নতুন করে আবার পুলিশ সংস্কার আইনকে আধুনিক করার জন্য কাজ শুরু করছে। এনিয়ে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা গত এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছেন। পুলিশ সংস্কার আইন আরও আধুনিকরণ করে খসড়া চূড়ান্ত করার টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, ২০০৭ সালে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকরণ নিয়ে একটি অর্ডিন্যান্স তৈরি করছে। পুলিশ অর্ডিন্যান্স-২০০৭ নামে তৈরি করা ওই অর্ডিন্যান্স কয়েক দফা সংযোজন ও মতামত নেয়ার পরও রহস্য জনক কারনে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। ওই অর্ডিন্যান্স বাস্তবায়ন হলে পুলিশকে জবাব দিহিতার আইনে আনা যেত। প্রতি কাজের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হতো।
ওই অর্ডিন্যান্সে প্রধান উপদেষ্টার অফিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত টিম ২০০৭ সালের (সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে) মে মাসের ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত একটি নতুন পুলিশ আইনের খসড়া প্রণয়ণ প্রক্রিয়া শুরুর উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে মিলিত হয়েছিল। ওই ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের আলোচনা ও পর্যবেক্ষণের কিছু অংশ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। জনগণের জীবনের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য দরকার একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত পরিবেশ, যা সব মানুষের জন্য একটি মৌলিক মানবাধিকার।
জানা গেছে, পুলিশ বাহিনী যুগ যুগ ধরে পুরাতন আইনে চলছে, যা আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজের উপযুক্ত নয়। উপনিবেশিক আমলে পুলিশ ছিল প্রভুদের সেবাদাস। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত কয়েক যুগ ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতাবানরা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সেবায় নিয়োজিত করছে। চালিয়েছে প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন।
এর ফলে দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, পুলিশ তখন সেই সরকারের পেটোয়া বাহিনী হয়ে অত্যাচার ও নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। হত্যা করে শেষ করেনি। তারা মানুষের লাশ আগুনে পুড়ে ফেলছে। পুলিশের দাঙ্গা দমন গাড়ি থেকে লাশ প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলছে।
গত জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারাদেশে পুলিশ মরণাস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র ও শিশুসহ নানা পেশার মানুষকে হত্যা করেছে। হত্যার পর লাশের হিসাব ও তথ্য গোপন করতে ময়নাতদন্তের পর মর্গ থেকে নথিসহ অন্যান্য আলামত ও গায়েব করেছে।
বাংলাদেশ পুলিশের জন্য আইনগত অবকাঠামো অপ্রতুল আছে, যা পুলিশের নানা উদ্দেশ্য অর্জনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। বাংলাদেশের জনগণের একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত পরিবেশের অভাব আছে। এটার পরিবর্তন দরকার।
ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে অবৈধ হস্তক্ষেপের কারনে জনগণের সেবা করা হতে বিচ্যুত হচ্ছে। অবৈধ ও অনাকাক্সিক্ষত প্রভাবমুক্ত হয়ে ন্যায়সঙ্গতভাবে এবং আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের কার্যবলি সম্পাদন করতে পুলিশি ব্যবস্থার পরিচালনাগত বিষয়াবলির ওপর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।
অধিক দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে দরকার সামঞ্জস্যপূর্ণ দায়বদ্ধতা। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ (সরকার, সংসদ ও আদালত) এবং সমাজের সাধারণ জনগণের প্রতি থাকিবে পুলিশের এই দায়বদ্ধতা।
জনগণকে সেবাদানকারী সংগঠন হিসেবে পুলিশকে কেবল শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিকারমূলক কর্মকা-ে সীমিত থাকিলেই চলবে না। বরং অপরাধ প্রতিরোধমূলক কর্মকা-সহ অপরাধের শিকার লোকদের সর্বপ্রকার সহায়তা দেয়ার ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
খসড়া প্রণয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল : বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন পুলিশ আইন দরকার। আর পুলিশ তাদের কাজের জন্য সাধারণ জনগণসহ রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। পুলিশের কাজ হলো বাংলাদেশের জনগণের সেবা করা। ক্ষমতাসীনদের নয়। আর আইন প্রয়োগের নামে নানা বেআইনি উপায়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে।
এভাবে ২০০৭ সালে পুলিশ অর্ডিন্যান্সটি গত ১৭ বছর ধরে হিমাগারে আছে। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার এই আইনটি কার্যকর করার কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
এখনও ১৬৩ বছর আগের (১৮৬১ সালের) ব্রিটিশ আমলের পেটোয়া বাহিনী আইনে পুলিশ চলছে। এর ফলে তারা সুযোগ বুঝে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য এবং রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকতে পুলিশকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে।
