alt

জাতীয়

আন্তঃক্যাডার ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকট, দাবি না মানলে কঠোর হুমকি ২৫ ক্যাডারের

রাকিব উদ্দিন : সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫

* ফেইসবুকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য অব্যাহত

আন্তঃক্যাডার ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকট হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের ‘বিরুদ্ধে’ অন্যান্য ক্যাডার সদস্যরা নানাভাবে সরব হচ্ছেন। প্রশাসন ক্যাডারের ‘বিরুদ্ধে’ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘ফেইসবুকে’ বিরুপ মন্তব্য করছেন বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তারা। পরস্পরের বিরুদ্ধে এই ধরণের মন্তবের ঘটনায় সম্প্রতি পাঁচটি ক্যাডারের অন্তত আটজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপরও পরস্পর সর্ম্পকে ‘বিরুপ’ মন্তব্য করেই যাচ্ছেন অনেক কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। যারাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উসকানিমূলক বা বিরুপ মন্তব্য করবে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে; সে যে ক্যাডারেরই হোক। এই ধরণের কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। দেখা যাচ্ছে, অনেক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তঃক্যাডার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এটি সরকারি কর্মচারী বিধির লঙ্ঘন।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ শাহজাহান সাজু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক আলোচনা বলেছেন, ‘সব মন্ত্রণালয় তারা চালাবে। এখন কমে ২৬টি ক্যাডার আছে। কী আজব! ২৫টি ক্যাডারের জন্য ২৫ পার্সেন্ট; ওনারা (প্রশাসন ক্যাডার) একা ৭৫ পার্সেন্ট। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যখন সরকারের পরিবর্তন হয়ে গেলো, তখনও কী এই বৈষম্য চলতে থাকবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন মুয়ীদ কমিশন...এর কিছুটা (বৈষম্য কমানোর) প্রস্তাব দিয়েছেন...২৫টি ক্যাডারের জন্য ২ পার্সেন্ট করে ৫০ পার্সেন্ট এবং আর ওদের একার জন্য ৫০ পার্সেন্ট; এরপরও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, উপসচিব পদে অন্য ক্যাডারের কেউ আসতে পারবেন না; উপসচিবের ওপরের একশ’ পার্সেন্টই তারা খাবেন।’

‘দক্ষ ও নিরপেক্ষ’ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে সভাপতি করে গত ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে কমিশনের সভাপতি ও অন্যরা।

সেদিন মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, তারা ২৬টি ক্যাডার থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করবেন। একই সঙ্গে উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি এবং জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশের কোটা সুপারিশ করার কথাও জানান তিনি।

বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেয়া হয়। এই স্তরে পদোন্নতিতে কোনো পরীক্ষা নেয়া হয় না।

মুয়ীদ চৌধুরীর ওই বক্তব্যের পর নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকেন প্রশাসন ক্যাডার ও অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অর্থাৎ দুই পক্ষের কেউ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন না। এই ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সভা, সেমিনার, কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে প্রশাসন ক্যাডারের দু’জন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মাঠ প্রশাসনে সামগ্রিক কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী জায়গা সচিবালয়ে আসেন। এর ফলে তারা মাঠের বাস্তবতা, অর্জিত জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে নীতিনির্ধারক তথা রাজনীতিকদের সহায়তা করতে পারেন। এ কারণে মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাই এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।

কিন্তু অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সীমিত দাবি করে ওই দু’কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা বিশেষ বিশেষ কাজে অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। তাদের প্রশাসনিক কাজে বিশেষভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ার সুযোগ কম।

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, যারা এই বিধি লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ রাজধানীতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

ফেইসবুকে যা বলছেন কর্মকর্তারা

মো. আলাউদ্দীন নামে একজন শিক্ষক ফেইসবুকে বলেছেন, ‘গ্রেড ২ বা ১ যাওয়ার মতো মেধানী নাই অন্যান্য ক্যাডারে! আমাদের সিনিয়র স্যারদের জীবন যায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব বা রুটিন দায়িত্ব পালন করে করে। গ্রেড ১ এ যাওয়ার সুযোগ কই? আজ তাহার মন ভালো নেই তাই পদোন্নতির সভা বসিবে না!’

