alt

জাতীয়

বাঁশখালী ইকোপার্ক যেন এক ভুতুড়ে রাজ্য

প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পর্যটকশূন্য বাঁশখালী ইকোপার্ক। লেকের চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কচুরিপানা

অযত্ন-অবহেলা ও পরিচর্যার অভাবে বাঁশখালী ইকোপার্ক অনেকটা আকর্ষণহীন হয়ে পড়েছে। ঢাকা পড়েছে পার্কের সৌন্দর্য। ইকোপার্ক যেন কচুরিপানা ও লতাপাতায় ভরপুর। সৌন্দর্য হারিয়ে ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে এই পার্ক। আগে এই পার্কে পর্যটকদের বিপুল সমাগম থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। বিনোদন ক্ষেত্রগুলো যেমন জরাজীর্ণ ও নোংরা আবর্জনা, ঘাস আর লতাপাতায় ভরে গেছে পুরো পার্ক। তেমনি লেকজুড়েই ভেসে বেড়াচ্ছে কচুরিপানা।

জানা যায়, ‘২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বাঁশখালী ইকোপার্কটিতে ছিল পিকনিক সেট, দ্বিতল রেস্ট কর্নার, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সাসপেনশন ব্রিজ, দোলনা, স্কিপার, দ্বিতল রেস্ট হাউস, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ব্যারাক ৪ ইউনিট, গেট, প্রধান ফটক, ২টি সুবিশাল লেক, ওয়াটার বোট, পাখি, বন্যপ্রাণী অবলোকন করার টাওয়ার, কংক্রিটে নির্মিত শাবের ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ারসহ নানা বিনোদনের ক্ষেত্র। তবে সেই সব বিনোদন ক্ষেত্র ও স্থাপনা নষ্ট হয়ে পরিণত হয়েছে ময়লা আবর্জনায়। ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে বিনোদন ক্ষেত্রের সেই সব নান্দনিক বাহারি স্থাপনা। এতেই এসব স্থাপনা ও তার চারপাশ ছেঁয়ে গেছে নোংরা আবর্জনা, ঘাস আর লতাপাতায়। এছাড়া পার্কে ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটে নিয়মিতই।’

অন্যদিকে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তাতে ৪৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৮৫ প্রজাতির পাখি, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৭ প্রজাতির উভয়চর প্রাণীর অবস্থান থাকলেও এখন তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে তাদের সেই খাঁচাগুলো (পিঞ্জর বাক্স আকৃতির তৈরি শক্ত কাঠামোবিশেষ) থাকলেও তাতে দেখা মিলে না স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি বা সরীসৃপের। তবে এসবে প্রাণী না থাকলেও জরাজীর্ণ খাঁচাগুলোতে টিকই দেখা মিলে প্রেমিক যুগলের। পর্যটকের নামে একান্ত সময় কাটাতেই খাঁচাগুলোতে দেখা মিলে তাদের। এছাড়া বনের ওপর জনচাপ সৃষ্টি হওয়ায় এখন অনেকটা কমে গেছে বাঁশখালী ইকোপার্কের সৌন্দর্য। আগে কারদিনে এই পার্কের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে পিকনিক স্পটটি শুরু থেকেই ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও তা এখন নাই বললে চলে এবং প্রতি বছর শীত বা বন্ধের দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ শিক্ষা সফর, বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে আসলেও এখন তা দেখা মিলে কালেভদ্রে।

পার্ক ঘুরে দেখা যায়, ‘লেকের বোটগুলো ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া বিরল ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির গাছের বাগানসহ সব স্থাপনা পরিচর্যাবিহীন। দুই লেক ভরে গেছে কচুরিপানা ও লতাপাতায়। বিনোদনের জন্য নির্মিত কংক্রিটের শাবের ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ার গুলো ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। এবং প্রায় জরাজীর্ণ স্থাপনা ও চারপাশ ছেঁয়ে গেছে নোংরা আবর্জনা, ঘাস ও লতাপাতায়। অপরদিকে লেকের ভাঙাচোরা ও জরাজীর্ণ বোটগুলো ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয়দের পাহাড়ে অবস্থিত বিভিন্ন ক্ষেত-খামারের কাজে। এতেই পার্কটির অযতœ ও অবহেলা স্পষ্টভাবে চোখেই পড়ে। অন্যদিকে পার্কে যাওয়ার সড়কটির বেহাল দশা তা আরও বাড়িয়ে দেয়।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘চলতি বছরের ২১ জুন থেকে এ পার্কের প্রবেশ ফি ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রবেশ ফি ৫০ টাকা আদায়ের কার্যাদেশ পেয়েছেন মেসার্স হামিদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হামিদ। তাতে রাজস্ব, ভ্যাট ও আয়করসহ বার্ষিক মূল্য ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।’

