alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণ, নজরদারিতে শিশুটির বাবা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পুরান ঢাকার আজিমপুরে এক বাসা থেকে মালামাল লুটের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধারের পর র‌্যাব বলছে, মুক্তিপণ আদায় করতেই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকালে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার ১৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার এবং একদিন আগে ওই বাসার ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে উঠা ২৭ বছর বয়সী ফাতেমা আক্তার শাপলাকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য দিয়েছে র‌্যাব।

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/17Nov24/news/muntaha.jpg

ঘটনায় পরিবারের কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি র‌্যাব শিশুটির বাবাকেও নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়েছে। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে র‌্যাব-১০ এর একটি দল মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে শাপলাকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাসা থেকে তখনই জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

শুক্রবার সকালে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ারের পাশের একটি বাসায় দোতলা বাড়ির নিচতলায় আবু জাফর ও ফারজানা আক্তার দম্পতির ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে মালামাল ও তাদের ৮ মাস বয়সী দুধের শিশুটিকে নিয়ে যায় শাপলাসহ আরও তিন যুবক। শিশু জাইফার মা ফারজানা আক্তার সরকারি চাকরি করেন এবং বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা গত তিন বছর ধরে ওই বাসায় থাকছেন। তবে গত চারমাস ধরে পারিবারিক কলহের জেরে শিশুটির বাবা আলাদা রয়েছেন, তবে বাসায় তার আসা-যাওয়া ছিল।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফাতেমা ডাকাতি ও অপহরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘অফিসে যাতায়াত করার সময় এক সপ্তাহ আগে ফারজানা আক্তারের সঙ্গে শাপলার পরিচয় হয়। সে সময় শাপলা ফারজানার কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। পাশাপাশি জানায় সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করে।

‘গ্রেপ্তার শাপলা শিশুটির মা ফারজানা আক্তারকে আরও জানায় যে, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি তার শিশু সন্তানকেও দেখভালও করতে পারবে।’

লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনীম বলেন, ফারজানা সন্তানের দেখাভাল করার কথা চিন্তা করে শাপলাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিতে রাজি হন এবং গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শাপলা ২ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে বাসায় উঠেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরদিন শুক্রবার সকালে শাপলা ফারজানা আক্তারকে জানান, গ্রাম থেকে তার চাচাত ভাই চাল নিয়ে বাসায় আসবে। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় শাপলা তার চাচাত ভাই পরিচয়ে তিন ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। ‘বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে শাপলা ও তার কথিত চাচাত ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীর মা’কে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা বাসার স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে জাইফাকে নিয়ে যায়।’

র‌্যাব কর্মকর্তা মুনীম বলেন, ‘অপহরণের পর ফাইজাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগরের বাসায় চলে আসে শাপলা। তার সহযোগিরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যায়। শাপলা ও তার সহযোগিরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় মুক্তিপণ দাবি করেনি।’

তিনি বলেন, ‘শাপলা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত অন্য তিনজনের নাম সুমন, হাসান ও রায়হান। তবে তাদের এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তারা অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে থেকে শিশুটির মা ফারজানাকে অনুসরণ করছিল। এমনকি বৃহস্পতিবারই ডাকাতি করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে সেদিন ওই বাসায় ভুক্তভোগীর এক আত্মীয় থাকায় তারা সফল হয়নি।’

এক প্রশ্নে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। শাপলার আগে কখনও এমন অপহরণের কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই চক্রের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিবারের কেউ জড়িত আছে কিনা বিষয়টি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ভুক্তভোগীর স্বামীও আমাদের নজরদারীতে আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার শাপলা একজন গৃহিণী। তার স্বামীর নাম মো. সেলিম হোসেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করেন। তারা বাড়ি বগুড়ায়। শাপলা ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে ঢাকার লালমাটিয়া থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে একই কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেননি। ২০২৩ সালে বিয়ে হয় তাদের। ৩-৪ মাস আগে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন।

