জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ তলার এ-ওয়ার্ডে শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে প্রবেশ করে দেখা গেলো জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত কয়েকজন রোগী মাঝ বরাবর জটলা পাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে হাত ইশারায় ডাকলেন ২৬-নাম্বার বেডের এক রোগী। সাড়া দিয়ে তার বেডে এগিয়ে গেলে জানতে চাইলেন সাংবাদিক কিনা? হ্যাঁ, সূচক জবাব দিয়ে নাম-পরিচয়-ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মো. মোবারক হোসেন। আমরা এক ভাই-বোন। বাবা নেই, মারা গেছেন। বর্তমানে থাকি ঢাকার মিরপুরে, বাড়ি নারাায়ণগঞ্জ।’
আন্দোলন সহিংসতায় আহত হওয়ার ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘১৯ জুলাই বিকেল চারটায় মিরপুর-১০ এ গুলি লেগে ডান পায়ের রগ ছিড়ে যায় আর বাম পা ভেঙে চুরমার। এক বুলেটেই দুই পা ভেদ করে চলে যায়। সেদিন এই হাসপাতালে ভর্তি হই। অপারেশন দুই পায়েরই হয়েছে।’
‘আন্দোলনে যোগ দিয়েছি তারেক রহমানের নির্দেশে’ এমন দাবি করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘দলের (পক্ষে) থেকে ছাত্রদের (আন্দোলনে) সঙ্গেই ছিলাম।’ আপনার চিকিৎসার ব্যায় কীভাবে হচ্ছে, কারা বহন করছে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেশ নায়ক তারেক রহমান। প্রতিদিনের খরচ দিচ্ছে এলাকার সাবেক কমিশনার। এছাড়া কিছু কিছু কোম্পানি পাঁচ-দশ হাজার টাকা দিয়েছে। ’
‘আর্থিক থেকে শুরু করে মনোবল, সাহস যা লাগে, যিনি আমার কাছে বটগাছের মতো ছায়া তিনি ঢাকা জেলা কাফরুল থানা যুবদল নেতা মো. হাফিজুল ইসলাম বাবু ভাই,’ জানান মোবারক।
সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন? বলেন, ‘সরকার থেকে কিচ্ছু পাই নাই, এক দমেই না। জুলাই ফাউন্ডেশনের ১ লাখ টাকা ওটাও আমি পাইনি। জুলাই ফাউন্ডেশন তো সরকারি না। তাহলে, সরকার কী করলো আমাদের জন্য? নিহত ও আহত পরিবারের দায়িত্ব যদি নাই নিতে পারে, তাহলে নির্বাচন দিক। নির্বাচিত সরকার এসে আমাদের দায়িত্ব নিবে। যেই আসুক।’
আগত মোবারকের কাছেই জানতে চাইলাম এই ওয়ার্ডের কোনো রোগীর কাছে এখনও কোনো সাংবাদিক যায় নাই? হাত ইশারায় দেখিয়ে দিলেন বিপরীত পাশের ৩৫ নাম্বার বেডের রোগীকে। দেখানো রোগির বেডের কাছে যেতেই ‘আমি উঠতে পারি না তো, তাই আমার এখানে...।’ বললেন ঐ রোগী। নাম-পরিচয়-পেশার পরিচয় জানা যায়, ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে চারটার দিকে উত্তর আজিমপুরে আহত হন ঢাকায় রঙ মিস্তিরির কাজ করা দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার মো. দুলাল হেসেন। বর্তমানে তিনি আশুলিয়ায় ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী নিয়ে থাকেন।
ঘটনার বিবরণে মো. দুলাল হেসেন সংবাদকে বলেন, ‘আমার কোমড়ের একপাশে গুলি লেগে আরেক পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। প্রস্রাবের থলি পায়খানার রাস্তা খাদ্যনালী ফুটা হয়া হিফ জয়েন্ট ভেঙে ভেদ করে গেছে। গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর পাশে লেকভিউ হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যায়। ওখানে আমার পেটের অপারেশন করাইছে। ওই হাসপাতল থেকে ২২ আগস্টে এই হাসপাতালে ভর্তি হই। ওখানেই আমার সাড়ে তিন রাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে ব্র্যাক এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা লোন নেয়া হয়েছে আর বাকি টাকা আত্মীয় স্বজন ও হাত পাতি নেয়া। এই হাসপাতালে এসে কিছু ঔষধ পাই আর ডা. এসে দেখে, এই আর কী।’
চিকিসার বিষয়ে তিনি জানান, ‘এখানে ২১ অক্টোবর ১ টা অপারেশন হয়েছে। আরও ২ টা হবে। আরেক ৩ মাস পর , পরেরটা আরও তার পরের ৩ মাস পর হবে।’
সরকারের কাছে তার দাবি, ‘আমি তো এখন অচল। আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে বাকি জীবটা পার করতে পারতাম।’
শনিবার রাজধানীর চতুর্থ তলার এ-ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এই ওয়ার্ডে প্রায় ৪০জন রোগী নিজ নিজ বেডে কাতরাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আন্দোলন সহিংসতায় হাতে-পায়ে-পিঠে-কোমড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অহত হয়েছেন। কেউ গান পাউডারে দগ্ধ, কারওবা লাঠির আঘাতে হাত পা ভেঙে গেছে, কেউবা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে গিয়ে গর্তে পড়ে যাওয়া, যানযাহনের নিচে পড়ে পা গুড়িয়ে যাওয়া রোগীরাই বেশি।
রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ তলার এ-ওয়ার্ডে শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে প্রবেশ করে দেখা গেলো জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত কয়েকজন রোগী মাঝ বরাবর জটলা পাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে হাত ইশারায় ডাকলেন ২৬-নাম্বার বেডের এক রোগী। সাড়া দিয়ে তার বেডে এগিয়ে গেলে জানতে চাইলেন সাংবাদিক কিনা? হ্যাঁ, সূচক জবাব দিয়ে নাম-পরিচয়-ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মো. মোবারক হোসেন। আমরা এক ভাই-বোন। বাবা নেই, মারা গেছেন। বর্তমানে থাকি ঢাকার মিরপুরে, বাড়ি নারাায়ণগঞ্জ।’
আন্দোলন সহিংসতায় আহত হওয়ার ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘১৯ জুলাই বিকেল চারটায় মিরপুর-১০ এ গুলি লেগে ডান পায়ের রগ ছিড়ে যায় আর বাম পা ভেঙে চুরমার। এক বুলেটেই দুই পা ভেদ করে চলে যায়। সেদিন এই হাসপাতালে ভর্তি হই। অপারেশন দুই পায়েরই হয়েছে।’
‘আন্দোলনে যোগ দিয়েছি তারেক রহমানের নির্দেশে’ এমন দাবি করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘দলের (পক্ষে) থেকে ছাত্রদের (আন্দোলনে) সঙ্গেই ছিলাম।’ আপনার চিকিৎসার ব্যায় কীভাবে হচ্ছে, কারা বহন করছে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেশ নায়ক তারেক রহমান। প্রতিদিনের খরচ দিচ্ছে এলাকার সাবেক কমিশনার। এছাড়া কিছু কিছু কোম্পানি পাঁচ-দশ হাজার টাকা দিয়েছে। ’
‘আর্থিক থেকে শুরু করে মনোবল, সাহস যা লাগে, যিনি আমার কাছে বটগাছের মতো ছায়া তিনি ঢাকা জেলা কাফরুল থানা যুবদল নেতা মো. হাফিজুল ইসলাম বাবু ভাই,’ জানান মোবারক।
সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন? বলেন, ‘সরকার থেকে কিচ্ছু পাই নাই, এক দমেই না। জুলাই ফাউন্ডেশনের ১ লাখ টাকা ওটাও আমি পাইনি। জুলাই ফাউন্ডেশন তো সরকারি না। তাহলে, সরকার কী করলো আমাদের জন্য? নিহত ও আহত পরিবারের দায়িত্ব যদি নাই নিতে পারে, তাহলে নির্বাচন দিক। নির্বাচিত সরকার এসে আমাদের দায়িত্ব নিবে। যেই আসুক।’
আগত মোবারকের কাছেই জানতে চাইলাম এই ওয়ার্ডের কোনো রোগীর কাছে এখনও কোনো সাংবাদিক যায় নাই? হাত ইশারায় দেখিয়ে দিলেন বিপরীত পাশের ৩৫ নাম্বার বেডের রোগীকে। দেখানো রোগির বেডের কাছে যেতেই ‘আমি উঠতে পারি না তো, তাই আমার এখানে...।’ বললেন ঐ রোগী। নাম-পরিচয়-পেশার পরিচয় জানা যায়, ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে চারটার দিকে উত্তর আজিমপুরে আহত হন ঢাকায় রঙ মিস্তিরির কাজ করা দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার মো. দুলাল হেসেন। বর্তমানে তিনি আশুলিয়ায় ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী নিয়ে থাকেন।
ঘটনার বিবরণে মো. দুলাল হেসেন সংবাদকে বলেন, ‘আমার কোমড়ের একপাশে গুলি লেগে আরেক পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। প্রস্রাবের থলি পায়খানার রাস্তা খাদ্যনালী ফুটা হয়া হিফ জয়েন্ট ভেঙে ভেদ করে গেছে। গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর পাশে লেকভিউ হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যায়। ওখানে আমার পেটের অপারেশন করাইছে। ওই হাসপাতল থেকে ২২ আগস্টে এই হাসপাতালে ভর্তি হই। ওখানেই আমার সাড়ে তিন রাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে ব্র্যাক এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা লোন নেয়া হয়েছে আর বাকি টাকা আত্মীয় স্বজন ও হাত পাতি নেয়া। এই হাসপাতালে এসে কিছু ঔষধ পাই আর ডা. এসে দেখে, এই আর কী।’
চিকিসার বিষয়ে তিনি জানান, ‘এখানে ২১ অক্টোবর ১ টা অপারেশন হয়েছে। আরও ২ টা হবে। আরেক ৩ মাস পর , পরেরটা আরও তার পরের ৩ মাস পর হবে।’
সরকারের কাছে তার দাবি, ‘আমি তো এখন অচল। আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে বাকি জীবটা পার করতে পারতাম।’
শনিবার রাজধানীর চতুর্থ তলার এ-ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এই ওয়ার্ডে প্রায় ৪০জন রোগী নিজ নিজ বেডে কাতরাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আন্দোলন সহিংসতায় হাতে-পায়ে-পিঠে-কোমড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অহত হয়েছেন। কেউ গান পাউডারে দগ্ধ, কারওবা লাঠির আঘাতে হাত পা ভেঙে গেছে, কেউবা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে গিয়ে গর্তে পড়ে যাওয়া, যানযাহনের নিচে পড়ে পা গুড়িয়ে যাওয়া রোগীরাই বেশি।