alt

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধ সংবিধান ও জাতীয় সংগীতকে কটাক্ষ : ৪৮ নাগরিকের নিন্দা ও প্রতিবাদ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের ৪৮ জন নাগরিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সংগীতসহ জনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতিকে কটাক্ষ করার প্রচেষ্টাকে অপতৎপরতা এবং ঔদ্ধত্য উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এই ৪৮ জন নাগরিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানসহ জনরায়ে প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো, এমনকি জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখানো শুরু করেছে।’

তারা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির জাতিকে অতীতের সবকিছু ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অনুমান করা যায়, অতীত বলতে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সেই সময়ে তার দলের ভূমিকা ইত্যাদির কথাই বুঝিয়েছেন। সেটা আরও পরিষ্কার হলো গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে।’

বিবৃতিতে যারা সই করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সুলতানা কামাল, খুশি কবীর, আনু মোহাম্মদ, রাশেদা কে চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপাচার্য পারভীন হাসান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ড. শহিদুল আলম, দীপায়ন খীসা, অধ্যাপক ড. মো. হারন-অর-রশিদ, শামসুল হুদা, রেহনুমা আহমেদ, জোবায়দা নাসরিন, ড. শাহনাজ হুদা, মুক্তাশ্রী চাকমা প্রমুখ।

বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, ‘আমরা তার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যেখানে-সেখানে যা খুশি তা-ই বলা যায়। যে উদ্দেশ্যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন, তার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন।

তারা বলেন, ‘সবার মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে তরুণ, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক-সেনা-পুলিশ সদস্যসহ সব ধর্ম-জাতি-বর্ণ ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ ৯ মাস মরণপণ লড়াই করে চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। এর জন্য বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর জামায়াতসহ বিভিন্ন দলীয় ঘাতক বাহিনীর অবর্ণনীয় বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে নারী-পুরুষ, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী-লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ সবাইকে। সেই জ্বলন্ত ইতিহাস এই দেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মনে রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও মনে রাখবে। এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার কথা বলার অধিকার কিংবা দুঃসাহস কারোরই থাকার কথা নয়’

তারা বলেন, ‘আর জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েই মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ লড়াইয়ের শপথ নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় সংগীত ছিল প্রেরণার সার্বক্ষণিক উৎস। তাই জাতীয় সংগীতটি কার্যত যুদ্ধের মধ্য দিয়েই লাখো শহীদের রক্তে নতুনভাবে আমাদের প্রাণের সংগীত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা। একে কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ দলমত-নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না’

নাগরিকরা বলেন, ‘সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর আটক হয়ে ‘আয়নাঘর’-এ আট বছর বন্দী ছিলেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তিসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের দাবিতে আমরা বরাবরই সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি। আমরা চাই সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তাসহ যারা ‘আয়নাঘর’-এ আটক ছিলেন, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা সবাই যেন ন্যায়বিচার পান। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ বিচার নিশ্চিত করবে। কিন্তু তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত কিংবা মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সব মহলকে আমরা এ কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান বা বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল জুলাই মাসে, ৫ আগস্ট তার বিজয়কে আমরা দ্বিতীয় বিজয় বলে অভিহিত করেছি। কিন্তু কোনো মহল যদি এই বিজয়কে একাত্তরের বিজয় দিবস কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালায়, তাকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও তার গৌরবময় বিজয়ের দুশমন বলেই চিহ্নিত করতে হবে। তাই সঙ্গত কারণেই আমরা এ গোষ্ঠীটির অপতৎপরতার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’

তারা সবাইকে সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলেন, শত শত শিক্ষার্থী, শিশু, কিশোরী-কিশোর ও জনতার প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্রের যে বিজয় অর্জিত হলো, তাকে সংকীর্ণ দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো সাম্প্রদায়িক অথবা অন্য গোষ্ঠী যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ছবি

গরম ও সেচে বিদ্যুৎ সঙ্কটের শঙ্কা, দ্রুত বকেয়া পরিশোধের তাগিদ

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

নির্বাচনের সময়সীমা ঠিক করবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো: জাতিসংঘের দূত

ছবি

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্তে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার

ছবি

অবৈধ বিদেশিদের বৈধ হওয়ার সময় মনে করিয়ে দিল সরকার

ছবি

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: পদত্যাগের আহ্বান এবং তদন্তের দাবি

ছবি

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বাবর খালাস, মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই

হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

ছবি

মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার, চলবে শাটডাউন

পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ায় প্রতিবাদ

ছবি

বাংলাদেশ-মেক্সিকো পণ্যবাহী কার্গো সেবা চালু করতে চাই: রাষ্ট্রদূত ফজল আনসারী

ছবি

জাকসু নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাবি উপাচার্যের মতবিনিময়, ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল

এইচএমপি ভাইরাস সংক্রমক রোগী শনাক্ত এই মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় ঃ আতংক ও উদ্দেগের কারন নেই-ডাঃ মোস্তাক

ছবি

শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনের পরামর্শ চেয়েছেন উপাচার্য

ছবি

সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তরের আশ্বাসে অনশন প্রত্যাহার, বুধবার পর্যন্ত শাটডাউন

ছবি

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভ্যাট বৃদ্ধি ও আমদানির উদ্যোগ: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা, দিল্লিতে তলব বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে

