alt

জাতীয়

চট্টগ্রামে একের পর এক ঘাট ইজারা : সাম্পান মাঝিদের কর্ণফুলীতে প্রতিবাদ

চট্টগ্রাম ব্যুরো : মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একের পর এক ঘাট ইজারার প্রতিবাদে সাম্পান মাঝিদের ধর্মঘট-সংবাদ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) একের পর এক ঘাট ইজারা দেয়ায় প্রতিবাদের ফুঁসে উঠেছে প্রায় ১২ শতাধিক সাম্পান মাঝি। কর্ণফুলী নদীর ১০ ঘাটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত একাধিক সংগঠন। সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলোতে সাম্পান চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করছে এসব সাম্পান মাঝি। বংশ পরম্পরাই জন্মগত পেশাদার পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) সমিতিগুলোকে চসিকের সদরঘাট, অভয়মিত্রঘাট ও বাংলাবাজার নৌঘাট তিনটি না দিয়ে বহিরাগতদের খাস আদায়ের দায়িত্ব দেয়ার প্রতিবাদে মাঝিরা এ কর্মসূচি পালন করছে।

এতে নতুন ব্রিজঘাট, তোতারবাপের হাট, বিডব্লিউ ঘাট, দক্ষিণপাড় পুরাতন ব্রিজঘাট, সদরঘাট, অভয়মিত্র, কর্ণফুলী ঘাট, বাংলা বাজার ঘাট, সল্টগোলা ঘাটে (পাটনিজীবী নাই) ইঞ্জিনচালিত সাম্পান চলাচল বন্ধ দেখা যায়। তবে জরুরি রোগী সেবা ও খাদ্যদ্রব্যের পারাপারে মানবিকতা দেখাচ্ছেন মাঝিরা। নদীর অন্যান্য ঘাটে যাত্রী পারাপার চলছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে নৌঘাটে উপস্থিত সাম্পান মাঝিরা জানান, ২০০৩ সালের পাটনিজীবী নীতিমালা তোয়াক্কা না করে একের পর এক অবৈধভাবে মাঝিদের ঘাট ছাড়া করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে দেয়ালে মাঝি-মাল্লাদের পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়েছে বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে।

চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পেশাগত সাম্পান মাঝি (পাটনিজীবী) থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে পাটনিজীবী নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ইজারা দিচ্ছে। ঘাটহারা মাঝিরা চসিকে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। তাই বৈঠা বর্জন চলছে।

অন্যদিকে, বিগত ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল সরকার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পেশাদার জন্মগত পাটনিজীবী সমিতিকে নৌঘাটগুলো ইজারা দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নির্দেশনাটিও মানছেন না বলে মাঝিদের দাবি।

জানতে চাইলে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি বলেন, ঘাটগুলোর বিষয়ে আপনারা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। এসব উনি ডিল করেন। আমার বরাবরে আসে না এসব বিষয়। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে স্থগিত ইজারা। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভয়মিত্র ঘাটের খাস কালেকশনের জন্য চসিক এস্টেট শাখার বাজার পরিদর্শক দূর্বাদল চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এমনকি এ কাজে লোকবল, যাত্রী পারাপারে নৌকা, সাম্পান সরবরাহসহ অন্যান্য সহযোগিতার জন্য ২১ অক্টোবর থেকে আবু নাসের সাজ্জাদ ও আব্দুল কাদের ফিরোজ নামে দুই ব্যক্তিকে নিয়োজিত করেন। যারা ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড বিএনপি নেতা। এতেই ক্ষেপে গিয়ে বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন ও ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সভাপতি এসএম পেয়ার আলী ও চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

ইছানগর বাংলাবাজার সাম্পান মাঝি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান দয়াল বলেন, চসিকের বোঝা উচিত ঘাট হারালে শত শত মাঝিরা তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করবে। তাদেরকে বাপ-দাদা তিন পুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য না করার বিনীত অনুরোধ জানান চসিকের প্রশাসকের প্রতি। এছাড়াও, অভয়মিত্র ঘাটের অনেক মাঝিদের অভিযোগ চসিকের ১৯টি ঘাট নিয়ে যখন যেমন ইচ্ছা খেলা খেলছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। সব অনিয়মের হেডকোয়ার্টার এই রাজস্ব কর্মকর্তা। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মাঝিরা।

চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতি ও বাংলা বাজার সদরঘাটের মাঝিরা জানান, প্রতি বছর ১৯ ঘাট থেকে রাজস্ব আদায় হতো প্রায় ৬ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু চৌদ্দশত একত্রিশ বাংলায় এসে আইনি জটিলতায় এবার ঘাটগুলো ইজারা দিতে পারেনি চসিক। সে সুযোগে খাস কালেকশনের নামে চমিকের একাধিক অসাধু কর্মকর্তারা নিজের আখের গোছাচ্ছেন।

দৈনিক আদায়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সাদা কাগজে চসিক সিল দিয়ে টাকা পরিশোধের সার্টিফিকেট দেয়া হলেও সেখানে টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। রাজস্বের টাকা লুটপাট করতেই চসিকের গুটিকয়েক কর্মকর্তা এমন অপকৌশল বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে অভয়মিত্র ঘাটের সহযোগি হিসেবে নিয়োজিত ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু নাসের সাজ্জাদ বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিটি করপোরেশন থেকে ঘাট নিয়েছি। কোনো অবৈধভাবে নেইনি। আজ (সোমবার) থেকে খাস কালেকশন করার কথা দৈনিক সাড়ে তিন হাজার করে। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি অবস্থান ধর্মঘট। সাম্পান চলছে না। এতে সাধারণ মানুষজন কষ্ট পাচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এটির সমাধান হোক। ইতোমধ্যে সাম্পান সমিতির মাঝিদের প্রস্তাব দিয়েছি বসার। তবে কোনো আশঙ্কা নেই ভাড়া বাড়ার।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এস.এম পেয়ার আলী বলেন, ‘বৈঠা যার ঘাট তার’ এই দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করবো। প্রতিটি ঘাটের সব সাম্পান মাঝিদের নিয়ে গঠিত সমিতির অনুকূলে ঘাট ইজারা দিতে হবে। বহিরাগতদের ঘাট দিয়ে খাস কালেকশন চলবে না।

নৌ-পুলিশের ওসি মো. একরাম উল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানিয়েছি। এটি যেহেতু চসিকের রাজস্ব শাখার বিষয়। তবে নৌ-পুলিশ মাঠে রয়েছে।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডাক্তার মাহফুজুর রহমান মাঝিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, যার পেশা যেটা তাকে সেটা করার সুযোগ করে দেয়ার নাম স্বাধীনতা ও স্বদেশ প্রেম। কিন্তু কিছু অসাধু দুর্বৃত্ত এই গরিব মাঝিদের পেশা কেড়ে নিয়ে নদীতে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। যা দুঃখজনক। 

এই বিষয়ে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির ফেডারেশনের উপদেষ্টা সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট মামলার আদেশ অনুযায়ী পাটনিজীবী নীতিমালার ভিত্তিতে কর্ণফুলীর সাম্পান ঘাট ইজারা দেয়ার বিষয়টি মীমাংসিত। কিন্তু সিটি করপোরেশন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হাইকোর্টের আদেশের তোয়াক্কা না করে হঠাৎ বহিরাগত কিছু মাঝিদের ঘাট পরিচালনা করার দায়িত্ব দেন। এতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘাট বন্ধ থাকায় উভয় তীরের হাজার হাজার যাত্রী চরম বেকায়দায় পড়ে। 

ছবি

আগামী প্রজন্ম নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে ব্যর্থ হবে না : সড়ক উপদেষ্টা

ছবি

পুলিশের ২৫২ এসআইকে অব্যাহতিতে রাজনৈতিক কারণ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ১৫৭ বাংলাদেশি

ছবি

৫ দিনের রিমান্ডে ব্যারিস্টার সুমন

ছবি

দুর্নীতি-অর্থপাচারের দায়ে পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্টকে ২০ বছরের জেল

হত্যাচেষ্টা মামলায় জেড আই খান পান্নার নাম প্রত্যাহারের আবেদন বাদীর

ছবি

সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের

ছবি

ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার

ছবি

"শেখ হাসিনার পুনর্বাসন হবে না: ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ"

ছবি

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের জন্য এইচপিভি টিকার বিশেষ কর্মসূচি শুরু

ছবি

আগামী বছরের ছুটির তালিকা প্রকাশ: ঈদ ও পূজায় বাড়তি ছুটি

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের মধ্যে সংঘর্ষ

ছবি

মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার : সাখাওয়াত হোসেন

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে নতুন বিতর্ক না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

ছবি

পান্নার নাম বাদ দিতে বাদীর আবেদন

ছবি

হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন : আসিফ নজরুল

ছবি

ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় যুক্ত করা হলো শিক্ষার্থীদের

ছবি

রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

শাহপরীর দ্বীপে নবনির্মিত বেড়িবাঁধের সিসি ব্লকে ধস আতঙ্কে ৪০ হাজার বাসিন্দা

ছবি

গত ১১ বছরে সড়কে প্রাণ হারিয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ

ছবি

বগুড়া-ঠাকুরগাঁও-ঝিনাইদহে ২০০ সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ

ছবি

আইনজীবী জেড আই খান পান্নার হাইকোর্টে আগাম জামিন

ছবি

সব শিক্ষা বোর্ডে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ

ছবি

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা

ছবি

সালাহউদ্দীন নোমান চৌধুরী জাতিসংঘে বাংলাদেশের নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি

ছবি

‘বৈষম্যহীন’ ফলের দাবি : চার শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও, বিক্ষোভ, ‘হামলায়’ আহত কয়েকজন

সংসদ নয়, বিচারপতি অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে : রিভিউ রায়

ছবি

হত্যাচেষ্টার মামলায় আইনজীবী জেড আই পান্না আসামি, নিন্দা জানাল আসক

ছবি

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রণয় ভার্মার বৈঠক,শেখ হাসিনা ইস্যুতে আলোচনা হয়নি

ছবি

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ আবু সাইদ স্নাতক পরীক্ষায় ১৪ তম স্থান অধিকার করেছে

ছবি

কপ-২৯ সম্মেলনের আগে ন্যায়সংগত জলবায়ু অর্থায়নের আহ্বান

ছবি

পল্লী বিদ্যুতের আরও ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্ট্যান্ড রিলিজ

ছবি

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম ঠিক করবে বিইআরসি : জ্বালানি উপদেষ্টা

ছবি

শেখ হাসিনাকে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান

ছবি

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে

tab

জাতীয়

চট্টগ্রামে একের পর এক ঘাট ইজারা : সাম্পান মাঝিদের কর্ণফুলীতে প্রতিবাদ

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একের পর এক ঘাট ইজারার প্রতিবাদে সাম্পান মাঝিদের ধর্মঘট-সংবাদ

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) একের পর এক ঘাট ইজারা দেয়ায় প্রতিবাদের ফুঁসে উঠেছে প্রায় ১২ শতাধিক সাম্পান মাঝি। কর্ণফুলী নদীর ১০ ঘাটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত একাধিক সংগঠন। সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলোতে সাম্পান চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করছে এসব সাম্পান মাঝি। বংশ পরম্পরাই জন্মগত পেশাদার পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) সমিতিগুলোকে চসিকের সদরঘাট, অভয়মিত্রঘাট ও বাংলাবাজার নৌঘাট তিনটি না দিয়ে বহিরাগতদের খাস আদায়ের দায়িত্ব দেয়ার প্রতিবাদে মাঝিরা এ কর্মসূচি পালন করছে।

এতে নতুন ব্রিজঘাট, তোতারবাপের হাট, বিডব্লিউ ঘাট, দক্ষিণপাড় পুরাতন ব্রিজঘাট, সদরঘাট, অভয়মিত্র, কর্ণফুলী ঘাট, বাংলা বাজার ঘাট, সল্টগোলা ঘাটে (পাটনিজীবী নাই) ইঞ্জিনচালিত সাম্পান চলাচল বন্ধ দেখা যায়। তবে জরুরি রোগী সেবা ও খাদ্যদ্রব্যের পারাপারে মানবিকতা দেখাচ্ছেন মাঝিরা। নদীর অন্যান্য ঘাটে যাত্রী পারাপার চলছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে নৌঘাটে উপস্থিত সাম্পান মাঝিরা জানান, ২০০৩ সালের পাটনিজীবী নীতিমালা তোয়াক্কা না করে একের পর এক অবৈধভাবে মাঝিদের ঘাট ছাড়া করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে দেয়ালে মাঝি-মাল্লাদের পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়েছে বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে।

চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পেশাগত সাম্পান মাঝি (পাটনিজীবী) থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে পাটনিজীবী নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ইজারা দিচ্ছে। ঘাটহারা মাঝিরা চসিকে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। তাই বৈঠা বর্জন চলছে।

অন্যদিকে, বিগত ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল সরকার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পেশাদার জন্মগত পাটনিজীবী সমিতিকে নৌঘাটগুলো ইজারা দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নির্দেশনাটিও মানছেন না বলে মাঝিদের দাবি।

