alt

জাতীয়

পদোন্নতি-পদায়ন ‘বঞ্চিতদের’ সামলাতে প্রশাসনে হিমশিম

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

*পদোন্নতি চান ২৫ ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ১৯৪ উপসচিব
*মাউশিতে বিক্ষোভ শিক্ষা কর্মকর্তাদের
*বঞ্চিতের প্রতিকারে কমিটি
*কর্মীদের অসন্তোষে বার বার বদল স্বাস্থ্যের ডিজি

পদোন্নতি, পদায়ন ও বঞ্চিতদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি প্রশাসন। বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তাদের ‘স্বাভাবিক’ কার্যক্রমে ফেরাতে পারছে না প্রশাসন। পদোন্নতি নিয়ে তারা বৈষম্যের অভিযোগ করছেন। কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বার বার মহাপরিচালক সরাতে হচ্ছে।

পদোন্নতির দাবিতে এবার সরব হয়েছেন বিসিএস ২৫ ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ প্রায় দুইশ’ কর্মকর্তা। তারা দাবি আদায়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাথে দেখা করেন। তাদের অভিযোগ, পদোন্নতি দিতে নানা টালবাহানা করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশি অধিদপ্তরের (শিক্ষা ভবন) সামনে মঙ্গলবার দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দুটি সংগঠনের কর্মীরা। দাবি আদায়ের জন্য দুই গ্রুপের অবস্থান নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

বিরূপ পরিস্থিতিতে মাউশির দাপ্তরিক ও সেবা কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কারণ মাউশির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই মঙ্গলবার নিজ নিজ দপ্তরে যেতে পারেননি। মহাপরিচালক এবিএম রেজাউল করীমসহ মাউশির পরিচালকদের কাউকে কাউকে মন্ত্রণালয়ে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম রেজাউল করীম সংবাদকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রুপের দাবি-দাওয়ার চাপে তারা কোনো কাজই করতে পারছেন না।

পদোন্নতি চান ২৫ ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ১৯৪ কর্মকর্তা :
উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি চান প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বাকি ২৫ ক্যাডারের ১৯৪ জন ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা। এ দাবিতে তারা মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে দেখা করেছেন।

‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দফায় দফায় পদোন্নতি দেয়া হলেও তাদের শুধু আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এনিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ি করছেন। দাবি আদায়ে তারা আজও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে যাবেন বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অর্থ বিভাগের উপসচিব জেহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে গেছি, তাকে সবকিছু বলেছি। উনি তখন বললেন, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যদি তারিখ দেন, তবে আমি সেদিন মিটিং আয়োজন করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে যাই। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সচিব সময় চাইলেই আমি সময় দেবো। আমরা এটা যখন আজ (মঙ্গলবার) আবার জনপ্রশাসন সচিবকে বললাম, তিনি বললেন, তোমরা তো সিস্টেমই জানো না। আমরা আবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এটা বললে তিনি বলেন যে আমি যেটা বলেছি সেটাইতো নিয়ম। আমি তো জানি না উনি রেডি কিনা, উনি সময় চাইলেই আমি সময় দেবো। আমরা এভাবেই ইনি এবং উনির মধ্যে আছি।’

বিগত সরকারের সময় পদোন্নতি ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন দাবি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুরুল আমিন বলেন, ‘আমরা বিসিএস ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্য ২৫ ক্যাডারের ১৯৪ জন বঞ্চিত উপসচিব। আমাদের সঙ্গে যারা উপসচিব হয়েছিলেন তারা অনেকেই যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।’

তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন জানিয়ে নুরুল আমিন বলেন, ‘আমাদের পদোন্নতির যৌক্তিকতা বুঝিয়েছি; তারাও রাজি হয়েছেন। সব প্রস্তুতি থাকলেও এসএসবি সভা ডাকা নিয়ে টালবাহানা করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।’

মাউশিতে দিনব্যাপী বিক্ষোভ
মাউশির সামনে দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষা প্রশাসনের দুই পক্ষের অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে দিনব্যাপী উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

‘একদফা এক দাবি, এন্ট্রিপদ নবম গ্রেডে ধরে চারস্তরীয় একাডেমি পদসোপান চাই’- এমন ব্যানারে একটি পক্ষ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অন্য পক্ষটি ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের’ ব্যানারে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য অবস্থান নেয়।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক খোকন ও সভাপতি লিয়াকত আলী এবং ‘বামাউশি’ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব অহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বৈষম্য নিরসনে’ তারা সাতদফা দাবি তুলে ধরেন।

