ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। থেমে নেই মৃত্যুও। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুরও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৬১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৪১ জন ও প্রাইভেটে ১২০ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪৫ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১০৩ জন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৮শ’ ৪৬ জন।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি মাসের গত ১২ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৪ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২০ জন।
গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫শ’ ২১ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২৭ জন। গত জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৬শ’ ৬৯ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১২ জন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে এই তথ্য জানা গেলেও যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ডাক্তারের চেম্বারে চিকিৎসা গাইডলাইন নিয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। তাদের সংখ্যা জানা গেছে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্য মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ভর্তি আছে ৯২ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬০ জন ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ১২৯ জন। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালে এখন ভর্তি আছে ৫৯৪ জন। অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বর্তমান আবহাওয়া ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে নির্মানাধীন ভবনের ছাদে, ফুলের টব, পাকা রাস্তার গর্তে, ওয়াসার পানির সংযোগের স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে ও বংশ বিস্তার করছে। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারি এডিস মশার জীবাণু বহনকারি মশা বংশ বিস্তার করে। সেই মশা কাউকে কামড় দিলে তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হবেন।
আবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত কেউ শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে গেলেও সেখানে যদি আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড় দেয়। ওই মশা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। আক্রান্ত মশা নতুন করে কাউকে কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হবে। এভাবে ডেঙ্গু ভাইরাস সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মশার উপদ্রব আগামী শীত পর্যন্ত চলতে থাকবে। নভেম্বর মাসে শীত পড়তে শুরু করলে আস্তে আস্তে কমতে পারে। তাই নিয়মিত মশার ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নির্মণাধীন ভবন, রাস্তা, ফুলের টব, বাড়ির আঙ্গিনা, ডাবের খোসা, ওয়াসার পানির ট্যাংকের গর্তে জমে থাকা পানি পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন করলে মশার বিস্তার কমবে।
এডিস মশার উপদ্রব না কমলে ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়বে। ডেঙ্গু টেস্ট্র করে রোগ শনাক্ত করলে মৃত্যুর হার কমবে। হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে। জেলা পর্যায় থেকে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত দ্রুত ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতির অবনতি হবে।
শহর থেকে জেলা পর্যন্ত ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন না রাখলে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ওয়ার্ড থেকে দিতে হবে। মশা দমনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা চলতি বছর অনুসন্ধান শেষে জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় উক্ত জরিপ পরিচালনা করেছেন। রাজধানীর ৯৯টি ওয়ার্ডে ২১টি টিমের মাধ্যমে ওই জরিপ পরিচালনা করেছে।
জরিপে ৩ হাজার ১৫২টি বাড়িতে সার্ভে করা হয়। ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তারমধ্যে বহুতল ভবন শতকরা ৪২ দশমিক ৩৩ ভাগ। স্বতন্ত্র বাড়ি ২১ দশমিক ৬ ভাগ, নির্মাধীন ভবন ২১ দশমিক ৬ ভাগ, সেমিপাকা বাড়ি ১২ দশমিক ৭৪ ভাগ, খালি জায়গা ১ দশমিক ৭৩ ভাগে এডিস মশার লাভা পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রজনন স্থল হিসেবে প্লাস্টিকের ড্রামে শতকরা ১৮ ভাগ, মেঝেতে জমানো পানিতে ১৫ ভাগ, প্লাস্টিকের বালতিতে ১৪ ভাগ। বর্ষা মৌসুমের আগেই জরিপে প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত।
এডিস মশা থেকে বাঁচতে জনগণকে সচেতনতার মাধ্যমে সম্পৃক্তা বাড়ানো দরকার। যেহেতু ডেঙ্গু সারাবছর সংক্রমণ হচ্ছে ও সারাবছরের রোগ হিসেবে চিহ্নিত। তাই সেন্টিনাল সাইট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারাবছর কীটতত্ত্ব¡ জরিপ করে মশা দমন করা দরকার।
রাজধানীর ৯৯টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৫২টি বাড়িতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ টিমের কর্মকতারা জানান। তার মধ্যে ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পাওয়া গেছে। যা পরিদর্শন করা মোট বাড়ির ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত ?ওয়াহিদুর রহমান (১৬) বান্দরবান জেলার বাসিন্দা। ডেঙ্গু আক্রান্ত ওয়াহিদকে বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং ওইদিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ওয়াহিদের ‘এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমের’ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৯ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, চারজন সীতাকু-ের বিআইটিআইডি হাসপাতালে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন, ১২ জন চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ও পাঁচজন নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
চলতি বছরে চট্টগ্রামে মোট ৭৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩১ জন মহানগরে এবং ৩৩৩ জন উপজেলায়। চলতি সেপ্টেম্বরের ১২ দিনে ১৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া জানুয়ারিতে ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন, মার্চে ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ১৭ জন, জুনে ৪১ জন এবং জুলাইয়ে ১৯৮ জন ও আগস্টে ২০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরে মারা গেছে ১০ জন। এদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ৬ জন নারী এবং দুই শিশু।
চট্টগ্রামে ২০২১ সালে ২৭১ জন, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৪৪৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। ২০২১ সালে ৫ জন, ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২৩ সালে ১০৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যান।
