alt

জাতীয়

রাখাইনে তীব্র সংঘাত

আবারও টেকনাফে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী সংগঠনের লড়াই তীব্র হচ্ছে। এ ঘটনার জেরে প্রাণ বাঁচাতে কৌশলে কক্সবাজারের টেকনাফে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গারা।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সারাদিন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে আতঙ্কিত ছিলেন টেকনাফের বাসিন্দারাও।

সূত্রে জানা গেছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির ও আরও একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনের সংঘাত চললেও সেটি এখন আরও তীব্র হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে মংডুর বিভিন্ন এলাকা থেকে থেমে থেমে মর্টারশেল, গ্রেনেড-বোমা বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে মায়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়। রাখাইনে চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও রোহিঙ্গাদের অনেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা। সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টায় রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। ছয় মাস ধরে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। এখন সংঘাত সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে।

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর আরাফা বেগম বলেন, মায়ানমারের রাখাইনের ওপারে মর্টারশেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণে এপারের ঘরবাড়ি কাঁপছে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে মনে হয় বসতঘরের চালার ওপর বোমা এসে পড়ছে। রাতে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরইমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। বাংলাদেশে ঢোকার জন্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে বলেও খবর পেয়েছি।

রাখাইনের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে (পশ্চিমে) চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী পেরোলেই বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা।

টেকনাফের জনপ্রতিনিধিরা জানান, রাতের অন্ধকারে মংডু টাউনশিপের সুদাপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া ও নুরুল্লাপাড়া গ্রাম থেকে রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছেন জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল দিয়ে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতেই কেবল বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন চার শতাধিক রোহিঙ্গা। মংডুর উত্তরের প্যারাংপুরু ও দক্ষিণের ফাদংচা এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছেন। রাখাইনের চলমান সংঘাতে সম্প্রতি তারা ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন।

দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা ঢুকছেন জানিয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজির আহমদ বলেন, গত কয়েক দিনে কেবল কেরনতলি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিনি শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছেন। বিজিবি এসব রোহিঙ্গাকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

শুক্রবার রাতে নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের কেরনতলির এক বাসিন্দার বাড়িতে আশ্রয় নেন ১৫ শিশু ও ৯ নারীসহ চার পরিবারের ৩০ জন রোহিঙ্গা। তাদের বাড়ি মংডু টাউনশিপের পাশের গ্রাম সুদাপাড়ায়।

তাদের মাঝে দুজন জাহেদা বেগম (৩৫) ও নুর জাহান (৪০) বলেন, সাত-আট দিন ধরে মংডুতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষ শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা, মর্টারশেলের পাশাপাশি ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধবিমান থেকেও বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তাতে অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছে।

তারা বলেন, যুদ্ধের মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বসতি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছেন। তবে নৌকার অভাবে বাংলাদেশে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে।

দলের আরেক সদস্য সাব্বির আহমদ বলেন, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে ঢুকতে তাদের (রোহিঙ্গাদের) কাছ থেকে মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন দালালরা।

টেকনাফ বাস স্টেশনের করিম উল্লাহ নামে এক শ্রমিক বলেন, টেকনাফ বাস স্টেশন এলাকায় প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে মায়ানমার থেকে পার হয়ে নতুন রোহিঙ্গারা গাড়িতে করে ক্যাম্পের দিকে চলে যাচ্ছেন।

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন বলেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নতুন করে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে এ পর্যন্ত কত রোহিঙ্গা ঢুকেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নতুন করে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ৮ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।

ছবি

বাংলাদেশি জেলে হত্যা: মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের তীব্র প্রতিবাদ

ছবি

মায়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, গুলিবিদ্ধ ২

ছবি

পুরনো মামলাগুলোর তদন্ত পুণরায় শুরু হয়েছে: আইজিপি

ছবি

প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ ঘোষণার উদ্যোগ

ছবি

পূজায় দশমী পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে এবছর ১৯৯ জনের মৃত্যু

ছবি

লিবিয়ায় ডিটেনশন সেন্টারে আটকে থাকা ১৫০ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

ছবি

‘পূজা হবে শান্তিপূর্ণ, মাঝে মধ্যে যা ঘটে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা’

ছবি

‘রিসেট বাটন’ নিয়ে বক্তব্য স্পষ্ট করল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ছবি

দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী আজ

ছবি

ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের বিচারপতির মর্যাদা: বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ

বড় সংখ্যায় পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু

ছবি

সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘অনুমোদনে অনিয়ম’, খতিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ডিসি নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে তিন সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন

লেবানন থেকে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের নথিভুক্তির আহ্বান

ছবি

বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত

ছবি

শিক্ষা প্রকৌশলের গাড়ি নিয়ে বিলাসিতা, ৩৮ গাড়ির ২০টিই বেহাত

সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ

ছবি

মূল্যস্ফীতি হঠাৎ বাড়েনি, কমতে সময় লাগবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