এতে বলা হয়, ‘পদোন্নতির মাধ্যমে জেলা শিক্ষা অফিসারের শতভাগ পদে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদায়ন করতে হবে এবং ৬ষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের চলতি দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের শূন্য পদে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যথাযথ পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল দপ্তর, অধিদপ্তর এবং স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক পদে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনন্থ অধিদপ্তর বা দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাফ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া বৈষম্য নিরসনের লক্ষে মাধ্যমিক স্তরের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীকরণ করা, বিগত সরকারের যেসব শিক্ষক ১৫ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে আছেন তাদের বদলি করা, মাউশির নিয়োগ বিধি-২০২১ সংশোধন করা, শিক্ষা সংস্কারে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা।

‘বঞ্চিত’দের খুঁজতে কমিটি
বিগত ১৫ বছরে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের প্রতিকারের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। পাঁচ সদস্যের এই কমিটি ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।

১৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। সাবেক অর্থ সচিব ও বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে এই কমিটির আহ্বায়ক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে কমিটিতে।

এই কমিটি আবেদন করার সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবে এবং প্রতিকারের বিষয়ে সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বা একসঙ্গে জমা দিতে পারবে। তবে আদালতের সুস্পষ্ট আদেশ রয়েছে এমন বিষয়গুলো এই কমিটির আওতার বাইরে থাকবে। কমিটি অনধিক তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে।

এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই কমিটির কাজের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি যথোপযুক্ত দপ্তর ও প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা এবং কমিটি প্রধানের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি যথোপযুক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করবে।

জনপ্রশাসনের এক মাসের প্রতিবেদন
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে গত ৮ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনপ্রশাসন থেকে যেসব কাজ হয়েছে তার একটি বিবরণ প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে, শুধু আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত পিএসসির সুপারিশ করা অনেক প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ আগস্টের পর ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আর ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের হাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সেজন্য যারা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপস্থিত হতে পারেননি, তাদের পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা গ্রহণের জন্য পিএসসি ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া ২৫৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যাচাই-বাছাই করার জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি) পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ামাত্র নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

৬৭ জনের চুক্তি বাতিল ও ২৪ জনকে চুক্তিতে নিয়োগ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতি বঞ্চিত এবং অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পাওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বর্তমান সরকারের আমলে গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৭ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তি নিয়োগ দিয়েছিল বিগত সরকার। শূন্যপদগুলোতে জুলাই চেতনার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুনভাবে ২৪ জন কর্মকর্তাকে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অতীত কার্যকলাপ বিবেচনায় ৬ জন সচিব, ৮ জন অতিরিক্ত সচিব, ১০ জন যুগ্ম সচিবকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী বাধ্যতামূলকভাবে জমার নির্দেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসিদের প্রত্যাহার, দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তুলতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন ও শৃঙ্খলা সংহত করার লক্ষ্যে বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন শেখ হাসিনা। এর পর ৮ আগস্ট শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে বিতর্ক
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি (সরকারি কর্মকমিশন) সুপারিশ করলেও অনেকে নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন। গত এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৯৮টি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনপ্রশাসনে ১৩৫ জনকে অতিরিক্ত সচিব, ২২৭ জনকে যুগ্মসচিব ও ১২০ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। মোট ৪৮২ জনকে পদোন্নতি পেয়েছেন। পরে অভিযোগ ওঠে, পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে ‘বিতর্কিত’ ছিলেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর একদিনে ২৫ জেলায় জেলা প্রশাসন (ডিসি) নিয়োগ দেয়া হয়। পরদিন আরো ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়। দুই দিনে ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।

ডিসি পদে নিয়োগপ্রত্যাশী উপসচিব পদমর্যাদার ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এনিয়ে নিজেরা প্রায় হাতাহাতি লিপ্ত হন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন।

‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের দাবি, ডিসি নিয়োগ পাওয়া প্রায় সবাই বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তারা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চান। অসন্তোষের মুখে ১১ সেপ্টেম্বর ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৯ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল এবং আরেক জেলার ডিসিকে ওএসডি করা হয়।

ডিসি নিয়োগপ্রত্যাশী একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ ও অনুরোধে তারা আপাতত ‘চুপ’ আছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সহকর্মীদের ভুল তথ্য দেয়া ও তথ্য গোপন করার কারণেই এসব হয়েছে। তারা ১৫ দিন রাত ১১টা পর্যন্ত ডিসিদের ফিটলিস্ট করতে ইন্টারভিউ নিয়েছেন।

