alt

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকা-ের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তিনি একই সঙ্গে হাসিনা সরকারের পতনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগের এক মাস পূর্তি হয়েছে বৃহস্পতিবার ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনও নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবের সময়, তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছ। দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চির বিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছো। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছ। সারাদেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছ।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদেরকে ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মাত্র এক মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকা-ের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এদেশে এসেছেন এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জুলাই এবং আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল তৈরি করতে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা খুনিদের প্রত্যর্পণ এবং স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি।’

আন্দোলনের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইঊনূস বলেন, ‘হাসিনার দুর্বৃত্তরা তাদের চোখ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ায় অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে। আমরা শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। মূল তালিকা হয়ে গেছে। এখন শুধু দূরদূরান্তে যাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলিতে পূর্ণাঙ্গতা দেয়া হচ্ছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলায় নির্বিচার গুলিতে প্রায় প্রায় পৌনে ৮শ’; মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময় আন্দোলনের সময় এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময় ১ জুলাই থেতে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৬ দিনে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং সে সময়ে কতজন মারা গেছেন, তা নিরুপনের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আহত শত শত মানুষ যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন এখন তৈরির শেষ পর্যায়ে আছে। যাদের শাহাদাতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে আমরা তাদের কখনোই ভুলবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা বলপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছি। ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতি’ এর সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। আলাদাভাবে, আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করছি। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সাথে অপেক্ষা করছেন, আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী। আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা বলপূর্বক গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্পর্কে জানতে পারব।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত মাসের শেষের দিকে জাতির উদ্দেশে দেয়া আমার ভাষণে আমাদের সরকার এ পর্যন্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গ্রহণ করেছে আমরা তার একটা প্রতিবেদন তুলে ধরেছি। আমরা রাজনৈতিক দল, সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজের নেতা এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে ক্রমাগতভাবে বৈঠক করে যাচ্ছি। তারা আমাদের সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। আমরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেয়ে অভিভূত হয়েছি। আমাদের সাহসী এবং দেশপ্রেমিক প্রবাসীরাও জাতি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। আমি তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আজ এই স্মৃতিময় বিষাদ দিনে আমি শহীদদের প্রতিটি পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের প্রতি জানাই অসীম কৃতজ্ঞতা। আমি সব শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানাবো, কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের সঙ্গে দেখা করব। আমি তাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা কখনই শহীদদের স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুঃশাসন ও স্বৈরাচার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত পূরণ করা। এজন্য আমাদের প্রয়োজন একতা ও সমন্বয়।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শহীদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের আত্মত্যাগকে জাতি হিসেবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন সে সুযোগকে আমরা কখনো হাতছাড়া হতে দেবো না। আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বই।’

ছবি

ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক: একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯

ছবি

রান্নার গ্যাসের দাম সরকার নির্ধারণ করে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবি

ছবি

ছিনতাই-চাঁদাবাজি প্রতিরোধে শুরু হচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান: আইজিপি

ছবি

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছেন ড. ইউনূস

ছবি

কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারবে না: জি এম কাদের

ছবি

মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ

ছবি

অভিনেতা জামাল উদ্দিন মারা গেছেন

ছবি

আদানির বিদ্যুৎ: দোটানার মধ্যে অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের, রয়টার্সের প্রতিবেদন

ছবি

বৈশিক ক্ষুধা সূচকে ৩ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ

ছবি

সাত অঞ্চলেরে ওপর দিয়ে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস

ছবি

সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানো গেলে ৪০ শতাংশ খরচ কম পড়বে : ধর্ম উপদেষ্টা

ছবি

দুর্গোৎসবে আজ মহানবমী

ধর্মীয় সংঘাতের রাজনৈতিক ফায়দা নিতে দেব না : নাহিদ

ছবি

হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

ছবি

তাঁতিবাজারের পূজা মণ্ডপে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, ছুরিকাঘাতে আহত ৪

ছবি

ডিমের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ছবি

দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা হত্যায় এক ‘বিএনপি নেতার দায় দেখছে’ পুলিশ, ওসি প্রত্যাহার

