alt

জাতীয়

গণঅভ্যুত্থানের পর ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক ‘অবাঞ্ছিত’

রাকিব উদ্দিন : সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সারাদেশের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক নিজ নিজ স্কুল-কলেজে যেতে পারছেন না। তাদের বেতনভাতা বা এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বন্ধ রয়েছে। সরকার সম্প্রতি ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) প্রক্রিয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে; সেই প্রক্রিয়ায়ও ওইসব শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।

বেতনভাতা, চাকরিতে যোগদান এবং ইএফটিতে নাম অন্তুর্ভুক্তির দাবিতে ‘পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক জোটের’ ব্যানারে রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) জড়ো হন শতাধিক শিক্ষক। তারা মাউশি মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে চান। এ সময় মহাপরিচালক সভায় ব্যস্ত ছিলেন। এর আগে সকালে একই দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ‘স্বারকলিপি’ দেয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

তাদের দাবিগুলি হলো- ‘পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের এমপিও থেকে নাম কর্তন না করে বেতন-ভাতাদি চালু রাখার ব্যবস্থা করা; পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ, অপসারণ, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক ছুটি বাতিল করা; সুষ্পষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে সসম্মানে স্বপদে বহাল করে কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধান করা এবং অনতিবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বার্থলোভী ও শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা।’

এছাড়া পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের সমমানের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে বদলির ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

‘পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক জোটের’ আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম তালুকদার সংবাদকে বলেছেন, ‘এখনও দেশজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও হেনস্তা করা হচ্ছে। এ কারণে পদ-বঞ্চিত শিক্ষকরা কর্মস্থলে যেতে পারছে না। তাদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই দুর্দিনে মহাবিপদে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন।’

এই পরিস্থিতিতে চলমান ইএফটিতে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নিজেরা উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইএফটিতে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম চলছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির জন্য আমাদের (পদ-বঞ্চিত শিক্ষক) নাম প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হয়নি। মাউশি থেকেও আমাদের কিছু জানানো হচ্ছে না। ইএফটিতে নাম অন্তর্ভুক্তি না হলে আমাদের এমপিও বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা মাউশিতে এসেছি।’

‘পদ-বঞ্চিত’ অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে ওইসব স্কুল ও কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ও শৃঙ্খলা ‘পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে’ বলেও দাবি করেন আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, পরীক্ষা, খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।’

সারাদেশে প্রায় দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন হাজার অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক এই ‘বর্বরতার শিকার’ মন্তব্য করে ধামরাই ধলকুন্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আমাকে জোরপূর্বক পদ-বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি শিক্ষকতা করতে চাই। কিন্তু আমাকে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’

কারা স্কুলে যেতে বাঁধা দিচ্ছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন। পরিচালনা পরিষদের লোকজনও আমাদের বাঁধা দিচ্ছে। অথচ আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না।’

রাজধানীর আরমানিটোলার আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম সংবাদকে বলেন, ‘আমি কখনো রাজনীতি করিনি। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে আমাকে স্কুলে যেতে দিচ্ছে না একটি বিশেষ মহল। তারা জোর করে একজন প্রধান শিক্ষকের পদে বসিয়েছেন। আমি আমার চাকরি করতে চাই। সেজন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি।’

কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইয়াকুবআলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা রানী রায় এবং মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের মজিদপুর দায়হাটা কফিল উদ্দিন চৌধুরী ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক নিতাই চন্দ্র দাসসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রধান জানিয়েছেন, তাদের স্কুলে যেতে বাঁধা দিচ্ছে স্থানীয় ‘প্রভাবশলী’ লোকজন।

‘পদ-বঞ্চিত’ শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ‘অনৈতিক, অন্যায় ও মবজাস্টিসের মতো বর্বরতার কবলে পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্প বেতনে নিয়োজিত শিক্ষকরা। ফলে কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কেউ চাকরি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কেউবা ঘর-বাড়ি ছেড়ে দূর-দূরান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

গত ২৭ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে থেকে জানা যায়, যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ আছে তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বেআইনি ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণকারী এবং শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

ইএফটিতে শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্তি
ইএফটির তালিকাভুক্ত হতে মাউশির ‘এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ (ইএমআইএস) সেলের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

সেই আলোকে এ পর্যন্ত এক লাখ ৮৯ হাজারের মতো শিক্ষকের নাম ইএফটিতে অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে ইএমআইএস সেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষকের নাম ইএফটিতে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও চলতি জানুয়ারি থেকে ইএফটি প্রক্রিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকাভুক্তি বা এমপিওভুক্তি, উচ্চতর গ্রেড, বিএড স্কেলসহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পাওয়ার আবেদনের সময় পুননির্ধারণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। সেই অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, জুনের মতো প্রতি ‘জোড়’ মাসের ৬ তারিখের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তি ও এ সংক্রান্ত আবেদন করতে পারবেন। এর আগে ‘জোড়’ মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত এমপিওভুক্তির আবেদনের সুযোগ ছিল।

