দুটি কার্গো উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানি, যা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিমান বাংলাদেশ।
বোয়িং চাচ্ছে, বাংলাদেশ যেভাবে কমিটি গঠন করে এয়ারবাসের প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে, সেভাবে যেন তাদের উড়োজাহাজের বিষয়েও মূল্যায়ন করা হয়। বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সেই মূল্যায়নের আশ্বাস পাওয়ার দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন বিমান নির্মাতা কোম্পানিকে ক্রয়াদেশ দেওয়া হচ্ছে, তা খোলাসা করা হয়নি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য বোয়িং না কি এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা হবে, এমন প্রশ্নে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, দেশের জন্য যেটা ভালো হবে, সেটিই বিবেচনা করা হবে।
গত ৭ মে তারিখে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান ম্যারি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, “ইউরোপে তারা এয়ারবাস বানায়, আমাদের বিমানের বহরে বোয়িং আছে। তারা আমাদের কাছে এয়ারবাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি, বেশ ভালো প্রস্তাব আমরা পেয়েছি।
“এরইমধ্যে বোয়িংও আমাদের ভালো প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এ বিষয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে একটি মূল্যায়ন কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যেগুলো ভালো হবে; সেগুলো আমরা বিবেচনা করব।”
বোয়িংকে ‘লাভজনক’ হিসেবে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মনোভাব এবং ‘দেশের মঙ্গল’ ভেবে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্তের বিষয় মন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই বলেন, “আপনাকে শুধু বলব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ মনোভাব সম্পর্কে আপনি মনকে আপডেট করুন।
“আর বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য বেশ স্বাভাবিক। যখন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, তখন এ ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্য তিনি দিতেই পারেন। তবে, আমরা খুবই আশাবাদী।”
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনা বিষয়ক এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গোপনীয়তার কারণে’ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত তিনি বলতে চান না।
“তবে, আপনাকে বলতে পারি, শিল্পপতিদের পাশাপাশি সামরিক প্রধানরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে আসছেন। নৌ, সেনা, বিমান বাহিনী সবক্ষেত্রে আলোচনা এবং অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়মিত আলোচনা থাকলেও গোপনীয়তার কারণে আমি বিস্তারিততে যেতে পারব না।”
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই প্রান্তেই ক্রমবর্ধমান আগ্রহ থাকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই বলেন, জ্বালানি, খাদ্য, জাহাজ তৈরি ও প্রকৌশল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফরাসি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
“ফ্রান্সে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ও খতিয়ে দেখছি। যেমন- ওষুধ, তৈরি পোশাক রিটেইলসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে।”
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সফরে জলবায়ু সহযোগিতার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের উদ্যোগ ‘অভিযোজন চুক্তিতেও’ বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত।
জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘অগ্রগামী’ ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা এটাতে উৎসাহ পেতে চাই এবং একইসঙ্গে আপনাদেরকে আর্থিক, কারিগরিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে চাই।
১০০ কোটি ইউরো প্যাকেজের অভিযোজন চুক্তি। প্রধানত, রেয়াতযোগ্য এই ঋণের বিষয় বাস্তবায়ন করবে আমাদের উন্নয়ন ব্যাংক-এএফডি।”
সম্প্রতি জলবায়ু বিষয়ক বাজেট সহায়তা ঋণের চুক্তি সই হওয়ার কথাও এ সময় তুলে ধরেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত।
নাগরিক সমাজসহ অন্যদের সঙ্গে অভিবাসন সংলাপ অনুষ্ঠানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কেননা, বাংলাদেশি জনগণ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়ে যখন ফ্রান্সে আশ্রয় নেয়, তখন অনেক ইস্যু ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সে কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সব বিষয় পর্যালোচনা করেছি।”
এলডিসি থেকে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যাত্রায় মানুষের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালু রাখার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আপনাদের দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্রময় এবং শ্রমিকদের পরিস্থিতি উন্নত করলে তা যথাযথ উত্তরণে সহায়কা হবে।”
ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ‘দ্বন্দ্ব নয়, বরং সহযোগিতামূলক’ দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা মনে করি, এই অঞ্চলে খুব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টররা রয়েছে; যেমন চীন, ভারত ও অন্যরা খুব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টর।
“এবং আমাদের মত হচ্ছে, এই অঞ্চলের সবার মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে এই নয় যে, কিছু অ্যাক্টরের আচরণ সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। যাই হোক, আলোচনা ও সংলাপ চালু রাখা হচ্ছে একমাত্র পথ।”
ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার বিচারে গুরুত্ব, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।
“আমাদের মধ্যে মধ্যে খুব ভালো সংযোগ থাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একে অপরের ইস্যু বুঝি এবং একে অপরকে সহযোগিতার চেষ্টা করি।”