ছবি

পূজা উদযাপন কমিটির নেতার অনুরোধেই মণ্ডপে যান শিল্পীরা : পুলিশ

ছবি

বাংলাদেশি জেলে হত্যা: মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের তীব্র প্রতিবাদ

ছবি

মায়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, গুলিবিদ্ধ ২

ছবি

পুরনো মামলাগুলোর তদন্ত পুণরায় শুরু হয়েছে: আইজিপি

ছবি

প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ ঘোষণার উদ্যোগ

ছবি

পূজায় দশমী পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে এবছর ১৯৯ জনের মৃত্যু

ছবি

লিবিয়ায় ডিটেনশন সেন্টারে আটকে থাকা ১৫০ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

ছবি

‘পূজা হবে শান্তিপূর্ণ, মাঝে মধ্যে যা ঘটে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা’

ছবি

‘রিসেট বাটন’ নিয়ে বক্তব্য স্পষ্ট করল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ছবি

দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী আজ

ছবি

ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের বিচারপতির মর্যাদা: বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ

বড় সংখ্যায় পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু

ছবি

সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘অনুমোদনে অনিয়ম’, খতিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ডিসি নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে তিন সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন

লেবানন থেকে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের নথিভুক্তির আহ্বান

ছবি

বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত

ছবি

শিক্ষা প্রকৌশলের গাড়ি নিয়ে বিলাসিতা, ৩৮ গাড়ির ২০টিই বেহাত

সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ

tab

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকা-ের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তিনি একই সঙ্গে হাসিনা সরকারের পতনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগের এক মাস পূর্তি হয়েছে বৃহস্পতিবার ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনও নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবের সময়, তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছ। দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চির বিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছো। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছ। সারাদেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছ।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদেরকে ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মাত্র এক মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকা-ের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এদেশে এসেছেন এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জুলাই এবং আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল তৈরি করতে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা খুনিদের প্রত্যর্পণ এবং স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি।’

আন্দোলনের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইঊনূস বলেন, ‘হাসিনার দুর্বৃত্তরা তাদের চোখ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ায় অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে। আমরা শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। মূল তালিকা হয়ে গেছে। এখন শুধু দূরদূরান্তে যাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলিতে পূর্ণাঙ্গতা দেয়া হচ্ছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলায় নির্বিচার গুলিতে প্রায় প্রায় পৌনে ৮শ’; মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময় আন্দোলনের সময় এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময় ১ জুলাই থেতে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৬ দিনে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং সে সময়ে কতজন মারা গেছেন, তা নিরুপনের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আহত শত শত মানুষ যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন এখন তৈরির শেষ পর্যায়ে আছে। যাদের শাহাদাতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে আমরা তাদের কখনোই ভুলবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা বলপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছি। ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতি’ এর সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। আলাদাভাবে, আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করছি। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সাথে অপেক্ষা করছেন, আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী। আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা বলপূর্বক গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্পর্কে জানতে পারব।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত মাসের শেষের দিকে জাতির উদ্দেশে দেয়া আমার ভাষণে আমাদের সরকার এ পর্যন্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গ্রহণ করেছে আমরা তার একটা প্রতিবেদন তুলে ধরেছি। আমরা রাজনৈতিক দল, সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজের নেতা এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে ক্রমাগতভাবে বৈঠক করে যাচ্ছি। তারা আমাদের সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। আমরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেয়ে অভিভূত হয়েছি। আমাদের সাহসী এবং দেশপ্রেমিক প্রবাসীরাও জাতি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। আমি তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আজ এই স্মৃতিময় বিষাদ দিনে আমি শহীদদের প্রতিটি পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের প্রতি জানাই অসীম কৃতজ্ঞতা। আমি সব শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানাবো, কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের সঙ্গে দেখা করব। আমি তাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা কখনই শহীদদের স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুঃশাসন ও স্বৈরাচার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত পূরণ করা। এজন্য আমাদের প্রয়োজন একতা ও সমন্বয়।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শহীদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের আত্মত্যাগকে জাতি হিসেবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন সে সুযোগকে আমরা কখনো হাতছাড়া হতে দেবো না। আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বই।’

back to top