গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভ খাঁ গ্রামের জাকির। জাকির গত ২৬ জুলাই শুক্রবার ঢাকার উত্তরায়, আবদুল্লাহপুরে যানবাহনের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন এবং পরদিন শনিবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বাবা-মা, স্ত্রী, এক সন্তানের পরিবারে জাকিরই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। জাকিরকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি জানে না এখন তারা কী খাবে, কিভাবে চলবে?
জাকিরের মা মোমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘কোটার আন্দোলনে আমার ছেলে তো ছিল না। গার্মেন্টসে চাকরি করতো। গার্মেন্টসের মাল কেনার লাইগাই উত্তরা গেছিলো। হ্যারে মারলো ক্যান? কেডা মারলো? আমরা এহন খামু কি? বাঁচমু কেমনে?’
শুধু জাকির নয়, চলমান আন্দোলনে গাজীপুরের অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন গাজীপুর মহানগরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সহকারী হামিদুল ইসলাম জুয়েল (৩৫ )।
আরেকজন শেখ ফাহমিন জাফর। টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফাহমিন। তার পিতার নাম শেখ আবু জাফর। বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার তারটিয়া গ্রামে। ফাহমিন তার মায়ের সঙ্গে ঢাকার দক্ষিণ খান থানার গাওয়াইর মাদ্রাসা রোডে থাকতো। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে জিপিএ- ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। রাজধানীর উত্তরায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে সৃষ্ট সংঘর্ষে নিহত হয় ফাহমিন।
এছাড়া শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে আলম (২২), রায়হান (২০), হুমায়ুন (২৫), তন্ময় (১৮) ছাড়াও ১৩ বছরের একজন অজ্ঞাতনামা কিশোরের মৃত্যুর খবর জানা গেছে, যদিও গাজীপুর পুলিশ রেকর্ডে ৪ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয়েছে।
যুবলীগ নেতা হামিদুল ইসলাম জুয়েল ছিলেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সহকারী এবং গাজীপুর মহানগরের ৩৭নং ওয়ার্ডের চান্দুরা গ্রামের কৃষক বারেক মোল্লার (৮০) ছেলে। দুইবোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে জুয়েল ছিলেন দ্বিতীয়, ছিলেন অবিবাহিত। টঙ্গী কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা জুয়েল সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি ঠিকাধারীর কাজ করতেন। বৃদ্ধ বাবার মাত্র ৫-৭ কাঠা জমি। টিনশেড ঘরে থাকেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জুয়েল। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেলের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই ঘটনায় সেখানে উপস্থিত ৩৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর ওসমান গনী কাজল ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সংবাদকে বলেন, সেদিনের ঘটনা মনে করেই হাউমাউ করে কেদে উঠলেন বলেন আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের ওপর আন্দোলনকারীরা হামলা করে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে যুবলীগ কর্মী জুয়েলকে আমার ওপরও তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে তাতে আমার মুখে কয়েকটি শেলাই করতে হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন নিহত হামিদুল ইসলাম জুয়েলের পরিবারের সদস্যরা।
এসব মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, দাবি আদায়সহ যে কোনো আন্দোলনেই নিরপরাধ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা কাম্য নয়। আন্দোলনকারীদের দমাতে সকলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত। সকলকে আইনের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের মধ্যে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি রয়েছেন। তারা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম সংবাদকে বলেন, ‘আপনারা ধরেন এখানে দুইটা বিষয়। যেমন মনে করেন সাধারণ ছাত্র আন্দোলন ছিল এটা একসময়। পরে সন্ত্রাসীরা ঢুকে পড়ে এর মধ্যে। বিএনপি-জামায়াত মিক্সড হয়েছে। যারা জ¦ালাও-পোড়াও করে, পুলিশের ওপর হামলা, আগুন দেয়া- এসব কাজ যারা করে তারা যুক্ত হয়ে পড়ে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে।
‘ছাত্রদের সঙ্গে দেখুন পুলিশের কোনো ঝামেলা হয়নি। গাজীপুরের শিববাড়িতে একদিন ওরা প্রসেশন করলো, চৌরাস্তায় একদিন। পুলিশ ছিল। সেদিন কিন্তু কোনো সমস্যাই হয়নি। কোনাবাড়িতেও ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসেছিল। কোনো ঝামেলা হয়নি। কিন্তু ১৯ জুলাই থেকে এই আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির লোকজন যুক্ত হয়ে পড়লো। ২০ তারিখ থেকে ম্যাসিভ জ¦ালাও-পোড়াও, পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়ে গেল। তখন আমরা কী করবো?
