alt

জাতীয়

সংসদ নয়, বিচারপতি অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে : রিভিউ রায়

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৭ সালে আপিল বিভাগের দেয়া রায় শেষ পর্যন্ত বহাল রইলো। ওই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অভিশংসনের (অপসারণ) ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়ার যে উদ্যোগ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নিয়েছিল তা আর টিকলো না। এখন থেকে বিচারপতিদের অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমেই হবে।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। রোববার (২০ অক্টোবর) আবেদনের শুনানি শেষে কিছু নির্দেশনাসহ তা নিষ্পত্তি করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। রিভিউ আদেশে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্বের রায় বহাল রাখা হয়েছে।

এখন কোনো বিচারপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে বা পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

বিচারপতি অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে গত সরকারের সময় যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, এই রিভিউ রায়ের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটল বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।

আইন উপদেষ্টা
বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করার বিধান ফিরে আসায় বিচারকদের নিয়ে ‘বিভিন্ন মহলে জমে থাকা ক্ষোভ’ নিরসনের একটি ‘সুযোগ তৈরি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতন পরবর্তী পরিস্থিতিতে এ ঘটনা ‘বিশেষ তাৎপর্য’ বহন করছে।

৩ বার সংবিধান সংশোধন
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণিত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়।

পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আনে। এতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

সংবিধানের এই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করে সে সময় প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন।

সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের টানাপড়েন তৈরি হয়।

রিট, হাইকোর্টের রায়
ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ৯ আইনজীবী। শুনানি শেষে ২০১৬ বছরের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘বলতে দ্বিধা নেই, ষোড়শ সংশোধনী একটি কালারেবল লেজিসলেশন (কোনো কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্ম আবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে), যা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন। এটা সংবিধানের দুটি মূল কাঠামো ৯৪(৪)ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন। একইসঙ্গে সংবিধানের ৭(বি) অনুচ্ছেদকেও আঘাত করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে রুল যথাযথ (অ্যবসলিউট) ঘোষণা করা হল। ষোড়শ সংশোধনী আইন ২০১৪ কালারেবল, এটি বাতিল এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হল।’

অ্যামিকাস কিউরির মতামত
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ৮ মে আপিল বিভাগের ‘ফুলবেঞ্চে’ শুনানি শুরু হয়। গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালতবন্ধু হিসেবে ১০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্য শোনে। তাদের মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অন্য ৯ অ্যামিকাস কিউরি- ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

**আপিল বিভাগের রায়**
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ ওই বছর ৩ জুলাই যে রায় দেয়, তাতে হাই কোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ (বাদ দিয়ে) করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ‘সর্বসম্মতভাবে’ খারিজ করে দেয়া হয়।

ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। সেখানে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল এবং ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ নম্বর ধারা পুনর্বহাল করা হয়। তাতেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধানে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি কার্যকর করতে বিচারকদের জন্য ৩৯ দফার নতুন একটি আচরণবিধি চূড়ান্ত করে দেয় আপিল বিভাগ। ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনী যেহেতু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেহেতু ওই সংশোধনীর আগে যে ব্যবস্থা ছিল, তা পুনঃস্থাপিত হল।

তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত, তার কারণ এটা নয় যে তা অভ্রান্ত; সেসব সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত, কারণ তা চূড়ান্ত হয়েছে সংবিধানের ভিত্তিতে।’

**সিনহার পদত্যাগ**
ওই রায় সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েনে নতুন মাত্রা দেয়।

প্রধান বিচারপতি সিনহা তার লেখা রায়ে গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন।

ওই পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘খাটো করা হয়েছে’, এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সরকারের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও দলটির সমর্থক আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন।

একপর্যায়ে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে যান। তাকে অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও তখন আলোচনা ছিল। যদিও ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি বিব্রত। পরে অবশ্য বিদেশে থাকা অবস্থায়ই তিনি পদত্যাগ করেন। আর দেশে ফেরেননি।

পরবর্তীতে বিদেশে থেকে লেখা একটি বইয়ে এস কে সিনহা দাবি করেন, রায়ের পর ‘সরকারের চাপের মুখে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য’ হয়েছিলেন। তবে তার সেসব দাবিকে ‘মনগড়া’ বলে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেন।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি ও চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

