alt

জাতীয়

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই জনকে পিটিয়ে হত্যা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে পিটিয়ে হত্যার আগে তফাজ্জল হোসেন নামে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ভাত খাওয়ান শিক্ষার্থীরা (বামে)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটুনিতে হত্যার শিকার ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ, তাকে বেশ কয়েক দফা পেটানো হয় (ডানে)-সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুইজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে চোর সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এক বন্ধু। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীমকে দফায় দফায় পেটানো হয়। ঢাবির হত্যার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন ও এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রোববার রাজশাহীতে গণপিটুনিতে আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত আবদুল আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। নিহত মাসুদ গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি কন্যাসন্তানের বাবা হন। চাকরির সুবাদে সপরিবার তিনি বিনোদপুরে থাকতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মাসুদ রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে রাজশাহী বিনোদপুর বাজারে ওষুধ কেনার জন্য এলে গণপিটুনির শিকার হন। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিক্ষার্থীদের একটি দল মতিহার থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে সেখান থেকে নেওয়া হয় বোয়ালিয়া থানায়। এরপর শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল মাসুদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদের মৃত্যু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে চোর সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এক বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথি কক্ষে ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে ৩২ বছর বয়সী তোফাজ্জল হোসেন নির্যাতনের শিকার হন। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার কী হয়েছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক বলেন, ‘ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ছিল। তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নে।

ঢাকা মেডিকেল মর্গে তার লাশ শনাক্ত করেন বন্ধু বেলাল গাজী। তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টটিংয়ে মাস্টার্স করলেও মানসিক সমস্যার কারণে তোফাজ্জল কোনো কাজকর্ম করছিল না। ‘গত ৩-৪ বছর ধরে তার এই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভবঘুরের মতো বেড়াত সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশেও থাকত অনেক সময়।’

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর তাকে গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করা হয়। পিটুনির পর ক্যান্টিনে নিয়ে খাবারও খাওয়ানো হয় তোফাজ্জলকে এবং সেই ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর আবার চলে দীর্ঘ জেরা আর মারধর।

পরে অবস্থার অবনতি হলে রাত ১২টার দিকে তোফাজ্জলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে যান। তোফাজ্জলের মৃত্যুর খবরটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন অনেকে।

৫ জনকে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেন নামে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ যুবককে হত্যার ঘটনায় ‘অজ্ঞাত কিছু ছাত্রের’ বিরুদ্ধে মামলা করার পর ৫ জনকে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।’ তোফাজ্জলকে মারধর করার অভিযোগে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের মোহাম্মদ সুমন, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ এবং গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহকে থানায় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদেরকে হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি জানান শাহবাগ থানার এসআই আল আমীন।

হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন
এই ঘটনার তদন্তে ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে গঠন করা এই কমিটিকে সন্ধ্যার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হলটির আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক এম এম তৌহিদল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।

দুঃখ প্রকাশ
তোফাজ্জলকে হত্যার ঘটনাটি ‘অনাকাক্সিক্ষত’ উল্লেখ করে, দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংঘটিত অমানবিক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুঃখিত ও মর্মাহত। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

প্রক্টরিয়াল টিম বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালবিলম্ব না করে ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে এতে আরও বলা হয়, ‘তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে।’এ বিষয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। কেউ চুরি করতে আসলেও তাকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারও নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘এ ঘটনাটি আমরা ন্যায্যতার সঙ্গে সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

ঢাবিতে হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি ছাত্র সংগঠনগুলোর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে মোবাইল চোর সন্দেহে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের আহ্বান জানাচ্ছি। মব ‘ইনজাস্টিস’ দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টর, প্রভোস্টকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে গণ?ধোলাই?য়ে হত্যার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির।

জাহাঙ্গীরনগরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত?্যু হয় বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার ওসি মো. আবু বকর সিদ্দিক। নিহত শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার মোল্লাবাড়ীর ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। বুধবার রাতে তাকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ?্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার ঘটনায় শামীম সামনের সারিতে ছিলেন এমন অভিযোগ তুলে বুধবার বিকালে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শামীমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নেওয়া হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি আশুলিয়া থানায় জানালে পুলিশ শামীম মোল্লাকে আটক করে সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘গণপিটুনির খবর পেয়ে নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩৯ ব্যাচের এক সাবেক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। পরে তাকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।’ ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন,‘খবর পেয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে মারধরের শিকার যুবককে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি।’ গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমাদের এখানে আনার পর পরীক্ষা করে দেখি তিনি মৃত। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রাথমিকভাবে মারধরের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৫ দফা মারধরের পর দেয়া হয় পুলিশে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে কারও জন্য অপেক্ষায় ছিলেন শামীম, হঠাৎ পেছন থেকে তিনজন এসে তাকে জাপটে ধরে মারধর শুরু করেন। এরপর আরও চার দফায় বেধড়ক মারধরের পর তাকে দেয়া হয় পুলিশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্রকে মারধরের ঘটনার সূত্রপাত বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হলেও রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় প্রক্টরিয়াল বডি। এরপর পুলিশ শামীমকে হাসপাতালে নিলে রাত সোয়া ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে মোল্লা শামীম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেই থাকতেন।

