বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘাত থাকার পরও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বা রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে সেগুলো যেভাবে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে সেভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সম্পর্ক ভালো রাখা গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সংস্কার নিয়ে জাতীয় সংলাপের এক অধিবেশনে তিনি বলেন, “ভারত এবং চীনের মধ্যে এক ধরনের সংঘাত আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে এক ধরনের সখ্য আছে। আবার আমাদের কিন্তু এ তিন দেশের সাথেই সম্পর্ক ভালো রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “ভালো রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমাদের স্বার্থ আছে এ তিনটা জায়গাতেই।”
এ বিষয়ে আরও বিশদ ব্যাখ্যায় তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। এত যে শত্রুতা চীন ও ভারতে, তাদের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণটা আপনারা শুধু খেয়াল করে দেইখেন-১০০ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।
“কাজেই আমাদের স্বার্থ আছে প্রতিটা দেশের সাথে। এবং আমাদের আরেকটা স্বার্থ আছে যেহেতু আমরা মেজর প্লেয়ার না ইন্টারন্যাশনাল অ্যারিনাতে। কাজেই আমাদের এক ধরনের ব্যালেন্স মেনটেইন করে চলতে হবে, এটাও কিন্তু একটু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
ব্যাংককে সম্প্রতি একটা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় মিয়ানমারের চারপাশে থাকা সীমান্ত দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনার প্রসঙ্গও সংলাপে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, “সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনের বিষয়টি ছিল না। কিন্তু আমি বলেছি, এটার সমাধান না হলে প্রত্যেকের (এসব দেশের) অসুবিধা হবে।
“সেখানে আমি গিয়েছিলাম। মূল আলোচনায় তিনটি বিষয় ছিল- এক বর্ডার, দুই ড্রাগ এবং অন্য ক্রাইম, তিন মিয়ানমারের বহিঃশক্তির আক্রমণ। রোহিঙ্গাদের বিষয় ছিল না।
“আমাকে যখন ইনভাইট করা হয়, আমি প্রথমেই বলেছি যে আপনারা যে তিনটা ইস্যুর কথা বলছেন প্রত্যেকটাতেই রোহিঙ্গাদের স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এবং রোহিঙ্গা বিষয়ের সমাধান না করে এ তিন বিষয়ের সমাধান করতে পারবেন না।”
এসময় এটা ‘ইনফরমাল কনসালটেশন’ হওয়ায় ‘অনেক ফ্রি ফ্রাংক কথা’ হওয়ার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “দ্বি পাক্ষিক আলোচনা হয়েছে চারটি। সেখানে (দেশগুলোকে) আমি বুঝিয়ে দিয়েছি যে (তোমরা) তাদের (রোহিঙ্গাদের) সমস্যা সমাধান যদি না করো, তাদের (মিয়ানমারের) যে ডেমোগ্রাফিক প্যাটার্ন, তোমাদের প্রত্যেকের অসুবিধা হবে।
“আমি এ তিনটা বিষয়ে বলেছি। প্রত্যেকটাই আমাদের স্বার্থের সাথে জড়িত এবং এ তিন সমস্যার সমাধানের সাথেই, সমাধানের পথেই রোহিঙ্গা সমাধান জড়িত। এই হচেছ আমাদের অবস্থান।”
মিয়ানমারের প্রতিনিধিকে তখন কী বলা হয়েছে সেটিও তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি তাদেরকে বলেছি যে আমাদের স্বার্থ তোমাদের দেখতে হবে। আমাদের স্বার্থ হচ্ছে মিয়ানমারের শান্তি প্রতিষ্ঠা।”
তবে আরাকান ইস্যুতে এখন দেশটিতে শান্তি না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে পারছেন না বলে উপদেষ্টা দাবি করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আজকে, কালকে তো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে কথাও বলতে পারছি না। কার সাথে কথা বলব। এটা নিয়েই তো সমস্যা। আর যে অঞ্চলে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়েছে এবং হচ্ছে সেখানে মিয়ানমার রাষ্ট্রের তো কোনো কতৃত্ব নাই।
“কাজেই আমি আশা করছি না যে আগামী দুই মাস-ছয় মাসের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করাতে পারব। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে তাদেরকে অবশ্যই তাদের ফেরত পাঠাতে হবে না হলে কিন্তু তোমাদেরও শান্তি থাকবে না। তাদেরকে আমি সুস্পষ্ট করে দিয়েছি।”
এজন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সবার ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কাজেই আমাদের যেটা করতে হবে, আবার আমি বলব ঐক্যের প্রয়োজন। অবশ্যই দ্বিমত থাকতে পারে। একই বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান তো থাকে। একেক সময় একেক রকম চিন্তা করতে পারে। কিন্তু এই যে একটা জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন সেখানে ঐক্য থাকা জরুরি।
“পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিন্তু এটা আছে। বাই পার্টিজান (যেখানে দুটি দলের মেজরিটি) আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। আনফরচুনেটলি আমরা গত ৫০ বছরে, ৫২ বছরে কখনও দেখিনি।”