ছবি

তিন দফা: পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের সামনে জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান

ছবি

পিএসসির ছয় নতুন সদস্যের নিয়োগ বাতিল

ছবি

সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে জবি শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

ছবি

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম: শেখ হাসিনা ও পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

তাপমাত্রা আরও বাড়ল, কমতে পারে বুধবার থেকে

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না: হাইকোর্ট

ছবি

১ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দেড়টায় সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা

ছবি

বায়ুদূষণের শীর্ষে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটার, ঢাকা দ্বিতীয়

কমিশনের সামগ্রিক মনোযোগ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে : ইসি

ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের ওপর খুব প্রভাব পড়বে না : প্রেস সচিব

টিউলিপের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধান প্রয়োজন: সানডে টাইমসকে ড. ইউনূস

গণঅভ্যুত্থানের পর ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক ‘অবাঞ্ছিত’

ছবি

অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় শুল্ক ও কর বৃদ্ধি

ছবি

দুর্নীতি ও অর্থপাচার অভিযোগে সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান

ছাদ বাগান বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি কার্যকর সমাধান : পরিবেশ উপদেষ্টা

গুলি চালানোর ঘটনায় কনস্টেবল কারাগারে

ছবি

সীমান্তে অপরাধ দমনে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা: প্রণয় ভার্মা

ছবি

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত: মণি শঙ্কর আইয়ার

tab

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধ সংবিধান ও জাতীয় সংগীতকে কটাক্ষ : ৪৮ নাগরিকের নিন্দা ও প্রতিবাদ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের ৪৮ জন নাগরিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সংগীতসহ জনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতিকে কটাক্ষ করার প্রচেষ্টাকে অপতৎপরতা এবং ঔদ্ধত্য উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এই ৪৮ জন নাগরিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানসহ জনরায়ে প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো, এমনকি জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখানো শুরু করেছে।’

তারা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির জাতিকে অতীতের সবকিছু ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অনুমান করা যায়, অতীত বলতে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সেই সময়ে তার দলের ভূমিকা ইত্যাদির কথাই বুঝিয়েছেন। সেটা আরও পরিষ্কার হলো গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে।’

বিবৃতিতে যারা সই করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সুলতানা কামাল, খুশি কবীর, আনু মোহাম্মদ, রাশেদা কে চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপাচার্য পারভীন হাসান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ড. শহিদুল আলম, দীপায়ন খীসা, অধ্যাপক ড. মো. হারন-অর-রশিদ, শামসুল হুদা, রেহনুমা আহমেদ, জোবায়দা নাসরিন, ড. শাহনাজ হুদা, মুক্তাশ্রী চাকমা প্রমুখ।

বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, ‘আমরা তার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যেখানে-সেখানে যা খুশি তা-ই বলা যায়। যে উদ্দেশ্যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন, তার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন।

তারা বলেন, ‘সবার মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে তরুণ, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক-সেনা-পুলিশ সদস্যসহ সব ধর্ম-জাতি-বর্ণ ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ ৯ মাস মরণপণ লড়াই করে চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। এর জন্য বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর জামায়াতসহ বিভিন্ন দলীয় ঘাতক বাহিনীর অবর্ণনীয় বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে নারী-পুরুষ, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী-লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ সবাইকে। সেই জ্বলন্ত ইতিহাস এই দেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মনে রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও মনে রাখবে। এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার কথা বলার অধিকার কিংবা দুঃসাহস কারোরই থাকার কথা নয়’

তারা বলেন, ‘আর জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েই মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ লড়াইয়ের শপথ নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় সংগীত ছিল প্রেরণার সার্বক্ষণিক উৎস। তাই জাতীয় সংগীতটি কার্যত যুদ্ধের মধ্য দিয়েই লাখো শহীদের রক্তে নতুনভাবে আমাদের প্রাণের সংগীত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা। একে কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ দলমত-নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না’

নাগরিকরা বলেন, ‘সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর আটক হয়ে ‘আয়নাঘর’-এ আট বছর বন্দী ছিলেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তিসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের দাবিতে আমরা বরাবরই সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি। আমরা চাই সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তাসহ যারা ‘আয়নাঘর’-এ আটক ছিলেন, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা সবাই যেন ন্যায়বিচার পান। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ বিচার নিশ্চিত করবে। কিন্তু তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত কিংবা মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সব মহলকে আমরা এ কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান বা বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল জুলাই মাসে, ৫ আগস্ট তার বিজয়কে আমরা দ্বিতীয় বিজয় বলে অভিহিত করেছি। কিন্তু কোনো মহল যদি এই বিজয়কে একাত্তরের বিজয় দিবস কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালায়, তাকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও তার গৌরবময় বিজয়ের দুশমন বলেই চিহ্নিত করতে হবে। তাই সঙ্গত কারণেই আমরা এ গোষ্ঠীটির অপতৎপরতার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’

তারা সবাইকে সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলেন, শত শত শিক্ষার্থী, শিশু, কিশোরী-কিশোর ও জনতার প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্রের যে বিজয় অর্জিত হলো, তাকে সংকীর্ণ দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো সাম্প্রদায়িক অথবা অন্য গোষ্ঠী যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

back to top