জানতে চাইলে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি বলেন, ঘাটগুলোর বিষয়ে আপনারা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। এসব উনি ডিল করেন। আমার বরাবরে আসে না এসব বিষয়। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে স্থগিত ইজারা। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভয়মিত্র ঘাটের খাস কালেকশনের জন্য চসিক এস্টেট শাখার বাজার পরিদর্শক দূর্বাদল চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এমনকি এ কাজে লোকবল, যাত্রী পারাপারে নৌকা, সাম্পান সরবরাহসহ অন্যান্য সহযোগিতার জন্য ২১ অক্টোবর থেকে আবু নাসের সাজ্জাদ ও আব্দুল কাদের ফিরোজ নামে দুই ব্যক্তিকে নিয়োজিত করেন। যারা ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড বিএনপি নেতা। এতেই ক্ষেপে গিয়ে বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন ও ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সভাপতি এসএম পেয়ার আলী ও চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

ইছানগর বাংলাবাজার সাম্পান মাঝি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান দয়াল বলেন, চসিকের বোঝা উচিত ঘাট হারালে শত শত মাঝিরা তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করবে। তাদেরকে বাপ-দাদা তিন পুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য না করার বিনীত অনুরোধ জানান চসিকের প্রশাসকের প্রতি। এছাড়াও, অভয়মিত্র ঘাটের অনেক মাঝিদের অভিযোগ চসিকের ১৯টি ঘাট নিয়ে যখন যেমন ইচ্ছা খেলা খেলছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। সব অনিয়মের হেডকোয়ার্টার এই রাজস্ব কর্মকর্তা। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মাঝিরা।

চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতি ও বাংলা বাজার সদরঘাটের মাঝিরা জানান, প্রতি বছর ১৯ ঘাট থেকে রাজস্ব আদায় হতো প্রায় ৬ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু চৌদ্দশত একত্রিশ বাংলায় এসে আইনি জটিলতায় এবার ঘাটগুলো ইজারা দিতে পারেনি চসিক। সে সুযোগে খাস কালেকশনের নামে চমিকের একাধিক অসাধু কর্মকর্তারা নিজের আখের গোছাচ্ছেন।

দৈনিক আদায়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সাদা কাগজে চসিক সিল দিয়ে টাকা পরিশোধের সার্টিফিকেট দেয়া হলেও সেখানে টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। রাজস্বের টাকা লুটপাট করতেই চসিকের গুটিকয়েক কর্মকর্তা এমন অপকৌশল বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে অভয়মিত্র ঘাটের সহযোগি হিসেবে নিয়োজিত ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু নাসের সাজ্জাদ বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিটি করপোরেশন থেকে ঘাট নিয়েছি। কোনো অবৈধভাবে নেইনি। আজ (সোমবার) থেকে খাস কালেকশন করার কথা দৈনিক সাড়ে তিন হাজার করে। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি অবস্থান ধর্মঘট। সাম্পান চলছে না। এতে সাধারণ মানুষজন কষ্ট পাচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এটির সমাধান হোক। ইতোমধ্যে সাম্পান সমিতির মাঝিদের প্রস্তাব দিয়েছি বসার। তবে কোনো আশঙ্কা নেই ভাড়া বাড়ার।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এস.এম পেয়ার আলী বলেন, ‘বৈঠা যার ঘাট তার’ এই দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করবো। প্রতিটি ঘাটের সব সাম্পান মাঝিদের নিয়ে গঠিত সমিতির অনুকূলে ঘাট ইজারা দিতে হবে। বহিরাগতদের ঘাট দিয়ে খাস কালেকশন চলবে না।

নৌ-পুলিশের ওসি মো. একরাম উল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানিয়েছি। এটি যেহেতু চসিকের রাজস্ব শাখার বিষয়। তবে নৌ-পুলিশ মাঠে রয়েছে।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডাক্তার মাহফুজুর রহমান মাঝিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, যার পেশা যেটা তাকে সেটা করার সুযোগ করে দেয়ার নাম স্বাধীনতা ও স্বদেশ প্রেম। কিন্তু কিছু অসাধু দুর্বৃত্ত এই গরিব মাঝিদের পেশা কেড়ে নিয়ে নদীতে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। যা দুঃখজনক। 

এই বিষয়ে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির ফেডারেশনের উপদেষ্টা সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট মামলার আদেশ অনুযায়ী পাটনিজীবী নীতিমালার ভিত্তিতে কর্ণফুলীর সাম্পান ঘাট ইজারা দেয়ার বিষয়টি মীমাংসিত। কিন্তু সিটি করপোরেশন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হাইকোর্টের আদেশের তোয়াক্কা না করে হঠাৎ বহিরাগত কিছু মাঝিদের ঘাট পরিচালনা করার দায়িত্ব দেন। এতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘাট বন্ধ থাকায় উভয় তীরের হাজার হাজার যাত্রী চরম বেকায়দায় পড়ে। 

back to top