স্থানীয়রা জানান, ‘পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই এলাকার গুরুত্ব বেড়ে যায়। পার্কে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতো। বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে ধারণ ক্ষমতার চার-পাঁচ গুণ দর্শনার্থীর সমাগাম দেখা যেতো পার্কে। তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকত পুরো পার্ক এলাকা। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, বনকর্মীদের জনবল সংকট, পার্কের স্থাপনা সংস্কার না করা, দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে পার্কটি।’

ইকোপার্কে ঘুরতে আসা আনোয়ারার বাসিন্দা মঈন উদ্দীন বলেন, ‘আগের সেই ১০ টাকা দামের টিকেট এখন ৫০ টাকা দিয়ে কেটে পার্কে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এসে দেখি ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে বিনোদন ক্ষেত্রের সেই সব বাহারি স্থাপনা। এসব স্থাপনা ও তার চারপাশ ছেঁয়ে গেছে ঘাস আর লতাপাতায়। শুধুমাত্র ঝুলন্ত ব্রিজটা কিছুটা দেখার মতো, তবে তাও দেখি জরাজীর্ণ। পাঁচ বছর আগে এসেছিলাম তখন পার্কটি সুন্দর ও দেখার মতো ছিল। এখন এই পার্ক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। এখানে আসাটা জানিই এখন লস।’

অন্য এক পর্যটক আফসানা বেগম জানান, ‘দীর্ঘ দুই বছর পর পার্কে আসছি। এখানে বখাটে ছেলেদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে আসাটা নিরাপদ নয়। তারপরও সেই অতীতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা মনে করে পার্কে আসা। এসে দেখি পুরো পার্কটি বদলে গেছে। পার্কে দেখা বা উপভোগ করার মতো কিছুই নাই। চারদিকে সুনসান নীরবতা। যেন এক ভূতুড়ে রাজ্য।’

স্থানীয় তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর বন বিভাগ গেট ও গাড়ি পার্কিং ইজারা দিয়ে লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে, কৃষি বিভাগ ও উপজেলা এলজিইডি বিভাগ সেচ প্রকল্পের পানি বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও বাঁশখালী ইকোপার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কারো সু-নজর নেই। সবাই যেন যে যার মতো করে লুটেপুটে খাচ্ছে।’

পার্কের ইজারাদারদের ঝামেলার কারণে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা বনকর্মী আশিক বলেন, ‘পার্কে এখন পর্যটক নাই বললেই চলে। সকাল ও বিকেলে কিছু পর্যটক আসে। সারাদিন মিলে ৭০ থেকে ৮০টির মতো টিকেট বিক্রি হয়। চারদিকে যেন সুনসান নীরবতা। এতে ইজারাদাররা ফিরলেই তাদের হাতে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হবে। আপাদতে দুই পক্ষের ঝামেলার কারণে নিরাপত্তা রক্ষার্থে স্যারের নির্দেশে আমরা টিকেট দিচ্ছি।’

বাঁশখালী পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক রাসেল ইকবাল মিয়া বলেন, একসময় গান ও নাটক বাঁশখালী ইকোপার্কে শুটিং করা হতো। এখন ত সে পরিবেশ নেই। চারদিকে কচুরিপানা আর লতাপাতায় ভরপুর। মনে হয় যেন একটি ভূতুড়ে বাড়ি। সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর হাত ধরে ইকোপার্কের সৌন্দর্য বর্ধিত হয়েছিল। এরপর থেকে পার্কটি আর সংস্কার করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জরাজীর্ণ স্থাপনা, চারদিকে লতাপাতা, কচুরিপানা ইদানীং পর্যটকদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন কচুরিপানা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এটি পার্কের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। মূলত অযতœ ও অবহেলার কারণে পর্যটন সম্ভাবনাময় বাঁশখালী ইকোপার্ক তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত এটি যেন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে পর্যটক উপযোগী করে তোলে।’

বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ বলেন, ‘ইকোপার্ক সড়ক সংস্কারে টেন্ডার হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন। শিগগিরই ইকোপার্ক সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে।

বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসরাইল হক বলেন, ‘পার্ক সংস্কারে বন বিভাগ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানের কাজ চলছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে পার্কটি নান্দনিক সৌন্দর্যে রূপ নিবে। এছাড়া পার্কে বিনিয়োগ প্রয়োজন। পার্কের নিজস্ব কোনো আয় নাই। তারপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েকবার লেকের কচুরিপানাগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। এছাড়া পার্কের যোগাযোগ সড়ক সংস্কারে টেন্ডার হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’

পুলিশ সংস্কার বাস্তবায়নে দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন

শার্শায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ

তিন জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩২ জনকে ‘পুশইন’ ভারতের

নিখোঁজ খিলক্ষেতের ব্যাংক কর্মকর্তার অবস্থান শনাক্তের দাবি পুলিশের

ছবি

গ্যাব পদ্ধতিতে আম চাষে সফল চাষি হিলির নিরঞ্জন

তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস, ভূমিধসের সতর্কবার্তা

মোবাইল চুরির ঘটনায় মাসহ দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা: র‌্যাব

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে তরুণদের, বিশেষ ঝুঁকিতে ছেলেরা

রবিবার পবিত্র আশুরা

ছবি

সঞ্চয়পত্রে সুদহার বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: উপদেষ্টা

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন প্রতিপক্ষ ছিল ভারতের, দাবি উপ-সেনাপ্রধানের

ছবি

টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় নিহত ২৪

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসেনি: নজরুল ইসলাম খান

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা মারা গেছেন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ‘ন্যূনতম হস্তক্ষেপ’ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার: প্রেস সচিব

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো তিনজন কারাগারে

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

সৌরবিদ্যুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ‘আশানুরূপ নয়’

শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ‘প্রত্যাশার চেয়েও বেশি’ প্রাপ্তির সম্ভাবনা

ছবি

‘মব’ তৈরি করে নগদ টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট, থানায় অভিযোগ হাবিবার

ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে: প্রেস সচিব

ছবি

‘ব্যাংকগুলোর টাকা ফেরত দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ’ — সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

ছবি

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ৩ জন কারাগারে

ছবি

তিন বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা আর নেই

ছবি

বিএনপি পুরনো খসড়া দেখে মন্তব্য করেছে: তৈয়্যব

ছবি

মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছে, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ: আসিফ নজরুল

সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার আন্দোলন

সম্পত্তির জন্য মাকে মারধর করলেন স্কুল শিক্ষক ছেলে

রাজধানীতে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন

কোভিড পরীক্ষার খরচ কমলো

ছবি

রাবিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গাছ কর্তন, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে আপাতত বন্ধ

ছবি

পানিতে ডুবে ঠাকুরগাঁও ও বরুড়ায় চার শিশুর মৃত্যু

ছবি

যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবো: নাহিদ

ছবি

তেঁতুলিয়ায় সরকারি ধান সংগ্রহে অনিয়ম

tab

জাতীয়

বাঁশখালী ইকোপার্ক যেন এক ভুতুড়ে রাজ্য

প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

পর্যটকশূন্য বাঁশখালী ইকোপার্ক। লেকের চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কচুরিপানা

মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অযত্ন-অবহেলা ও পরিচর্যার অভাবে বাঁশখালী ইকোপার্ক অনেকটা আকর্ষণহীন হয়ে পড়েছে। ঢাকা পড়েছে পার্কের সৌন্দর্য। ইকোপার্ক যেন কচুরিপানা ও লতাপাতায় ভরপুর। সৌন্দর্য হারিয়ে ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে এই পার্ক। আগে এই পার্কে পর্যটকদের বিপুল সমাগম থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। বিনোদন ক্ষেত্রগুলো যেমন জরাজীর্ণ ও নোংরা আবর্জনা, ঘাস আর লতাপাতায় ভরে গেছে পুরো পার্ক। তেমনি লেকজুড়েই ভেসে বেড়াচ্ছে কচুরিপানা।

