জলবায়ুর পরিবর্তন, শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে, আর ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ তাপদাহের পূর্বাভাস থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের তাপমাত্রা দৈনিক গড় উষ্ণায়নের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি বাড়বে এবং শীতকালে তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের চেয়ে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি বাড়বে।
মঙ্গলবার পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) জানায়, চলতি বছরের ১৭ থেকে ২৩ এপ্রিল, রাজধানী ও অন্যান্য জায়গার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের তুলনায় চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই গড় তাপমাত্রা আরও দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাবদাহের কারণে বাংলাদেশে তাপমাত্রা গত ৫০ বছরে বেড়েছে। তাপামাত্রা বাড়ার পেছনে দায়ী বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবাশ্ম জ্বালানি ও শিল্পকারখানা থেকে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি, যা গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, জলবায়ুর ওপর সমুদ্রের প্রভাব।
গবেষণা বলছে, এই ধরনের তীব্র দাবদাহের ঘটনা প্রায় প্রতি দশকে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এই প্রবণতা অনুসরণ করে, অনুমান করা যায় যে, ২০৩৪ সালের দিকে আরেকটি চরম তাপপ্রবাহ ঘটতে পারে। ১৯৭২ সাল থেকে দাবদাহ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। বর্তমানে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের তা ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে দাবদাহের কারণে প্রতিদিন ১২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালে এই তাপপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং বয়স্কদের মধ্যে দাবদাহ জনিত কারণে ২০৮০ সালের মধ্যে প্রতি এক লাখে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে যে, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় উচ্চ তাপপ্রবাহের কারণে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন কিন্তু এই সমস্যা মোকাবিলার বিষয়ে তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে।
দাবদাহের ফলে যে প্রভাব
অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশে হিটস্ট্রোক এবং শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৫ এবং ২০২৪ সালে দাবদাহের ফলে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ প্রভাবিত হয়েছে। এবং অন্তত ১৫ জন দাবদাহের কারণে রোগে মারা যায়। দাবদাহে দুই দিন পর কলেরার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। দাবদাহে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব বাড়ে, যা ডায়রিয়া রোগসৃষ্টির প্রধান কারণ। দাবদাহে মশা দ্বারা সংঘটিত রোগের প্রভাব বাড়ায়।
দাবদাহ পরিবেশ, কৃষিক্ষেত্র এবং শহরাঞ্চলের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। কৃষিজমির উপর অতিরিক্ত চাপ, বন উজাড় এবং শহরাঞ্চলে দাবদাহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে কৃষিখাতে ক্ষতিসাধন করছে, যেমন ২০২১ সালের দাবদাহে ২১ হাজার হেক্টরের বেশি ধান নষ্ট হয়েছে।
যা করণীয়
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, যদি দাবদাহের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তবে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা আমাদের জন্য অসহনীয় হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহ প্রবণতা কমানো সম্ভব এবং এই লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সংস্থাটির মহাসচিব ও সিনিয়র উপদেষ্টা ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, দাবদাহের ফলে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ফসলের ক্ষতি, ফলন হ্রাস এবং খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। অতিরিক্ত দাবদাহ গ্রামাঞ্চলের পশুপালনকে প্রভাবিত করে ও পানির অভাব সৃষ্টি করে। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য তাপ-প্রতিরোধী ফসল, কৃষি ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা উচিত। এছাড়াও আমাদের টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, চলমান দাবদাহ স্বাস্থ্য, কৃষি এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবং আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার জন্য বর্তমান উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
জলবায়ুর পরিবর্তন, শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে, আর ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ তাপদাহের পূর্বাভাস থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের তাপমাত্রা দৈনিক গড় উষ্ণায়নের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি বাড়বে এবং শীতকালে তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের চেয়ে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি বাড়বে।
মঙ্গলবার পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) জানায়, চলতি বছরের ১৭ থেকে ২৩ এপ্রিল, রাজধানী ও অন্যান্য জায়গার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের তুলনায় চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই গড় তাপমাত্রা আরও দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাবদাহের কারণে বাংলাদেশে তাপমাত্রা গত ৫০ বছরে বেড়েছে। তাপামাত্রা বাড়ার পেছনে দায়ী বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবাশ্ম জ্বালানি ও শিল্পকারখানা থেকে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি, যা গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, জলবায়ুর ওপর সমুদ্রের প্রভাব।
গবেষণা বলছে, এই ধরনের তীব্র দাবদাহের ঘটনা প্রায় প্রতি দশকে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এই প্রবণতা অনুসরণ করে, অনুমান করা যায় যে, ২০৩৪ সালের দিকে আরেকটি চরম তাপপ্রবাহ ঘটতে পারে। ১৯৭২ সাল থেকে দাবদাহ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। বর্তমানে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের তা ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে দাবদাহের কারণে প্রতিদিন ১২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালে এই তাপপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং বয়স্কদের মধ্যে দাবদাহ জনিত কারণে ২০৮০ সালের মধ্যে প্রতি এক লাখে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে যে, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় উচ্চ তাপপ্রবাহের কারণে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন কিন্তু এই সমস্যা মোকাবিলার বিষয়ে তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে।
দাবদাহের ফলে যে প্রভাব
অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশে হিটস্ট্রোক এবং শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৫ এবং ২০২৪ সালে দাবদাহের ফলে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ প্রভাবিত হয়েছে। এবং অন্তত ১৫ জন দাবদাহের কারণে রোগে মারা যায়। দাবদাহে দুই দিন পর কলেরার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। দাবদাহে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব বাড়ে, যা ডায়রিয়া রোগসৃষ্টির প্রধান কারণ। দাবদাহে মশা দ্বারা সংঘটিত রোগের প্রভাব বাড়ায়।
দাবদাহ পরিবেশ, কৃষিক্ষেত্র এবং শহরাঞ্চলের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। কৃষিজমির উপর অতিরিক্ত চাপ, বন উজাড় এবং শহরাঞ্চলে দাবদাহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে কৃষিখাতে ক্ষতিসাধন করছে, যেমন ২০২১ সালের দাবদাহে ২১ হাজার হেক্টরের বেশি ধান নষ্ট হয়েছে।
যা করণীয়
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, যদি দাবদাহের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তবে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা আমাদের জন্য অসহনীয় হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহ প্রবণতা কমানো সম্ভব এবং এই লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সংস্থাটির মহাসচিব ও সিনিয়র উপদেষ্টা ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, দাবদাহের ফলে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ফসলের ক্ষতি, ফলন হ্রাস এবং খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। অতিরিক্ত দাবদাহ গ্রামাঞ্চলের পশুপালনকে প্রভাবিত করে ও পানির অভাব সৃষ্টি করে। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য তাপ-প্রতিরোধী ফসল, কৃষি ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা উচিত। এছাড়াও আমাদের টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, চলমান দাবদাহ স্বাস্থ্য, কৃষি এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবং আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার জন্য বর্তমান উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।