আর জানুয়ারি, মার্চ, মে বা জুলাইয়ের মতো প্রতি ‘বেজোড়’ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে এমপিও কমিটি সভা করে আবেদন করা নতুন এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেবে।

ইএমআইএস সেলের একজন প্রোগ্রামার জানিয়েছেন, মাউশির অধীনে পৌনে চার লাখের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং শিক্ষাগত সনদের তথ্যে ‘গড়মিল’ বা ‘অসঙ্গতি’ শনাক্ত হচ্ছে। সেজন্য ধাপে ধাপে ইএফটিতে শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে। এরপরও তথ্যে ‘গরমিল বা অসঙ্গতির’ কারণে যাদের নাম ইএফটিতে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হবে না তাদের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিন্ধান্ত নেবে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ছবি

গরম ও সেচে বিদ্যুৎ সঙ্কটের শঙ্কা, দ্রুত বকেয়া পরিশোধের তাগিদ

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

নির্বাচনের সময়সীমা ঠিক করবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো: জাতিসংঘের দূত

ছবি

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্তে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার

ছবি

অবৈধ বিদেশিদের বৈধ হওয়ার সময় মনে করিয়ে দিল সরকার

ছবি

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: পদত্যাগের আহ্বান এবং তদন্তের দাবি

ছবি

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বাবর খালাস, মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই

হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

ছবি

মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার, চলবে শাটডাউন

পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ায় প্রতিবাদ

ছবি

বাংলাদেশ-মেক্সিকো পণ্যবাহী কার্গো সেবা চালু করতে চাই: রাষ্ট্রদূত ফজল আনসারী

ছবি

জাকসু নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাবি উপাচার্যের মতবিনিময়, ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল

এইচএমপি ভাইরাস সংক্রমক রোগী শনাক্ত এই মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় ঃ আতংক ও উদ্দেগের কারন নেই-ডাঃ মোস্তাক

ছবি

শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনের পরামর্শ চেয়েছেন উপাচার্য

ছবি

সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তরের আশ্বাসে অনশন প্রত্যাহার, বুধবার পর্যন্ত শাটডাউন

ছবি

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভ্যাট বৃদ্ধি ও আমদানির উদ্যোগ: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা, দিল্লিতে তলব বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে

ছবি

তিন দফা: পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের সামনে জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান

ছবি

পিএসসির ছয় নতুন সদস্যের নিয়োগ বাতিল

ছবি

সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে জবি শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

ছবি

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম: শেখ হাসিনা ও পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

তাপমাত্রা আরও বাড়ল, কমতে পারে বুধবার থেকে

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না: হাইকোর্ট

ছবি

১ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দেড়টায় সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা

ছবি

বায়ুদূষণের শীর্ষে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটার, ঢাকা দ্বিতীয়

কমিশনের সামগ্রিক মনোযোগ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে : ইসি

ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের ওপর খুব প্রভাব পড়বে না : প্রেস সচিব

টিউলিপের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধান প্রয়োজন: সানডে টাইমসকে ড. ইউনূস

ছবি

অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় শুল্ক ও কর বৃদ্ধি

ছবি

দুর্নীতি ও অর্থপাচার অভিযোগে সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান

ছাদ বাগান বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি কার্যকর সমাধান : পরিবেশ উপদেষ্টা

গুলি চালানোর ঘটনায় কনস্টেবল কারাগারে

ছবি

সীমান্তে অপরাধ দমনে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা: প্রণয় ভার্মা

ছবি

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত: মণি শঙ্কর আইয়ার

ছবি

সীমান্তে উত্তেজনা: ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব

tab

জাতীয়

গণঅভ্যুত্থানের পর ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক ‘অবাঞ্ছিত’

রাকিব উদ্দিন

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সারাদেশের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক নিজ নিজ স্কুল-কলেজে যেতে পারছেন না। তাদের বেতনভাতা বা এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বন্ধ রয়েছে। সরকার সম্প্রতি ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) প্রক্রিয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে; সেই প্রক্রিয়ায়ও ওইসব শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।

বেতনভাতা, চাকরিতে যোগদান এবং ইএফটিতে নাম অন্তুর্ভুক্তির দাবিতে ‘পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক জোটের’ ব্যানারে রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) জড়ো হন শতাধিক শিক্ষক। তারা মাউশি মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে চান। এ সময় মহাপরিচালক সভায় ব্যস্ত ছিলেন। এর আগে সকালে একই দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ‘স্বারকলিপি’ দেয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