আব্দুর রাজ্জাক নামের শিক্ষা ক্যাডারে একজন সদস্য ফেইসবুকে বলেছেন, ‘উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের। উপ সচিব পদ একক কোন ক্যাডারের নয়। জিএস পুলের কোটা ও জবর দখন বন্ধ হোক।’

শেরপুর জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মী ফেইসবুকে বলেন, ‘জেহসান ইসলাম নামের অতিরিক্ত সচিব দাবি করা এই ভদ্রলোক মূলত সাবেক যুগ্মসচিবের বিলুপ্ত সংক্রান্ত একটা পোস্ট ব্যাপক মার্কেট পেয়েছে। ভদ্রলোক মূলত শরীফ থেকে শরীফা (ডাক টু প্রশাসন)’

সানাউল মোর্শেদ নামের একজন সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফেইসবুকে বলেন, ‘জেনারেল কোন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য কোনো ক্যাডারেরর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই। কিছু ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা নিজেদের যোগ্যতা ও হেডোম নেই তাই নিজেদের কুযৌক্তিক আন্দোলনকে ২৫ ক্যাডারের আন্দোলন বলে চালিয়ে দিচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে কামকাজ নেই এরকম ২/৩ ক্যাডারের কিছু আবাল এসব ক্যাডার বৈষম্য ক্যাচাল নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ সমন্বয়ক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, বাকস্বাধীনতা ফিরে পেতে। কেউ যদি গুরুতর অন্যায় করেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু ঢালাও বরখাস্ত করে অবিচার করা হচ্ছে।

প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা ২৫টি ক্যাডার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা ফেইসবুকে যাচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন।

মফিজুর রহমান বলেন, সংস্কার কমিশন ২৫ ক্যাডারের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেলে তারাও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। কমিশনের সুপারিশে তাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কোনো কিছু না থাকলে তারা সম্মিলিতভাবে ‘কঠোর কর্মসূচি’ পালন করবেন বলে জানান তিনি।

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বে আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিস্কার

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব ঘিরে পরস্পরের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে বিরূপ মন্তবের অভিযোগে-বিসিএস প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের আটজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষা ক্যাডারের। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন বিসিএস প্রশাসন, একজন প্রাণিসম্পদ ও একজন মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তা।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্যাডারের অন্তত ১৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা’ নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘যারা আন্দোলনের নামে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমলাদের বলছি, এখন সময় জনগণকে সময় দেয়ার। আমাদের যে গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনটা, সেটাকে সঠিকভাবে করতে সহায়তা করা। আন্দোলন-আন্দোলন খেলা কিংবা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার জন্য কিন্তু এত মানুষ জীবন দেয়নি।’

ছবি

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন আবাসিক প্রকল্পে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট

ছবি

সাড়ে সাত বছর পর মা ও ছেলে

বিডিআরে বিদ্রোহ নয়, ‘ওটা সেনা হত্যার ষড়যন্ত্র’: তদন্ত কমিশন প্রধান

ছবি

বিআরটিএর অভিযানে ৫৪ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা জরিমানা

ছবি

চালের বাজার সহনীয় রাখতে প্রয়োজনে বিশেষ ওএমএস: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের সরকারি সহায়তা আগামী সপ্তাহ থেকে

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ ও নিজেদের ৫ অগ্রাধিকারের কথা জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির গণসংযোগ শুরু

ছবি

বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ নেয়া হবে খালেদা জিয়াকে

ছবি

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ: এখনও বিচারের আশায় বাবা-মা

ছবি

‘হঠাৎ বন্ধ’ রামপাল, উৎপাদনে ফিরেছে পায়রা

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটির ডাক্তারসহ ১৫ জনকে বরখাস্ত

ছবি

অভিযানের সময় পোশাক পরতে হবে, পরিচয়পত্র দেখাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নবম ও দশম শ্রেণীর বইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যু তারিখ ভুল!