ফিটলিস্ট তৈরিতে ৬০০ অফিসারের ইন্টারভিউ নেয়া হয় জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, কর্মকর্তাদের আরও সচেতনতার সঙ্গে কাজ করা উচিত।

স্বাস্থ্যের ডিজি নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিনকে গত ১৮ আগস্ট সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারীদের একাংশের বাধার মুখে তিনি অফিসে ঢুকতে পারেননি।

গত ১৯ আগস্ট তার পদত্যাগের দাবিতে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে এক সভায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সামনেই হট্টগোল করেন চিকিৎসক-কর্মচারীরা। এক পর্যায়ে রোবেদ আমিনকে ডিজির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে ১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি ডা. এবিএম খুরশিদ আলমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।

ছবি

সাড়ে ২০ লাখ খরচেই চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন

ছবি

সত্যিকারের জনবান্ধব পুলিশ হোন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে পারে বিশ্বব্যাংক, জানালেন কর্মকর্তা

ছবি

ট্রাফিক সমস্যা ও চাঁদাবাজি বন্ধে ডিএমপিকে একগুচ্ছ নির্দেশনা

ছবি

মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

বাংলালিংক প্রতিনিধিদের মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর আহবান জানালেন নাহিদ ইসলাম

এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, সালমানসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১৭ মামলা

ছবি

পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ

ছবি

‘নাশকতা ও অরাজকতা রুখে দিতে’ সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী বিচারিক ক্ষমতা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন

ছবি

আন্দোলনে শহীদদের মামলা নিয়ে ব্যবসা চলছে : সারজিস আলম

ছবি

আন্দোলনে নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ, আহতরা ১ লাখ

ছবি

একদিনে ডেঙ্গু কেড়ে নিলো ৬ জনের প্রাণ

দেড়মাসে জামিনে বেরিয়েছে ৪৩ শীর্ষ অপরাধী, জঙ্গি ও আলোচিত বন্দী

ছবি

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান পদে পরিবর্তন, এবার দায়িত্ব পেলেন আলী রীয়াজ

ছবি

মেট্রোরেলে ১১ ঘণ্টা পর মতিঝিল অংশে চলাচল শুরু

ছবি

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে মেলে এমন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ছবি

আইন সচিব হলেন গোলাম রব্বানী

ছবি

ঢাকায় দুই দিনের সফরে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেইজার

ছবি

ত্বকী হত্যা: পুনরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে র‌্যাব

ছবি

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ

ছবি

জনবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা—জানালেন সচিব

ছবি

গণহত্যায় উসকানিদাতাদের অবশ্যই বিচার হবে: নাহিদ

ছবি

কাজে না ফেরা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বন্যায ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে ধানের চারা বিতরণ ক‌রলো বি‌জি‌বি

ত্রিমুর্খী সংঘর্ষে নারী পোশাক শ্রমিক নিহত, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর শান্ত আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল

যৌথ বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযানের সময় ময়মনসিংহে যুবদল নেতা নিহত

ছবি

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী

রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে আমাদের কোন অভিপ্রায় নাই: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছবি

৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে ছাত্ররাজনীতি শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, নিষিদ্ধ চান ৮৪ শতাংশ

ছবি

জার্মানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে ১০০ কোটি ইউরো সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি

ত্রিমুর্খী সংঘর্ষে নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

নগদে প্রশাসক নিয়োগ কেন অবৈধ নয়, হাইকোর্টের রুল

ছবি

বাংলাদেশে এডিবির নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পেলেন হোয়ে ইউন জিয়ং

ছবি

বাংলাদেশের সংস্কার ত্বরান্বিত করতে বিশ্ব ব্যাংকের ২০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি

tab

জাতীয়

পদোন্নতি-পদায়ন ‘বঞ্চিতদের’ সামলাতে প্রশাসনে হিমশিম

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

*পদোন্নতি চান ২৫ ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ১৯৪ উপসচিব
*মাউশিতে বিক্ষোভ শিক্ষা কর্মকর্তাদের
*বঞ্চিতের প্রতিকারে কমিটি
*কর্মীদের অসন্তোষে বার বার বদল স্বাস্থ্যের ডিজি

পদোন্নতি, পদায়ন ও বঞ্চিতদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি প্রশাসন। বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তাদের ‘স্বাভাবিক’ কার্যক্রমে ফেরাতে পারছে না প্রশাসন। পদোন্নতি নিয়ে তারা বৈষম্যের অভিযোগ করছেন। কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বার বার মহাপরিচালক সরাতে হচ্ছে।