ঘটনার বর্ণনায় দুইজন শিক্ষার্থী বলেন, বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে মহাসড়কের পাশে এক স্বজনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন ছিলেন শামীম। তাকে দেখতে পেয়ে তিন শিক্ষার্থী ধরতে যান। একজন তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে ফেলেন। সেখানে এক দফা তাকে মারধর করা হয়। এরপর প্রান্তিক গেইটের ভেতরে যেখানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে কাপড় বিক্রি হয়, সেখানে নিয়ে শামীমকে আরেক দফা মারধর করা হয়। এরপর তাকে জয় বাংলা গেইটে নিয়ে আরেকবার মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে তুলে দেয়া হয়। তারা শামীমকে প্রক্টর অফিসের পাশের একটি কক্ষে রাখেন। সেখানেও তাকে আরও দুই দফা মারধর করা হয়। দুই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, খবর শুনে পুলিশ আগেই এসেছিল, তবে প্রক্টর অফিসের ওই কক্ষে তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শামীমকে পুলিশে হস্তান্তর করা হলে তাকে ‘হাঁটিয়ে নিয়ে’ গাড়িতে তোলে পুলিশ।

ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় এক সমন্বয়ককে অব্যাহতি
সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই বিবৃতির নিচে লেখা ছিল ‘বার্তা প্রেরক, সমন্বয়করা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’। বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকায় আহসান লাবিবকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অব্যাহতি বহাল থাকবে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহ্বান জানাচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতু। জিতু বলেন, বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে মারধরের ঘটনায় আহসান লাবিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পরে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম আহমেদের মৃত্যু হয়। আহসান লাবিব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হত্যার ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যায়। সেখানে উপাচার্যের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। অর্থনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতাকে দুই দফায় গণপিটুনি দেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা। কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দেয়া হোক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল
‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারেও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া মঞ্চ থেকে এই মিছিলটি বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

পুরনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতন : নাগরিক কমিটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনাকে পুরনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, প্রক্টোরিয়াল বডি কোনোভাবে এর দায় এড়াতে পারেন না। বৃহস্পতিবার কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে হত্যাকাণ্ডের সময় এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নীরব ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালনের নিন্দা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতেই পুরনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় নির্যাতন করে প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর এবং পরবর্তীতে থানায় পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে।’ জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ‘মব-ভায়োলেন্সে’র মতো সব ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ও উপাদানের শিগগরিই বিলোপ করতে হবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা করতে হবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সব অপরাধের বিচারের দায়িত্ব আদালতের। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তারা অপরাধ করছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

ছবি

পৈতৃক ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন মৃৎশিল্পের কারিগররা

বিচার শুরু হলেই শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আসিফ নজরুল

ছবি

অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করবে ছয়টি সংস্কার কমিশন

ছবি

অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করবে ছয়টি সংস্কার কমিশন

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নতুন আইনি কাঠামো অনুমোদিত

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী জমার নীতিমালা অনুমোদিত

গণপিটুনিতে অভিযুক্তদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির

সরকারের উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরনী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

ছবি

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থী আটক

প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ সদস্য বেপরোয়া,অবশেষে গ্রেফতার

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত

ছবি

শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের নামে মামলা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৯, ধর্ষণের শিকার ৪: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

ছবি

ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজন আটক

ছবি

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে

ছবি

আজ থেকে শুক্রবারও মেট্রোরেল, খুলছে কাজীপাড়া স্টেশনও

ছবি

সাড়ে ২০ লাখ খরচেই চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন

ছবি

সত্যিকারের জনবান্ধব পুলিশ হোন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে পারে বিশ্বব্যাংক, জানালেন কর্মকর্তা

