শূন্যরেখায় বেড়া নির্মাণের চেষ্টায় বিরোধ, সীমান্ত হত্যার ঘটনাতেও উদ্বেগ
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনার জেরে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করেছে দিল্লি। এর আগে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে সীমান্তে বেড়া নির্মাণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে কড়া বার্তা দেয় বাংলাদেশ।
রবিবার বিকালে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং সম্প্রতি সুনামগঞ্জে বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁর পত্নীতলা, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোরসহ পাঁচটি সীমান্ত এলাকায় শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে ভারত বেআইনিভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা চালায়। বিজিবি ও স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধে এসব কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ভারত।
সীমান্তের শূন্যরেখায় কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা কাঠামো বা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ১৯৭২ সালের মৈত্রী চুক্তি এবং ১৯৭৫ সালের নীতিমালায় উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। এসব নিয়ম লঙ্ঘন করে ভারতের এই উদ্যোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
বৈঠকের পর প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, “সীমান্ত অপরাধ, চোরাচালান এবং পাচার রোধে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। আমরা আশা করি, যৌথ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে দুই পক্ষই সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখবে।”
ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে অপরাধ দমনে এ ধরনের নির্মাণ প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ড এবং নিয়ম ভঙ্গের পুনরাবৃত্তি দুই দেশের স্থিতিশীল সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “সুনামগঞ্জে বিএসএফ কর্তৃক এক বাংলাদেশিকে হত্যার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমন ঘটনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি বজায় রাখতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সীমান্তে বেআইনি নির্মাণ বন্ধে বিজিবি শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, “শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করার আগে উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু ভারত নিয়ম লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছে। আমাদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে তারা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।”
ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে স্থিতিশীল। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাড়তে থাকা অসন্তোষ এই সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতে তার রাজনৈতিক আশ্রয় এবং সাম্প্রতিককালে তার সরকার পুনর্বহালের প্রচেষ্টার বিষয়েও দুই দেশের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা নিরসনে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে উভয় পক্ষ। সীমান্তে নিয়মভঙ্গ বন্ধ এবং হত্যা-সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্ত অপরাধ রোধে আরও কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শূন্যরেখায় বেড়া নির্মাণের চেষ্টায় বিরোধ, সীমান্ত হত্যার ঘটনাতেও উদ্বেগ
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনার জেরে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করেছে দিল্লি। এর আগে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে সীমান্তে বেড়া নির্মাণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে কড়া বার্তা দেয় বাংলাদেশ।
রবিবার বিকালে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং সম্প্রতি সুনামগঞ্জে বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁর পত্নীতলা, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোরসহ পাঁচটি সীমান্ত এলাকায় শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে ভারত বেআইনিভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা চালায়। বিজিবি ও স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধে এসব কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ভারত।
সীমান্তের শূন্যরেখায় কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা কাঠামো বা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ১৯৭২ সালের মৈত্রী চুক্তি এবং ১৯৭৫ সালের নীতিমালায় উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। এসব নিয়ম লঙ্ঘন করে ভারতের এই উদ্যোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
বৈঠকের পর প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, “সীমান্ত অপরাধ, চোরাচালান এবং পাচার রোধে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। আমরা আশা করি, যৌথ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে দুই পক্ষই সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখবে।”
ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে অপরাধ দমনে এ ধরনের নির্মাণ প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ড এবং নিয়ম ভঙ্গের পুনরাবৃত্তি দুই দেশের স্থিতিশীল সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “সুনামগঞ্জে বিএসএফ কর্তৃক এক বাংলাদেশিকে হত্যার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমন ঘটনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি বজায় রাখতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সীমান্তে বেআইনি নির্মাণ বন্ধে বিজিবি শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, “শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করার আগে উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু ভারত নিয়ম লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছে। আমাদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে তারা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।”
ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে স্থিতিশীল। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাড়তে থাকা অসন্তোষ এই সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতে তার রাজনৈতিক আশ্রয় এবং সাম্প্রতিককালে তার সরকার পুনর্বহালের প্রচেষ্টার বিষয়েও দুই দেশের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা নিরসনে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে উভয় পক্ষ। সীমান্তে নিয়মভঙ্গ বন্ধ এবং হত্যা-সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্ত অপরাধ রোধে আরও কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।