তাদের দাবিগুলি হলো- ‘পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের এমপিও থেকে নাম কর্তন না করে বেতন-ভাতাদি চালু রাখার ব্যবস্থা করা; পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ, অপসারণ, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক ছুটি বাতিল করা; সুষ্পষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে সসম্মানে স্বপদে বহাল করে কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধান করা এবং অনতিবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বার্থলোভী ও শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা।’

এছাড়া পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের সমমানের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে বদলির ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

‘পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক জোটের’ আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম তালুকদার সংবাদকে বলেছেন, ‘এখনও দেশজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও হেনস্তা করা হচ্ছে। এ কারণে পদ-বঞ্চিত শিক্ষকরা কর্মস্থলে যেতে পারছে না। তাদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই দুর্দিনে মহাবিপদে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন।’

এই পরিস্থিতিতে চলমান ইএফটিতে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নিজেরা উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইএফটিতে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম চলছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির জন্য আমাদের (পদ-বঞ্চিত শিক্ষক) নাম প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হয়নি। মাউশি থেকেও আমাদের কিছু জানানো হচ্ছে না। ইএফটিতে নাম অন্তর্ভুক্তি না হলে আমাদের এমপিও বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা মাউশিতে এসেছি।’

‘পদ-বঞ্চিত’ অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে ওইসব স্কুল ও কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ও শৃঙ্খলা ‘পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে’ বলেও দাবি করেন আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, পরীক্ষা, খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।’

সারাদেশে প্রায় দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন হাজার অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক এই ‘বর্বরতার শিকার’ মন্তব্য করে ধামরাই ধলকুন্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আমাকে জোরপূর্বক পদ-বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি শিক্ষকতা করতে চাই। কিন্তু আমাকে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’

কারা স্কুলে যেতে বাঁধা দিচ্ছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন। পরিচালনা পরিষদের লোকজনও আমাদের বাঁধা দিচ্ছে। অথচ আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না।’

রাজধানীর আরমানিটোলার আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম সংবাদকে বলেন, ‘আমি কখনো রাজনীতি করিনি। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে আমাকে স্কুলে যেতে দিচ্ছে না একটি বিশেষ মহল। তারা জোর করে একজন প্রধান শিক্ষকের পদে বসিয়েছেন। আমি আমার চাকরি করতে চাই। সেজন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি।’

কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইয়াকুবআলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা রানী রায় এবং মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের মজিদপুর দায়হাটা কফিল উদ্দিন চৌধুরী ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক নিতাই চন্দ্র দাসসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রধান জানিয়েছেন, তাদের স্কুলে যেতে বাঁধা দিচ্ছে স্থানীয় ‘প্রভাবশলী’ লোকজন।

‘পদ-বঞ্চিত’ শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ‘অনৈতিক, অন্যায় ও মবজাস্টিসের মতো বর্বরতার কবলে পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্প বেতনে নিয়োজিত শিক্ষকরা। ফলে কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কেউ চাকরি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কেউবা ঘর-বাড়ি ছেড়ে দূর-দূরান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

গত ২৭ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে থেকে জানা যায়, যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ আছে তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বেআইনি ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণকারী এবং শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

ইএফটিতে শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্তি
ইএফটির তালিকাভুক্ত হতে মাউশির ‘এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ (ইএমআইএস) সেলের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

সেই আলোকে এ পর্যন্ত এক লাখ ৮৯ হাজারের মতো শিক্ষকের নাম ইএফটিতে অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে ইএমআইএস সেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষকের নাম ইএফটিতে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও চলতি জানুয়ারি থেকে ইএফটি প্রক্রিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকাভুক্তি বা এমপিওভুক্তি, উচ্চতর গ্রেড, বিএড স্কেলসহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পাওয়ার আবেদনের সময় পুননির্ধারণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। সেই অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, জুনের মতো প্রতি ‘জোড়’ মাসের ৬ তারিখের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তি ও এ সংক্রান্ত আবেদন করতে পারবেন। এর আগে ‘জোড়’ মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত এমপিওভুক্তির আবেদনের সুযোগ ছিল।

আর জানুয়ারি, মার্চ, মে বা জুলাইয়ের মতো প্রতি ‘বেজোড়’ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে এমপিও কমিটি সভা করে আবেদন করা নতুন এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেবে।

ইএমআইএস সেলের একজন প্রোগ্রামার জানিয়েছেন, মাউশির অধীনে পৌনে চার লাখের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং শিক্ষাগত সনদের তথ্যে ‘গড়মিল’ বা ‘অসঙ্গতি’ শনাক্ত হচ্ছে। সেজন্য ধাপে ধাপে ইএফটিতে শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে। এরপরও তথ্যে ‘গরমিল বা অসঙ্গতির’ কারণে যাদের নাম ইএফটিতে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হবে না তাদের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিন্ধান্ত নেবে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

back to top