বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিগুলো মুনাফা (প্রফিট) বোনাসের নামে গত দেড় দশকে কত টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কোন কোম্পানি কত টাকা মুনাফা করেছে এবং মুনাফা বোনাস হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কত টাকা পেয়েছেন দ্রুত এ সংক্রান্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রতি বছর বিপুল অর্থ লোকসান দেখায়। এতে বছর বছর বাড়াতে হয় বিদ্যুতের দাম। ওই চাপ এসে পড়ে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে।
অথচ পিডিবি এবং আরইবির অধীনস্থ সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদান কোম্পানিগুলো বছর শেষে লাভ দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ‘মুনাফা’ বোনাসের নামে বছরে ভাগাভাগির অর্থের পরিমাণ কম বেশি একশ’ কোটি টাকা। সূত্র বলছে, এই টাকা পিডিবিকে ফেরত দিলে সরকারের ভর্তুকির চাপ কমতো।
পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি লোকসান দেখিয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে লোকসান কমানোর চেষ্টা করেছে সরকার। ভর্তুকি দিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। এরপরও এই সময় সাধারণ গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ১৮৮ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে সরকারি ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি নিট মুনাফা করেছে ১৫১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর ৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রফিট বোনাস হিসেবে দাঁড়ায় ৭৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যে কোম্পানি যত বেশি লাভ করে তার কর্মীরা যে অনুযায়ী প্রফিট বোনাস পান।
সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনস্থ লাভে থাকা কোম্পানিগুলো হলোÑ আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির (এপিএসসিএল), ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি), নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (নওপাজেকো), রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) এবং বি-আর পাওয়ার জেন (বিআরপিএল)। এর আগের তিন অর্থবছরও এই কোম্পানিগুলো লাভে ছিল।
পরবর্তী অর্থবছরগুলো প্রফিট বোনাসের নামে কম-বেশি একশ’ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়েছে এসব কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। লাভের অনুপাতে বছরে তিন লাখ থেকে পনের লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন এই বোনাস পেয়েছেন তারা।
লাভ দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মুনাফা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার নজির জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিতেও আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৮ লাখ টাকা করে মুনাফা বোনাস দিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
প্রফিট (মুনাফা) বোনাস পাওয়া কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের দাবি, শ্রমিক আইন অনুযায়ী কোম্পানির বার্ষিক মুনাফার ৫ শতাংশ বোনাস তারা পেয়ে থাকেন। তবে ক্রমাগত লোকসানে থাকা বিদ্যুৎ খাতের জন্য এই আইন কতটা প্রযোজ্য তা নিয়ে আলোচনা আছে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, আইনটা মূলত হয়েছিল গার্মেন্টস শ্রমিক, বেসরকারি শিল্প, কল-কারখানা শ্রমিকদের জন্য। সরকারি অন্যান্য চাকরির তুলনায় রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় আড়াই গুণ বেশি বেতন-ভাতা পান উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রফিট বোনাসের এই আইন সরকারি বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়।
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিগুলো মুনাফা (প্রফিট) বোনাসের নামে গত দেড় দশকে কত টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কোন কোম্পানি কত টাকা মুনাফা করেছে এবং মুনাফা বোনাস হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কত টাকা পেয়েছেন দ্রুত এ সংক্রান্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রতি বছর বিপুল অর্থ লোকসান দেখায়। এতে বছর বছর বাড়াতে হয় বিদ্যুতের দাম। ওই চাপ এসে পড়ে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে।
অথচ পিডিবি এবং আরইবির অধীনস্থ সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদান কোম্পানিগুলো বছর শেষে লাভ দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ‘মুনাফা’ বোনাসের নামে বছরে ভাগাভাগির অর্থের পরিমাণ কম বেশি একশ’ কোটি টাকা। সূত্র বলছে, এই টাকা পিডিবিকে ফেরত দিলে সরকারের ভর্তুকির চাপ কমতো।
পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি লোকসান দেখিয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে লোকসান কমানোর চেষ্টা করেছে সরকার। ভর্তুকি দিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। এরপরও এই সময় সাধারণ গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ১৮৮ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে সরকারি ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি নিট মুনাফা করেছে ১৫১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর ৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রফিট বোনাস হিসেবে দাঁড়ায় ৭৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যে কোম্পানি যত বেশি লাভ করে তার কর্মীরা যে অনুযায়ী প্রফিট বোনাস পান।
সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনস্থ লাভে থাকা কোম্পানিগুলো হলোÑ আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির (এপিএসসিএল), ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি), নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (নওপাজেকো), রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) এবং বি-আর পাওয়ার জেন (বিআরপিএল)। এর আগের তিন অর্থবছরও এই কোম্পানিগুলো লাভে ছিল।
পরবর্তী অর্থবছরগুলো প্রফিট বোনাসের নামে কম-বেশি একশ’ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়েছে এসব কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। লাভের অনুপাতে বছরে তিন লাখ থেকে পনের লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন এই বোনাস পেয়েছেন তারা।
লাভ দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মুনাফা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার নজির জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিতেও আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৮ লাখ টাকা করে মুনাফা বোনাস দিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
প্রফিট (মুনাফা) বোনাস পাওয়া কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের দাবি, শ্রমিক আইন অনুযায়ী কোম্পানির বার্ষিক মুনাফার ৫ শতাংশ বোনাস তারা পেয়ে থাকেন। তবে ক্রমাগত লোকসানে থাকা বিদ্যুৎ খাতের জন্য এই আইন কতটা প্রযোজ্য তা নিয়ে আলোচনা আছে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, আইনটা মূলত হয়েছিল গার্মেন্টস শ্রমিক, বেসরকারি শিল্প, কল-কারখানা শ্রমিকদের জন্য। সরকারি অন্যান্য চাকরির তুলনায় রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় আড়াই গুণ বেশি বেতন-ভাতা পান উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রফিট বোনাসের এই আইন সরকারি বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়।