পদোন্নতির দাবিতে এবার সরব হয়েছেন বিসিএস ২৫ ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ প্রায় দুইশ’ কর্মকর্তা। তারা দাবি আদায়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাথে দেখা করেন। তাদের অভিযোগ, পদোন্নতি দিতে নানা টালবাহানা করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশি অধিদপ্তরের (শিক্ষা ভবন) সামনে মঙ্গলবার দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দুটি সংগঠনের কর্মীরা। দাবি আদায়ের জন্য দুই গ্রুপের অবস্থান নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

বিরূপ পরিস্থিতিতে মাউশির দাপ্তরিক ও সেবা কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কারণ মাউশির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই মঙ্গলবার নিজ নিজ দপ্তরে যেতে পারেননি। মহাপরিচালক এবিএম রেজাউল করীমসহ মাউশির পরিচালকদের কাউকে কাউকে মন্ত্রণালয়ে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম রেজাউল করীম সংবাদকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রুপের দাবি-দাওয়ার চাপে তারা কোনো কাজই করতে পারছেন না।

পদোন্নতি চান ২৫ ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ১৯৪ কর্মকর্তা :
উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি চান প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বাকি ২৫ ক্যাডারের ১৯৪ জন ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা। এ দাবিতে তারা মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে দেখা করেছেন।

‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দফায় দফায় পদোন্নতি দেয়া হলেও তাদের শুধু আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এনিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ি করছেন। দাবি আদায়ে তারা আজও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে যাবেন বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অর্থ বিভাগের উপসচিব জেহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে গেছি, তাকে সবকিছু বলেছি। উনি তখন বললেন, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যদি তারিখ দেন, তবে আমি সেদিন মিটিং আয়োজন করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে যাই। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সচিব সময় চাইলেই আমি সময় দেবো। আমরা এটা যখন আজ (মঙ্গলবার) আবার জনপ্রশাসন সচিবকে বললাম, তিনি বললেন, তোমরা তো সিস্টেমই জানো না। আমরা আবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এটা বললে তিনি বলেন যে আমি যেটা বলেছি সেটাইতো নিয়ম। আমি তো জানি না উনি রেডি কিনা, উনি সময় চাইলেই আমি সময় দেবো। আমরা এভাবেই ইনি এবং উনির মধ্যে আছি।’

বিগত সরকারের সময় পদোন্নতি ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন দাবি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুরুল আমিন বলেন, ‘আমরা বিসিএস ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্য ২৫ ক্যাডারের ১৯৪ জন বঞ্চিত উপসচিব। আমাদের সঙ্গে যারা উপসচিব হয়েছিলেন তারা অনেকেই যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।’

তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন জানিয়ে নুরুল আমিন বলেন, ‘আমাদের পদোন্নতির যৌক্তিকতা বুঝিয়েছি; তারাও রাজি হয়েছেন। সব প্রস্তুতি থাকলেও এসএসবি সভা ডাকা নিয়ে টালবাহানা করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।’

মাউশিতে দিনব্যাপী বিক্ষোভ
মাউশির সামনে দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষা প্রশাসনের দুই পক্ষের অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে দিনব্যাপী উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

‘একদফা এক দাবি, এন্ট্রিপদ নবম গ্রেডে ধরে চারস্তরীয় একাডেমি পদসোপান চাই’- এমন ব্যানারে একটি পক্ষ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অন্য পক্ষটি ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের’ ব্যানারে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য অবস্থান নেয়।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক খোকন ও সভাপতি লিয়াকত আলী এবং ‘বামাউশি’ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব অহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বৈষম্য নিরসনে’ তারা সাতদফা দাবি তুলে ধরেন।

এতে বলা হয়, ‘পদোন্নতির মাধ্যমে জেলা শিক্ষা অফিসারের শতভাগ পদে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদায়ন করতে হবে এবং ৬ষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের চলতি দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের শূন্য পদে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যথাযথ পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল দপ্তর, অধিদপ্তর এবং স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক পদে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনন্থ অধিদপ্তর বা দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাফ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া বৈষম্য নিরসনের লক্ষে মাধ্যমিক স্তরের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীকরণ করা, বিগত সরকারের যেসব শিক্ষক ১৫ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে আছেন তাদের বদলি করা, মাউশির নিয়োগ বিধি-২০২১ সংশোধন করা, শিক্ষা সংস্কারে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা।