ছবি

ট্রাফিক সমস্যা ও চাঁদাবাজি বন্ধে ডিএমপিকে একগুচ্ছ নির্দেশনা

ছবি

মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

বাংলালিংক প্রতিনিধিদের মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর আহবান জানালেন নাহিদ ইসলাম

এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, সালমানসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১৭ মামলা

ছবি

পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ

ছবি

‘নাশকতা ও অরাজকতা রুখে দিতে’ সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী বিচারিক ক্ষমতা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন

ছবি

আন্দোলনে শহীদদের মামলা নিয়ে ব্যবসা চলছে : সারজিস আলম

ছবি

আন্দোলনে নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ, আহতরা ১ লাখ

ছবি

একদিনে ডেঙ্গু কেড়ে নিলো ৬ জনের প্রাণ

দেড়মাসে জামিনে বেরিয়েছে ৪৩ শীর্ষ অপরাধী, জঙ্গি ও আলোচিত বন্দী

ছবি

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান পদে পরিবর্তন, এবার দায়িত্ব পেলেন আলী রীয়াজ

ছবি

মেট্রোরেলে ১১ ঘণ্টা পর মতিঝিল অংশে চলাচল শুরু

ছবি

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে মেলে এমন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ছবি

আইন সচিব হলেন গোলাম রব্বানী

tab

জাতীয়

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই জনকে পিটিয়ে হত্যা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে পিটিয়ে হত্যার আগে তফাজ্জল হোসেন নামে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ভাত খাওয়ান শিক্ষার্থীরা (বামে)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটুনিতে হত্যার শিকার ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ, তাকে বেশ কয়েক দফা পেটানো হয় (ডানে)-সংবাদ

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুইজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে চোর সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এক বন্ধু। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীমকে দফায় দফায় পেটানো হয়। ঢাবির হত্যার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন ও এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রোববার রাজশাহীতে গণপিটুনিতে আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত আবদুল আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। নিহত মাসুদ গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি কন্যাসন্তানের বাবা হন। চাকরির সুবাদে সপরিবার তিনি বিনোদপুরে থাকতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মাসুদ রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে রাজশাহী বিনোদপুর বাজারে ওষুধ কেনার জন্য এলে গণপিটুনির শিকার হন। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিক্ষার্থীদের একটি দল মতিহার থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে সেখান থেকে নেওয়া হয় বোয়ালিয়া থানায়। এরপর শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল মাসুদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদের মৃত্যু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে চোর সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এক বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথি কক্ষে ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে ৩২ বছর বয়সী তোফাজ্জল হোসেন নির্যাতনের শিকার হন। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার কী হয়েছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক বলেন, ‘ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ছিল। তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নে।

ঢাকা মেডিকেল মর্গে তার লাশ শনাক্ত করেন বন্ধু বেলাল গাজী। তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টটিংয়ে মাস্টার্স করলেও মানসিক সমস্যার কারণে তোফাজ্জল কোনো কাজকর্ম করছিল না। ‘গত ৩-৪ বছর ধরে তার এই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভবঘুরের মতো বেড়াত সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশেও থাকত অনেক সময়।’

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর তাকে গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করা হয়। পিটুনির পর ক্যান্টিনে নিয়ে খাবারও খাওয়ানো হয় তোফাজ্জলকে এবং সেই ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর আবার চলে দীর্ঘ জেরা আর মারধর।

পরে অবস্থার অবনতি হলে রাত ১২টার দিকে তোফাজ্জলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে যান। তোফাজ্জলের মৃত্যুর খবরটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন অনেকে।

৫ জনকে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেন নামে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ যুবককে হত্যার ঘটনায় ‘অজ্ঞাত কিছু ছাত্রের’ বিরুদ্ধে মামলা করার পর ৫ জনকে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।’ তোফাজ্জলকে মারধর করার অভিযোগে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের মোহাম্মদ সুমন, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ এবং গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহকে থানায় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদেরকে হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি জানান শাহবাগ থানার এসআই আল আমীন।

হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন
এই ঘটনার তদন্তে ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে গঠন করা এই কমিটিকে সন্ধ্যার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হলটির আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক এম এম তৌহিদল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।

দুঃখ প্রকাশ
তোফাজ্জলকে হত্যার ঘটনাটি ‘অনাকাক্সিক্ষত’ উল্লেখ করে, দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংঘটিত অমানবিক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুঃখিত ও মর্মাহত। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

প্রক্টরিয়াল টিম বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালবিলম্ব না করে ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে এতে আরও বলা হয়, ‘তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে।’এ বিষয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। কেউ চুরি করতে আসলেও তাকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারও নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘এ ঘটনাটি আমরা ন্যায্যতার সঙ্গে সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

