বকেয়া বিল পরিশোধে পিডিবির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। দ্রুত অর্থ পরিশোধ করতে পৃথক চিঠি দিচ্ছে তারা। স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জানুয়ারির মধ্যে মোট বকেয়ার অর্ধেক তারা না পেলে আসন্ন গ্রীষ্মে (এপ্রিল) অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্থ হবে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশের স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইপিপি) মধ্যে ফার্নেশ তেলভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো পিডিবির কাছে পাওনা হয়েছে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা। বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে আদানির নিয়মতি বিল পরিশোধের পরিমাণ বাড়ানোর পরও বকেয়া রয়ে গেছে আটশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। সূত্র বলছে, পায়রা, রামপালসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়াও দিন দিন বাড়ছে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, গত সপ্তাহে পাওনা অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দাবি, দ্রুত পাওনা অর্থ না পেলে আসন্ন গরমে পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে না তারা। তাই আগামী রমজান ও বোরোর সেচে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে বকেয়ার অন্তত অর্ধেক সরকারকে দ্রুত দিতে অনুরোধ করেছে তারা।
*গরমে দ্বিগুণ চাহিদা*
শীতের সময় দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে গেলেও গ্রীষ্মে (এপ্রিল-জুন) চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ি গত ১২ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যার দিকে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৯৭৫ মেগাওয়াট। শনিবার একই সময় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৭২৬ মেগাওয়াট।
শীত কমে এলে মার্চ-এপ্রিলে বিদ্যুৎ চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা দেখে, গত বছর মার্চের মাঝামাঝি (১৬ মার্চ) সময় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হয়েছিল ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। মার্চের শেষে (৩১ মার্চ) চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৯৫০ মেগাওয়াট।
গত বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি (১৫ এপ্রিল) এই চাহিদা বেড়ে হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। এপ্রিলের প্রথম দিন এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট।
*পাওনা আদায়ে চিঠি*
আদানি পাওয়ারের চিঠিটিতে বলা হয়েছে, পিডিবির অর্থ পরিশোধের ধরনের উন্নতি হলেও বকেয়া ৭৭১ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার আউটস্ট্যান্ডিং রয়েছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চিঠিতে বলা হয়েছে, সময়মতো বিদেশি সরবরাহকারীদের প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করা হলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
*একাধিক বৈঠক*
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্রে জানা যায়, পাওনা পরিশোধের বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন আইপিপি মালিকরা। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে।
* বিআইপিপিএ’র বক্তব্য*
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ডেভিড হাসানাত সংবাদকে বলেন, ‘বিপিডিবির (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) কাছে এই মুহূর্তে স্থানীয় কোম্পানিগুলো পাওনা আছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। আমরা পাওনা পরিশোধের তাগাদা দিচ্ছি। এখনতো শীতের কারণে বিদ্যুৎ চাহিদা কম। মার্চে রমজানে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাবে। বোরোর জন্য সেচও শুরু হবে। যথা সময়ে জ্বালানি আমদানি নিশ্চিৎ করা না গেলে মার্চ থেকেই দেশ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়বে।’
*৪৫ দিন প্রয়োজন*
ডেভিড হাসানাত বলেন, ‘এলসি (লেটার অব ক্রেটিড) খোলা থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি পৌঁছানোর জন্য প্রায় ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন হয়। মার্চ থেকে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ দিতে হলে যে জ্বালানি প্রয়োজন হবে, সেজন্য জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে... সর্বোচ্চ ২০ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের এলসি খুলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা পিডিবিকে জানিয়েছি, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের বকেয়ার অন্তত অর্ধেকটা দিতে বলেছি। আজকালের মধ্যে যদি পাওয়া যায়, আমরা এলসি খুলে হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) আমদানি করতে পারবো। এর চেয়ে দেরি হলে অনেক বেসকারি প্রতিষ্ঠান সময় মত বিদুৎ উৎপাদনে যেতে পারবে না। ফলে রমজান ও বোরোর মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হবে।’
*গরমে চাহিদা*
দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে গত বছর ৩০ এপ্রিল রাত ৯টায়। ওই সময় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, ওই সময় লোডশেডিং হয়েছে ৪৯৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গরমের সময় সেচ শুরু হলে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়।