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘাত থাকার পরও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বা রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে সেগুলো যেভাবে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে সেভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সম্পর্ক ভালো রাখা গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সংস্কার নিয়ে জাতীয় সংলাপের এক অধিবেশনে তিনি বলেন, “ভারত এবং চীনের মধ্যে এক ধরনের সংঘাত আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে এক ধরনের সখ্য আছে। আবার আমাদের কিন্তু এ তিন দেশের সাথেই সম্পর্ক ভালো রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “ভালো রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমাদের স্বার্থ আছে এ তিনটা জায়গাতেই।”
এ বিষয়ে আরও বিশদ ব্যাখ্যায় তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। এত যে শত্রুতা চীন ও ভারতে, তাদের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণটা আপনারা শুধু খেয়াল করে দেইখেন-১০০ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।
“কাজেই আমাদের স্বার্থ আছে প্রতিটা দেশের সাথে। এবং আমাদের আরেকটা স্বার্থ আছে যেহেতু আমরা মেজর প্লেয়ার না ইন্টারন্যাশনাল অ্যারিনাতে। কাজেই আমাদের এক ধরনের ব্যালেন্স মেনটেইন করে চলতে হবে, এটাও কিন্তু একটু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
ব্যাংককে সম্প্রতি একটা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় মিয়ানমারের চারপাশে থাকা সীমান্ত দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনার প্রসঙ্গও সংলাপে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, “সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনের বিষয়টি ছিল না। কিন্তু আমি বলেছি, এটার সমাধান না হলে প্রত্যেকের (এসব দেশের) অসুবিধা হবে।
“সেখানে আমি গিয়েছিলাম। মূল আলোচনায় তিনটি বিষয় ছিল- এক বর্ডার, দুই ড্রাগ এবং অন্য ক্রাইম, তিন মিয়ানমারের বহিঃশক্তির আক্রমণ। রোহিঙ্গাদের বিষয় ছিল না।
“আমাকে যখন ইনভাইট করা হয়, আমি প্রথমেই বলেছি যে আপনারা যে তিনটা ইস্যুর কথা বলছেন প্রত্যেকটাতেই রোহিঙ্গাদের স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এবং রোহিঙ্গা বিষয়ের সমাধান না করে এ তিন বিষয়ের সমাধান করতে পারবেন না।”
এসময় এটা ‘ইনফরমাল কনসালটেশন’ হওয়ায় ‘অনেক ফ্রি ফ্রাংক কথা’ হওয়ার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “দ্বি পাক্ষিক আলোচনা হয়েছে চারটি। সেখানে (দেশগুলোকে) আমি বুঝিয়ে দিয়েছি যে (তোমরা) তাদের (রোহিঙ্গাদের) সমস্যা সমাধান যদি না করো, তাদের (মিয়ানমারের) যে ডেমোগ্রাফিক প্যাটার্ন, তোমাদের প্রত্যেকের অসুবিধা হবে।
“আমি এ তিনটা বিষয়ে বলেছি। প্রত্যেকটাই আমাদের স্বার্থের সাথে জড়িত এবং এ তিন সমস্যার সমাধানের সাথেই, সমাধানের পথেই রোহিঙ্গা সমাধান জড়িত। এই হচেছ আমাদের অবস্থান।”
মিয়ানমারের প্রতিনিধিকে তখন কী বলা হয়েছে সেটিও তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি তাদেরকে বলেছি যে আমাদের স্বার্থ তোমাদের দেখতে হবে। আমাদের স্বার্থ হচ্ছে মিয়ানমারের শান্তি প্রতিষ্ঠা।”
তবে আরাকান ইস্যুতে এখন দেশটিতে শান্তি না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে পারছেন না বলে উপদেষ্টা দাবি করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আজকে, কালকে তো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে কথাও বলতে পারছি না। কার সাথে কথা বলব। এটা নিয়েই তো সমস্যা। আর যে অঞ্চলে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়েছে এবং হচ্ছে সেখানে মিয়ানমার রাষ্ট্রের তো কোনো কতৃত্ব নাই।
“কাজেই আমি আশা করছি না যে আগামী দুই মাস-ছয় মাসের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করাতে পারব। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে তাদেরকে অবশ্যই তাদের ফেরত পাঠাতে হবে না হলে কিন্তু তোমাদেরও শান্তি থাকবে না। তাদেরকে আমি সুস্পষ্ট করে দিয়েছি।”
এজন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সবার ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কাজেই আমাদের যেটা করতে হবে, আবার আমি বলব ঐক্যের প্রয়োজন। অবশ্যই দ্বিমত থাকতে পারে। একই বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান তো থাকে। একেক সময় একেক রকম চিন্তা করতে পারে। কিন্তু এই যে একটা জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন সেখানে ঐক্য থাকা জরুরি।
“পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিন্তু এটা আছে। বাই পার্টিজান (যেখানে দুটি দলের মেজরিটি) আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। আনফরচুনেটলি আমরা গত ৫০ বছরে, ৫২ বছরে কখনও দেখিনি।”