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। থেমে নেই মৃত্যুও। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুরও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৬১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৪১ জন ও প্রাইভেটে ১২০ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪৫ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১০৩ জন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৮শ’ ৪৬ জন।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি মাসের গত ১২ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৪ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২০ জন।
গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫শ’ ২১ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২৭ জন। গত জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৬শ’ ৬৯ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১২ জন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে এই তথ্য জানা গেলেও যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ডাক্তারের চেম্বারে চিকিৎসা গাইডলাইন নিয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। তাদের সংখ্যা জানা গেছে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্য মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ভর্তি আছে ৯২ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬০ জন ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ১২৯ জন। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালে এখন ভর্তি আছে ৫৯৪ জন। অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বর্তমান আবহাওয়া ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে নির্মানাধীন ভবনের ছাদে, ফুলের টব, পাকা রাস্তার গর্তে, ওয়াসার পানির সংযোগের স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে ও বংশ বিস্তার করছে। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারি এডিস মশার জীবাণু বহনকারি মশা বংশ বিস্তার করে। সেই মশা কাউকে কামড় দিলে তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হবেন।
আবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত কেউ শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে গেলেও সেখানে যদি আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড় দেয়। ওই মশা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। আক্রান্ত মশা নতুন করে কাউকে কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হবে। এভাবে ডেঙ্গু ভাইরাস সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মশার উপদ্রব আগামী শীত পর্যন্ত চলতে থাকবে। নভেম্বর মাসে শীত পড়তে শুরু করলে আস্তে আস্তে কমতে পারে। তাই নিয়মিত মশার ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নির্মণাধীন ভবন, রাস্তা, ফুলের টব, বাড়ির আঙ্গিনা, ডাবের খোসা, ওয়াসার পানির ট্যাংকের গর্তে জমে থাকা পানি পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন করলে মশার বিস্তার কমবে।
এডিস মশার উপদ্রব না কমলে ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়বে। ডেঙ্গু টেস্ট্র করে রোগ শনাক্ত করলে মৃত্যুর হার কমবে। হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে। জেলা পর্যায় থেকে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত দ্রুত ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতির অবনতি হবে।
শহর থেকে জেলা পর্যন্ত ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন না রাখলে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ওয়ার্ড থেকে দিতে হবে। মশা দমনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা চলতি বছর অনুসন্ধান শেষে জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় উক্ত জরিপ পরিচালনা করেছেন। রাজধানীর ৯৯টি ওয়ার্ডে ২১টি টিমের মাধ্যমে ওই জরিপ পরিচালনা করেছে।
জরিপে ৩ হাজার ১৫২টি বাড়িতে সার্ভে করা হয়। ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তারমধ্যে বহুতল ভবন শতকরা ৪২ দশমিক ৩৩ ভাগ। স্বতন্ত্র বাড়ি ২১ দশমিক ৬ ভাগ, নির্মাধীন ভবন ২১ দশমিক ৬ ভাগ, সেমিপাকা বাড়ি ১২ দশমিক ৭৪ ভাগ, খালি জায়গা ১ দশমিক ৭৩ ভাগে এডিস মশার লাভা পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রজনন স্থল হিসেবে প্লাস্টিকের ড্রামে শতকরা ১৮ ভাগ, মেঝেতে জমানো পানিতে ১৫ ভাগ, প্লাস্টিকের বালতিতে ১৪ ভাগ। বর্ষা মৌসুমের আগেই জরিপে প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত।
এডিস মশা থেকে বাঁচতে জনগণকে সচেতনতার মাধ্যমে সম্পৃক্তা বাড়ানো দরকার। যেহেতু ডেঙ্গু সারাবছর সংক্রমণ হচ্ছে ও সারাবছরের রোগ হিসেবে চিহ্নিত। তাই সেন্টিনাল সাইট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারাবছর কীটতত্ত্ব¡ জরিপ করে মশা দমন করা দরকার।
রাজধানীর ৯৯টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৫২টি বাড়িতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ টিমের কর্মকতারা জানান। তার মধ্যে ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পাওয়া গেছে। যা পরিদর্শন করা মোট বাড়ির ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত ?ওয়াহিদুর রহমান (১৬) বান্দরবান জেলার বাসিন্দা। ডেঙ্গু আক্রান্ত ওয়াহিদকে বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং ওইদিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ওয়াহিদের ‘এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমের’ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৯ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, চারজন সীতাকু-ের বিআইটিআইডি হাসপাতালে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন, ১২ জন চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ও পাঁচজন নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
চলতি বছরে চট্টগ্রামে মোট ৭৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩১ জন মহানগরে এবং ৩৩৩ জন উপজেলায়। চলতি সেপ্টেম্বরের ১২ দিনে ১৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া জানুয়ারিতে ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন, মার্চে ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ১৭ জন, জুনে ৪১ জন এবং জুলাইয়ে ১৯৮ জন ও আগস্টে ২০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরে মারা গেছে ১০ জন। এদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ৬ জন নারী এবং দুই শিশু।
চট্টগ্রামে ২০২১ সালে ২৭১ জন, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৪৪৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। ২০২১ সালে ৫ জন, ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২৩ সালে ১০৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যান।