পিএসসির চেয়ারম্যান হলেন মোবাশ্বের মোনেম

ছবি

চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অর্ধেক কমল

ছবি

র‌্যাবের সাবেক ডিজি হারুনসহ ৩ অতিরিক্ত আইজিপিকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

১৪ বছরে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ৫১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি: টিআইবি

ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি এড়াতে কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা

ছবি

রেনু হত্যা: ১ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

আগামী সপ্তাহে বিদায় নিতে পারে বর্ষা

ছবি

শপথ নিলেন নতুন ২৩ বিচারপতি

ছবি

২৩ বিচারপতির শপথ আজ

ছবি

দুর্গাপূজা: বাংলাবান্ধা-বুড়িমারি-বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ছবি

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণের আহ্বান

ছবি

গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯৮১ জন, মৃত্যু ৫ জনের

ছবি

নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে শেখ আব্দুর রশীদের নিয়োগ

ছবি

কোথাও যাননি শেখ হাসিনা, দিল্লিতেই আছেন : বিবিসি বাংলা

ছবি

পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন পদত্যাগ করেছেন

ছবি

ম্যাজিস্ট্রেট উর্মির বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলার আবেদন

ছবি

শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

tab

জাতীয়

রাখাইনে তীব্র সংঘাত

আবারও টেকনাফে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী সংগঠনের লড়াই তীব্র হচ্ছে। এ ঘটনার জেরে প্রাণ বাঁচাতে কৌশলে কক্সবাজারের টেকনাফে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গারা।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সারাদিন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে আতঙ্কিত ছিলেন টেকনাফের বাসিন্দারাও।

সূত্রে জানা গেছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির ও আরও একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনের সংঘাত চললেও সেটি এখন আরও তীব্র হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে মংডুর বিভিন্ন এলাকা থেকে থেমে থেমে মর্টারশেল, গ্রেনেড-বোমা বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে মায়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়। রাখাইনে চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও রোহিঙ্গাদের অনেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা। সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টায় রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। ছয় মাস ধরে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। এখন সংঘাত সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে।

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর আরাফা বেগম বলেন, মায়ানমারের রাখাইনের ওপারে মর্টারশেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণে এপারের ঘরবাড়ি কাঁপছে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে মনে হয় বসতঘরের চালার ওপর বোমা এসে পড়ছে। রাতে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরইমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। বাংলাদেশে ঢোকার জন্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে বলেও খবর পেয়েছি।

রাখাইনের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে (পশ্চিমে) চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী পেরোলেই বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা।

টেকনাফের জনপ্রতিনিধিরা জানান, রাতের অন্ধকারে মংডু টাউনশিপের সুদাপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া ও নুরুল্লাপাড়া গ্রাম থেকে রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছেন জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল দিয়ে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতেই কেবল বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন চার শতাধিক রোহিঙ্গা। মংডুর উত্তরের প্যারাংপুরু ও দক্ষিণের ফাদংচা এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছেন। রাখাইনের চলমান সংঘাতে সম্প্রতি তারা ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন।

দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা ঢুকছেন জানিয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজির আহমদ বলেন, গত কয়েক দিনে কেবল কেরনতলি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিনি শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছেন। বিজিবি এসব রোহিঙ্গাকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

শুক্রবার রাতে নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের কেরনতলির এক বাসিন্দার বাড়িতে আশ্রয় নেন ১৫ শিশু ও ৯ নারীসহ চার পরিবারের ৩০ জন রোহিঙ্গা। তাদের বাড়ি মংডু টাউনশিপের পাশের গ্রাম সুদাপাড়ায়।

তাদের মাঝে দুজন জাহেদা বেগম (৩৫) ও নুর জাহান (৪০) বলেন, সাত-আট দিন ধরে মংডুতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষ শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা, মর্টারশেলের পাশাপাশি ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধবিমান থেকেও বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তাতে অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছে।

তারা বলেন, যুদ্ধের মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বসতি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছেন। তবে নৌকার অভাবে বাংলাদেশে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে।

দলের আরেক সদস্য সাব্বির আহমদ বলেন, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে ঢুকতে তাদের (রোহিঙ্গাদের) কাছ থেকে মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন দালালরা।

টেকনাফ বাস স্টেশনের করিম উল্লাহ নামে এক শ্রমিক বলেন, টেকনাফ বাস স্টেশন এলাকায় প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে মায়ানমার থেকে পার হয়ে নতুন রোহিঙ্গারা গাড়িতে করে ক্যাম্পের দিকে চলে যাচ্ছেন।

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন বলেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নতুন করে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে এ পর্যন্ত কত রোহিঙ্গা ঢুকেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নতুন করে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ৮ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।

back to top