ছবি

সেনাবাহিনী জাতির অহংকার ও বিশ্বাসের জায়গা : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

অভিনেতা প্রবীর মিত্র মারা গেছেন

‘মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত ও মীমাংসিত’ বিষয়গুলো ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হলে দেশ বাধাগ্রস্ত হবে: ড. কামাল

ছবি

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তারিখ ঠিক হয়নি: প্রেস সচিব

ছবি

খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন মঙ্গলবার

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করায় হামলার শিকার গণঅধিকার পরিষদ নেতা

ছবি

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, ব্রিটিশ এমপিকে ইউনূস

ছবি

নতুন “ডিজিটাল সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪” মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন হাতিয়ার

ছবি

৪৩তম বিসিএস: রাজনৈতিক পরিচয়ে চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে কেন?

ছবি

প্রবীণ শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল্লাহ চৌধুরীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

ছবি

পাঁচ দিনের মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস

ছবি

২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত

ছবি

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দেশব্যাপী জনসংযোগ ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি

চিত্র নায়িকা অঞ্জনা মারা গেছেন

মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ‘অনভিজ্ঞ, অদক্ষরা’, পরিবর্তন চায় ২৫ ক্যাডার

ছবি

১৩ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, শীতের অনুভূতি ‘কমার’ আভাস

ছবি

প্রথম ধাপের ছয় সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫

রাঙামাটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক সন্ত্রাসী নিহত

চিন্ময়ের জামিন আবেদন নাকচ

৪৩তম বিসিএসে ২২৭ প্রার্থী ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনে’ বাদ’ পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন

tab

জাতীয়

আন্তঃক্যাডার ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকট, দাবি না মানলে কঠোর হুমকি ২৫ ক্যাডারের

রাকিব উদ্দিন

সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫

* ফেইসবুকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য অব্যাহত

আন্তঃক্যাডার ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকট হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের ‘বিরুদ্ধে’ অন্যান্য ক্যাডার সদস্যরা নানাভাবে সরব হচ্ছেন। প্রশাসন ক্যাডারের ‘বিরুদ্ধে’ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘ফেইসবুকে’ বিরুপ মন্তব্য করছেন বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তারা। পরস্পরের বিরুদ্ধে এই ধরণের মন্তবের ঘটনায় সম্প্রতি পাঁচটি ক্যাডারের অন্তত আটজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপরও পরস্পর সর্ম্পকে ‘বিরুপ’ মন্তব্য করেই যাচ্ছেন অনেক কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। যারাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উসকানিমূলক বা বিরুপ মন্তব্য করবে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে; সে যে ক্যাডারেরই হোক। এই ধরণের কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। দেখা যাচ্ছে, অনেক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তঃক্যাডার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এটি সরকারি কর্মচারী বিধির লঙ্ঘন।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ শাহজাহান সাজু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক আলোচনা বলেছেন, ‘সব মন্ত্রণালয় তারা চালাবে। এখন কমে ২৬টি ক্যাডার আছে। কী আজব! ২৫টি ক্যাডারের জন্য ২৫ পার্সেন্ট; ওনারা (প্রশাসন ক্যাডার) একা ৭৫ পার্সেন্ট। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যখন সরকারের পরিবর্তন হয়ে গেলো, তখনও কী এই বৈষম্য চলতে থাকবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন মুয়ীদ কমিশন...এর কিছুটা (বৈষম্য কমানোর) প্রস্তাব দিয়েছেন...২৫টি ক্যাডারের জন্য ২ পার্সেন্ট করে ৫০ পার্সেন্ট এবং আর ওদের একার জন্য ৫০ পার্সেন্ট; এরপরও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, উপসচিব পদে অন্য ক্যাডারের কেউ আসতে পারবেন না; উপসচিবের ওপরের একশ’ পার্সেন্টই তারা খাবেন।’

‘দক্ষ ও নিরপেক্ষ’ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে সভাপতি করে গত ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে কমিশনের সভাপতি ও অন্যরা।

সেদিন মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, তারা ২৬টি ক্যাডার থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করবেন। একই সঙ্গে উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি এবং জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশের কোটা সুপারিশ করার কথাও জানান তিনি।

বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেয়া হয়। এই স্তরে পদোন্নতিতে কোনো পরীক্ষা নেয়া হয় না।

