চৌদ্দ বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট। ফলে এখনও বেশি দামে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। কৃষি, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে এর প্রভাব দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে।
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় স্থাপিত হয় দেশের একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। এর জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতা ছিল বছরে ১৫ লাখ টন; যা এখন ১০ লাখ টনে নেমে এসেছে। আরও ৩০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধন করতে প্রতিষ্ঠানটি আরেকটি ইউনিট (ইআরএল-২) স্থাপনের উদ্যোগ নেয় ২০১০ সালে।
পরিশোধিত-অপরিশোধিত মিলিয়ে দেশে বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন, যার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করলে তাতে যে ব্যয় হয় তার তুলনায় আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যয় প্রতি ব্যারেলে প্রায় ৯-১০ মার্কিন ডলার বেশি। সে হিসেবে, ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২) চালু হলে বছরে ত্রিশ লাখ টন জ্বালানি তেল শোধন করে অনেক টাকা বা ডলার সাশ্রয় হবে।
সাগর থেকে পাইপলাইন
অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করা হয় জাহাজে। এরপর তা পাঠানো হয় ইআরএলে। চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম (৮-১৪ মিটার) হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে আমদানি করা ক্রুড অয়েল সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। এ কারণে, বড় অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল খালাস করা হয়। এভাবে ১১ দিনে একটি ১ লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাঙ্কার খালাস করা হয়।
ডিডব্লিউটি বা ডেডওয়েট টনেজ হলো একটি জাহাজ কতটা ওজন বহন করতে পারে তার পরিমাপ। এভাবে লাইটারেজ পদ্ধতিতে তেল খালাস করা ‘সময় সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল’।
ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এর বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বেড়ে ৪৫ লাখ মেট্রিকটন হওয়ার কথা। দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করা হবে এটা ধরে নিয়েই সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) বা সাগরে ভাসমান জেটি নির্মাণ ও পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রকল্পের দুটো পাইপলাইনের মধ্যে একটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল, অন্যটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয় গত বছর মার্চে। তবে ইআরএল-২ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এসপিএম প্রকল্প পুরোপুরি কাজে আসছে না।
কী বলছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ও ইআরএল এমডি
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শরীফ হাসনাত সংবাদকে বলেন, ‘শুক্রবার আমাদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মহোদয় (চট্টগ্রামে) এসেছিলেন। ইআরএল-২ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির ১৫ নভেম্বর শুক্রবার চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় জানান, ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আরও একটি তেল শোধনাগার হবে। দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার পুরোনো হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে পড়তে পারে। তাই ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এতদিন দুর্বৃত্তায়নের কারণে ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।’
শরীফ হাসনাত সংবাদকে বলেন, ‘যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে পরিশোধনের মাধ্যমে একটা বড় অঙ্কের অর্থ (ডলার) সাশ্রয় হবে; তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে আগানো যায়, বিনিয়োগ কীভাবে করা যায়, এসব বিষয়ে সরকার কাজ করবে।’
ফিরে দেখা
বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন ব্যয় শুরুতে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০০ একর জায়গার একপাশের ৭০ একর জায়গায় দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কথা। পরে সংশোধিত হয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফ্রান্সের টেকনিপকে নিয়োগ দেয়া হয়। টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন করে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)।
২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। এসব কাজে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
বিপিসি তখন জানায়, প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ার কারণে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশের তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে ইআরএল-২ ইউনিটটি আকারে ছোট হওয়ায় তারা নির্মাণকাজে আগ্রহ দেখায়নি। সর্বশেষ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারের দেয়ার কথা ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। বাকিটা বিপিসির দেয়ার কথা। তবে সেটিও আটকে থাকে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এরপর ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়ের কাজটি চেয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। পরে কাজটি এস আলম গ্রুপের হাতে চলে যায়।
*এস আলম গ্রুপের প্রস্তাব এবং এরপর *
২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর ইআরএলের জমিতে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল শোধানাগর নির্মাণের প্রস্তাব দেয় এস আলম গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়।
প্রস্তাবনায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারি নির্মাণের আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। নতুন প্রস্তাবনায় ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপের ৮০ ভাগ আর ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০ ভাগ ইক্যুইটি শেয়ার (অংশীদারিত্ব) থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বিপিসিকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানায়, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ২৯ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জ্বালানি তেলের শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপকে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘সরকার এখন স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকল্পটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এখন নতুন করে ডিপিপি পুনর্গঠনের কাজ চলছে।’
রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
চৌদ্দ বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট। ফলে এখনও বেশি দামে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। কৃষি, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে এর প্রভাব দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে।
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় স্থাপিত হয় দেশের একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। এর জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতা ছিল বছরে ১৫ লাখ টন; যা এখন ১০ লাখ টনে নেমে এসেছে। আরও ৩০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধন করতে প্রতিষ্ঠানটি আরেকটি ইউনিট (ইআরএল-২) স্থাপনের উদ্যোগ নেয় ২০১০ সালে।
পরিশোধিত-অপরিশোধিত মিলিয়ে দেশে বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন, যার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করলে তাতে যে ব্যয় হয় তার তুলনায় আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যয় প্রতি ব্যারেলে প্রায় ৯-১০ মার্কিন ডলার বেশি। সে হিসেবে, ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২) চালু হলে বছরে ত্রিশ লাখ টন জ্বালানি তেল শোধন করে অনেক টাকা বা ডলার সাশ্রয় হবে।
সাগর থেকে পাইপলাইন
অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করা হয় জাহাজে। এরপর তা পাঠানো হয় ইআরএলে। চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম (৮-১৪ মিটার) হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে আমদানি করা ক্রুড অয়েল সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। এ কারণে, বড় অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল খালাস করা হয়। এভাবে ১১ দিনে একটি ১ লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাঙ্কার খালাস করা হয়।
ডিডব্লিউটি বা ডেডওয়েট টনেজ হলো একটি জাহাজ কতটা ওজন বহন করতে পারে তার পরিমাপ। এভাবে লাইটারেজ পদ্ধতিতে তেল খালাস করা ‘সময় সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল’।
ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এর বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বেড়ে ৪৫ লাখ মেট্রিকটন হওয়ার কথা। দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করা হবে এটা ধরে নিয়েই সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) বা সাগরে ভাসমান জেটি নির্মাণ ও পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রকল্পের দুটো পাইপলাইনের মধ্যে একটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল, অন্যটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয় গত বছর মার্চে। তবে ইআরএল-২ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এসপিএম প্রকল্প পুরোপুরি কাজে আসছে না।
কী বলছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ও ইআরএল এমডি
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শরীফ হাসনাত সংবাদকে বলেন, ‘শুক্রবার আমাদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মহোদয় (চট্টগ্রামে) এসেছিলেন। ইআরএল-২ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির ১৫ নভেম্বর শুক্রবার চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় জানান, ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আরও একটি তেল শোধনাগার হবে। দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার পুরোনো হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে পড়তে পারে। তাই ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এতদিন দুর্বৃত্তায়নের কারণে ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।’
শরীফ হাসনাত সংবাদকে বলেন, ‘যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে পরিশোধনের মাধ্যমে একটা বড় অঙ্কের অর্থ (ডলার) সাশ্রয় হবে; তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে আগানো যায়, বিনিয়োগ কীভাবে করা যায়, এসব বিষয়ে সরকার কাজ করবে।’
ফিরে দেখা
বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন ব্যয় শুরুতে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০০ একর জায়গার একপাশের ৭০ একর জায়গায় দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কথা। পরে সংশোধিত হয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফ্রান্সের টেকনিপকে নিয়োগ দেয়া হয়। টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন করে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)।
২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। এসব কাজে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
বিপিসি তখন জানায়, প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ার কারণে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশের তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে ইআরএল-২ ইউনিটটি আকারে ছোট হওয়ায় তারা নির্মাণকাজে আগ্রহ দেখায়নি। সর্বশেষ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারের দেয়ার কথা ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। বাকিটা বিপিসির দেয়ার কথা। তবে সেটিও আটকে থাকে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এরপর ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়ের কাজটি চেয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। পরে কাজটি এস আলম গ্রুপের হাতে চলে যায়।
*এস আলম গ্রুপের প্রস্তাব এবং এরপর *
২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর ইআরএলের জমিতে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল শোধানাগর নির্মাণের প্রস্তাব দেয় এস আলম গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়।
প্রস্তাবনায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারি নির্মাণের আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। নতুন প্রস্তাবনায় ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপের ৮০ ভাগ আর ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০ ভাগ ইক্যুইটি শেয়ার (অংশীদারিত্ব) থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বিপিসিকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানায়, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ২৯ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জ্বালানি তেলের শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপকে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘সরকার এখন স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকল্পটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এখন নতুন করে ডিপিপি পুনর্গঠনের কাজ চলছে।’