জানা যায়, ‘২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বাঁশখালী ইকোপার্কটিতে ছিল পিকনিক সেট, দ্বিতল রেস্ট কর্নার, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সাসপেনশন ব্রিজ, দোলনা, স্কিপার, দ্বিতল রেস্ট হাউস, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ব্যারাক ৪ ইউনিট, গেট, প্রধান ফটক, ২টি সুবিশাল লেক, ওয়াটার বোট, পাখি, বন্যপ্রাণী অবলোকন করার টাওয়ার, কংক্রিটে নির্মিত শাবের ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ারসহ নানা বিনোদনের ক্ষেত্র। তবে সেই সব বিনোদন ক্ষেত্র ও স্থাপনা নষ্ট হয়ে পরিণত হয়েছে ময়লা আবর্জনায়। ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে বিনোদন ক্ষেত্রের সেই সব নান্দনিক বাহারি স্থাপনা। এতেই এসব স্থাপনা ও তার চারপাশ ছেঁয়ে গেছে নোংরা আবর্জনা, ঘাস আর লতাপাতায়। এছাড়া পার্কে ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটে নিয়মিতই।’

অন্যদিকে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তাতে ৪৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৮৫ প্রজাতির পাখি, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৭ প্রজাতির উভয়চর প্রাণীর অবস্থান থাকলেও এখন তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে তাদের সেই খাঁচাগুলো (পিঞ্জর বাক্স আকৃতির তৈরি শক্ত কাঠামোবিশেষ) থাকলেও তাতে দেখা মিলে না স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি বা সরীসৃপের। তবে এসবে প্রাণী না থাকলেও জরাজীর্ণ খাঁচাগুলোতে টিকই দেখা মিলে প্রেমিক যুগলের। পর্যটকের নামে একান্ত সময় কাটাতেই খাঁচাগুলোতে দেখা মিলে তাদের। এছাড়া বনের ওপর জনচাপ সৃষ্টি হওয়ায় এখন অনেকটা কমে গেছে বাঁশখালী ইকোপার্কের সৌন্দর্য। আগে কারদিনে এই পার্কের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে পিকনিক স্পটটি শুরু থেকেই ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও তা এখন নাই বললে চলে এবং প্রতি বছর শীত বা বন্ধের দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ শিক্ষা সফর, বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে আসলেও এখন তা দেখা মিলে কালেভদ্রে।

পার্ক ঘুরে দেখা যায়, ‘লেকের বোটগুলো ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া বিরল ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির গাছের বাগানসহ সব স্থাপনা পরিচর্যাবিহীন। দুই লেক ভরে গেছে কচুরিপানা ও লতাপাতায়। বিনোদনের জন্য নির্মিত কংক্রিটের শাবের ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ার গুলো ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। এবং প্রায় জরাজীর্ণ স্থাপনা ও চারপাশ ছেঁয়ে গেছে নোংরা আবর্জনা, ঘাস ও লতাপাতায়। অপরদিকে লেকের ভাঙাচোরা ও জরাজীর্ণ বোটগুলো ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয়দের পাহাড়ে অবস্থিত বিভিন্ন ক্ষেত-খামারের কাজে। এতেই পার্কটির অযতœ ও অবহেলা স্পষ্টভাবে চোখেই পড়ে। অন্যদিকে পার্কে যাওয়ার সড়কটির বেহাল দশা তা আরও বাড়িয়ে দেয়।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘চলতি বছরের ২১ জুন থেকে এ পার্কের প্রবেশ ফি ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রবেশ ফি ৫০ টাকা আদায়ের কার্যাদেশ পেয়েছেন মেসার্স হামিদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হামিদ। তাতে রাজস্ব, ভ্যাট ও আয়করসহ বার্ষিক মূল্য ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।’

স্থানীয়রা জানান, ‘পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই এলাকার গুরুত্ব বেড়ে যায়। পার্কে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতো। বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে ধারণ ক্ষমতার চার-পাঁচ গুণ দর্শনার্থীর সমাগাম দেখা যেতো পার্কে। তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকত পুরো পার্ক এলাকা। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, বনকর্মীদের জনবল সংকট, পার্কের স্থাপনা সংস্কার না করা, দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে পার্কটি।’

