দেশে বেসরকারি এলপি গ্যাসের দাম জানুয়ারি মাসের জন্য প্রতি কেজিতে ৬ পয়সা কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে আবাসিকে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দামে পরিবর্তন আসেনি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মতো জানুয়ারিতেও ১৪৫৫ টাকাই রয়েছে। তবে সাড়ে ১২ কেজি থেকে ৪৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে দাম ১-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। যানবাহনের জ্বালানি অটোগ্যাসের দাম লিটারে ৩ পয়সা কমেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও ‘ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার’ কারণে এর সুফল কাজে লাগানো যায়নি বলে জানিয়েছেন বিইআরসির একজন সদস্য।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার কাওরান বাজারে বিইআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানুয়ারি মাসের জন্য তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের দাম ঘোষণা করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। সন্ধ্যা ৬টা থেকেই এ দাম কার্যকর করা হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য
এলপিজি তৈরির মূল উপাদান (কাঁচামাল) প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।
বিইআরসির মার্চের মূল্য ঘোষণা দেখা যায়, সৌদি আরামকোর মূল্য অনুযায়ী প্রোপেন ও বিউটেনের অনুপাত ৩৫:৬৫ অনুযায়ী জানুয়ারির জন্য প্রতি মেট্রিক টনে গড় মূল্য ধরা হয়েছে ৬১৮.৫০ মার্কিন ডলার; যা ডিসেম্বরে ৬৩১.৭৫ মার্কিন ডলার ছিল। এ হিসেবে জানুয়ারিতে প্রতি টনে কমেছে ১৩.২৫ ডলার।
ডলারের মূল্য
আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দামও হিসাব করে বিইআরসি। ডিসেম্বর মাসে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকা ২১ পয়সা ধরা হলেও জানুয়ারি মাসে তা ১২২ টাকা ৩৪ পয়সা ধরা হচ্ছে।
বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মিজানুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমলেও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে দাম নির্ধারণে সেই সুফল কাজে লাগানো যায়নি। প্রোপেন ও বিউটেনের গড় মূল্য প্রতি টনে ১৩ দশমিক ২৫ ডলার কমেছিল।
জানুয়ারির দর
ডিসেম্বরে মূসকসহ প্রতিকেজি এলপিজির দাম ছিল ১২১ টাকা ২৫ পয়সা। জানুয়ারির জন্য ১২১ টাকা ১৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ী অন্যান্য পরিমাণের সিলিন্ডারের দাম ঠিক করা হয়েছে।
এতে ডিসেম্বরের মতো জানুয়ারিতেও এলপিজির ৫.৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৬৭ টাকা এবং ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৪৫৫ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে। সাড়ে ১২ কেজিতে দাম এক টাকা কমে ১৫১৫ টাকা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১৬ কেজি থেকে ৪৫ কেজি সিলিন্ডারে দাম ১-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। জানুয়ারির জন্য ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪৫৪ টাকা; ডিসেম্বরে দাম ছিল ৫৪৫৭ টাকা।
এই মাসে অটোগ্যাসের দাম ঠিক করা হয়েছে প্রতি লিটার ৬৬ টাকা ৭৮ পয়সা। গত মাসে দাম ছিল ৬৬ টাকা ৮১ পয়সা।
বহুতল ভবনে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহৃত রেটিকুলেটেড পদ্ধতির (তরল অবস্থায়) এলপি গ্যাসের দাম মূসকসহ প্রতি কেজি ১১৭ টাকা ৩৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে দাম ছিল ১১৭ টাকা ৪৩ পয়সা।
আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৯০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
দেশীয় বাজার
প্রায় দেড় দশক আগে সরকার যখন আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তার পর থেকে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসাবাড়ি, রেস্তোরার মালিকরা গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করেন। ওই সময় সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুন্ন করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত। বর্তমানে সরকারি খাত থেকে সরবরাহ এক শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বাসায় রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ১ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা প্রকৃতপক্ষে এ খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করছে বিইআরসি।
*ভোক্তাদের অভিযোগ*
বাজারে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ অধিকাংশ ভোক্তার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে গ্যাসের সিলিন্ডার কেনার সময় ক্রেতাকে রসিদ সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রেতা এলপিজি ক্রয়ের রসিদ চাইলে দোকানদাররা বলেন, ‘রসিদ দেয়া যাবে না, গ্যাস না নিলে রেখে যান।’
শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫
দেশে বেসরকারি এলপি গ্যাসের দাম জানুয়ারি মাসের জন্য প্রতি কেজিতে ৬ পয়সা কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে আবাসিকে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দামে পরিবর্তন আসেনি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মতো জানুয়ারিতেও ১৪৫৫ টাকাই রয়েছে। তবে সাড়ে ১২ কেজি থেকে ৪৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে দাম ১-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। যানবাহনের জ্বালানি অটোগ্যাসের দাম লিটারে ৩ পয়সা কমেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও ‘ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার’ কারণে এর সুফল কাজে লাগানো যায়নি বলে জানিয়েছেন বিইআরসির একজন সদস্য।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার কাওরান বাজারে বিইআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানুয়ারি মাসের জন্য তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের দাম ঘোষণা করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। সন্ধ্যা ৬টা থেকেই এ দাম কার্যকর করা হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য
এলপিজি তৈরির মূল উপাদান (কাঁচামাল) প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।
বিইআরসির মার্চের মূল্য ঘোষণা দেখা যায়, সৌদি আরামকোর মূল্য অনুযায়ী প্রোপেন ও বিউটেনের অনুপাত ৩৫:৬৫ অনুযায়ী জানুয়ারির জন্য প্রতি মেট্রিক টনে গড় মূল্য ধরা হয়েছে ৬১৮.৫০ মার্কিন ডলার; যা ডিসেম্বরে ৬৩১.৭৫ মার্কিন ডলার ছিল। এ হিসেবে জানুয়ারিতে প্রতি টনে কমেছে ১৩.২৫ ডলার।
ডলারের মূল্য
আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দামও হিসাব করে বিইআরসি। ডিসেম্বর মাসে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকা ২১ পয়সা ধরা হলেও জানুয়ারি মাসে তা ১২২ টাকা ৩৪ পয়সা ধরা হচ্ছে।
বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মিজানুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমলেও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে দাম নির্ধারণে সেই সুফল কাজে লাগানো যায়নি। প্রোপেন ও বিউটেনের গড় মূল্য প্রতি টনে ১৩ দশমিক ২৫ ডলার কমেছিল।
জানুয়ারির দর
ডিসেম্বরে মূসকসহ প্রতিকেজি এলপিজির দাম ছিল ১২১ টাকা ২৫ পয়সা। জানুয়ারির জন্য ১২১ টাকা ১৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ী অন্যান্য পরিমাণের সিলিন্ডারের দাম ঠিক করা হয়েছে।
এতে ডিসেম্বরের মতো জানুয়ারিতেও এলপিজির ৫.৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৬৭ টাকা এবং ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৪৫৫ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে। সাড়ে ১২ কেজিতে দাম এক টাকা কমে ১৫১৫ টাকা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১৬ কেজি থেকে ৪৫ কেজি সিলিন্ডারে দাম ১-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। জানুয়ারির জন্য ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪৫৪ টাকা; ডিসেম্বরে দাম ছিল ৫৪৫৭ টাকা।
এই মাসে অটোগ্যাসের দাম ঠিক করা হয়েছে প্রতি লিটার ৬৬ টাকা ৭৮ পয়সা। গত মাসে দাম ছিল ৬৬ টাকা ৮১ পয়সা।
বহুতল ভবনে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহৃত রেটিকুলেটেড পদ্ধতির (তরল অবস্থায়) এলপি গ্যাসের দাম মূসকসহ প্রতি কেজি ১১৭ টাকা ৩৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে দাম ছিল ১১৭ টাকা ৪৩ পয়সা।
আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৯০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
দেশীয় বাজার
প্রায় দেড় দশক আগে সরকার যখন আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তার পর থেকে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসাবাড়ি, রেস্তোরার মালিকরা গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করেন। ওই সময় সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুন্ন করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত। বর্তমানে সরকারি খাত থেকে সরবরাহ এক শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বাসায় রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ১ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা প্রকৃতপক্ষে এ খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করছে বিইআরসি।
*ভোক্তাদের অভিযোগ*
বাজারে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ অধিকাংশ ভোক্তার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে গ্যাসের সিলিন্ডার কেনার সময় ক্রেতাকে রসিদ সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রেতা এলপিজি ক্রয়ের রসিদ চাইলে দোকানদাররা বলেন, ‘রসিদ দেয়া যাবে না, গ্যাস না নিলে রেখে যান।’