১৯ জুলাই রাজধানীর রায়েরবাগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে এসে গুলিবিদ্ধ হন নারায়নগঞ্জে জেলার বেসরকারী চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম। গুলি পিছনের কাধ দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যায় তার। এরপর ঢাকা মেডিকেলে দুইদিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যান। বাসা থেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে ফের ২৪ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। সেখানে দেড় মাস চিকিৎসা নেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে রিলিজ দেয়ার পর ৬ অক্টোবর নিটোরে ভর্তি হন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সাইফুল সংবাদকে বলেন, ‘আমার হাত মুভমেন্ট হয় না। আমার গায়ে লাগা গুলির সিদ্রটা এতা বড় ছিল যে আমার টিটমেন্টটা কেউ করতে চায়নি। সাড়ে তিনমাস পড় ইউকে টিম এসে গত ১০ নভেম্বর কোমড় থেকে হাড় নিয়ে একটা অপারেশন করে দিয়েছে। এখানে যেসব ঔষধপত্র পাওয়া যায়না তা সমাজসেবার কার্যালয় থেকে দেয়া হয়। নিটোরের তৃতীয় তলার বি-১১ নাম্বার নিজ বেডে বসে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের উপার্জনকারী ছিলাম এক মাত্র আমি। আমার বাবা বয়স্ক। নিজেদের ব্যায় নিজেদের করতে হয়েছে। আমি যেদিন গুলি খাই ঠিক তার ১০ দিন পর আমার একটা ছেলে সন্তান হয়। সেটা হয় সিজারের মাধ্যমে। সেখানেও ৩০ হাজারের মতো টাকা লাগে। ঢাকা মেডিকেল ভর্তি হওয়ার একটা দিন একটা সমন্বয়ককে দেখি নাই আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসতে। আমি চাইছিনাম প্রেস ব্রিফিং করতে, পারি নাই। পরবর্তীতে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে কিছু সমন্বয়কের ফোন নাম্বার দেয়। তারমধ্যে সারজিস আলম ছিল, বাকের ভাই ছিল, উমামা ফাতেমা ছিল আমি সবাইকে কল করি, কেউই কল ধরে না। অনেক কষ্টে উমামা ফাতেমা ফোন ধরছে, উনি নিজে আসছিল খুব একটা যে ভালো কিছু .. তাও না। ৫ আগস্টের আগেই ৭০ হাজার টাকা চলে গেছে। এরমধ্যে স্থানীয় ২টিএনজিও থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ..। কিস্তি দিয়ে হয়।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের অনুমতি নিয়ে তৃতীয় তলার মডেল বি-ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এই ওয়াডে ৪০ জন রোগী কাতরাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আন্দোলন সহিংসতায় চোখে হাতে-পায়ে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়া। কেউ গান পাউডারে দগ্ধ, কারওবা লাঠির আঘাতে হাত পা ভেঙ্গে গেছে, কেউবা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে গিয়ে গর্তে পড়ে যাওয়া, যানযাহনের নিচে পড়ে পা গুড়িয়ে যাওয়া রোগীদের সঙ্গে কথা এসব তথ্য পাওয়া যায়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কাজ করছেন আরেক আন্দোকারী হিসে দাবি করা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্স্টাস পডুয়া ইসলামিক ইস্টাডিসের শিক্ষার্থী নাদিয়া। আহতদের দেখাশুনার জন্য থকছেন ঢাকার মিরপুরে। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মিরপুরের অনেক আহতদের এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। পঙ্গু হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি যে শুধু পঙ্গু নিয়ে কাজ করছি বিষয়টা এমন না। আজকে যারা আসছে, যাদের অবস্থা ভাল না, তাদেরকে সিএমএইচে, পিজিতে দিয়ে দিতেছি।’
‘যারা মারা গেছেন তারা তো একটা মর্যদা পাইছে। এখন আহত যারা আছেন, যেভাবেই হোক তাদেরকে বাঁচাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী যে চিকিৎসাটা হচ্ছে, তাদের জন্য ক্ষতিকর। তারা যে স্বপ্ন দেখতো, সেই স্বপ্নটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তাদেরকে অবহেলা ফালায়া দেরী করে, তাহলে ভবিষ্যতও তো তারা কিছু দেখবে না। আমরা চাইতেছি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাটা উন্নত হোক। এখান থেকে না হয়ে বাহিরে (দেশের) পাঠিয়ে হোক, সরকার পাঠাক। তারা ঐখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসে তাদের কর্মে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাক.’ এই দাবি তোলেন নাদিয়া।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার এখন যাওয়া হইতেছেনা, ক্লাস করাও হইতেছেনা। যখন থেকে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি, তখন থেকে আমার মনপ্রাণ সবই বিচ্ছিন্ন।’
চিকিৎসা নিতে এবং চিকিৎসাধীন আছেন এমন রোগীদের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম-পরিচোলক ডা. মো. মোজাফফর হোসেন সংবাদকে জানান, ‘১৫ জুলাই থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রোগি এসেছে ৮৪৮ জন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৫৬২ অন্যান্য ২৮৬ জন। ভর্তি হয়েছে ( নতুন ও পূনঃভর্তি) ৫৩০ জন। হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৪৭ জন, না বলে চলে গেছেন ৩ জন, নতুন ভর্তি হয়েছে ৮৩ জন। এরমধ্যে শিক্ষার্থী ৩৮ জন।’