ইকোপার্কে ঘুরতে আসা আনোয়ারার বাসিন্দা মঈন উদ্দীন বলেন, ‘আগের সেই ১০ টাকা দামের টিকেট এখন ৫০ টাকা দিয়ে কেটে পার্কে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এসে দেখি ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে বিনোদন ক্ষেত্রের সেই সব বাহারি স্থাপনা। এসব স্থাপনা ও তার চারপাশ ছেঁয়ে গেছে ঘাস আর লতাপাতায়। শুধুমাত্র ঝুলন্ত ব্রিজটা কিছুটা দেখার মতো, তবে তাও দেখি জরাজীর্ণ। পাঁচ বছর আগে এসেছিলাম তখন পার্কটি সুন্দর ও দেখার মতো ছিল। এখন এই পার্ক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। এখানে আসাটা জানিই এখন লস।’

অন্য এক পর্যটক আফসানা বেগম জানান, ‘দীর্ঘ দুই বছর পর পার্কে আসছি। এখানে বখাটে ছেলেদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে আসাটা নিরাপদ নয়। তারপরও সেই অতীতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা মনে করে পার্কে আসা। এসে দেখি পুরো পার্কটি বদলে গেছে। পার্কে দেখা বা উপভোগ করার মতো কিছুই নাই। চারদিকে সুনসান নীরবতা। যেন এক ভূতুড়ে রাজ্য।’

স্থানীয় তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর বন বিভাগ গেট ও গাড়ি পার্কিং ইজারা দিয়ে লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে, কৃষি বিভাগ ও উপজেলা এলজিইডি বিভাগ সেচ প্রকল্পের পানি বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও বাঁশখালী ইকোপার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কারো সু-নজর নেই। সবাই যেন যে যার মতো করে লুটেপুটে খাচ্ছে।’

পার্কের ইজারাদারদের ঝামেলার কারণে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা বনকর্মী আশিক বলেন, ‘পার্কে এখন পর্যটক নাই বললেই চলে। সকাল ও বিকেলে কিছু পর্যটক আসে। সারাদিন মিলে ৭০ থেকে ৮০টির মতো টিকেট বিক্রি হয়। চারদিকে যেন সুনসান নীরবতা। এতে ইজারাদাররা ফিরলেই তাদের হাতে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হবে। আপাদতে দুই পক্ষের ঝামেলার কারণে নিরাপত্তা রক্ষার্থে স্যারের নির্দেশে আমরা টিকেট দিচ্ছি।’

বাঁশখালী পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক রাসেল ইকবাল মিয়া বলেন, একসময় গান ও নাটক বাঁশখালী ইকোপার্কে শুটিং করা হতো। এখন ত সে পরিবেশ নেই। চারদিকে কচুরিপানা আর লতাপাতায় ভরপুর। মনে হয় যেন একটি ভূতুড়ে বাড়ি। সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর হাত ধরে ইকোপার্কের সৌন্দর্য বর্ধিত হয়েছিল। এরপর থেকে পার্কটি আর সংস্কার করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জরাজীর্ণ স্থাপনা, চারদিকে লতাপাতা, কচুরিপানা ইদানীং পর্যটকদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন কচুরিপানা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এটি পার্কের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। মূলত অযতœ ও অবহেলার কারণে পর্যটন সম্ভাবনাময় বাঁশখালী ইকোপার্ক তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত এটি যেন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে পর্যটক উপযোগী করে তোলে।’

বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ বলেন, ‘ইকোপার্ক সড়ক সংস্কারে টেন্ডার হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন। শিগগিরই ইকোপার্ক সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে।

বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসরাইল হক বলেন, ‘পার্ক সংস্কারে বন বিভাগ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানের কাজ চলছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে পার্কটি নান্দনিক সৌন্দর্যে রূপ নিবে। এছাড়া পার্কে বিনিয়োগ প্রয়োজন। পার্কের নিজস্ব কোনো আয় নাই। তারপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েকবার লেকের কচুরিপানাগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। এছাড়া পার্কের যোগাযোগ সড়ক সংস্কারে টেন্ডার হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’

back to top