বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ‘এই ফেব্রুয়ারিতেই’ নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারে যে তিনজন তরুণ উপদেষ্টা আছেন, তাদের মধ্যে একজন সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন এই দলের দায়িত্ব নিতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
নতুন এই রাজনৈতিক দল গঠনের পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে। নিবন্ধন পেলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন দলের নেতারা এমন আলোচনাও আছে।
তবে সরকারে থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল গঠন করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি ফেব্রুয়ারিতেই ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘দল গঠনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজ বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপ চলছে। আমরা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন দল ঘোষণা করবো।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার প্রস্তুতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা দল ঘোষণা জাঁকজমকপূর্ণভাবে করতে চাই। সেভাবে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরা দেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে বলে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড সফরকালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে দাভোসে ওই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্ররা বলছে, কেনো আপনি আপনার-আমাদের নিজস্ব দল গঠন করেন না, আমরা একটা সুযোগ নেব। তারা বলেছে, আপনার কোনো সুযোগ নেই, এমনকি সংসদে আপনার একটিও আসন থাকবে না। কেন? কারণ, কেউ আপনাকে চেনে না। আমি তাদের বললাম, পুরো জাতি তাদেরকে চেনে। তারা যা করতে চায়, সে বিষয়ে তাদেরকে একটা সুযোগ দিই। সুতরাং, তারা এটা করবে।’
ছাত্ররা প্রস্তুত উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে।’
এই শিক্ষার্থী ও জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা পদে সরকারপ্রধান হন মুহাম্মদ ইউনূস। মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেয়া হয় আন্দোলনে যুক্ত থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে।
জেলা-উপজেলায় কমিটি
আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। তারা প্রথম কমিটি করে গত বছরের ৮ নভেম্বর।
এরপর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সব মিলিয়ে সারা দেশে তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রথম কমিটি করে গত ২ নভেম্বর। এর পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৩০টি জেলা, ৫টি মহানগর, ৮টি থানা, ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি কলেজ ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট হাজার।
নতুন রাজনৈতিক দল
সংগঠন দুটোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি ‘সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বহাল থাকবে। একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও কার্যক্রম চলবে।
তারা বলছেন, নতুন দলটি আদর্শগতভাবে মধ্যপন্থি ধারার হবে। দলের নাম কী হবে, সে বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব তারা পেয়েছেন। তবে এখনো কোনো নাম চূড়ান্ত হয়নি। দলের প্রতীক কী হবে, সেটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সূত্র বলছে, প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে যে তিনজন উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া) আছেন, তাদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করে দলের নেতৃত্ব নেবেন। অন্য দুজন আরও পরে সুবিধাজনক সময়ে পদত্যাগ করে দলে যোগ দিতে পারেন।
মধ্যপন্থি দল
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাই। এই রাজনৈতিক দলে আমরা বহু নেতৃত্বের কথা ভাবছি। একক কোনো ব্যক্তিকে দীর্ঘসময় দলের শীর্ষ পদে থাকতে দেয়া হবে না। পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষাংশে তাদের রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। দলটি ডান ও বাম ধারার বাইরে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মধ্যপন্থি দল হিসেবে রাজনীতি করবে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন; কিন্তু কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন-এমন ব্যক্তিদের তারা নতুন দলে নিয়ে আসতে চান।
তিনি জানান, দলের নাম, নেতৃত্ব, আত্মপ্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ বা কোথায় ও কীভাবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়া হবে, সেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
*আলোচনায় নাহিদ*
শীর্ষ নেতা কাকে করা হবে, এ নিয়ে জনমত যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আবার তারা পদত্যাগ করলে সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বটা কীভাবে থাকবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।
নতুন দলের নেতৃত্বে নাহিদ ইসলামের নাম আলোচনার শীর্ষে আছে।
পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নেয়ার যে আলোচনা- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানাতে চাইলে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
*মিশ্র প্রতিক্রিয়া*
শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে দেশের রাজনীতিবিদরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, আমাদের এতটুকু আপত্তি নাই বরং আনন্দিত। কিন্তু সরকারে থেকে যদি দল গঠন করেন, এই দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।’
শিক্ষার্থীদের দল গঠনের বিষয়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে আলোচনা উঠলে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছিলেন, ‘এখন যারা দল নিরপেক্ষ হয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছেন, তারাই যদি আবার রাজনীতি করার জন্য মাঠে নামেন; দল গঠন করার জন্য নামেন তাহলে তারা আর নিরপেক্ষ থাকলেন না। তারা যদি দল করতেই হয় তাহলে তাদের এখান (সরকার) থেকে বিদায় নেয়া উত্তম।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। ছাত্ররা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা নতুন দল গঠন করবে। আমরা তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি নিরপেক্ষ সরকারে থেকে দল গঠনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ছাত্রদের কাছ থেকে মানুষ প্রত্যাশা করে না।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ যদি কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, আমরা অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু ক্ষমতার ছত্রছায়ায় কিংবা ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা হলে জনগণ তা ভালো চোখে দেখবে না। কেউ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে ক্ষমতার বাইরে থেকে জনগণের মধ্য থেকে করা উচিত।’
সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ‘এই ফেব্রুয়ারিতেই’ নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারে যে তিনজন তরুণ উপদেষ্টা আছেন, তাদের মধ্যে একজন সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন এই দলের দায়িত্ব নিতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
নতুন এই রাজনৈতিক দল গঠনের পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে। নিবন্ধন পেলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন দলের নেতারা এমন আলোচনাও আছে।
তবে সরকারে থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল গঠন করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি ফেব্রুয়ারিতেই ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘দল গঠনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজ বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপ চলছে। আমরা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন দল ঘোষণা করবো।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার প্রস্তুতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা দল ঘোষণা জাঁকজমকপূর্ণভাবে করতে চাই। সেভাবে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরা দেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে বলে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড সফরকালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে দাভোসে ওই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্ররা বলছে, কেনো আপনি আপনার-আমাদের নিজস্ব দল গঠন করেন না, আমরা একটা সুযোগ নেব। তারা বলেছে, আপনার কোনো সুযোগ নেই, এমনকি সংসদে আপনার একটিও আসন থাকবে না। কেন? কারণ, কেউ আপনাকে চেনে না। আমি তাদের বললাম, পুরো জাতি তাদেরকে চেনে। তারা যা করতে চায়, সে বিষয়ে তাদেরকে একটা সুযোগ দিই। সুতরাং, তারা এটা করবে।’
ছাত্ররা প্রস্তুত উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে।’
এই শিক্ষার্থী ও জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা পদে সরকারপ্রধান হন মুহাম্মদ ইউনূস। মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেয়া হয় আন্দোলনে যুক্ত থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে।
জেলা-উপজেলায় কমিটি
আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। তারা প্রথম কমিটি করে গত বছরের ৮ নভেম্বর।
এরপর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সব মিলিয়ে সারা দেশে তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রথম কমিটি করে গত ২ নভেম্বর। এর পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৩০টি জেলা, ৫টি মহানগর, ৮টি থানা, ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি কলেজ ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট হাজার।
নতুন রাজনৈতিক দল
সংগঠন দুটোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি ‘সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বহাল থাকবে। একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও কার্যক্রম চলবে।
তারা বলছেন, নতুন দলটি আদর্শগতভাবে মধ্যপন্থি ধারার হবে। দলের নাম কী হবে, সে বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব তারা পেয়েছেন। তবে এখনো কোনো নাম চূড়ান্ত হয়নি। দলের প্রতীক কী হবে, সেটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সূত্র বলছে, প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে যে তিনজন উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া) আছেন, তাদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করে দলের নেতৃত্ব নেবেন। অন্য দুজন আরও পরে সুবিধাজনক সময়ে পদত্যাগ করে দলে যোগ দিতে পারেন।
মধ্যপন্থি দল
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাই। এই রাজনৈতিক দলে আমরা বহু নেতৃত্বের কথা ভাবছি। একক কোনো ব্যক্তিকে দীর্ঘসময় দলের শীর্ষ পদে থাকতে দেয়া হবে না। পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষাংশে তাদের রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। দলটি ডান ও বাম ধারার বাইরে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মধ্যপন্থি দল হিসেবে রাজনীতি করবে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন; কিন্তু কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন-এমন ব্যক্তিদের তারা নতুন দলে নিয়ে আসতে চান।
তিনি জানান, দলের নাম, নেতৃত্ব, আত্মপ্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ বা কোথায় ও কীভাবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়া হবে, সেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
*আলোচনায় নাহিদ*
শীর্ষ নেতা কাকে করা হবে, এ নিয়ে জনমত যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আবার তারা পদত্যাগ করলে সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বটা কীভাবে থাকবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।
নতুন দলের নেতৃত্বে নাহিদ ইসলামের নাম আলোচনার শীর্ষে আছে।
পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নেয়ার যে আলোচনা- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানাতে চাইলে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
*মিশ্র প্রতিক্রিয়া*
শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে দেশের রাজনীতিবিদরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, আমাদের এতটুকু আপত্তি নাই বরং আনন্দিত। কিন্তু সরকারে থেকে যদি দল গঠন করেন, এই দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।’
শিক্ষার্থীদের দল গঠনের বিষয়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে আলোচনা উঠলে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছিলেন, ‘এখন যারা দল নিরপেক্ষ হয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছেন, তারাই যদি আবার রাজনীতি করার জন্য মাঠে নামেন; দল গঠন করার জন্য নামেন তাহলে তারা আর নিরপেক্ষ থাকলেন না। তারা যদি দল করতেই হয় তাহলে তাদের এখান (সরকার) থেকে বিদায় নেয়া উত্তম।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। ছাত্ররা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা নতুন দল গঠন করবে। আমরা তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি নিরপেক্ষ সরকারে থেকে দল গঠনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ছাত্রদের কাছ থেকে মানুষ প্রত্যাশা করে না।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ যদি কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, আমরা অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু ক্ষমতার ছত্রছায়ায় কিংবা ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা হলে জনগণ তা ভালো চোখে দেখবে না। কেউ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে ক্ষমতার বাইরে থেকে জনগণের মধ্য থেকে করা উচিত।’