স্বজন ও প্রতিবেশীরাও বলছেন, বৃহস্পতিবার রাতে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে ওই বাড়িতে ওঠা এক নারী সকালবেলা আরও তিনজন পুরুষ সহযোগিসহ শিশুটিকে নিয়ে চলে যান। তাদের পারিবারিক বন্ধু ও ফারজানার সহকর্মীর স্বামী মো. রানা জানিয়েছিলেন, সকালে ঘটনা শুনে তারা বাসায় এসে দেখেন, আলমারি খোলা, ফারজানার নাকে, কানে সাধারণ যে গয়নাগুলো থাকে সেগুলোও নেই।

ফারজানা তাকে বলেছেন, আলমারিতে থাকা দেড় লাখ টাকাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা। যাওয়ার সময় বলে গেছে, ‘তোর বাচ্চাকে ইনডিয়ায় পাঠায় দেব।’ গত এক মাস বাচ্চা দেখাশোনার জন্য ফারজানার বাবা-মা এ বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার সকালে তারা বরিশালে গ্রামের বাড়ি চলে যান। তার আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফারজানা ওই ‘পেয়িং গেস্ট’কে বাসায় রাখেন।

সকালবেলা ফারজানার বাবা মা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনজন লোক বাসায় আসে। পেয়িং গেস্ট সেই নারী তাদের দরজা খুলে দেন। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে তারা বাসায় ঢোকে। এরমধ্যে ফারজানাকে বেঁধে লুটপাট শেষে শিশুটিকে নিয়ে ৯টা ২৪ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা।

মো. রানা জানান, ফারজানা তাদের বলেছেন, পেয়িং গেস্ট হিসেবে বাসা ওঠা ওই নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল স্টাফ বাসে। ওই নারী ফারজানাকে বলেছেন, তিনি সরকারি পরিবহন পুলে চাকরি করেন, পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর ফারজানা তাকে বাসায় থাকার কথা বলেন।

ফারজানা তাদের (রানা ও তার স্ত্রীকে) বলেছেন, সকালে তার বাবা-মা চলে যাওয়ার পর মেয়েটি বাজার করার কথা বলে বাইরে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসেন। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজলে মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। এরপর তিনজন পুরুষ বাসায় ঢুকে পড়ে। ‘ঢুকেই তারা ফারজানার উপর আক্রমণ চালায়। ফারজানাকে বেঁধে টাকা পয়সা লুট করে তার শিশুটিকে নিয়ে তারা চলে যায়।’

ছবি

আখাউড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ৮ মাদকসেবীর কারাদন্ড

ছবি

শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মাগুরায় আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ

ছবি

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ

ছবি

জুলাই আন্দোলন: হত্যা মামলায় তুরিন আফরোজসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

ছবি

আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় এক মাস বাড়লো

ছবি

নোয়াখালীতে পরকীয়ায় বাঁধা দেয়ায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে

ছবি

বরগুনার তালতলীতে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ

মাদক মামলায় কাভার্ডভ্যান মালিকের যাবজ্জীবন

সোনারগাঁয়ে সম্পতি লিখে না দেয়ায় বাবাকে মেরে আহত করেছে ছেলে মেয়েরা

ছবি

উল্লাপাড়ায় বিএনপির ৭ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগে, বহিষ্কার দাবি

বিয়ানীবাজারে প্রতিবেশীর হামলায় একজন নিহত

সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ তিনদিনের রিমান্ডে

ছবি

মিরপুরে গুলিতে বিএনপি কর্মী শ্রাবণ নিহত, শেখ হাসিনাসহ ৪০৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

হত্যা মামলার দুই আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে

ছবি

রাজউক প্লট দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার প্রতিবেদন পেন্ডিং, নতুন দিন ১২ মে

ছবি

উখিয়ায় চারজন হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৩

ছবি

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তার দূর্নীতির অভিযোগের শুনানী অনুষ্ঠিত

সোনারগাঁয়ে ডাকাতদের হামলায় ব্যবসায়ী আহত

ছবি

আখাউড়ায় গুলিসহ গ্রেপ্তার ৩

সিলেটে এসআই জিয়াউলের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ নানা অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত, সুপারিশ করা হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ

মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ক্ষোভে স্ত্রীকে খুন করেন মসজিদের ইমাম

চুনারুঘাটে শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মাহফুজ কারাগারে

ছবি

ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন

ছবি

প্রাইমএশিয়ার ছাত্র খুন: বন্ধুদের ডাকে গিয়েই জড়িয়ে পড়ে হত্যায়, গ্রেপ্তার ৩ বহিরাগত

ছবি

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খুন: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতা আসামি

রাজশাহীতে ব্যবসায়ীর চোখে মরিচ ছিটিয়ে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই

ছবি

টঙ্গীতে শিশু ভাই- বোন হত্যা: মায়ের হাতের আঙ্গুল কাটা থাকায় বাবার মামলায় মা গ্রেপ্তার

ছবি

সিলেটে মাদ্রাসা ছাত্রী ‘অপহরণ ও ধর্ষণের’ অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে কৃষকদল নেতাকে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী ও পুত্রবধূ গ্রেপ্তার

ছবি

নারায়ণগঞ্জে যুবক হত্যার আসামি গ্রেপ্তার

রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা

সখীপুরে গৃহবধূ হত্যার মূল আসামি গ্রেফতার

ছবি

পুলিশ হত্যা মামলায় আলোচিত আরাভ খানসহ ৮ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

৬ বছরের শিশু ধর্ষণকারীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

ছবি

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মালেক সস্ত্রীক দণ্ডিত

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণ, নজরদারিতে শিশুটির বাবা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পুরান ঢাকার আজিমপুরে এক বাসা থেকে মালামাল লুটের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধারের পর র‌্যাব বলছে, মুক্তিপণ আদায় করতেই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকালে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার ১৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার এবং একদিন আগে ওই বাসার ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে উঠা ২৭ বছর বয়সী ফাতেমা আক্তার শাপলাকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য দিয়েছে র‌্যাব।

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/17Nov24/news/muntaha.jpg

ঘটনায় পরিবারের কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি র‌্যাব শিশুটির বাবাকেও নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়েছে। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে র‌্যাব-১০ এর একটি দল মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে শাপলাকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাসা থেকে তখনই জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

শুক্রবার সকালে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ারের পাশের একটি বাসায় দোতলা বাড়ির নিচতলায় আবু জাফর ও ফারজানা আক্তার দম্পতির ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে মালামাল ও তাদের ৮ মাস বয়সী দুধের শিশুটিকে নিয়ে যায় শাপলাসহ আরও তিন যুবক। শিশু জাইফার মা ফারজানা আক্তার সরকারি চাকরি করেন এবং বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা গত তিন বছর ধরে ওই বাসায় থাকছেন। তবে গত চারমাস ধরে পারিবারিক কলহের জেরে শিশুটির বাবা আলাদা রয়েছেন, তবে বাসায় তার আসা-যাওয়া ছিল।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফাতেমা ডাকাতি ও অপহরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘অফিসে যাতায়াত করার সময় এক সপ্তাহ আগে ফারজানা আক্তারের সঙ্গে শাপলার পরিচয় হয়। সে সময় শাপলা ফারজানার কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। পাশাপাশি জানায় সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করে।

‘গ্রেপ্তার শাপলা শিশুটির মা ফারজানা আক্তারকে আরও জানায় যে, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি তার শিশু সন্তানকেও দেখভালও করতে পারবে।’

লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনীম বলেন, ফারজানা সন্তানের দেখাভাল করার কথা চিন্তা করে শাপলাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিতে রাজি হন এবং গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শাপলা ২ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে বাসায় উঠেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরদিন শুক্রবার সকালে শাপলা ফারজানা আক্তারকে জানান, গ্রাম থেকে তার চাচাত ভাই চাল নিয়ে বাসায় আসবে। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় শাপলা তার চাচাত ভাই পরিচয়ে তিন ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। ‘বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে শাপলা ও তার কথিত চাচাত ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীর মা’কে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা বাসার স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে জাইফাকে নিয়ে যায়।’