ঋণ জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের মামলায় ২০২১ সালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে চার বছর এবং সাত বছরের কারাদ- দেয়।

**ঝুলে আছে ৭ বছর**
নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি অপসারণে কোনো বাধা ছিল না।

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর সাত বছরেও আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি।

এই জটিলতায় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল আর গঠন হয়নি। ফলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পরও হাই কোর্টের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ঝুলে রয়েছে পাঁচ বছর ধরে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের ‘দোসর’ বিচারকদেরও অপসারণের দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে গত সপ্তাহে ১২ জন বিচারককে আপাতত বেঞ্চ না দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন প্রধান বিচারপতি। তখনই ষোড়শ সংশোধনী মামলা ফের আলোচনায় আসে।

আন্দোলনের সূত্র ধরে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদনটি রোববার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।

**রিভিউ শুনানি**
রোববার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানি করেন।

রায়ের পর রুহুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ থেকে ৮ পর্যন্ত ধারা বাতিল করা হয়েছিল। আপিল বিভাগ সেগুলো পুনর্বহাল করেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই রায়ের ফলে এখন থেকে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এলে সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ওই বিচারপতিকে অপসারণ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

যে ১২ জন বিচারপতিকে বেঞ্চ দেয়া হয়নি, তাদের ব্যাপারে এখন কী হবে প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জোনরেল বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আগেও নেয়া যেত। কারণ আপিল খারিজের পর রিভিউ হলেও স্থগিতাদেশ ছিল না। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ক্ষমতা তখনও ছিল।’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেন।

**সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল**
ষোড়শ সংশোধনীর আগে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি ধারা পুনর্বহাল হওয়ায় বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তির জন্য ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সময় করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরে এসেছে।

ওই অনুচ্ছেদের পুরনো ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি এবং দু’জন জ্যেষ্ঠ বিচারককে নিয়ে। কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজে অসমর্থ হন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেই যদি তদন্ত চলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।

কাউন্সিলের দায়িত্ব সম্পর্কে ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, বিচারকদের জন্য পালনীয় একটি আচরণবিধি কাউন্সিল নির্ধারণ করে দেবে এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে তদন্ত করবে।

৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি যদি জানতে পারেন যে, কোনো বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করে ফলাফল জানানোর নির্দেশ দিতে পারেন।

তদন্ত করার পর কাউন্সিল যদি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা তার অসমর্থ্যতার প্রমাণ পায় এবং বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানায়, তাহলে ৬ নম্বর দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণের আদেশ দেবেন।

৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কাউন্সিলই নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মতো ক্ষমতা ধারণ করবে।

ছবি

আগামী প্রজন্ম নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে ব্যর্থ হবে না : সড়ক উপদেষ্টা

ছবি

পুলিশের ২৫২ এসআইকে অব্যাহতিতে রাজনৈতিক কারণ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ১৫৭ বাংলাদেশি

ছবি

৫ দিনের রিমান্ডে ব্যারিস্টার সুমন

ছবি

দুর্নীতি-অর্থপাচারের দায়ে পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্টকে ২০ বছরের জেল

ছবি

চট্টগ্রামে একের পর এক ঘাট ইজারা : সাম্পান মাঝিদের কর্ণফুলীতে প্রতিবাদ

হত্যাচেষ্টা মামলায় জেড আই খান পান্নার নাম প্রত্যাহারের আবেদন বাদীর

ছবি

সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের

ছবি

ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার

ছবি

"শেখ হাসিনার পুনর্বাসন হবে না: ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ"

ছবি

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের জন্য এইচপিভি টিকার বিশেষ কর্মসূচি শুরু

ছবি

আগামী বছরের ছুটির তালিকা প্রকাশ: ঈদ ও পূজায় বাড়তি ছুটি

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের মধ্যে সংঘর্ষ

ছবি

মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার : সাখাওয়াত হোসেন

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে নতুন বিতর্ক না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

ছবি

পান্নার নাম বাদ দিতে বাদীর আবেদন

ছবি

হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন : আসিফ নজরুল

ছবি

ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় যুক্ত করা হলো শিক্ষার্থীদের

