ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলছে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যে ‘মব কালচার’ দেখা যাচ্ছে তা মোকাবিলায় সরকার ‘ব্যর্থতার’ পরিচয় দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। দলটি মনে করে, কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব দাবি ও উদ্বেগের কথা বলা হয়। বিবৃতি দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে (লন্ডন সময় ভোর সাড়ে ৫টা) চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করে দলটির স্থায়ী কমিটি। সাধারণত প্রতি সোমবার লন্ডন সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়) স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমান। এবারই এমন সময় জরুরিভাবে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো।
শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই জরুরি বৈঠক আড়াই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়, দুপুর একটার দিকে বৈঠক শেষ হয়। তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেয়া প্রায় সবাই গুলশান কার্যালয়ে বসেন এবং তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
দলীয় সূত্র জানায়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও নামফলক ভেঙে ফেলার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের করণীয় নির্ধারণে দলের নীতিনির্ধারকের সঙ্গে এই জরুরি বৈঠক করেন তারেক রহমান।
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইনে), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইনে), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (অনলাইনে), সালাউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন (অনলাইনে)। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
‘যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি। সরকার যেন দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো উসকানিতে কেউ যেন নৈরাজ্য সৃষ্টি না করে সেই আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
বৈঠক বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বর্তমান অবস্থায় আমরা বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় অবস্থান জানিয়েছি।’ বৈঠকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে বিএনপি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহী হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকাবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।’
বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নানান ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
সরকার সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাক্সক্ষা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সব শ্রেণী-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি।’
সরকারের সমালোচনা এবং নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যথাশিগগিরই সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাক্সক্ষা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
জনগণের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তম পন্থা। জনগণের মধ্যে এই ধরনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সবারই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
‘সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।’
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলছে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যে ‘মব কালচার’ দেখা যাচ্ছে তা মোকাবিলায় সরকার ‘ব্যর্থতার’ পরিচয় দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। দলটি মনে করে, কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব দাবি ও উদ্বেগের কথা বলা হয়। বিবৃতি দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে (লন্ডন সময় ভোর সাড়ে ৫টা) চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করে দলটির স্থায়ী কমিটি। সাধারণত প্রতি সোমবার লন্ডন সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়) স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমান। এবারই এমন সময় জরুরিভাবে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো।
শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই জরুরি বৈঠক আড়াই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়, দুপুর একটার দিকে বৈঠক শেষ হয়। তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেয়া প্রায় সবাই গুলশান কার্যালয়ে বসেন এবং তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
দলীয় সূত্র জানায়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও নামফলক ভেঙে ফেলার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের করণীয় নির্ধারণে দলের নীতিনির্ধারকের সঙ্গে এই জরুরি বৈঠক করেন তারেক রহমান।
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইনে), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইনে), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (অনলাইনে), সালাউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন (অনলাইনে)। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
‘যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি। সরকার যেন দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো উসকানিতে কেউ যেন নৈরাজ্য সৃষ্টি না করে সেই আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
বৈঠক বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বর্তমান অবস্থায় আমরা বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় অবস্থান জানিয়েছি।’ বৈঠকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে বিএনপি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহী হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকাবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।’
বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নানান ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
সরকার সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাক্সক্ষা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সব শ্রেণী-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি।’
সরকারের সমালোচনা এবং নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যথাশিগগিরই সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাক্সক্ষা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
জনগণের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তম পন্থা। জনগণের মধ্যে এই ধরনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সবারই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
‘সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।’