সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে টানা অনশন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচির পর এবার রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারা সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে মহাখালী রেলপথ অবরোধ করেন। এতে সোমবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী একটি ট্রেন লাল পতাকা দেখিয়ে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা।
তবে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। সাতদিনের মধ্যে দাবি-দাওয়া মেনে না নেয়া হলে তারা আবার আন্দোলনে ফিরে যাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মন্ডল জুস খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ঘিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সোমবার চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। মহাখালী এলাকায় বিজিবির সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। মহাখালীর আমতলীতে পুলিশের একটি জলকামানও দেখা গেছে।
সোমবার বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, রাজধানীর মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
সোমবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (কলেজ শাখা) যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কলেজ ক্যাম্পাসে যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে, তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি মানার সুযোগ এই মুহূর্তে নেই জানিয়ে নুরুজ্জামান বলেছিলেন, ‘কিন্তু তারা বুঝতে চাচ্ছেন না। সড়ক আটকে আন্দোলন করে দাবি-দাওয়া আদায়ের অবস্থা এখন নেই’।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন জুলকার নাইন বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে এসে তাদের আলোচনায় বসার কথা বলছেন। তবে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ ছেড়ে মন্ত্রণালয়ে যাবে না।রেলক্রসিংয়ে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশন ট্রেন চলাচল বন্ধ
মহাখালীতে রেলপথ অবরোধের ফলে সোমবার বিকেলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেলে ঢাকা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, আপাতত ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা সেকশন ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
তিনি আরও বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা খবর পেয়েছেন, ছাত্ররা নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দিয়েছে। রেলওয়ে থানার ওসি বলেছেন, আপাতত ‘পরিস্থিতি ভালো না’। ট্রেন চলাচল যেন বন্ধ রাখি। তার কথামতো সব ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
শিক্ষার্থীরা মহাখালী কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছায় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে থাকা অনশনকারী শিক্ষার্থীরা প্রথমে রেললাইনে শুয়ে পড়েন। পরে আন্দোলনকারী অন্য শিক্ষার্থীরাও রেলপথ অবরোধ করেন। এ সময় কমলাপুরের দিক থেকে একটি ট্রেন আসতে দেখলে শিক্ষার্থীরা ট্রেনটি লাল নিশানা দেখিয়ে থামান।
আটকে যাওয়া ট্রেনটির লোকোমাস্টার লতিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৩টা ২৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে। আমার ট্রেনের গতিসীমা ছিল ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিতুমীর রেলগেটে দূর থেকেই লাল পতাকা ও মানুষের জটলা দেখতে পাই।
পরে ট্রেনটি দ্রুত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গতি কমিয়ে থামাতে সক্ষম হন জানিয়ে লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। হঠাৎ ট্রেন থামাতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে কোনো সমস্যা হয়নি।’
কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা :
অবরোধের পর তিতুমীরকে বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আলী আহামেদ মাইকে ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বা শিক্ষা উপদেষ্টাকে এখানে এসে তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিতে হবে। না হলে আমরা রেললাইন ছাড়ব না। আমাদের এইটাই দাবি।’
অনশন ও সড়ক অবরোধে সাধারণ লোকজনের ভোগান্তির বিষয়ে আলী আহামেদ বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। রাষ্ট্র আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।’
তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সোমবার ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গুলশান লিংক রোড অবরোধ করেন। এতে লিংক রোডের উভয় পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী পরিবহনের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হয়নি।
এর আগে রোববার শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে মহাখালীর আমতলী মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পৌনে দুই ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে সেখান থেকে সরে কলেজের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রোববার বলেছিলেন, কোনো দাবির মুখে সরকার বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করবে না।
অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি দাবি আদায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বৃস্পতিবার থেকে তিতুমীর কলেজ গেটের সামনে অনশন করছেন।
অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন গতকাল জানান, অনশনরতদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং অন্যদের এখানে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।
এই মুহূর্তে অনেক কিছু করা সম্ভব নয় তথ্য উপদেষ্টা :
তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘তাদের বলব ধৈর্য ধারণ করতে। তাদের প্রতিও সরকার আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল। কিন্তু এই মুহূর্তে হয়তো অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। তাই জনভোগান্তি না করে সেই বিষয়টাও মাথায় রাখা উচিত। আশা করি ভালো কিছু হবে।’
তিনি সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজা পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
যে কোনো আন্দোলনের ক্ষেত্রে মানুষের সমর্থনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি সংবেদনশীল, শিক্ষার্থীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিল, মানুষ কিন্তু সমর্থন করেছিল।
সাত কলেজের সমস্যাটি দীর্ঘদিন ধরে একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছিল মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সময়ে শিক্ষাবিষয়ক একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনে একটি প্রভাব পড়েছে।’
সরকার প্রথম থেকে সাত কলেজের সমস্যাটি সমাধান করতে সচেষ্ট রয়েছে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সাত কলেজের প্রত্যেকটি কলেজকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। সেটি হয়তো ইতিবাচক কোনো কিছু বয়ে আনবে।’
২৭ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যের’ পক্ষ থেকে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) থেকে অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়। ওই রাতেই শিক্ষার্থীরা ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন।
‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা বা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে টানা অনশন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচির পর এবার রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারা সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে মহাখালী রেলপথ অবরোধ করেন। এতে সোমবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী একটি ট্রেন লাল পতাকা দেখিয়ে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা।
তবে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। সাতদিনের মধ্যে দাবি-দাওয়া মেনে না নেয়া হলে তারা আবার আন্দোলনে ফিরে যাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মন্ডল জুস খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ঘিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সোমবার চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। মহাখালী এলাকায় বিজিবির সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। মহাখালীর আমতলীতে পুলিশের একটি জলকামানও দেখা গেছে।
সোমবার বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, রাজধানীর মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
সোমবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (কলেজ শাখা) যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কলেজ ক্যাম্পাসে যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে, তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি মানার সুযোগ এই মুহূর্তে নেই জানিয়ে নুরুজ্জামান বলেছিলেন, ‘কিন্তু তারা বুঝতে চাচ্ছেন না। সড়ক আটকে আন্দোলন করে দাবি-দাওয়া আদায়ের অবস্থা এখন নেই’।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন জুলকার নাইন বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে এসে তাদের আলোচনায় বসার কথা বলছেন। তবে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ ছেড়ে মন্ত্রণালয়ে যাবে না।রেলক্রসিংয়ে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশন ট্রেন চলাচল বন্ধ
মহাখালীতে রেলপথ অবরোধের ফলে সোমবার বিকেলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেলে ঢাকা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, আপাতত ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা সেকশন ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
তিনি আরও বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা খবর পেয়েছেন, ছাত্ররা নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দিয়েছে। রেলওয়ে থানার ওসি বলেছেন, আপাতত ‘পরিস্থিতি ভালো না’। ট্রেন চলাচল যেন বন্ধ রাখি। তার কথামতো সব ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
শিক্ষার্থীরা মহাখালী কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছায় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে থাকা অনশনকারী শিক্ষার্থীরা প্রথমে রেললাইনে শুয়ে পড়েন। পরে আন্দোলনকারী অন্য শিক্ষার্থীরাও রেলপথ অবরোধ করেন। এ সময় কমলাপুরের দিক থেকে একটি ট্রেন আসতে দেখলে শিক্ষার্থীরা ট্রেনটি লাল নিশানা দেখিয়ে থামান।
আটকে যাওয়া ট্রেনটির লোকোমাস্টার লতিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৩টা ২৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে। আমার ট্রেনের গতিসীমা ছিল ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিতুমীর রেলগেটে দূর থেকেই লাল পতাকা ও মানুষের জটলা দেখতে পাই।
পরে ট্রেনটি দ্রুত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গতি কমিয়ে থামাতে সক্ষম হন জানিয়ে লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। হঠাৎ ট্রেন থামাতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে কোনো সমস্যা হয়নি।’
কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা :
অবরোধের পর তিতুমীরকে বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আলী আহামেদ মাইকে ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বা শিক্ষা উপদেষ্টাকে এখানে এসে তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিতে হবে। না হলে আমরা রেললাইন ছাড়ব না। আমাদের এইটাই দাবি।’
অনশন ও সড়ক অবরোধে সাধারণ লোকজনের ভোগান্তির বিষয়ে আলী আহামেদ বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। রাষ্ট্র আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।’
তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সোমবার ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গুলশান লিংক রোড অবরোধ করেন। এতে লিংক রোডের উভয় পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী পরিবহনের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হয়নি।
এর আগে রোববার শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে মহাখালীর আমতলী মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পৌনে দুই ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে সেখান থেকে সরে কলেজের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রোববার বলেছিলেন, কোনো দাবির মুখে সরকার বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করবে না।
অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি দাবি আদায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বৃস্পতিবার থেকে তিতুমীর কলেজ গেটের সামনে অনশন করছেন।
অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন গতকাল জানান, অনশনরতদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং অন্যদের এখানে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।
এই মুহূর্তে অনেক কিছু করা সম্ভব নয় তথ্য উপদেষ্টা :
তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘তাদের বলব ধৈর্য ধারণ করতে। তাদের প্রতিও সরকার আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল। কিন্তু এই মুহূর্তে হয়তো অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। তাই জনভোগান্তি না করে সেই বিষয়টাও মাথায় রাখা উচিত। আশা করি ভালো কিছু হবে।’
তিনি সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজা পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
যে কোনো আন্দোলনের ক্ষেত্রে মানুষের সমর্থনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি সংবেদনশীল, শিক্ষার্থীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিল, মানুষ কিন্তু সমর্থন করেছিল।
সাত কলেজের সমস্যাটি দীর্ঘদিন ধরে একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছিল মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সময়ে শিক্ষাবিষয়ক একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনে একটি প্রভাব পড়েছে।’
সরকার প্রথম থেকে সাত কলেজের সমস্যাটি সমাধান করতে সচেষ্ট রয়েছে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সাত কলেজের প্রত্যেকটি কলেজকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। সেটি হয়তো ইতিবাচক কোনো কিছু বয়ে আনবে।’
২৭ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যের’ পক্ষ থেকে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) থেকে অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়। ওই রাতেই শিক্ষার্থীরা ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন।
‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা বা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।