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
১৯ জুলাই রাজধানীর রায়েরবাগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে এসে গুলিবিদ্ধ হন নারায়নগঞ্জে জেলার বেসরকারী চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম। গুলি পিছনের কাধ দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যায় তার। এরপর ঢাকা মেডিকেলে দুইদিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যান। বাসা থেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে ফের ২৪ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। সেখানে দেড় মাস চিকিৎসা নেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে রিলিজ দেয়ার পর ৬ অক্টোবর নিটোরে ভর্তি হন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সাইফুল সংবাদকে বলেন, ‘আমার হাত মুভমেন্ট হয় না। আমার গায়ে লাগা গুলির সিদ্রটা এতা বড় ছিল যে আমার টিটমেন্টটা কেউ করতে চায়নি। সাড়ে তিনমাস পড় ইউকে টিম এসে গত ১০ নভেম্বর কোমড় থেকে হাড় নিয়ে একটা অপারেশন করে দিয়েছে। এখানে যেসব ঔষধপত্র পাওয়া যায়না তা সমাজসেবার কার্যালয় থেকে দেয়া হয়। নিটোরের তৃতীয় তলার বি-১১ নাম্বার নিজ বেডে বসে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের উপার্জনকারী ছিলাম এক মাত্র আমি। আমার বাবা বয়স্ক। নিজেদের ব্যায় নিজেদের করতে হয়েছে। আমি যেদিন গুলি খাই ঠিক তার ১০ দিন পর আমার একটা ছেলে সন্তান হয়। সেটা হয় সিজারের মাধ্যমে। সেখানেও ৩০ হাজারের মতো টাকা লাগে। ঢাকা মেডিকেল ভর্তি হওয়ার একটা দিন একটা সমন্বয়ককে দেখি নাই আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসতে। আমি চাইছিনাম প্রেস ব্রিফিং করতে, পারি নাই। পরবর্তীতে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে কিছু সমন্বয়কের ফোন নাম্বার দেয়। তারমধ্যে সারজিস আলম ছিল, বাকের ভাই ছিল, উমামা ফাতেমা ছিল আমি সবাইকে কল করি, কেউই কল ধরে না। অনেক কষ্টে উমামা ফাতেমা ফোন ধরছে, উনি নিজে আসছিল খুব একটা যে ভালো কিছু .. তাও না। ৫ আগস্টের আগেই ৭০ হাজার টাকা চলে গেছে। এরমধ্যে স্থানীয় ২টিএনজিও থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ..। কিস্তি দিয়ে হয়।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের অনুমতি নিয়ে তৃতীয় তলার মডেল বি-ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এই ওয়াডে ৪০ জন রোগী কাতরাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আন্দোলন সহিংসতায় চোখে হাতে-পায়ে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়া। কেউ গান পাউডারে দগ্ধ, কারওবা লাঠির আঘাতে হাত পা ভেঙ্গে গেছে, কেউবা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে গিয়ে গর্তে পড়ে যাওয়া, যানযাহনের নিচে পড়ে পা গুড়িয়ে যাওয়া রোগীদের সঙ্গে কথা এসব তথ্য পাওয়া যায়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কাজ করছেন আরেক আন্দোকারী হিসে দাবি করা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্স্টাস পডুয়া ইসলামিক ইস্টাডিসের শিক্ষার্থী নাদিয়া। আহতদের দেখাশুনার জন্য থকছেন ঢাকার মিরপুরে। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মিরপুরের অনেক আহতদের এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। পঙ্গু হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি যে শুধু পঙ্গু নিয়ে কাজ করছি বিষয়টা এমন না। আজকে যারা আসছে, যাদের অবস্থা ভাল না, তাদেরকে সিএমএইচে, পিজিতে দিয়ে দিতেছি।’
‘যারা মারা গেছেন তারা তো একটা মর্যদা পাইছে। এখন আহত যারা আছেন, যেভাবেই হোক তাদেরকে বাঁচাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী যে চিকিৎসাটা হচ্ছে, তাদের জন্য ক্ষতিকর। তারা যে স্বপ্ন দেখতো, সেই স্বপ্নটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তাদেরকে অবহেলা ফালায়া দেরী করে, তাহলে ভবিষ্যতও তো তারা কিছু দেখবে না। আমরা চাইতেছি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাটা উন্নত হোক। এখান থেকে না হয়ে বাহিরে (দেশের) পাঠিয়ে হোক, সরকার পাঠাক। তারা ঐখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসে তাদের কর্মে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাক.’ এই দাবি তোলেন নাদিয়া।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার এখন যাওয়া হইতেছেনা, ক্লাস করাও হইতেছেনা। যখন থেকে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি, তখন থেকে আমার মনপ্রাণ সবই বিচ্ছিন্ন।’
চিকিৎসা নিতে এবং চিকিৎসাধীন আছেন এমন রোগীদের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম-পরিচোলক ডা. মো. মোজাফফর হোসেন সংবাদকে জানান, ‘১৫ জুলাই থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রোগি এসেছে ৮৪৮ জন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৫৬২ অন্যান্য ২৮৬ জন। ভর্তি হয়েছে ( নতুন ও পূনঃভর্তি) ৫৩০ জন। হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৪৭ জন, না বলে চলে গেছেন ৩ জন, নতুন ভর্তি হয়েছে ৮৩ জন। এরমধ্যে শিক্ষার্থী ৩৮ জন।’