ছবি

রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

শাহপরীর দ্বীপে নবনির্মিত বেড়িবাঁধের সিসি ব্লকে ধস আতঙ্কে ৪০ হাজার বাসিন্দা

ছবি

গত ১১ বছরে সড়কে প্রাণ হারিয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ

ছবি

বগুড়া-ঠাকুরগাঁও-ঝিনাইদহে ২০০ সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ

ছবি

আইনজীবী জেড আই খান পান্নার হাইকোর্টে আগাম জামিন

ছবি

সব শিক্ষা বোর্ডে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ

ছবি

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা

ছবি

সালাহউদ্দীন নোমান চৌধুরী জাতিসংঘে বাংলাদেশের নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি

ছবি

‘বৈষম্যহীন’ ফলের দাবি : চার শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও, বিক্ষোভ, ‘হামলায়’ আহত কয়েকজন

ছবি

হত্যাচেষ্টার মামলায় আইনজীবী জেড আই পান্না আসামি, নিন্দা জানাল আসক

ছবি

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রণয় ভার্মার বৈঠক,শেখ হাসিনা ইস্যুতে আলোচনা হয়নি

ছবি

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ আবু সাইদ স্নাতক পরীক্ষায় ১৪ তম স্থান অধিকার করেছে

ছবি

কপ-২৯ সম্মেলনের আগে ন্যায়সংগত জলবায়ু অর্থায়নের আহ্বান

ছবি

পল্লী বিদ্যুতের আরও ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্ট্যান্ড রিলিজ

ছবি

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম ঠিক করবে বিইআরসি : জ্বালানি উপদেষ্টা

ছবি

শেখ হাসিনাকে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান

ছবি

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে

tab

জাতীয়

সংসদ নয়, বিচারপতি অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে : রিভিউ রায়

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৭ সালে আপিল বিভাগের দেয়া রায় শেষ পর্যন্ত বহাল রইলো। ওই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অভিশংসনের (অপসারণ) ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়ার যে উদ্যোগ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নিয়েছিল তা আর টিকলো না। এখন থেকে বিচারপতিদের অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমেই হবে।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। রোববার (২০ অক্টোবর) আবেদনের শুনানি শেষে কিছু নির্দেশনাসহ তা নিষ্পত্তি করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। রিভিউ আদেশে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্বের রায় বহাল রাখা হয়েছে।

এখন কোনো বিচারপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে বা পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

বিচারপতি অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে গত সরকারের সময় যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, এই রিভিউ রায়ের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটল বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।

আইন উপদেষ্টা
বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করার বিধান ফিরে আসায় বিচারকদের নিয়ে ‘বিভিন্ন মহলে জমে থাকা ক্ষোভ’ নিরসনের একটি ‘সুযোগ তৈরি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতন পরবর্তী পরিস্থিতিতে এ ঘটনা ‘বিশেষ তাৎপর্য’ বহন করছে।

৩ বার সংবিধান সংশোধন
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণিত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়।

পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আনে। এতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

সংবিধানের এই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করে সে সময় প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন।

সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের টানাপড়েন তৈরি হয়।

রিট, হাইকোর্টের রায়
ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ৯ আইনজীবী। শুনানি শেষে ২০১৬ বছরের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘বলতে দ্বিধা নেই, ষোড়শ সংশোধনী একটি কালারেবল লেজিসলেশন (কোনো কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্ম আবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে), যা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন। এটা সংবিধানের দুটি মূল কাঠামো ৯৪(৪)ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন। একইসঙ্গে সংবিধানের ৭(বি) অনুচ্ছেদকেও আঘাত করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে রুল যথাযথ (অ্যবসলিউট) ঘোষণা করা হল। ষোড়শ সংশোধনী আইন ২০১৪ কালারেবল, এটি বাতিল এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হল।’

অ্যামিকাস কিউরির মতামত
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ৮ মে আপিল বিভাগের ‘ফুলবেঞ্চে’ শুনানি শুরু হয়। গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালতবন্ধু হিসেবে ১০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্য শোনে। তাদের মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অন্য ৯ অ্যামিকাস কিউরি- ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

**আপিল বিভাগের রায়**
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ ওই বছর ৩ জুলাই যে রায় দেয়, তাতে হাই কোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ (বাদ দিয়ে) করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ‘সর্বসম্মতভাবে’ খারিজ করে দেয়া হয়।

ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। সেখানে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল এবং ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ নম্বর ধারা পুনর্বহাল করা হয়। তাতেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধানে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি কার্যকর করতে বিচারকদের জন্য ৩৯ দফার নতুন একটি আচরণবিধি চূড়ান্ত করে দেয় আপিল বিভাগ। ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনী যেহেতু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেহেতু ওই সংশোধনীর আগে যে ব্যবস্থা ছিল, তা পুনঃস্থাপিত হল।

তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত, তার কারণ এটা নয় যে তা অভ্রান্ত; সেসব সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত, কারণ তা চূড়ান্ত হয়েছে সংবিধানের ভিত্তিতে।’

**সিনহার পদত্যাগ**
ওই রায় সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েনে নতুন মাত্রা দেয়।

প্রধান বিচারপতি সিনহা তার লেখা রায়ে গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন।

ওই পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘খাটো করা হয়েছে’, এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সরকারের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও দলটির সমর্থক আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন।

একপর্যায়ে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে যান। তাকে অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও তখন আলোচনা ছিল। যদিও ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি বিব্রত। পরে অবশ্য বিদেশে থাকা অবস্থায়ই তিনি পদত্যাগ করেন। আর দেশে ফেরেননি।

পরবর্তীতে বিদেশে থেকে লেখা একটি বইয়ে এস কে সিনহা দাবি করেন, রায়ের পর ‘সরকারের চাপের মুখে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য’ হয়েছিলেন। তবে তার সেসব দাবিকে ‘মনগড়া’ বলে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেন।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি ও চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

ঋণ জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের মামলায় ২০২১ সালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে চার বছর এবং সাত বছরের কারাদ- দেয়।

**ঝুলে আছে ৭ বছর**
নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি অপসারণে কোনো বাধা ছিল না।

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর সাত বছরেও আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি।

এই জটিলতায় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল আর গঠন হয়নি। ফলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পরও হাই কোর্টের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ঝুলে রয়েছে পাঁচ বছর ধরে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের ‘দোসর’ বিচারকদেরও অপসারণের দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে গত সপ্তাহে ১২ জন বিচারককে আপাতত বেঞ্চ না দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন প্রধান বিচারপতি। তখনই ষোড়শ সংশোধনী মামলা ফের আলোচনায় আসে।

আন্দোলনের সূত্র ধরে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদনটি রোববার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।

**রিভিউ শুনানি**
রোববার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানি করেন।

রায়ের পর রুহুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ থেকে ৮ পর্যন্ত ধারা বাতিল করা হয়েছিল। আপিল বিভাগ সেগুলো পুনর্বহাল করেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই রায়ের ফলে এখন থেকে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এলে সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ওই বিচারপতিকে অপসারণ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

যে ১২ জন বিচারপতিকে বেঞ্চ দেয়া হয়নি, তাদের ব্যাপারে এখন কী হবে প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জোনরেল বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আগেও নেয়া যেত। কারণ আপিল খারিজের পর রিভিউ হলেও স্থগিতাদেশ ছিল না। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ক্ষমতা তখনও ছিল।’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেন।

**সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল**
ষোড়শ সংশোধনীর আগে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি ধারা পুনর্বহাল হওয়ায় বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তির জন্য ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সময় করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরে এসেছে।

ওই অনুচ্ছেদের পুরনো ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি এবং দু’জন জ্যেষ্ঠ বিচারককে নিয়ে। কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজে অসমর্থ হন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেই যদি তদন্ত চলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।

কাউন্সিলের দায়িত্ব সম্পর্কে ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, বিচারকদের জন্য পালনীয় একটি আচরণবিধি কাউন্সিল নির্ধারণ করে দেবে এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে তদন্ত করবে।

৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি যদি জানতে পারেন যে, কোনো বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করে ফলাফল জানানোর নির্দেশ দিতে পারেন।

তদন্ত করার পর কাউন্সিল যদি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা তার অসমর্থ্যতার প্রমাণ পায় এবং বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানায়, তাহলে ৬ নম্বর দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণের আদেশ দেবেন।

৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কাউন্সিলই নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মতো ক্ষমতা ধারণ করবে।

back to top