alt

জাতীয়

রূপপুর ‘দুর্নীতি’: টিউলিপকে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

সংবাদ ডেস্ক : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পে ‘অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ কেলেঙ্কারির’ এক অভিযোগে নাম আসায় ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সেই দেশের কর্মকর্তারা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, দেশটির মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (শুদ্ধতা ও নীতিসংক্রান্ত দল) গত বৃহস্পতিবার টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসংক্রান্ত চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের চার সদস্য ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশে অনুসন্ধান চলছে।

টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারে আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর (সিটি মিনিস্টার) দায়িত্বে আছেন। যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাত থেকে দুর্নীতি দূর করা তার দায়িত্বের অংশ।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে ‘মধ্যস্থতা’ করেছিলেন। ‘বাজারদরের চেয়ে বেশি’ ওই চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা) ‘আত্মসাৎ’ করেছেন বলে অভিযোগ।

গত ১৫ ডিসেম্বর রুল জারি করে বাংলাদেশের হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। সেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে ‘৫ বিলিয়ন ডলার লোপাটের’ অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এর দুদিন পর এ বিষয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। দুর্নীতি দমনের এই প্রতিষ্ঠান বলে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে ‘২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির’ অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ‘৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির’ অভিযোগও দুদক পেয়েছে। শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখার জন্য পাঁচ সমস্যের একটি অনুসন্ধান দলও গঠন করেছে দুদক।

প্রবল গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন। আর হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।

দুদক অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। রূপপুরের সেই চুক্তির সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তোলা শেখ হাসিনা, রেহানা, জয় ও টিউলিপের ছবি দিয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো।

এক্সপ্রেস ইউকে এক প্রতিবেদনে বলছে, টিউলিপ প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিমের (পিইটি) সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলে এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার টিউলিপের দপ্তরে যান। ওই কর্মকর্তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলে সেগুলোর জবাব দেন টিউলিপ।

এসব অভিযোগ ‘মিথ্যা’ এবং ‘পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেন টিউলিপ।

তবে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদের মানে ‘এই নয় যে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে’ বলা হয় ব্রিটেনের দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে। টিউলিপের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি টাইমস।

ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা দপ্তর বলেছে, ‘আগে আমরা যেমন বলেছি, প্রতিমন্ত্রী (টিউলিপ) এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।’

ব্রিটেনের ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অনুসন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের দুদকের কর্মকর্তারা এখন অন্যদের সঙ্গে টিউলিপের বিষয়েও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে টিউলিপের বক্তব্য জানতে শিগগিরই ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদেশে ফৌজদারি তদন্তের বিষয়টি যুক্তরাজ্যেও একটি আনুষ্ঠানিক চেহারা পাবে।

দুদকের একজন কর্মকর্তা ডেইলি মেইলকে বলেছেন, টিউলিপের জবাবের ওপর নির্ভর করবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে কিনা। মামলা দায়ের হলে বাংলাদেশ পুলিশের খাতায় একজন সন্দেহভাজন আসামি নাম উঠবে এই ব্রিটিশ এমপির।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেছেন, তারা যে চিঠি পাঠাবেন, তা টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের ‘আত্মপক্ষ’ সমর্থনের সুযোগ দেবে।

ডেইলি মেইল গত শনিবার আরেক প্রতিবেদনে লিখেছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ওই বৈঠকে স্বাক্ষরিত ১শ’ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সে সময় টিউলিপ ছিলেন লেবার পার্টির কাউন্সিলর। দুই বছর পরের নির্বাচনে তিনি এমপি হন। মস্কোতে টিউলিপের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে রাশিয়ার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন শেখ হাসিনা।

টিউলিপ এর আগে দাবি করেছিলেন, পুতিন শেখ হাসিনার পরিবারের সবার সঙ্গে ছবি তুলতে চেয়েছিলেন। সেই অনুরোধই রক্ষা করা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির একজন মুখপাত্র ডেইলি মেইলকে বলেছেন, টিউলিপ রাশিয়া গিয়েছিলেন এমপি হওয়ার দুই বছর আগে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ওই চুক্তির সঙ্গে তার কোনো ‘যোগসূত্র নেই’।