র‌্যাব কর্মকর্তা মুনীম বলেন, ‘অপহরণের পর ফাইজাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগরের বাসায় চলে আসে শাপলা। তার সহযোগিরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যায়। শাপলা ও তার সহযোগিরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় মুক্তিপণ দাবি করেনি।’

তিনি বলেন, ‘শাপলা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত অন্য তিনজনের নাম সুমন, হাসান ও রায়হান। তবে তাদের এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তারা অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে থেকে শিশুটির মা ফারজানাকে অনুসরণ করছিল। এমনকি বৃহস্পতিবারই ডাকাতি করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে সেদিন ওই বাসায় ভুক্তভোগীর এক আত্মীয় থাকায় তারা সফল হয়নি।’

এক প্রশ্নে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। শাপলার আগে কখনও এমন অপহরণের কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই চক্রের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিবারের কেউ জড়িত আছে কিনা বিষয়টি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ভুক্তভোগীর স্বামীও আমাদের নজরদারীতে আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার শাপলা একজন গৃহিণী। তার স্বামীর নাম মো. সেলিম হোসেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করেন। তারা বাড়ি বগুড়ায়। শাপলা ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে ঢাকার লালমাটিয়া থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে একই কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেননি। ২০২৩ সালে বিয়ে হয় তাদের। ৩-৪ মাস আগে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন।

স্বজন ও প্রতিবেশীরাও বলছেন, বৃহস্পতিবার রাতে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে ওই বাড়িতে ওঠা এক নারী সকালবেলা আরও তিনজন পুরুষ সহযোগিসহ শিশুটিকে নিয়ে চলে যান। তাদের পারিবারিক বন্ধু ও ফারজানার সহকর্মীর স্বামী মো. রানা জানিয়েছিলেন, সকালে ঘটনা শুনে তারা বাসায় এসে দেখেন, আলমারি খোলা, ফারজানার নাকে, কানে সাধারণ যে গয়নাগুলো থাকে সেগুলোও নেই।

ফারজানা তাকে বলেছেন, আলমারিতে থাকা দেড় লাখ টাকাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা। যাওয়ার সময় বলে গেছে, ‘তোর বাচ্চাকে ইনডিয়ায় পাঠায় দেব।’ গত এক মাস বাচ্চা দেখাশোনার জন্য ফারজানার বাবা-মা এ বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার সকালে তারা বরিশালে গ্রামের বাড়ি চলে যান। তার আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফারজানা ওই ‘পেয়িং গেস্ট’কে বাসায় রাখেন।

সকালবেলা ফারজানার বাবা মা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনজন লোক বাসায় আসে। পেয়িং গেস্ট সেই নারী তাদের দরজা খুলে দেন। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে তারা বাসায় ঢোকে। এরমধ্যে ফারজানাকে বেঁধে লুটপাট শেষে শিশুটিকে নিয়ে ৯টা ২৪ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা।

মো. রানা জানান, ফারজানা তাদের বলেছেন, পেয়িং গেস্ট হিসেবে বাসা ওঠা ওই নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল স্টাফ বাসে। ওই নারী ফারজানাকে বলেছেন, তিনি সরকারি পরিবহন পুলে চাকরি করেন, পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর ফারজানা তাকে বাসায় থাকার কথা বলেন।

ফারজানা তাদের (রানা ও তার স্ত্রীকে) বলেছেন, সকালে তার বাবা-মা চলে যাওয়ার পর মেয়েটি বাজার করার কথা বলে বাইরে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসেন। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজলে মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। এরপর তিনজন পুরুষ বাসায় ঢুকে পড়ে। ‘ঢুকেই তারা ফারজানার উপর আক্রমণ চালায়। ফারজানাকে বেঁধে টাকা পয়সা লুট করে তার শিশুটিকে নিয়ে তারা চলে যায়।’

back to top