মুয়ীদ চৌধুরীর ওই বক্তব্যের পর নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকেন প্রশাসন ক্যাডার ও অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অর্থাৎ দুই পক্ষের কেউ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন না। এই ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সভা, সেমিনার, কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে প্রশাসন ক্যাডারের দু’জন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মাঠ প্রশাসনে সামগ্রিক কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী জায়গা সচিবালয়ে আসেন। এর ফলে তারা মাঠের বাস্তবতা, অর্জিত জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে নীতিনির্ধারক তথা রাজনীতিকদের সহায়তা করতে পারেন। এ কারণে মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাই এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।

কিন্তু অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সীমিত দাবি করে ওই দু’কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা বিশেষ বিশেষ কাজে অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। তাদের প্রশাসনিক কাজে বিশেষভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ার সুযোগ কম।

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, যারা এই বিধি লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ রাজধানীতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

ফেইসবুকে যা বলছেন কর্মকর্তারা

মো. আলাউদ্দীন নামে একজন শিক্ষক ফেইসবুকে বলেছেন, ‘গ্রেড ২ বা ১ যাওয়ার মতো মেধানী নাই অন্যান্য ক্যাডারে! আমাদের সিনিয়র স্যারদের জীবন যায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব বা রুটিন দায়িত্ব পালন করে করে। গ্রেড ১ এ যাওয়ার সুযোগ কই? আজ তাহার মন ভালো নেই তাই পদোন্নতির সভা বসিবে না!’

আব্দুর রাজ্জাক নামের শিক্ষা ক্যাডারে একজন সদস্য ফেইসবুকে বলেছেন, ‘উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের। উপ সচিব পদ একক কোন ক্যাডারের নয়। জিএস পুলের কোটা ও জবর দখন বন্ধ হোক।’

শেরপুর জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মী ফেইসবুকে বলেন, ‘জেহসান ইসলাম নামের অতিরিক্ত সচিব দাবি করা এই ভদ্রলোক মূলত সাবেক যুগ্মসচিবের বিলুপ্ত সংক্রান্ত একটা পোস্ট ব্যাপক মার্কেট পেয়েছে। ভদ্রলোক মূলত শরীফ থেকে শরীফা (ডাক টু প্রশাসন)’

সানাউল মোর্শেদ নামের একজন সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফেইসবুকে বলেন, ‘জেনারেল কোন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য কোনো ক্যাডারেরর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই। কিছু ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা নিজেদের যোগ্যতা ও হেডোম নেই তাই নিজেদের কুযৌক্তিক আন্দোলনকে ২৫ ক্যাডারের আন্দোলন বলে চালিয়ে দিচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে কামকাজ নেই এরকম ২/৩ ক্যাডারের কিছু আবাল এসব ক্যাডার বৈষম্য ক্যাচাল নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ সমন্বয়ক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, বাকস্বাধীনতা ফিরে পেতে। কেউ যদি গুরুতর অন্যায় করেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু ঢালাও বরখাস্ত করে অবিচার করা হচ্ছে।

প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা ২৫টি ক্যাডার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা ফেইসবুকে যাচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন।

মফিজুর রহমান বলেন, সংস্কার কমিশন ২৫ ক্যাডারের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেলে তারাও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। কমিশনের সুপারিশে তাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কোনো কিছু না থাকলে তারা সম্মিলিতভাবে ‘কঠোর কর্মসূচি’ পালন করবেন বলে জানান তিনি।

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বে আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিস্কার

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব ঘিরে পরস্পরের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে বিরূপ মন্তবের অভিযোগে-বিসিএস প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের আটজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষা ক্যাডারের। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন বিসিএস প্রশাসন, একজন প্রাণিসম্পদ ও একজন মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তা।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্যাডারের অন্তত ১৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা’ নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘যারা আন্দোলনের নামে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমলাদের বলছি, এখন সময় জনগণকে সময় দেয়ার। আমাদের যে গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনটা, সেটাকে সঠিকভাবে করতে সহায়তা করা। আন্দোলন-আন্দোলন খেলা কিংবা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার জন্য কিন্তু এত মানুষ জীবন দেয়নি।’

back to top