‘বঞ্চিত’দের খুঁজতে কমিটি
বিগত ১৫ বছরে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের প্রতিকারের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। পাঁচ সদস্যের এই কমিটি ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।

১৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। সাবেক অর্থ সচিব ও বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে এই কমিটির আহ্বায়ক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে কমিটিতে।

এই কমিটি আবেদন করার সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবে এবং প্রতিকারের বিষয়ে সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বা একসঙ্গে জমা দিতে পারবে। তবে আদালতের সুস্পষ্ট আদেশ রয়েছে এমন বিষয়গুলো এই কমিটির আওতার বাইরে থাকবে। কমিটি অনধিক তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে।

এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই কমিটির কাজের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি যথোপযুক্ত দপ্তর ও প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা এবং কমিটি প্রধানের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি যথোপযুক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করবে।

জনপ্রশাসনের এক মাসের প্রতিবেদন
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে গত ৮ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনপ্রশাসন থেকে যেসব কাজ হয়েছে তার একটি বিবরণ প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে, শুধু আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত পিএসসির সুপারিশ করা অনেক প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ আগস্টের পর ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আর ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের হাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সেজন্য যারা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপস্থিত হতে পারেননি, তাদের পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা গ্রহণের জন্য পিএসসি ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া ২৫৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যাচাই-বাছাই করার জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি) পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ামাত্র নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

৬৭ জনের চুক্তি বাতিল ও ২৪ জনকে চুক্তিতে নিয়োগ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতি বঞ্চিত এবং অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পাওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বর্তমান সরকারের আমলে গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৭ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তি নিয়োগ দিয়েছিল বিগত সরকার। শূন্যপদগুলোতে জুলাই চেতনার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুনভাবে ২৪ জন কর্মকর্তাকে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অতীত কার্যকলাপ বিবেচনায় ৬ জন সচিব, ৮ জন অতিরিক্ত সচিব, ১০ জন যুগ্ম সচিবকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী বাধ্যতামূলকভাবে জমার নির্দেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসিদের প্রত্যাহার, দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তুলতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন ও শৃঙ্খলা সংহত করার লক্ষ্যে বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন শেখ হাসিনা। এর পর ৮ আগস্ট শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে বিতর্ক
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি (সরকারি কর্মকমিশন) সুপারিশ করলেও অনেকে নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন। গত এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৯৮টি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনপ্রশাসনে ১৩৫ জনকে অতিরিক্ত সচিব, ২২৭ জনকে যুগ্মসচিব ও ১২০ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। মোট ৪৮২ জনকে পদোন্নতি পেয়েছেন। পরে অভিযোগ ওঠে, পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে ‘বিতর্কিত’ ছিলেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর একদিনে ২৫ জেলায় জেলা প্রশাসন (ডিসি) নিয়োগ দেয়া হয়। পরদিন আরো ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়। দুই দিনে ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।

ডিসি পদে নিয়োগপ্রত্যাশী উপসচিব পদমর্যাদার ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এনিয়ে নিজেরা প্রায় হাতাহাতি লিপ্ত হন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন।

‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের দাবি, ডিসি নিয়োগ পাওয়া প্রায় সবাই বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তারা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চান। অসন্তোষের মুখে ১১ সেপ্টেম্বর ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৯ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল এবং আরেক জেলার ডিসিকে ওএসডি করা হয়।

ডিসি নিয়োগপ্রত্যাশী একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ ও অনুরোধে তারা আপাতত ‘চুপ’ আছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সহকর্মীদের ভুল তথ্য দেয়া ও তথ্য গোপন করার কারণেই এসব হয়েছে। তারা ১৫ দিন রাত ১১টা পর্যন্ত ডিসিদের ফিটলিস্ট করতে ইন্টারভিউ নিয়েছেন।

ফিটলিস্ট তৈরিতে ৬০০ অফিসারের ইন্টারভিউ নেয়া হয় জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, কর্মকর্তাদের আরও সচেতনতার সঙ্গে কাজ করা উচিত।

স্বাস্থ্যের ডিজি নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিনকে গত ১৮ আগস্ট সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারীদের একাংশের বাধার মুখে তিনি অফিসে ঢুকতে পারেননি।

গত ১৯ আগস্ট তার পদত্যাগের দাবিতে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে এক সভায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সামনেই হট্টগোল করেন চিকিৎসক-কর্মচারীরা। এক পর্যায়ে রোবেদ আমিনকে ডিজির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে ১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি ডা. এবিএম খুরশিদ আলমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।

back to top