অভিযোগ সামনে আসার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তার সহকর্মী টিউলিপের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা রয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিক তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।

আর ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির কর্মকর্তারা এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরোধীরা ‘রাজনৈতিক কারণে’ এসব অভিযোগ এনেছেন।

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি পার্টি) এক সংসদ সদস্য (এমপি) দেশটির পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডার্ডস কমিশনারকে চিঠি লিখে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।

ছবি

প্রধান উপদেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লিকে ঢাকার চিঠি

‘কৌশলে অনুন্নত দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলছে উন্নত দেশগুলো’

ছবি

ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, হাসপাতালের সেবা বিঘ্ন

পিলখানা হত্যার তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন

ছবি

বিমানবন্দর সড়ক, নীরব এলাকা! শব্দদূষণ কমেনি, কোথাও বেড়েছে

ছবি

মেঘনায় জাহাজে ৭ খুন, ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ ১ জনকে

ছবি

নিরাপত্তার অভাবেই চাঁদপুরে জাহাজে খুন হয় ৭ জন

জাহাজে হত্যার ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কমিটি

নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতাকর্মীদের আইনজীবীও নাশকতা মামলায় গ্রেফতার!

ছবি

আগাছা উপড়ে ফেলে সুন্দর নির্বাচন হবে, ইভিএম ছাড়াই: বদিউল আলম

ছবি

আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ

ছবি

পিলখানা হত্যায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় মামলার মুখে এস কে সুর চৌধুরী

ছবি

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা: জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

ছবি

পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেল আরও ২ প্রতিষ্ঠান

ছবি

হাসান আরিফ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরশায়িত

শিক্ষক নিয়োগে ‘অনিয়মই’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘পঙ্গু’ করেছে : শিক্ষা উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য বেহাত, বিসিসির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করল ইসি

ছবি

‘সীমান্তে দুর্নীতি’, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বৈরশাসকদের অধ্যায় জেলেই শেষ হয়: প্রেস সচিব

ছবি

নির্বাচনে কারা আসবে বা যোগ্য, সে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি: বদিউল আলম মজুমদার

ছবি

উদ্বোধনের আগেই বদলে গেল ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’র নাম

ছবি

উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক

ছবি

দেড় যুগের জঞ্জাল ২-৪ মাসে পরিষ্কার সম্ভব নয়: ধর্ম উপদেষ্টা

ছবি

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: সীমান্তে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো কঠিন হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

এনআইডির তথ্য বেহাত, কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে ইসির সম্পর্ক ছিন্ন

ছবি

হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক

ছবি

বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু: দুই দিনের রিমান্ডে ৩ আসামি

ছবি

দেশ কোনো দলের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি: ধর্ম উপদেষ্টা

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ৮৫৮, আহত সাড়ে ১১ হাজার

ছবি

বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু: জড়িতদের বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

১৫ বছরের করা অন্যায়ের জন্য পুলিশ দুঃখিত, লজ্জিত: আইজিপি

ছবি

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না : ইউনূস

ছবি

শিশু অধিকার নিশ্চিতের জন্য পৃথক অধিদপ্তরের প্রস্তাব ছয় আন্তর্জাতিক সংস্থার

tab

জাতীয়

রূপপুর ‘দুর্নীতি’: টিউলিপকে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

সংবাদ ডেস্ক

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পে ‘অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ কেলেঙ্কারির’ এক অভিযোগে নাম আসায় ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সেই দেশের কর্মকর্তারা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, দেশটির মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (শুদ্ধতা ও নীতিসংক্রান্ত দল) গত বৃহস্পতিবার টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসংক্রান্ত চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের চার সদস্য ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশে অনুসন্ধান চলছে।

টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারে আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর (সিটি মিনিস্টার) দায়িত্বে আছেন। যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাত থেকে দুর্নীতি দূর করা তার দায়িত্বের অংশ।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে ‘মধ্যস্থতা’ করেছিলেন। ‘বাজারদরের চেয়ে বেশি’ ওই চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা) ‘আত্মসাৎ’ করেছেন বলে অভিযোগ।

গত ১৫ ডিসেম্বর রুল জারি করে বাংলাদেশের হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। সেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে ‘৫ বিলিয়ন ডলার লোপাটের’ অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এর দুদিন পর এ বিষয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। দুর্নীতি দমনের এই প্রতিষ্ঠান বলে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে ‘২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির’ অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ‘৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির’ অভিযোগও দুদক পেয়েছে। শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখার জন্য পাঁচ সমস্যের একটি অনুসন্ধান দলও গঠন করেছে দুদক।

প্রবল গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন। আর হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।

দুদক অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। রূপপুরের সেই চুক্তির সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তোলা শেখ হাসিনা, রেহানা, জয় ও টিউলিপের ছবি দিয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো।

এক্সপ্রেস ইউকে এক প্রতিবেদনে বলছে, টিউলিপ প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিমের (পিইটি) সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলে এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার টিউলিপের দপ্তরে যান। ওই কর্মকর্তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলে সেগুলোর জবাব দেন টিউলিপ।

এসব অভিযোগ ‘মিথ্যা’ এবং ‘পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেন টিউলিপ।

তবে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদের মানে ‘এই নয় যে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে’ বলা হয় ব্রিটেনের দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে। টিউলিপের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি টাইমস।

ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা দপ্তর বলেছে, ‘আগে আমরা যেমন বলেছি, প্রতিমন্ত্রী (টিউলিপ) এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।’

ব্রিটেনের ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অনুসন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের দুদকের কর্মকর্তারা এখন অন্যদের সঙ্গে টিউলিপের বিষয়েও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে টিউলিপের বক্তব্য জানতে শিগগিরই ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদেশে ফৌজদারি তদন্তের বিষয়টি যুক্তরাজ্যেও একটি আনুষ্ঠানিক চেহারা পাবে।

দুদকের একজন কর্মকর্তা ডেইলি মেইলকে বলেছেন, টিউলিপের জবাবের ওপর নির্ভর করবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে কিনা। মামলা দায়ের হলে বাংলাদেশ পুলিশের খাতায় একজন সন্দেহভাজন আসামি নাম উঠবে এই ব্রিটিশ এমপির।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেছেন, তারা যে চিঠি পাঠাবেন, তা টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের ‘আত্মপক্ষ’ সমর্থনের সুযোগ দেবে।

ডেইলি মেইল গত শনিবার আরেক প্রতিবেদনে লিখেছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ওই বৈঠকে স্বাক্ষরিত ১শ’ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সে সময় টিউলিপ ছিলেন লেবার পার্টির কাউন্সিলর। দুই বছর পরের নির্বাচনে তিনি এমপি হন। মস্কোতে টিউলিপের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে রাশিয়ার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন শেখ হাসিনা।

টিউলিপ এর আগে দাবি করেছিলেন, পুতিন শেখ হাসিনার পরিবারের সবার সঙ্গে ছবি তুলতে চেয়েছিলেন। সেই অনুরোধই রক্ষা করা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির একজন মুখপাত্র ডেইলি মেইলকে বলেছেন, টিউলিপ রাশিয়া গিয়েছিলেন এমপি হওয়ার দুই বছর আগে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ওই চুক্তির সঙ্গে তার কোনো ‘যোগসূত্র নেই’।

অভিযোগ সামনে আসার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তার সহকর্মী টিউলিপের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা রয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিক তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।

আর ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির কর্মকর্তারা এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরোধীরা ‘রাজনৈতিক কারণে’ এসব অভিযোগ এনেছেন।

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি পার্টি) এক সংসদ সদস্য (এমপি) দেশটির পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডার্ডস কমিশনারকে চিঠি লিখে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।

back to top