টানা কয়েক দিনের শ্রমিক আন্দোলনে অশান্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানার কার্যক্রম।
বিভিন্ন দাবিতে কয়েকদিনের মতো বুধবারও (৪ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এ কারণে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় ২৪৭ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আরও কিছু কারখানায় শ্রমিকদের দাবি নিয়ে অসন্তোষ চললেও তা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা টহল চলমান রয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর থেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও এলাকায় সেনা মোতায়েন রয়েছে। একই সঙ্গে শিল্পপুলিশও বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে থাকার পাশাপাশি টহল অব্যাহত রেখেছে। ফলে বুধবার পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।
বিজিএমইএর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. খালেদ মনসুর বুধবার বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে পোশাক কারখানায় শ্রমিক নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনের দাবিতে চাকরিবঞ্চিত বেকার যুবকদের গাজীপুর, ভোগড়া বাসট্যান্ড এলাকায় ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করতে দেখা গেছে। এতে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।’
সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে টানা কয়েক দিনের আন্দোলনের মুখে বুধবারও বন্ধ হয়েছে ৬০টির মতো পোশাক কারখানা। তবে সেখানে কোথাও কোনো বড় রকম বিশৃঙ্খলার সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে কারখানা ছুটির পরে কিছুটা বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা সড়কে এসে অবস্থান নেন। এতে আশুলিয়ায় দুই মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আরএকে সিরামিকে প্রতি বছর ইনক্রিমেন্টের টাকা ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ করছে কারখানার শ্রমিকরা। এদিন সকাল ৬টা শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিকের থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। সকাল ৭টায় তারা কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দাবি পূরণে আশ্বস্ত করলে ১১টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিক বিডি লিমিটেডের শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকে ১১টি দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে কারখানার শ্রমিকরা। ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক কর্মচারী নিয়োগ, প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করাসহ ১১টি দাবি জানানো হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, কোন বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা তাদের মূল্যায়ন করেন না, ভাল কোন প্রতিক্রিয়াও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। তারা দায়িত্বে আসার পর আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী শ্রমিক ও বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয় না। এছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মানসম্মত বেতন ও ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিতসহ ১১টি দাবি জানান হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একাধিকবার কোম্পানি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সমাধানে আসেননি।
কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজে ২০ দফা দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন করে আসছিল শ্রমিকরা। বুধবার সকালেও তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, ৫ তারিখে মধ্যে বেতন প্রদান, নারী শ্রমিকদের নৈশকালীন ডিউটি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেডের সামনে চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
এদিকে, শ্রমিক নিয়োগে নারী পুরুষের বৈষম্য রোধে গাজীপুর মহানগরের বাসন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, চাকরিতে পুরুষদের চাইতে নারী শ্রমিকদের নিয়োগে অগ্রাধিকার বেশি দেয়া হয়। আমরা এ ধরনের বৈষম্য চাই না।
অন্যদিকে, গাজীপুরের রাজন্দ্রেপুর এলাকায় ইউনি হেলথ্ ফার্মাসিউটিক্যালস্ নামের একটি ওষুধ উৎপানদকারী প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছে। এ সময় তারা বেতন বৈষম্যসহ দূর করাসহ কয়েকটি দাবি জানান।
গাজীপুর শিল্পপুলিশ-২ এর শ্রীপুর ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক জানান, বুধবার সকাল থেকেই কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছিল শ্রমিকরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। পরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর অংশে যান চলাচল পুরো দমেই স্বাভাবিক হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকাল থেকেই সাভারের আশুলিয়ার জিরাবো, ঘোষবাগ, সরকার মার্কেট, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে সাধারণ ছুটি দেয়া হয় পোশাক কারখানাগুলোতে।
সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশ বাড়িতে গিল্ডাস, ইপিক ও পার্ল গার্মেন্টেসের পোশাক শ্রমিকরা সড়কে এসে অবরোধ করে। এ সময় নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
শ্রমিকরা জানান, টানা কয়েক দিন বিভিন্ন পোশাক কারখানায় বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। এতে টানা কয়েক দিনের শ্রমিক বিক্ষোভে মালিক পক্ষ কিছু কিছু দাবি মঙ্গলবার মেনে নিয়েছিল। কিন্তু এখন মালিক পক্ষ বলছে, তাদের পক্ষে ওই সকল দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এতে বিভিন্ন কারখানার পোশাক শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার সামনে ও সড়কে বিক্ষোভ করে।
ইপিক গ্রুপের পোশাক শ্রমিক আবু সায়েদ বলেন, মালিক পক্ষ আমাদের কিছু দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ আজকে বলছে, আপনাদের দাবি আমরা মেনে নিতে পারবো না বলে সাব জানিয়ে দেন।
জানা যায়, সকালে হা-মীম গার্মেন্টের কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। পরে তাদের কারখানা হঠাৎ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে হা-মীমের শ্রমিকরা শারমিন গামের্ন্টের সামনে গেলে তাদের কারখানার শ্রমিকও বের হয়ে আসে। এরপরে জিবারো, ঘোষবাগ, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকার যতগুলো পোশাক কারখানা ছিল সেগুলো আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসলাইল হোসেন বলেন,সকালে আমাদের কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছিল। হঠাৎ কারখানার বাহিরে বহিরাগত কিছু লোক হট্টগোল করে। পরে কারখানা ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আশুলিয়া শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। পরে একটি বড় গামের্ন্টে ছুটি দিলে কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে। তখন অন্তত আরো ৬০ টি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে। তবে কোথাও কোনো বড় ধরণের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
এসময় পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমাদের এবং সেনাবাহিনীদের সামনেই শ্রমিকদের কিছু দাবি মেনে নিয়েছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে এখন কারখানার মালিকরা বলছেন, শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে পারবেন না। এতেই শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। তবে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়ানো হয়েছে বলে জানান শিল্পপুলিশের ওই কর্মকর্তা ।
বৃহস্পতিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
টানা কয়েক দিনের শ্রমিক আন্দোলনে অশান্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানার কার্যক্রম।
বিভিন্ন দাবিতে কয়েকদিনের মতো বুধবারও (৪ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এ কারণে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় ২৪৭ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আরও কিছু কারখানায় শ্রমিকদের দাবি নিয়ে অসন্তোষ চললেও তা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা টহল চলমান রয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর থেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও এলাকায় সেনা মোতায়েন রয়েছে। একই সঙ্গে শিল্পপুলিশও বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে থাকার পাশাপাশি টহল অব্যাহত রেখেছে। ফলে বুধবার পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।
বিজিএমইএর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. খালেদ মনসুর বুধবার বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে পোশাক কারখানায় শ্রমিক নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনের দাবিতে চাকরিবঞ্চিত বেকার যুবকদের গাজীপুর, ভোগড়া বাসট্যান্ড এলাকায় ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করতে দেখা গেছে। এতে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।’
সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে টানা কয়েক দিনের আন্দোলনের মুখে বুধবারও বন্ধ হয়েছে ৬০টির মতো পোশাক কারখানা। তবে সেখানে কোথাও কোনো বড় রকম বিশৃঙ্খলার সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে কারখানা ছুটির পরে কিছুটা বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা সড়কে এসে অবস্থান নেন। এতে আশুলিয়ায় দুই মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আরএকে সিরামিকে প্রতি বছর ইনক্রিমেন্টের টাকা ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ করছে কারখানার শ্রমিকরা। এদিন সকাল ৬টা শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিকের থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। সকাল ৭টায় তারা কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দাবি পূরণে আশ্বস্ত করলে ১১টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিক বিডি লিমিটেডের শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকে ১১টি দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে কারখানার শ্রমিকরা। ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক কর্মচারী নিয়োগ, প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করাসহ ১১টি দাবি জানানো হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, কোন বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা তাদের মূল্যায়ন করেন না, ভাল কোন প্রতিক্রিয়াও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। তারা দায়িত্বে আসার পর আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী শ্রমিক ও বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয় না। এছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মানসম্মত বেতন ও ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিতসহ ১১টি দাবি জানান হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একাধিকবার কোম্পানি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সমাধানে আসেননি।
কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজে ২০ দফা দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন করে আসছিল শ্রমিকরা। বুধবার সকালেও তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, ৫ তারিখে মধ্যে বেতন প্রদান, নারী শ্রমিকদের নৈশকালীন ডিউটি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেডের সামনে চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
এদিকে, শ্রমিক নিয়োগে নারী পুরুষের বৈষম্য রোধে গাজীপুর মহানগরের বাসন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, চাকরিতে পুরুষদের চাইতে নারী শ্রমিকদের নিয়োগে অগ্রাধিকার বেশি দেয়া হয়। আমরা এ ধরনের বৈষম্য চাই না।
অন্যদিকে, গাজীপুরের রাজন্দ্রেপুর এলাকায় ইউনি হেলথ্ ফার্মাসিউটিক্যালস্ নামের একটি ওষুধ উৎপানদকারী প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছে। এ সময় তারা বেতন বৈষম্যসহ দূর করাসহ কয়েকটি দাবি জানান।
গাজীপুর শিল্পপুলিশ-২ এর শ্রীপুর ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক জানান, বুধবার সকাল থেকেই কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছিল শ্রমিকরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। পরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর অংশে যান চলাচল পুরো দমেই স্বাভাবিক হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকাল থেকেই সাভারের আশুলিয়ার জিরাবো, ঘোষবাগ, সরকার মার্কেট, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে সাধারণ ছুটি দেয়া হয় পোশাক কারখানাগুলোতে।
সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশ বাড়িতে গিল্ডাস, ইপিক ও পার্ল গার্মেন্টেসের পোশাক শ্রমিকরা সড়কে এসে অবরোধ করে। এ সময় নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
শ্রমিকরা জানান, টানা কয়েক দিন বিভিন্ন পোশাক কারখানায় বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। এতে টানা কয়েক দিনের শ্রমিক বিক্ষোভে মালিক পক্ষ কিছু কিছু দাবি মঙ্গলবার মেনে নিয়েছিল। কিন্তু এখন মালিক পক্ষ বলছে, তাদের পক্ষে ওই সকল দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এতে বিভিন্ন কারখানার পোশাক শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার সামনে ও সড়কে বিক্ষোভ করে।
ইপিক গ্রুপের পোশাক শ্রমিক আবু সায়েদ বলেন, মালিক পক্ষ আমাদের কিছু দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ আজকে বলছে, আপনাদের দাবি আমরা মেনে নিতে পারবো না বলে সাব জানিয়ে দেন।
জানা যায়, সকালে হা-মীম গার্মেন্টের কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। পরে তাদের কারখানা হঠাৎ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে হা-মীমের শ্রমিকরা শারমিন গামের্ন্টের সামনে গেলে তাদের কারখানার শ্রমিকও বের হয়ে আসে। এরপরে জিবারো, ঘোষবাগ, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকার যতগুলো পোশাক কারখানা ছিল সেগুলো আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসলাইল হোসেন বলেন,সকালে আমাদের কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছিল। হঠাৎ কারখানার বাহিরে বহিরাগত কিছু লোক হট্টগোল করে। পরে কারখানা ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আশুলিয়া শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। পরে একটি বড় গামের্ন্টে ছুটি দিলে কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে। তখন অন্তত আরো ৬০ টি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে। তবে কোথাও কোনো বড় ধরণের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
এসময় পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমাদের এবং সেনাবাহিনীদের সামনেই শ্রমিকদের কিছু দাবি মেনে নিয়েছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে এখন কারখানার মালিকরা বলছেন, শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে পারবেন না। এতেই শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। তবে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়ানো হয়েছে বলে জানান শিল্পপুলিশের ওই কর্মকর্তা ।