‘পুলিশকে বিধি অনুযায়ী মব কন্ট্রোলের জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়।’
মাহবুব আলম বলেন, ‘মবের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- প্রতিরোধে ভবিষ্যতে হয়তো নন-লেথাল উইপন ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে প্রাণহানির ঘটনা আমরা এড়াতে পারবো।’
বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভ খাঁ গ্রামের জাকির। জাকির গত ২৬ জুলাই শুক্রবার ঢাকার উত্তরায়, আবদুল্লাহপুরে যানবাহনের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন এবং পরদিন শনিবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বাবা-মা, স্ত্রী, এক সন্তানের পরিবারে জাকিরই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। জাকিরকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি জানে না এখন তারা কী খাবে, কিভাবে চলবে?
জাকিরের মা মোমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘কোটার আন্দোলনে আমার ছেলে তো ছিল না। গার্মেন্টসে চাকরি করতো। গার্মেন্টসের মাল কেনার লাইগাই উত্তরা গেছিলো। হ্যারে মারলো ক্যান? কেডা মারলো? আমরা এহন খামু কি? বাঁচমু কেমনে?’
শুধু জাকির নয়, চলমান আন্দোলনে গাজীপুরের অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন গাজীপুর মহানগরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সহকারী হামিদুল ইসলাম জুয়েল (৩৫ )।
আরেকজন শেখ ফাহমিন জাফর। টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফাহমিন। তার পিতার নাম শেখ আবু জাফর। বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার তারটিয়া গ্রামে। ফাহমিন তার মায়ের সঙ্গে ঢাকার দক্ষিণ খান থানার গাওয়াইর মাদ্রাসা রোডে থাকতো। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে জিপিএ- ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। রাজধানীর উত্তরায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে সৃষ্ট সংঘর্ষে নিহত হয় ফাহমিন।
এছাড়া শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে আলম (২২), রায়হান (২০), হুমায়ুন (২৫), তন্ময় (১৮) ছাড়াও ১৩ বছরের একজন অজ্ঞাতনামা কিশোরের মৃত্যুর খবর জানা গেছে, যদিও গাজীপুর পুলিশ রেকর্ডে ৪ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয়েছে।
যুবলীগ নেতা হামিদুল ইসলাম জুয়েল ছিলেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সহকারী এবং গাজীপুর মহানগরের ৩৭নং ওয়ার্ডের চান্দুরা গ্রামের কৃষক বারেক মোল্লার (৮০) ছেলে। দুইবোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে জুয়েল ছিলেন দ্বিতীয়, ছিলেন অবিবাহিত। টঙ্গী কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা জুয়েল সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি ঠিকাধারীর কাজ করতেন। বৃদ্ধ বাবার মাত্র ৫-৭ কাঠা জমি। টিনশেড ঘরে থাকেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জুয়েল। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেলের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই ঘটনায় সেখানে উপস্থিত ৩৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর ওসমান গনী কাজল ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সংবাদকে বলেন, সেদিনের ঘটনা মনে করেই হাউমাউ করে কেদে উঠলেন বলেন আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের ওপর আন্দোলনকারীরা হামলা করে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে যুবলীগ কর্মী জুয়েলকে আমার ওপরও তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে তাতে আমার মুখে কয়েকটি শেলাই করতে হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন নিহত হামিদুল ইসলাম জুয়েলের পরিবারের সদস্যরা।
এসব মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, দাবি আদায়সহ যে কোনো আন্দোলনেই নিরপরাধ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা কাম্য নয়। আন্দোলনকারীদের দমাতে সকলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত। সকলকে আইনের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের মধ্যে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি রয়েছেন। তারা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম সংবাদকে বলেন, ‘আপনারা ধরেন এখানে দুইটা বিষয়। যেমন মনে করেন সাধারণ ছাত্র আন্দোলন ছিল এটা একসময়। পরে সন্ত্রাসীরা ঢুকে পড়ে এর মধ্যে। বিএনপি-জামায়াত মিক্সড হয়েছে। যারা জ¦ালাও-পোড়াও করে, পুলিশের ওপর হামলা, আগুন দেয়া- এসব কাজ যারা করে তারা যুক্ত হয়ে পড়ে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে।
‘ছাত্রদের সঙ্গে দেখুন পুলিশের কোনো ঝামেলা হয়নি। গাজীপুরের শিববাড়িতে একদিন ওরা প্রসেশন করলো, চৌরাস্তায় একদিন। পুলিশ ছিল। সেদিন কিন্তু কোনো সমস্যাই হয়নি। কোনাবাড়িতেও ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসেছিল। কোনো ঝামেলা হয়নি। কিন্তু ১৯ জুলাই থেকে এই আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির লোকজন যুক্ত হয়ে পড়লো। ২০ তারিখ থেকে ম্যাসিভ জ¦ালাও-পোড়াও, পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়ে গেল। তখন আমরা কী করবো?
‘পুলিশকে বিধি অনুযায়ী মব কন্ট্রোলের জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়।’
মাহবুব আলম বলেন, ‘মবের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- প্রতিরোধে ভবিষ্যতে হয়তো নন-লেথাল উইপন ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে প্রাণহানির ঘটনা আমরা এড়াতে পারবো।’