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
বকেয়া বিল পরিশোধে পিডিবির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। দ্রুত অর্থ পরিশোধ করতে পৃথক চিঠি দিচ্ছে তারা। স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জানুয়ারির মধ্যে মোট বকেয়ার অর্ধেক তারা না পেলে আসন্ন গ্রীষ্মে (এপ্রিল) অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্থ হবে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশের স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইপিপি) মধ্যে ফার্নেশ তেলভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো পিডিবির কাছে পাওনা হয়েছে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা। বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে আদানির নিয়মতি বিল পরিশোধের পরিমাণ বাড়ানোর পরও বকেয়া রয়ে গেছে আটশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। সূত্র বলছে, পায়রা, রামপালসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়াও দিন দিন বাড়ছে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, গত সপ্তাহে পাওনা অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দাবি, দ্রুত পাওনা অর্থ না পেলে আসন্ন গরমে পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে না তারা। তাই আগামী রমজান ও বোরোর সেচে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে বকেয়ার অন্তত অর্ধেক সরকারকে দ্রুত দিতে অনুরোধ করেছে তারা।
*গরমে দ্বিগুণ চাহিদা*
শীতের সময় দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে গেলেও গ্রীষ্মে (এপ্রিল-জুন) চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ি গত ১২ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যার দিকে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৯৭৫ মেগাওয়াট। শনিবার একই সময় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৭২৬ মেগাওয়াট।
শীত কমে এলে মার্চ-এপ্রিলে বিদ্যুৎ চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা দেখে, গত বছর মার্চের মাঝামাঝি (১৬ মার্চ) সময় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হয়েছিল ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। মার্চের শেষে (৩১ মার্চ) চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৯৫০ মেগাওয়াট।
গত বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি (১৫ এপ্রিল) এই চাহিদা বেড়ে হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। এপ্রিলের প্রথম দিন এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট।
*পাওনা আদায়ে চিঠি*
আদানি পাওয়ারের চিঠিটিতে বলা হয়েছে, পিডিবির অর্থ পরিশোধের ধরনের উন্নতি হলেও বকেয়া ৭৭১ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার আউটস্ট্যান্ডিং রয়েছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চিঠিতে বলা হয়েছে, সময়মতো বিদেশি সরবরাহকারীদের প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করা হলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
*একাধিক বৈঠক*
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্রে জানা যায়, পাওনা পরিশোধের বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন আইপিপি মালিকরা। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে।
* বিআইপিপিএ’র বক্তব্য*
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ডেভিড হাসানাত সংবাদকে বলেন, ‘বিপিডিবির (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) কাছে এই মুহূর্তে স্থানীয় কোম্পানিগুলো পাওনা আছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। আমরা পাওনা পরিশোধের তাগাদা দিচ্ছি। এখনতো শীতের কারণে বিদ্যুৎ চাহিদা কম। মার্চে রমজানে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাবে। বোরোর জন্য সেচও শুরু হবে। যথা সময়ে জ্বালানি আমদানি নিশ্চিৎ করা না গেলে মার্চ থেকেই দেশ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়বে।’
*৪৫ দিন প্রয়োজন*
ডেভিড হাসানাত বলেন, ‘এলসি (লেটার অব ক্রেটিড) খোলা থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি পৌঁছানোর জন্য প্রায় ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন হয়। মার্চ থেকে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ দিতে হলে যে জ্বালানি প্রয়োজন হবে, সেজন্য জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে... সর্বোচ্চ ২০ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের এলসি খুলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা পিডিবিকে জানিয়েছি, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের বকেয়ার অন্তত অর্ধেকটা দিতে বলেছি। আজকালের মধ্যে যদি পাওয়া যায়, আমরা এলসি খুলে হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) আমদানি করতে পারবো। এর চেয়ে দেরি হলে অনেক বেসকারি প্রতিষ্ঠান সময় মত বিদুৎ উৎপাদনে যেতে পারবে না। ফলে রমজান ও বোরোর মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হবে।’
*গরমে চাহিদা*
দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে গত বছর ৩০ এপ্রিল রাত ৯টায়। ওই সময় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, ওই সময় লোডশেডিং হয়েছে ৪৯৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গরমের সময় সেচ শুরু হলে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়।