হেফাজতের সমাবেশে হামলা থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ, হত্যা করেছে। তাদের হাত থেকে বাসাবাড়িতে অবস্থানকারী ৩ বছরের শিশু থেকে ১১ (এগারো) বছরের শিশুও গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখনই পুলিশি আইন সংস্কার করা জরুরি। না হয় আবার রাজনৈতিক বা দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসলে পুলিশকে টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে জানা গেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। শিগগিরই তারা পুলিশ সংস্কার আইনের খসড়া চূড়ান্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নতুন করে আবার পুলিশ সংস্কার আইনকে আধুনিক করার জন্য কাজ শুরু করছে। এনিয়ে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা গত এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছেন। পুলিশ সংস্কার আইন আরও আধুনিকরণ করে খসড়া চূড়ান্ত করার টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, ২০০৭ সালে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকরণ নিয়ে একটি অর্ডিন্যান্স তৈরি করছে। পুলিশ অর্ডিন্যান্স-২০০৭ নামে তৈরি করা ওই অর্ডিন্যান্স কয়েক দফা সংযোজন ও মতামত নেয়ার পরও রহস্য জনক কারনে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। ওই অর্ডিন্যান্স বাস্তবায়ন হলে পুলিশকে জবাব দিহিতার আইনে আনা যেত। প্রতি কাজের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হতো।
ওই অর্ডিন্যান্সে প্রধান উপদেষ্টার অফিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত টিম ২০০৭ সালের (সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে) মে মাসের ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত একটি নতুন পুলিশ আইনের খসড়া প্রণয়ণ প্রক্রিয়া শুরুর উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে মিলিত হয়েছিল। ওই ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের আলোচনা ও পর্যবেক্ষণের কিছু অংশ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। জনগণের জীবনের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য দরকার একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত পরিবেশ, যা সব মানুষের জন্য একটি মৌলিক মানবাধিকার।
জানা গেছে, পুলিশ বাহিনী যুগ যুগ ধরে পুরাতন আইনে চলছে, যা আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজের উপযুক্ত নয়। উপনিবেশিক আমলে পুলিশ ছিল প্রভুদের সেবাদাস। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত কয়েক যুগ ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতাবানরা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সেবায় নিয়োজিত করছে। চালিয়েছে প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন।
এর ফলে দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, পুলিশ তখন সেই সরকারের পেটোয়া বাহিনী হয়ে অত্যাচার ও নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। হত্যা করে শেষ করেনি। তারা মানুষের লাশ আগুনে পুড়ে ফেলছে। পুলিশের দাঙ্গা দমন গাড়ি থেকে লাশ প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলছে।
গত জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারাদেশে পুলিশ মরণাস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র ও শিশুসহ নানা পেশার মানুষকে হত্যা করেছে। হত্যার পর লাশের হিসাব ও তথ্য গোপন করতে ময়নাতদন্তের পর মর্গ থেকে নথিসহ অন্যান্য আলামত ও গায়েব করেছে।
বাংলাদেশ পুলিশের জন্য আইনগত অবকাঠামো অপ্রতুল আছে, যা পুলিশের নানা উদ্দেশ্য অর্জনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। বাংলাদেশের জনগণের একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত পরিবেশের অভাব আছে। এটার পরিবর্তন দরকার।
ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে অবৈধ হস্তক্ষেপের কারনে জনগণের সেবা করা হতে বিচ্যুত হচ্ছে। অবৈধ ও অনাকাক্সিক্ষত প্রভাবমুক্ত হয়ে ন্যায়সঙ্গতভাবে এবং আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের কার্যবলি সম্পাদন করতে পুলিশি ব্যবস্থার পরিচালনাগত বিষয়াবলির ওপর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।
অধিক দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে দরকার সামঞ্জস্যপূর্ণ দায়বদ্ধতা। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ (সরকার, সংসদ ও আদালত) এবং সমাজের সাধারণ জনগণের প্রতি থাকিবে পুলিশের এই দায়বদ্ধতা।
জনগণকে সেবাদানকারী সংগঠন হিসেবে পুলিশকে কেবল শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিকারমূলক কর্মকা-ে সীমিত থাকিলেই চলবে না। বরং অপরাধ প্রতিরোধমূলক কর্মকা-সহ অপরাধের শিকার লোকদের সর্বপ্রকার সহায়তা দেয়ার ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
খসড়া প্রণয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল : বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন পুলিশ আইন দরকার। আর পুলিশ তাদের কাজের জন্য সাধারণ জনগণসহ রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। পুলিশের কাজ হলো বাংলাদেশের জনগণের সেবা করা। ক্ষমতাসীনদের নয়। আর আইন প্রয়োগের নামে নানা বেআইনি উপায়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে।
এভাবে ২০০৭ সালে পুলিশ অর্ডিন্যান্সটি গত ১৭ বছর ধরে হিমাগারে আছে। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার এই আইনটি কার্যকর করার কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
এখনও ১৬৩ বছর আগের (১৮৬১ সালের) ব্রিটিশ আমলের পেটোয়া বাহিনী আইনে পুলিশ চলছে। এর ফলে তারা সুযোগ বুঝে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য এবং রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকতে পুলিশকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে।
হেফাজতের সমাবেশে হামলা থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ, হত্যা করেছে। তাদের হাত থেকে বাসাবাড়িতে অবস্থানকারী ৩ বছরের শিশু থেকে ১১ (এগারো) বছরের শিশুও গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখনই পুলিশি আইন সংস্কার করা জরুরি। না হয় আবার রাজনৈতিক বা দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসলে পুলিশকে টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে জানা গেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। শিগগিরই তারা পুলিশ সংস্কার আইনের খসড়া চূড়ান্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।