ঢাবিতে হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি ছাত্র সংগঠনগুলোর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে মোবাইল চোর সন্দেহে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের আহ্বান জানাচ্ছি। মব ‘ইনজাস্টিস’ দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টর, প্রভোস্টকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে গণ?ধোলাই?য়ে হত্যার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির।

জাহাঙ্গীরনগরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত?্যু হয় বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার ওসি মো. আবু বকর সিদ্দিক। নিহত শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার মোল্লাবাড়ীর ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। বুধবার রাতে তাকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ?্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার ঘটনায় শামীম সামনের সারিতে ছিলেন এমন অভিযোগ তুলে বুধবার বিকালে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শামীমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নেওয়া হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি আশুলিয়া থানায় জানালে পুলিশ শামীম মোল্লাকে আটক করে সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘গণপিটুনির খবর পেয়ে নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩৯ ব্যাচের এক সাবেক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। পরে তাকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।’ ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন,‘খবর পেয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে মারধরের শিকার যুবককে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি।’ গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমাদের এখানে আনার পর পরীক্ষা করে দেখি তিনি মৃত। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রাথমিকভাবে মারধরের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৫ দফা মারধরের পর দেয়া হয় পুলিশে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে কারও জন্য অপেক্ষায় ছিলেন শামীম, হঠাৎ পেছন থেকে তিনজন এসে তাকে জাপটে ধরে মারধর শুরু করেন। এরপর আরও চার দফায় বেধড়ক মারধরের পর তাকে দেয়া হয় পুলিশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্রকে মারধরের ঘটনার সূত্রপাত বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হলেও রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় প্রক্টরিয়াল বডি। এরপর পুলিশ শামীমকে হাসপাতালে নিলে রাত সোয়া ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে মোল্লা শামীম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেই থাকতেন।

ঘটনার বর্ণনায় দুইজন শিক্ষার্থী বলেন, বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে মহাসড়কের পাশে এক স্বজনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন ছিলেন শামীম। তাকে দেখতে পেয়ে তিন শিক্ষার্থী ধরতে যান। একজন তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে ফেলেন। সেখানে এক দফা তাকে মারধর করা হয়। এরপর প্রান্তিক গেইটের ভেতরে যেখানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে কাপড় বিক্রি হয়, সেখানে নিয়ে শামীমকে আরেক দফা মারধর করা হয়। এরপর তাকে জয় বাংলা গেইটে নিয়ে আরেকবার মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে তুলে দেয়া হয়। তারা শামীমকে প্রক্টর অফিসের পাশের একটি কক্ষে রাখেন। সেখানেও তাকে আরও দুই দফা মারধর করা হয়। দুই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, খবর শুনে পুলিশ আগেই এসেছিল, তবে প্রক্টর অফিসের ওই কক্ষে তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শামীমকে পুলিশে হস্তান্তর করা হলে তাকে ‘হাঁটিয়ে নিয়ে’ গাড়িতে তোলে পুলিশ।

ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় এক সমন্বয়ককে অব্যাহতি
সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই বিবৃতির নিচে লেখা ছিল ‘বার্তা প্রেরক, সমন্বয়করা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’। বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকায় আহসান লাবিবকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অব্যাহতি বহাল থাকবে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহ্বান জানাচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতু। জিতু বলেন, বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে মারধরের ঘটনায় আহসান লাবিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পরে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম আহমেদের মৃত্যু হয়। আহসান লাবিব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হত্যার ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যায়। সেখানে উপাচার্যের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। অর্থনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতাকে দুই দফায় গণপিটুনি দেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা। কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দেয়া হোক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল
‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারেও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া মঞ্চ থেকে এই মিছিলটি বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

পুরনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতন : নাগরিক কমিটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনাকে পুরনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, প্রক্টোরিয়াল বডি কোনোভাবে এর দায় এড়াতে পারেন না। বৃহস্পতিবার কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে হত্যাকাণ্ডের সময় এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নীরব ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালনের নিন্দা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতেই পুরনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় নির্যাতন করে প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর এবং পরবর্তীতে থানায় পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে।’ জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ‘মব-ভায়োলেন্সে’র মতো সব ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ও উপাদানের শিগগরিই বিলোপ করতে হবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা করতে হবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সব অপরাধের বিচারের দায়িত্ব আদালতের। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তারা অপরাধ করছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

back to top